‘হায় সেলুকাস! তারা কোথায় মাঠে গেলেই জুতাপেটা----গোলাম মাওলা রনি এমপি

লিখেছেন লিখেছেন গনঅভ্যুত্থানের ডাক ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৩৯:১১ সকাল



গাজীপুরে আমার দায়িত্ব পড়েছিল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। আমি কাজ শুরু করলাম ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি রানা।



রানা ও আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা পুরো সময়টি বাস করছিলাম বিএনপি প্রার্থী মান্নান সাহেবের এলাকার সরকারি একটি ডাকবাংলোতে। আর আমাদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডগুলোতেও ছিল বিএনপি-জামায়াত ভোটারদের আধিক্য।

গাজীপুর চৌরাস্তাতে আওয়ামী লীগের প্রচার অফিসে যাই সকাল-বিকাল-রাতে। ওখান থেকে লোকজন নিয়ে চলে যাই কর্মক্ষেত্রে। হাঁটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুনি আমাদের পরাজয়ের ইতিকথা। কৌশলগত কারণে এগুলো তখন বলা যায়নি। কিন্তু এখন বলতে হবে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বার্থে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নির্বাচনী অফিস ছিল আমাদের ও বিএনপির। আমাদের অফিসে কোনো লোকজন থাকত না। বিএনপিরগুলো ছিল টইটুম্বর। প্রধান কারণ টাকা নেই।

আমার সাধ্যমতো কিছু করলাম আমার ওয়ার্ডগুলোতে। কিন্তু অন্য এলাকার খবরে মন ভারী হয়ে গেল। ভাবলাম দল ক্ষমতায়; এত টাকা, এত সুযোগ-সুবিধা, এত বড় বড় সব ক্ষমতাশালী লোক, টাকার পাহাড় গড়া মস্তবড় ডনেরা সব গেল কোথায়? আফসোস অনেকের যে, তারা এ আমলে কিছু পায়নি। কিন্তু এ কথাও তো সত্যি যে, ভিওআইপির টাকা বাতাসে উড়ছে! টিভি লাইসেন্স, কুইক রেন্টাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা, কমিশন, সরকারি প্লট ও নানা রকম হাজারো টেন্ডার বাণিজ্যে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে মুখচেনা শত শত খয়েরখা! তারা কেন তাদের উপার্জিত অর্থের একটি কানাকড়িও গাজীপুরে খরচ করল না। যারা ব্যাংক-বীমা পেল এবং শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করল, কিংবা শত শত কোটি টাকার বিনিময়ে ওইগুলোর শেয়ার বিক্রি করে দিল তারা কেন নির্বাচনী মাঠের বুভুক্ষ কর্মীদের খোঁজ নিল না?

বাস্তব অবস্থা হলো_ আমাদের অনেক লোক ভয়াবহ রকম ইমেজ সংকটে পড়েছে। টেলিভিশনে কিংবা দলীয় প্রোগ্রামে অনেককে গলা ফাটাতে দেখি। এসব লোকের অনেকে একাকী রাস্তায় বেরুতে পারেন না। আমি নিশ্চিত এরা ভোটের মাঠে গেলে নির্ঘাত গণপিটুনির শিকার হতেন। গণপিটুনি, জুতাপেটা কিংবা পচা ডিমথেরাপি সাধারণত শরীরের ওপর প্রয়োগ হয়। আর শরীর বাঁচাতে কেউ গাজীপুর নাও যেতে পারেন। কিন্তু এদের কি মন বলে কিছু নেই! যে দলের জন্য তাদের এত কিছু সেই দলের প্রয়োজনে একটি পয়সাও বের করলেন না! আর আমরা এখনো আশায় থাকব এরা আগামী নির্বাচনে দলকে সাহায্য করবেন? কখনো নয়, এরা পালাবেন। দূরে, বহু দূরে- যেদিকে চোখ যায় কেবল দৌড়াতেই থাকবেন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তার পর বলবেন_ এ কোথায় এলাম?

গাজীপুরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী ও ডা. দীপু মনির কথা। আহা! যদি আসতেন এসব মহামানবী কাণ্ডারিরা। গার্মেন্ট কারখানার পাশ দিয়ে হেঁটেছি আর মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের কথা ভেবেছি। তিনি যদি একটু আসতেন! নির্বাচনী আইন মতে, তাদের আসা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, তারা যদি আসার সুযোগ পেতেন জাতি এক বিচিত্র ফলাফল দেখত।

গাজীপুর চৌরাস্তার অফিসে গিয়ে দেখলাম ঢাকার এক মুখচেনা সিনিয়র সন্ত্রাসী গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে, বাজে গালাগাল করছে। তাকে আমি চিনতাম না। আশপাশের লোকজন কানে কানে আমাকে গাঁজাখোরের পরিচয় প্রকাশ করল। গত সরকারের আমলে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের সরকারের সময় নগর ভবনে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাত একটি স্টার গ্রুপের নাম দিয়ে। তৎকালীন মেয়র হানিফের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল তারা। এই আমলে দলীয় পদ পেয়েছে। একটি বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ এবং একটি ব্যাংকের মালিকানাও। ঘণ্টাখানেক সে ছিল। আওয়ামী লীগ অফিস ফাঁকা। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। আমার শুভ্যার্থীরা নিষেধ করল। কারণ তাদের কারণে নাকি ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো ভদ্রলোক যান না। আমি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সিনিয়র নেতাদের জানালাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করলাম।

সবচেয়ে খারাপ লাগছিল কট্টর সরকার সমর্থক টেলিভিশনগুলোর কাণ্ড দেখে। আশা ছিল তাদের কয়েকটি ক্যামেরা সার্বক্ষণিকভাবে প্রার্থী আজমত উল্লাহর সঙ্গে থাকবে। কিন্তু না, তা ছিল। তবে বেশির ভাগ সময় বিএনপি শিবিরে। সরকারের এখনো কয়েক মাস বাকি। শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী এবং সুস্থ-সবল আছেন। কাজেই এসব খয়েরখা এত তাড়াতাড়ি পিঠ টান দিল কী করে?

গাজীপুর চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বার বার সেলুকাসের কথা মনে হচ্ছিল। আর তাকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হচ্ছিল_ হায় সেলুকাস! তারা সব কোথায়! আমাদের দলের সঙগুলোর ভঙ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কেন? তারা কি আর কোনো নতুন ভঙ দেখাবে না? বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিষয়: বিবিধ

২৯৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File