বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর মহা আবিস্কারঃ থিওরি অব মখাটিভিটি

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৪ জুলাই, ২০১৩, ১২:১৬:১৬ রাত

ইন্টারন্যাশনাল সাইকিয়াট্রিস্ট সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলন । সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন সারা বিশ্বের সেরা সাইকিয়াট্রিস্টগন । বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন ডঃ আব্দুল্লাহ । সম্মেলনের দুইটি অংশ । প্রথম অংশ জার্মানির ‘বন’ শহরে পরশু শেষ হয়েছে । দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে নেদারল্যান্ডের ‘হেগ’ শহরে । এ নিয়ে আজ সকালে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ডঃ আব্দুল্লাহর বাসায় । বাংলাদেশের পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে – ‘ বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানী ডঃ আব্দুল্লাহ গতকাল বন থেকে হেগে গেছেন’ । ডঃ আব্দুল্লার সাত বছর বয়সী ছেলে খবর দেখে তার মাকে প্রশ্ন করেছে- মাম্মি, বাবা কেন বনে পায়খানা করতে গেছেন ? তুমি না বলো- যেখানে সেখানে পায়খানা করলে ডায়রিয়া হয় ?

সকালে স্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে । ডঃ আব্দুল্লার স্ত্রীর নাম মিমু । মিমু তো ঘটনা বলে হাসতে হাসতে কথাই বলতে পারছিল না । এদিকে ডঃ আব্দুল্লার মেজাজ খারাপ । বাচ্চা ছেলেটা বাবার সম্পর্কে কী একটা খারাপ ধারণা পেয়ে গেল । দেশে সাইকিয়াট্রিস্টদের পাগলের ডাক্তার বলা হয় । বিদেশি পাগলের ডাক্তারগুলার ওপর ডঃ আব্দুল্লাহ মহা বিরক্ত হলেন । শালারা সম্মেলন আয়োজনের জন্যে ‘বন’ আর ‘হেগ’ ছাড়া পৃথিবীতে আর জায়গা পেল না ?

প্রথম অধিবেশনে বিশ্বের মানুষের মনস্তাত্বিক অবস্থার ওপর বিস্তর আলোচনা হয়েছিল । নানারকম সমীক্ষা, গবেষণা পত্র উত্থাপন করা হয়েছিল । দিন দিন মানুষের মনস্তত্ব জটিলতর হচ্ছে । মানুষ বেশি মাত্রায় মানসিক চাপে ভুগছে । বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের মানুষেরাই বেশি মানসিক চাপে ভুগছেন । পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতাও বাড়ছে । পরিবার , বন্ধন এই শব্দগুলো কেমন যেন সেকেলে হয়ে যাচ্ছে ।

ডঃ আব্দুল্লাহ প্রথম অধিবেশনে শিশুদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন । এতে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে শিশুদের ওপর ছোটবেলা থেকেই নানামুখি চাপ সৃষ্টি করছে পরিবেশ । শিশুরা নিজেদের ভেতর মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে না , খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না, চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে না । স্কুল, টিউটর , পরীক্ষা , প্রতিযোগিতা... শিশুরাও এখন মহাব্যস্ত ......

এইসব কথাবার্তা বলেছিলেন প্রায় ঘন্টাখানেক । তিনি নিতান্ত অনিচ্ছা নিয়েই প্রথম অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন । মনে মনে কিছুটা অস্থিরতাও বোধ করছিলেন । কখন তাঁর আবিস্কার উপস্থাপন করবেন সে নিয়ে টেনশন বোধ করছিলেন । তিনি আশা করেন – এই আবিস্কার দেখে সবাই টাস্কি খেয়ে যাবে ।

অবশেষে ‘হেগ’ এ শুরু হলো ইন্টারন্যাশনাল সাইকিয়াট্রিস্ট সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব । এই অধিবেশনে মনোবিজ্ঞানের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে । পরিকল্পনা হবে । নতুন পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে । এছাড়া মনোবিজ্ঞানের উন্নয়নে বিশ্বের সাইকিয়াট্রিস্ট গণ কী করেছেন তা নিয়ে পর্যালোচনা হবে ।

অনেকেই অনেক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুরু করলেন । বেশিরভাগই চিকিৎসা সংক্রান্ত । বেশ কিছু নতুন ড্রাগের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হলো । সিজোফ্রেনিয়া, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার , হিস্টিরিয়া, ম্যানিয়া , ফোবিয়া এইসব নিয়ে কথাবার্তা । কোন ড্রাগ কোন রোগে ভালো কাজ করছে- এইসব আবিস্কার আরকি ।

একসময় এলো ডঃ আব্দুল্লাহর পালা । তিনি তাঁর প্রেজেন্টেশন শুরু করলেন । সবাই উৎসুক হয়ে তাঁকিয়ে রইলো প্রোজেক্টরের দিকে । বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী একটি ‘মানসিক অবস্থা পরিমাপক স্কেল’ আবিস্কার করেছেন ।

ডঃ আব্দুল্লাহ বলছিলেন- দেখুন বিশ্বে অনেক কিছু নিয়ে স্কেল আবিস্কৃত হয়েছে । পদার্থ-রসায়ন বা গণিতের কথা বাদ দিলে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বেশ কিছু স্কেল প্রচলিত আছে । ব্রেইন ফাংশান বোঝার জন্য গ্লাসগো কোমা স্কেল , মেটাবলিক অবস্থার জন্য বডি মাস ইনডেক্স স্কেল............ ইত্যাদি । কিন্তু আমাদের এই সেক্টরে তেমন কোন সহজ স্কেল এখনো চালু হয়নি ।

কারো মানসিক অবস্থা যাচাই করার জন্য আমি একটি স্কেল আবিস্কার করেছি । এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটি সহজেই একজন মানুষের মানসিক অবস্থা নির্ণয় করবে এবং এটিকে একটি গ্রেডে প্রকাশ করবে ।

এই স্লাইডে দেখুন – এই ডিভাইসটি যে স্কেলে মানুষের মানসিক অবস্থা প্রকাশ করবে সেটির নাম দিয়েছি ‘মখা স্কেল’ । ‘মখা’ স্কেলে শুন্য থেকে একশ পর্যন্ত গ্রেড আছে । এখানে সর্বনিম্ন অবস্থা জিরো । সর্বোচ্চ একশ । যার গ্রেড যত কম তাঁর মানসিক অবস্থা ততটা ভালো । ‘একশ’ গ্রেডটি যে অবস্থা নির্দেশ করে তা আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মানসিক অবস্থা । তিনি বলেছেন- কয়েকজন মানুষ ইচ্ছে করলেই ধাক্কা দিয়ে একটি নয়তলা বিল্ডিং ধ্বসিয়ে দিতে পারে । একজন মানুষকে ইনসেন বা পাগল বলার জন্য তার মখা স্কেল গ্রেড অবশ্যই সত্তরের উপরে হতে হবে ।

এই স্কেলের প্রতি গ্রেডকে বলা হবে মখাটিভিটি বা মখাত্ব । ধরুন আপনার অবস্থা নির্দেশ করছে ষাট । তাহলে আপনার মখাটিভিটি বা মখাত্ব ষাট । আপনার অবস্থা খারাপের দিকে ।

বিপুল হাততালি হতে লাগলো হলরুমে । হাততালির শব্দে ডঃ আব্দুল্লার আওয়াজ আর শোনা গেল না ।

..............................

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে একবছর আগের কথা ভাবছিলেন ডঃ আব্দুল্লাহ । ঐ সম্মেলন ডঃ আব্দুল্লার আবিস্কারকে যুগান্তকারী আবিস্কার বলে ঘোষণা করেছিল । সেদিন সারাবিশ্বের মনোবিজ্ঞানীরা তাঁদের মখাটিভিটি জেনেছিলেন । সৌভাগ্যক্রমে সবার অবস্থাই মোটামুটি ভালোই ছিল । কারো মখাটিভিটি বিশ গ্রেড অতিক্রম করেনি ।

বিশ্বের বিখ্যাত পত্রপত্রিকাগুলিতে ডঃ আব্দুল্লাহর যুগান্তকারী আবিস্কারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয় । তাঁর ছবিসহ বিশাল বিশাল ফিচার ছাপানো হয়েছিল । তিনি ভেবেছিলেন দেশে ফিরে বিশাল সংবর্ধনা পাবেন । কিন্তু বিধি বাম । বিমানবন্দরে নামার সাথে সাথে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় । তাঁর এই আবিস্কারে বাংলাদেশ সরকারের মখানুভূতিতে আঘাত লাগে । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে মামলা করেন ।

ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মখা স্কেল । বাণিজ্যিক ভাবে বিশেষ ডিভাইস বাজারজাত করা হয়েছে । মানুষ সবাই সাথে মখা স্কেল বহন করছে এবং কোন কাজ করার আগে নিজের মখাত্ব নির্ণয় করে নিচ্ছে ।

বাংলাদেশে মখা স্কেল এখনো নিষিদ্ধ । ধারণা করা হচ্ছে মখা স্কেল বাংলাদেশে চালু হলে দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক হোমরা চোমরার মখাটিভিটি বা মখাত্ব গ্রেড সত্তর অতিক্রম করবে । এরকম লোকদেরকে জনগন কোনভাবেই নিজেদের নেতা হিসেবে মানতে চাইবে না ।

জেল সুপারকে দেখা যাচ্ছে হাতে কিছু কাগজ নিয়ে ডঃ আব্দুল্লাহর সেলের দিকে এগিয়ে আসছেন । ওমা একি – তাঁর সাথে তো জাপানের মনোবিজ্ঞানী হাগুতো মুতিয়াটা কে দেখা যাচ্ছে । কাহিনী কি ?

জেল সুপার এসে সালাম দিলেন । ডঃ আব্দুল্লাহ , আপনাকে অভিনন্দন । নোবেল কমিটি আপনাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়েছে । আপনার আবিস্কারের ফলে সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অপরাধ অনেক কমে গেছে । সবাই তাঁদের মখাত্ব নির্ণয় করে কাজ করায় কাজকর্ম সুচারুরুপে সম্পন্ন হচ্ছে । বিশ্বের অনেক নেতার মখাত্ব গ্রেড সত্তরের ওপরে হওয়ায় তারা অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আপনার মুক্তির জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছেন । এছাড়া বাংলাদেশেও মখা স্কেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে । আসুন বেরিয়ে আসুন । বাইরে আপনার জন্য বিশেষ বিমান অপেক্ষা করছে ।

ডঃ আব্দুল্লাহ হতবাক হয়ে গেলেন । বাইরে পা দিয়ে মনের অজান্তে গান গাইতে লাগলেন তিনি-

‘আমরা সবাই মখা আমাদেরই মখার রাজত্বে

নইলে মোদের মখার সনে মিলবে কি সত্বে......’

ভ্রু কুঁচকে গেল জাপানের মনোবিজ্ঞানী হাগুতো মুতিয়াটার । তাঁর কাছে থাকা ‘মখা স্কেল’ লাল বাতি নির্দেশ করছে । গ্রেড সিক্সটি । অবস্থা ভালোনা ।

ব্যাপার দেখে ডঃ আব্দুল্লাহ মুচকি হেঁসে আবার শুরু করলেন-

‘আমরা সবাই মখা আমাদেরই মখার রাজত্বে

নইলে মোদের মখার সনে মিলবে কি সত্বে

আমরা সবাই মখা.........’

...........................

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর মহা আবিস্কার / ২১-০৭-২০১৩

বিষয়: সাহিত্য

১৫৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File