এক তরুনের মনের অকথা-কথা : মুক্তিযুদ্ধ বনাম সাইবারযুদ্ধ(পর্ব -১)

লিখেছেন লিখেছেন সমুদ্রবিলাস ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০১:৩২:৫৬ রাত

১.

স্বাধীনতার একচল্লিশ বছর পরে বাংলাদেশের তরুনদের জলযৌবন উত্থাল তরঙ দেখে মক্তিযুদ্ধা কিংবা দেশপ্রেমিকরা আশার বুক বেঁধেছিল l সাধারণ দশজনের মত করে বেড়ে উঠা আমার শৈশব কৈশোর জীবন কিন্তু এমন জাগরণ দেখে নতুন করে শপথ নিলাম যেভাবে হউক এমন সুযোগ হয়তবা আর পাব না তাই সঠিক চিন্হিত যোদ্ধাপরাধীদের বিচার কিংবা ফাঁসি না হওয়া পর্যন্তু আন্দোলনের মাঠে থাকব ,এরই ধারাবাহিকথাই আমার মুক্তিযোদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টাই থাকি l সাধারণ মুসলিম এবং মুক্তিযুদ্ধচেতনায় বিশ্বাসী ধর্মভীরু তরুণ আমি l মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাই এই মহান মুক্তিযোদ্ধ এবং সমসাময়িক ইতিহাস আমি জানার চেষ্টাই বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ,রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধার কাছে ছুটে গেছি কিন্তু তাদের কাছ থেকে যুদ্ধঅপরাধী ও তাদের বিস্তৃতি-শক্তি সম্পর্কে সুস্পস্ট তথ্য আমি পায়নি কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে আনীত কিছু চিহ্নিত যুদ্ধ অপরাধী কে বিচারের কাটগড়ায় তুলা হলো তখন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে নানা অপরাধের পয়েন্ট এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের করুচিপূর্ণ ভূমিকার বর্ণনা জানতে পারি l

সমস্যা সেখানে না ..... ...

যতই দিন যাই ততই এই বিচারের নামে গণমাধ্যমে দেশের শীর্ষ গুণীজনদের কাছ থেকে বিশেষ করে যারা ইতিহাস সম্পর্কে ভালো ,স্বচ্ছ ধারণা পোষণ এবং যারা স্বার্থের বিনিময়ে নিজের বিবেককে বিসর্জন দেননি তাদের এবং বিদেশী গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদন দেখে নতুন করে প্রকৃত যুদ্ধঅপরাধী কারা তা জানার চেষ্টা করলাম l

আগ্রহটা একটু বেশি বাড়িয়ে দিল নাস্তিক ব্লগার রাজিবের হত্যাকান্ড থেকে .... ...

গতকাল ৮ ঘন্টা বিভিন্ন টকশো(বিশেষ করে -অধ্যাপক আসিফ নজরুল ;আকবর আলী , মাহবুবুল আলম ;ব্যরিস্টার রফিকুল হক;বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী etc .); ব্লগ -পোস্ট,বিদেশী ও দেশী গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং skype সংলাপ দেখে পড়ে যা বুঝলাম .........

২.

বিদেশী টিভি চেনেল এবং দেশীয় শীর্ষ গুনিজনের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে আমিও বলব এইটা বিচারের নামে প্রহসন

ছাড়া আর কিছু নয় l দেশের মানুষ আজ চারভাগে বিভক্ত - i) নতুন তরুণ সমাজ ii) তথাকথিত বামঘরনার নামিদামি বুদ্ধিজীবী iii) ইসলামী মনুভাবাপন্ন জনতা এবং iv ) জামাত-শিবির l বাংলাদেশের যেখানে ৯০% ওপরে মুসলিম সেদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবেনা তা কখনো হয়না না বা মেনে নেওয়া যায় না, আর ধর্মভিত্তিক রাজনিতিত শুধু জামাত করে না আরো অনেক দল আছে l আজকে চতুর্থ ঘরনার লোকজন এই বিচারের বিপক্ষে কারণ এতে তাদের দলীয় শীর্ষ নেতারা জড়িত ; দেশের বামঘরনার নামিদামি বুদ্ধিজীবীরা ও তাদের সমর্থনপুষ্ঠ নীয়ন্ত্রিত বাম রাজনীতির জনতা যাদের সংখ্যা গতনির্বাচনের নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ০.৪ % তারা আজ সাধারণ জনগনের চুখে জাদুর ধুলো দিয়ে বিশেষ করে দেশের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্তু করে তাদেরকে দেশীয় সংস্কৃতির লোভ দেখিএ স্বাধীনতার বিরোধীদের বিপক্ষ শক্তিকে রোধ করার নাম দিয়ে আজ কৌশলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যাস্ত l আমরা যারা আজ তরুণ আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি যারা দেশকে ভালবাসে সরলমনে ,যারা বিশ্বাস করে সহজে যারা জানে না কোনো ভন্ধামি -প্রতারণা তারা আজ প্রতারিত দেশের স্বার্থলোভী রাজনীতির কাছে যার ফলাফল খুন আর মৃত্যু অথবা শহীদ l ছোটবেলা থেকে যাদের লেখা পড়ে বড় হয়েছি ,যাদের দেখে অনুপ্রানিত হয়েছি ,যাদের সৃজনশীলতা দেখে গর্ববোধ করি বা পত্রিকায় যাদের ছবি কিংবা কলাম দেখলে সবার আগে ওই পৃষ্টা নিয়া গভীর মনোযোগের সাথে পড়ি তারাই দেখি আজকে আমাদের মত তরুনদের কোমল কচি ব্রেইন-বিবেককে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যাস্ত l

৩.

আজকের তরুণ সমাজ "রাজাকারের ফাঁসি চাই " এই একটি দাবিতে একত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ যেখানে তারা ফিরিয়ে এনেছে ৭১ এর বিজয়ী স্লোগান "জয় বাংলা " যার আবেগে আমিও ছুটে গিয়াছিলাম শাহবাগ প্রজন্ম স্কয়ার এবং চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে ..সংহতি প্রকাশ করেছি আমার ছাত্রদেরসাথে ,গনপেস্তুনে স্বাক্ষর করেছি শপথ করেছি লক্ষ্য মোদের একটাই রাজাকারের ফাঁসি চাই l নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছি ইতিহাসের অংশ হতে পেরে উত্সাহ দিয়াছি অনেক তরুনকে আমার অনেক ছাত্রকে অনেক শুভাকাংখীকে এফ বি তে স্টেটাস দিয়াছি ছবি আপলোড দিয়াছি কিন্ত যতোই দিন যায় তথই প্রভাতের আলোর মত স্পষ্ট হতে থাকে সত্য l আজ সারা বাংলাদেশে শত শাহবাগের জন্ম হয়েছে মিলিত হয়েছে তরুনরা একটি স্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কিংবা ফাঁসি এই দাবি নিয়ে তাদের এই তারুণ্য দিপ্তু স্লোগান অবশ্যই দেশের টানে; আমরা তরুনরা জানি গোলাম আজম ,নিজামী ,কাদের মোল্লা ,কামরুজ্জামান ,সাকা চৌধুরী etc .যাদের কে রাজাকার হিসাবে বাংলার বুদ্ধিজীবিরাই ছোটবেলা থেকে আমাদের শিখিয়েছে l হ্যা তাদের মধ্যে অনেকের যতেষ্ট এভিডেন্স আছে যে ওনারা যুদ্ধ অপরাধী তাই আইনের নিয়মে তাদের বিচার হউক কিন্ত বন্গবন্ধু সময়ে তৈরী করা তালিকায় না থাকা ধর্মীয়রাজনীতির কারণে আজকে নির্দোষ কাউকে নতুন করে যুদ্ধ অপরাধী বলে অভিযুক্ত করা কিংবা ভিন্ন রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে অনেকে ঐ তালিকাই নাম থাকার পরেও সাধু সেজে তরুনদের গণ মিছিলে সংহতি প্রকাশ করতে যাওয়া (বি.দ্র.তত্কালীন বঙ্গবন্ধু নিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবে আলম খন্দকার ,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ,অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং আকবর আলী খান এর লেখা ও টক শো দেখার পর ) তাহলে কী ধরে নিতে পারি বিচারের নামে এই প্রহসন শুধুই নির্বাচনী ঈশ্তিহারের শর্ত পালন ছাড়া আর কিছুই নয় ! মনে করেছিলাম এই সরকারই পারবে যোদ্ধ অপরাধীর বিচার করতে কিন্তু তারা যদি এটি শেষ করে তাহলে পরবর্তী কী ইস্যু নিয়ে তারা আন্দোলন চাঙ্গা করবে ?কিন্তু তারা কী জানেন না এই ইস্যু টি সমাধান তরুণ প্রজন্মরাই আপনাদেরকে সারাজীবন হৃদয়ে লালন করবে আজীবন l আজকে যাদের বই পড়ে আমরা তরুনরা অনপ্রানিত ,যাদেরকে অনুপ্রেরণার মূল হিসাবে গ্রহণ করেছি আপনাদের কী উচিত ছিল না দল -বল নির্বিশেষে দেশের স্বার্থে তরুণদেরকে সঠিক ইতিহাস জানানো ! যদি তাই হত আজকের তরুনরা বিভক্ত বা দ্বন্ধে না পড়ে সবাই আপনাদের সাথে সমর্থন দিয়ে যেত l

৪.

এখন আমি আর প্রেস ক্লাবে যাই না দেখি না পত্রিকার সেই শাহবাগের খবর ;বিশ্বাস করিনা কোনো বুদ্ধিজীবির কথা l কেউ যদি বলে তাদের বলি দেখো তোমরা বড় হয়েছ ,জেনে বুঝে গ্রহণ করার বুদ্ধিশক্তি তোমাদের আছে ,এখন কারো কথাই কান না দিয়ে তোমাদের উচিত যাচাই বাছাই করে সত্য কে গ্রহণ করা l এদেশের বুদ্ধিজীবিরা জানে কিভাবে বুদ্ধিকে জীবিকার বাহন বানানো যায় l তারা শুধু স্বার্থের জন্যে তরুনদের পাশে আসে কিন্তু তরুনদের সামনে সত্যি বলার কিংবা নেই তাদের তুই রাজাকার বলে সকল যুদ্ধাপরাধী কে দেখিয়ে দিয়ার শক্তি l আজ বঙ্গবন্ধু থাকলে হয়তবা যোদ্ধাপরাধীদের কিছু একটা সমাধান পেতাম কিন্তু এখন সরকার আর বাম রাজনীতির যে লীলাখেলা দেখছি তাতে কী এইটা মনে করে নিতে পারি না ? এই বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়তবা আর দেখা হবে না এই তরুনদের l তাহলে কী বাংলাদেশ ও বাংলার তরুণ সমাজ তাদের স্বপ্নগুলি কী এইভাবে নাস্তিকের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যাবে l

এসবকিছু পড়ার পরে হয়তবা আমাকে অনেকে নব্য রাজাকার ছাগুর দল বলে গালি দিবে কিন্তু আমি কাপুরুষ নই , সত্যকে সত্যি বলার সাহস এই তরুনের আছে l বলে রাখি আজ সত্যি ইতিহাস বলার কারণে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী , অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করে গালি দেওয়া হচ্ছে ,তাদের মত আরো যারা সঠিক ইতিহাস তুলে ধরছেন তরুনদের কাছে তাদের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে অথচ সাধারণ শিশুরাও জানে মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী এবং উনার গড়া কাদের বাহিনীর ইতিহাস l তাই বন্ধুরা আসি মোরা সত্যের আঙ্গিনায় , সত্যকে জানি -সত্যি বলি -সত্যকে জানাই, সত্যিই তারুন্যের বিজয় ,সত্যের বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ l জয় বাংলা |

বিষয়: বিবিধ

১০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File