বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:০৬:২৩ দুপুর



১৪ ফেব্রুয়ারি “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” বর্তমানে যা “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” নামে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। মূলত এ দিবসটি প্রাচীন ইউরোপীয় গ্রীক-রোমান মুর্তি পুজারীদের একটি ধর্মীয় দিবস। যা ভারতীয় আর্যদের (হিন্দুদের) মতই। প্রাচীন রোমান মুর্তি-পুজারীদের মধ্যে নারীদের বিবাহ ও সন্তান কামনায় প্রাচীন দেব-দেবীদের আশীর্বাদ (বর) লাভের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বিভিন্ন নগ্ন ও অশ্লীল উৎসব পালন করত, যা “লুপারক্যালিয়া” নামে প্রচলিত ছিল।

ইউরোপে খৃষ্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র ধর্মের মর্যাদা লাভের পরেও এ সকল অশ্লীল উৎসব অব্যাহর থাকে। এ “লুপারকক্যালিয়া” উৎসবে মদপান, অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও ব্যভিচারকেই প্রাধান্য দেয়া হতো। অথচ ইসলামে কেবল এ সকল অশ্লীল ও ব্যাভিচারকেই নিষেধ করা হয়নি বরং ব্যভিচারের কাছে নিয়ে যায় এমন সকল কাজ করতেও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

قُلْ تَعَالَوْاْ أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلاَ تَقْتُلُواْ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

‘আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আন আম, আয়াত: ১৫১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা যখন প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত থাকে। তখন তাদের মধ্যে এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রসারিত ছিল না। (সুনানে ইবনু মাজাহ- ২/১৩৩২, সহীহুল জা’মে- ২/১৩২১)

মহান আল্লাহর গজব হতে বাঁচতে হলে গজবের কারণ তথা “লুপারকক্যালিয়া” ও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং তা পালনের প্রতি নিরুৎসাহিত করতে হবে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’র উৎপত্তি- ২৬৯ খৃষ্টাব্দে। ইতালির রোম শহরে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন, যার নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস এর নির্দেশে তাকে বন্দি করা হয়। কেননা তৎকালীন রোম সম্রাটের নির্দেশে তার সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস জনৈক কারা রক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। এতে তার চিকিৎসা বিদ্যার সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রোম সম্রাট তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাম্বিত হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেইদিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।

অতঃপর সেন্ট জেলাসিও ১ম জুলিয়াস ২২৭ বছর পর ৪৯৬ খৃষ্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” পালনের ঘোষণা করেন। কেননা প্রাচীন রোমানদের ধর্ম ছিল প্যাগান ধর্ম এবং তারা বিভিন্ন দেবতার পূজা করতো। তাদের বন্য পশুর দেবতার নাম ছিল লুপারকাস। এই দেবতার প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে “লুপারকক্যালিয়া” নামে উৎসব পালন করত। যা পূর্বে “ফেব্রুয়া” নামে পরিচিত ছিল।

আর এই “ফেব্রুয়া” থেকেই খৃষ্ট বষের্র দ্বিতীয় মাসের নামকরণ করা হয়েছে “ফেব্রুয়ারি”। এই পূজার প্রধান আকর্ষণ হলো লটারী। বিনোদন ও আনন্দের জন্য এই লটারীর মাধ্যমে সমাজের অবিবাহিত যুবতীদেরকে এক বছর ভোগ করার জন্যে যুবকদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হতো এবং এ উৎসবে উৎসর্গকৃত কুকুর ও ছাগলের চামড়ার বানানো চাবুক দিয়ে সেই যুবতীদের বেত্রাঘাত করা হত। এক সময় রোমান শাসকেরা প্যাগান ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলেও তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে ও জনগণের আনন্দের জন্য প্যাগান সংস্কৃত “লুপারক্যালিয়া” বা “ফেব্রুয়া” উৎসব বহাল রাখেন।

আর এই “লুপারক্যালিয়া” উৎসব ১৩, ১৪, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পালন করা হতো। তাই সেই উৎসবের বিপরীতে পোপ ১ম জুলিয়াস ৬৯৪ খৃষ্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে “সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন। এতে খৃষ্টজগত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনসের অবদানকে স্বরণ করে বাৎসরিক মৃত্যু দিবস পালন করে। পরবর্তীতে খৃষ্টান পাদ্রীদের প্রচেষ্টায় খৃষ্টসমাজে ও রাষ্ট্রে “লুপারকক্যালিয়া উৎসবকে” ভ্যালেন্টাইনস দিবসে রুপান্তরিত করা হয়।

সে হিসেবে এ দিবসটি খৃষ্টান যুবক যুবতীদের আনন্দ উল্লাস করার দিন। এ ছাড়াও খৃষ্টজগতে আরো অন্যান্য পাদ্রীদের নামে দিবস রয়েছে। যেমন- ২৩ এপ্রিল “সেন্ট জজ ডে”। ১৭মার্চ প্যাট্রিক ডে । ২৪ আগষ্ট “সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে”। ১লা নভেম্বর আর্থো সেইন্টম ডে ইত্যাদি।

ফ্রান্স সরকার ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে এই “ভ্যালেন্টাইনস ডে” উৎসব পালনে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। কেননা খৃষ্টান যুবক-যুবতীরা আনন্দ উৎসবের নামে মদপান অবৈধ ব্যাভিচার অন্যান্য অশ্লীল কাজে গির্জার অভ্যন্তরীণকে ব্যবহার করা শুরু করে। ১৮৬৭-৬৮ এর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আকারে এই “ভ্যালেন্টাইনস ডে” উৎসব পুনরায় চাল করা হয়। বর্তমানে সেই প্যাগান ধর্মের দেবতা লুপারকাস-এর উৎসব “লুপারকক্যালিয়া”-কে “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস” এর মোড়কে ঢেকে অনৈতিক কাজে উৎসাহিত করে চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে যুবক-যুবতীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১৬০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386435
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রাত ০৯:০৩
হতভাগা লিখেছেন : সব ব্যবসা বুঝলেন ভাই সাহেব, ব্যবসা। এক জন প্রেমিক তার প্রেমিকা কিংবা একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাজে নিজের ভালোবাসা প্রমানের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অবিবেচকের মত। সেখান থেকে আগত টাকা ধরার জন্যই ব্যবসায়ীরা এই দিবসের প্রচলন করিয়েছে।
386521
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বিকাল ০৫:৩৮
েনেসাঁ লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File