লড়াইটা বাঙালি-অবাঙালির নয়, দক্ষতা ও যোগ্যতার

লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ২১ মে, ২০১৪, ০৫:১৩:১৬ বিকাল

লড়াইটা বাঙালি-অবাঙালির নয়, দক্ষতা ও যোগ্যতার। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা জানতে পারবো, টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলের চাবি কার হতে আসছে। সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন লুৎফুর রহমান। কেউ তাঁর সমালোচনা করছেন এবং অন্যরা করছেন প্রশংসা। নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনায় ঘুরে ফিরে রুশনারা আলীদের কথা আসে। লেবার পার্টির কথা আসে। প্রসঙ্গিক ভাবে বৃটেনের যুগস্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী জেমস কালাহানের কথা আলোচনায় আসে। আসে আলতাব আলীদের কথা। আলতাব আলীকে যারা আদম ব্যাপারী বানায় তাদের কথাও আসে। বর্ণবাদ বিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক আলতাব আলীর ইতিহাসকে যারা বিকৃত করে তাদের ক্ষমা নেই। তারা পান্ডিত্যের তকমা গলায় ঝুলিয়ে দেশে-বিদেশে জ্ঞান বিতরন করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আলতাব আলীদের লড়াইকে গায়েব করে দিতে চান।

আমরা উনা কিংদের কথাও ভুলতে পারি না। জন বিগসদের কথাও ভুলতে পারি না। নির্বচনের সময় এলে ইস্ট এন্ডে বাঙালির অধিকার আদায়ের গল্প আমাদের বার বার স্মরণ করতে হয়। প্রয়োজনটা আমাদের। যারা লড়াই করেছেন তাদের নয়। বর্ণবাদ বিরোধী কঠোর লড়াইয়ের পরবর্তী সময়ে যারা বৃটেনে এসেছেন তারা অনেকে সে ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত নয়। তারা জানেন না, ইস্ট-এন্ডের আরাম-আয়েশ বৃটেনের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের অংশ নয়। তারা দেশে থাকতে এখানকার বিলাস বহুল জীবন এবং সুখ-সমৃদ্ধির কথা জেনে এসেছেন। এখানে এসে কিছু কিছু বিষয়ে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হলেও তারা দেখছেন আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে আরাম আয়েশের সাথে বাস করছি। মসজিদ, স্কুল, ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি, জনপ্রতিনিধিত্ব, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া - সর্বত্রই বাঙালির গৌরবদীপ্ত পদচারণা দেখে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা বিমুগ্ধ। কিন্তু তারা জানেন না, বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছতে আমাদের কি পরিমাণ কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

তারা জানেন না, আমরা এক সময় রাত্রে নয়, দিনের বেলা পর্যন্ত ব্রিক লেন দিয়ে একাকী হাঁটতে ভয় পেতাম। আমাদের মা-বোনেরা ভয়ে রাস্তায় বের হতেন না। বর্ণবাদীদের হামলার আতঙ্কে ছেলেমেয়েদের সন্ধ্যার আগেই ঘরে আটকে রাখতাম। এ দেশে বেড়ে উঠা তরুণরাও আমাদের অভিবাসনের লোমহর্ষক ইতিহাসের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে। কষ্টসাধ্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনকে বাজি রেখে পরিচালিত সংগ্রামের এ দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে আমরা বর্তমান প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। আমাদের সংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট এবং যন্ত্রণার সাথে আমরা যেমন বাংলাদেশে বসবাসকারী আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের শরিক করিনি, তেমনি এ দেশে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েদের তা থেকে সযতেœ দূরে রেখেছি। বর্তমানে সে ইতিহাসকে অন্বেষণ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন করে আবিস্কারের সময় এসেছে।

বিলাতের রাজনীতিতে বাঙালি নতুন নয়। মুসলমানরাও নতুন নয়। বাংলাদেশের মানুষ স্বদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু বিদেশে বৃটিশ সরকারের পক্ষে লড়াই করে জীবন দিয়েছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে নাৎসী জার্মানীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৃটিশ সরকার বা মিত্র বাহিনীর পতাকাতলে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় সৈনিক যুদ্ধ করেছে। তাদের মধ্যে বাঙালি এবং অন্যান্য এলাকার মুসলমান সৈনিকদের সংখ্যা কম ছিল না। পরবর্তীতে যুদ্ধোত্তর বিলাতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রয়োজনে এ দেশে অভিবাসীদের ব্যাপক হারে আগমন ঘটেছে। তাদের আগমনে এ দেশ অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। এখানে অভিবাসীদের জন্যে হীনমন্যতার কোন সুযোগ নেই।

লেবার পার্টির সাথে বাঙালির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। লেবার পার্টির নেতা এবং পরবর্তীতে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী জেমস কালাহান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে বাঙালিদের আপন করে নেন। মূলতঃ তাঁর বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কারণে লেবার পার্টি অভিবাসীদের কাছে ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে তাঁর কমনওয়েলথ ইমিগ্র্যাশন এক্ট ১৯৬৮ এবং রেইস রিলেশন এক্ট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এ দুটো এক্ট মাল্টিকালচারেল বিলাতে ইমিগ্র্যান্টদের জন্যে এখনো রক্ষা-কবচ হিসেবে বিবেচিত। এ কারণে অধিকাংশ বাঙালি লেবার পার্টির সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যারা জর্জ গ্যালোয়েকে টেনে এনে উনা কিংকে হটিয়েছেন তারাই রুশনারা আলীকে বৃটিশ পার্লামেন্টে পাঠিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই টাওয়ার হ্যামলেটস বরার লেবার-ভোটার। বাঙালি অনেক আগেই বৃটিশ পার্লামেন্টে যাবার কথা ছিল। কেন যেতে পারেনি সে ইতিহাস আমাদের ভুললে চলবে না। কেন যেতে পেরেছে সেটাও মনে রাখতে হবে। জনসংখ্যার বিচারে বৃটিশ পার্লামেন্টে একাধিক বাঙালি এমপি থাকার কথা। পিটার শোর আসনে লেবার পার্টি একজন বাঙালিকে মনোনয়ন দেবে, এটাই সকলের কামনা ছিল। তখন একাধিক বাঙালি এ পদের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু লেবার পার্টি সেটা করেনি। এ ক্ষোভ থেকেই টাওয়ার হ্যামলেটসের বাঙালি কমিউনিটি জর্জ গ্যালোয়েকে ডেকে আনে। তারা জর্জ গ্যালোয়ের রেসপেক্ট পার্টিতে যোগ দেয়ার জন্যে তা করেনি। উদ্দেশ্য ছিল, লেবার পার্টিকে একটা শক্ত ম্যাসেজ দেয়া। এতে লাভ হয়েছে। পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনে বৃটেনের প্রধান তিনটি দলই বেথনালগ্রিন এন্ড বো আসনে বাঙালি প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করে। রুশনারা আলীর মাধ্যমে বাঙালি জনগোষ্ঠী এ ভাবেই বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশাধিকার অর্জন করে। এ অর্জনের পেছনে জর্জ গ্যালোয়ের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

বিলাতের বাঙালির জন্যে মে মাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে আলতাব আলী বর্ণবাদীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। এ মাসেই বৃটিশ পার্লামেন্টে বাঙালি এমপির অভিষেক সম্পন্ন হয়েছে। আবার এ মাসেই আমরা টাওয়ার হ্যামলেটস বরায় প্রথম নির্বাচিত বাঙালি মেয়র পেয়েছি। বাঙালি মেয়রকে টিকিয়ে রাখার নির্বাচনও এ মাসেই হতে চলেছে। ১৯৭৮ সালের ৪ মে আলতাব আলী বর্ণবাদী গুন্ডাদের হাতে মৃত্যু বরণ করেন। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল রোডে অবস্থিত আলতাব আলী পার্ক শুধু বিলাতের বাঙালি সমাজ নয়, বহির্বিশ্বের বাঙালির কাছেও পরিচিতি লাভ করেছে। আলতাব আলী ছিলেন কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে কর্মজীবী এক শ্রমিক। ১৯৭৮ সালের ৪ মে তারিখে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি এল্ডার স্ট্রিট এবং হোয়াইট চ্যাপেল রোডের কোনে অবস্থিত সেন্ট মেরি চার্চের চত্ত্বরে বর্ণবাদী হামলার শিকার হন। আমরা যদি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বিলাতে বাঙালির অভিভাসনের লড়াই সম্পর্কে লিখিত ইতিহাস তৈরি করতে ব্যর্থ হই তা হলে এ ভাবে আরো অনেক ইতিহাসই বিনষ্ট বা বিকৃতির শিকার হবে।

সে দিন আলতাব আলীর জীবনদান বিলাতে বাঙালি কমিউনিটির জন্য ছিল বাঁক বদলকারী ঘটনা। এ ঘটনা বাঙালি তরুণদের পথে নামতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সাহসিকতার সাথে তারা সে দিন ব্রিকলেন এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বর্ণবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিরুদ্ধে মিছিল করে। ১৪ মে তারিখে আলতাব আলীর লাশ সামনে নিয়ে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। প্রায় ৭ হাজার তরুণ সে মিছিলে শরিক হয় এবং বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতে তারা হাইড পার্কে গিয়ে মিলিত হয়। আলতাব আলীর মৃত্যু আমাদের জাগ্রত করেছে, সাহস দিয়েছে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন পণ করে সংগ্রামের পথে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাই আলতাব আলীকে আমরা ভুলতে পারি না। তার আত্মত্যাগে জেগে উঠা বাঙালি তরুণদের সাহস, প্রবীনদের বুদ্ধি-পরামর্শ, লেখক-সাংবাদিকদের পথ নির্দেশনা এবং আরো জানা-অজানা অনেকের রক্তদানের পথ বেয়ে বিলাতের বাঙালি কমিউনিটি বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

গত মেয়র নির্বাচনে হেলাল আব্বাস ছিলেন লেবার মনোনীত মেয়র প্রার্থী। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারা এবং কোন কোন বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় লুৎফুর রহমানকে মনোয়ন দেয়ার পরও তা বাতিল করা হয়েছে, তা কি আমরা জানি? হেলাল আব্বাস কেন পাশ করতে পারেননি? এর দায় বা কৃতিত্ব কি শুধু লুৎফুর রহমানের? মাল্টি-কালচারেল বৃটেনে যারা উদার গণতান্ত্রিক ধারার দাবিদার তাদের অনেকে সে দিন ভোট কেন্দ্রে আসেনি। কিন্তু এবার তারা অবশ্যই ভোট দিতে আসবেন। তারা যাতে ভোট কেন্দ্রে আসেন এ জন্যে একটি অনুকুল পরিবেশ পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। লুৎফুর রহমানের কাছে পার্টি-ভোটে জন বিগস গতবার পরাজিত হন। এর পরও বিশেষ উদ্দেশ্যে লন্ডন লেবার পার্টির একটি বিশেষ কোটারি তার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। একই উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার, বিকৃত সংবাদ পরিবেশন এবং আজে-বাজে কথা বলে মানুষের মনে ভয় বা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাঙালিরা কাউন্সিলের অর্থ লুটে-পুটে খাচ্ছে। ইসলাম-ভীতি উস্কে দেয়া হচ্ছে। ইসলামী জুজুবুড়ির ভয় প্রচার করা হচ্ছে। অর্থহীন নেকাব বিতর্ক টেনে আনা হচ্ছে। চিকেন-টিক্কার জন্যে যারা সপ্তাহব্যাপী উদগ্রীব হয়ে থাকেন তারা বিতর্ক করছেন হালাল খাবার নিয়ে। এর পেছনে উদ্দেশ্য কি? লুৎফুর রহমান লেবার ভ্যালুতে বিশ্বাসী। সেকুলার ডেমোক্রসিতে বিশ্বাসী। কারা শরিয়া প্রসঙ্গ টেনে আনছে? লুৎফুর রহমান কি কখনো বলেছেন, তিনি শরিয়া কায়েম করতে চান? এর দায় কোন ভাবেই শুধু মেইন-স্ট্রিম মিডিয়ার নয়। আমাদের ভাই-বন্ধুরা স্বার্থে অন্ধ হয়ে এর যোগান দিচ্ছেন। আরো বলা হচ্ছে, কমিউনিটি সাংবাদিকরা বিক্রি হয়ে গেছেন। কারো পক্ষে বা বিরুদ্ধে লেখার মানে কি বিক্রি হয়ে যাওয়া? তা হলে আপনারাও বিক্রি হওয়ার দলে নয় কি? সারা দেশে টোরি এবং লেবারের মধ্যে লড়াই চললেও টাওয়ার হ্যামলেটসে সরকারী দল এবং বিরোধী দল এক হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। কি এমন মধু ঝরে পড়ছে টাওয়ার হ্যামলেটসে?

লুৎফুর রহমান আকাশ থেকে টাওয়ার হ্যামলেটসে অবতরন করেননি। এখানকার আলো-বাতাস গ্রহণ করে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কোন কারণে তিনি পরাজিত হলেও তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না। জন বিগস পরাজিত হলে তাঁর সাথে কেউ দেখা করার সুযোগও পাবেন না। কাউন্সিল লিডার হিসেবে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। গত চার বছর মেয়র হিসেবে তিনি সাফল্যের উজ্জল স¦াক্ষর রেখেছেন। দেশের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত মেয়র হিসেবে কাউকে মনোনীত করতে হলে নিরপেক্ষ বিচারকদের দৃষ্টিতে তিনিই মনোনীত হবেন। টাওয়ার হ্যামলেটসবাসী কাজের মাধ্যমে এর প্রমাণ পেয়েছে। তাই কোন মিথ্যা প্রচারণা তাদের বিভ্রান্ত করতে পারছে না। তাই দলকানারা স্বস্তিতে নেই। চটকদার কথা বলে মুখ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

টাওয়ার হ্যামলেটসে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে ১৯৯৪ সালে। এর আগে বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকার অধিকাংশ মানুষ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সংগ্রাম করেছে। তখন কোথাও জন বিগসকে দেখা যায়নি। শোনা যায়, একবার জন বিগস পার্টির সভায় বলেছেন, ‘বাঙালি কমিউনিটির কথা আলোচনা করলে প্রতিবার আমাদের ৪ শ’ ভোটার হারাতে হয়।’ শুধু তাই নয়, গত ২০ বছরের ইতিহাসে জন বিগস একমাত্র কাউন্সিল লিডার যিনি কোন বাঙালিকে কেবিনেট মেম্বার বা লিড মেম্বার হিসেবে নিয়োগ করেননি। এ সকল কাজকে বর্ণবাদ না বললে বর্ণবাদের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। জন বিগসের এ সকল বর্ণবাদী নীতির কারণেই লেবার পার্টির অনেক সমর্থক তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হয়ে লুৎফুর রহমানের পক্ষে কাজ করছেন।

দল হিসেবে লেবার পার্টির বর্ণবাদ বিরোধী ইমেজ রয়েছে এবং তারা মাল্টিকালচারে বিশ্বাসী। কিন্তু টাওয়ার হ্যামলেটসের পরিস্থিতি ভিন্ন। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাঙালি ভোটাররা পিটার শোরকে বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। উনা কিংকে ভোট দিয়েছে। লেবার পার্টির রুশনারা আলীকে ভোট দিয়েছে। জর্জ গ্যালোয়েকে ভোট দিয়েছে। একমাত্র রুশনারা আলী ছাড়া এরা কেউ বাঙালি বা মুসলমান নয়। তবু মানুষ তাদের ভোট দিয়েছে। তাই লড়াইটা এখানে বাঙালি-অবাঙালির লড়াই নয়। মুসলমান এবং অমুসলমানের লড়াই নয়। লড়াইটা হচ্ছে বর্ণবাদের সাথে মাল্টি-কালচারের লড়াই। বৈষম্যের সাথে ন্যায় বিচারের লড়াই। যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে অযোগ্যতার লড়াই। যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে লুৎফুর রহমান দশের মধ্যে আট পেলে জন বিগস-এর স্কোর হবে চার বা পাঁচ। তা ছাড়া ১৯৯৩ সালে মিলওয়াল ওয়ার্ডে ন্যাশনাল ফ্রন্টের ডেরেক বিকন বিজয়ী হবার পেছনে যার অবদান ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁকে টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণ কি ভাবে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করবে? কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংগঠনকে গ্রান্ট দেয়া যার কাছে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় তার হাতে টাউন হলের চাবি মানুষ কোন বিশ্বাসে প্রদান করবে? অতীতে কাউন্সিল লিডার হিসেবে একজন অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন এবং অপর জন মেয়র হিসেবে সাফল্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ দু জনের মধ্যে জনগণ কাকে বাছাই করে নেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

লন্ডন ১৫ মে ২০১৩

বিষয়: বিবিধ

১০৯৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224230
২১ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:১৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File