The Art of Resistance-1 (প্রতিরোধের সংস্কৃতি-১): হানযালা (حنظلة)

লিখেছেন লিখেছেন মির্জা ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৫৮:৪৫ রাত



কোন জাতি যখন যায় দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে, যায় নিষ্পেষণ আর অবিচারের মধ্যে দিয়ে, যখন জাতির সদস্যদের করা হয় তাদের ভূমি থেকে উৎখাত, নিজ ভূমিতেই যখন তারা হয় পরবাসী, অস্ত্রই তখন হয়ে উঠে প্রতিরোধের মূখ্য ভাষা। তবে তা একমাত্র ভাষা হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যুগে যুগে প্রতিরোধ সংগ্রামীরা অস্ত্র ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরোধকে করেছে সমুন্নত, বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে স্বীয় প্রতিরোধের যুক্তিসমূহ। সেসব সাংস্কৃতিক উপাদান হতে পারে সাহিত্য, গান কিংবা চারুকলা।

১৯৪৮ সাল থেকে নিজ ভূমিতে পরবাসী হওয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামের এমনই এক অমর চিহ্ণ হানযালা। দশ বছরের বালক হানযালা; সে কোন সত্যিকার হাড্ডি-মাংসের কোন বালক নয়, একটি কার্টুন মাত্র। কিন্তু এই কার্টুনই হয়ে উঠেছিল গত শতাব্দীতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামের একটি শক্তিশালী ভাষা এবং এখনো সে তার এ স্বকীয়তা টিকিয়ে রেখেছে।

হানযালা হচ্ছে ১০ বছরের একটি বালক। পিছন ফিরে তাকানো এই বালকের হাতদুটো সবসময় পেছন দিকে আড়াআড়ি অবস্থায় পরস্পর ধরা থাকে। তার পা জোড়া জুতোহীন, খালি পা। এই কার্টুনটি মূলত প্রতীকি। এর পেছনের অর্থ এর স্রষ্টা সালিম নাজি আল আলীর মুখ থেকেই শুনুনঃ

“The child Handala is my signature, everyone asks me about him wherever I go. I gave birth to this child in the Gulf and I presented him to the people. His name is Handala and he has promised the people that he will remain true to himself. I drew him as a child who is not beautiful; his hair is like the hair of a hedgehog who uses his thorns as a weapon. Handala is not a fat, happy, relaxed, or pampered child. He is barefooted like the refugee camp children, and he is an icon that protects me from making mistakes. Even though he is rough, he smells of amber. His hands are clasped behind his back as a sign of rejection at a time when solutions are presented to us the American way.

Handala was born ten years old, and he will always be ten years old. At that age, I left my homeland, and when he returns, Handala will still be ten, and then he will start growing up. The laws of nature do not apply to him. He is unique. Things will become normal again when the homeland returns.

I presented him to the poor and named him Handala as a symbol of bitterness. At first, he was a Palestinian child, but his consciousness developed to have a national and then a global and human horizon. He is a simple yet tough child, and this is why people adopted him and felt that he represents their consciousness." [১]

অনুবাদঃ “হানযালা হচ্ছে আমার স্বাক্ষর। আমি যেখানেই যাই, সবাই আমাকে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। আমি যখন (পারস্য) উপসাগরীয় দেশগুলোতে ছিলাম তখন আমি এই বাচ্চাটিকে তৈরী করি এবং মানুষের সামনে একে উপস্থাপন করি। এর নাম হানযালা এবং সে নিজ জনগণকে ওয়াদা দিয়েছে, সে তার নিজের প্রতি সবসময়ই সৎ থাকবে। আমি একে বাচ্চা হিসেবে এঁকেছি যে কিনা মোটেই সুন্দর না। তার চুলগুলো দেখতে শজারুর কাঁটার মত যেটা কিনা নিজের কাঁটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। হানযালা কোন মোটাসোটা, সুখী, আরাম করা, আদরের দুলাল প্রকৃতির বাচ্চা নয়। সে রিফিউজি ক্যাম্পের বাচ্চাদের মতই নগ্নপদ। সে এমন এক চিহ্ণ যা আমাকে ভুল করা থেকে রক্ষা করে। যদিও সে অগোছালো, তার থেকে এম্বারের গন্ধ আসে। তার হাতদুটো পেছনের দিকে ধরা, যা এ সময়ে আমেরিকান স্টাইলে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান প্রত্যাখ্যানের প্রতীকস্বরূপ। হানযালা বয়স দশ বছর এবং সে সবসময়ই দশ বছরের থাকবে। এ বয়সেই আমি আমার জন্মভূমি ছেড়েছি। যখন সে (নিজ জন্মভূমিতে) ফিরে যাবে, তখনো হানযালা দশ বছরেরই থাকবে এবন সে বড় হতে শুরু করবে। প্রকৃতির নিয়ম তার ক্ষেত্রে খাটে না। সে আলাদা। সব তখনই স্বাভাবিক হয়ে আসবে, যখন সে তার জন্মভূমিতে ফিরে যাবে। আমি তাকে গরীবদের কাছে উপস্থাপন করেছি এবং তার নাম দিয়েছি হানযালা তিক্ততার প্রতীক হিসেবে। প্রথমে সে ছিল একটি ফিলিস্তিনী শিশু। কিন্তু তার চেতনা ক্রমান্বয়ে পরিপক্ক হয়ে প্রথমে জাতীয় পর্যায় এরপরে বৈশ্বিক ও মানবিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সে খুবই সাদামাটা কিন্তু দৃঢ় একটি বাচ্চা। সেজন্যই মানুষ তাকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং ধরে নিয়েছে হানযালা তাদের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।”



হানযালার স্রষ্টা সালিম নাজি আল আলী ১৯৩৬ সালে ফিলিস্তিনের আল শাজারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তার বয়স যখন ১০, তখন তার পরিবার ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত হয়ে লেবাননের আইন হিলওয়াহ রিফিউজি ক্যাম্পে চলে যান। তিনি ছিলেন আরব বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কার্টুনিষ্ট। তিনি তার কার্টুনগুলোতে তৎকালীন ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক ও ফিলিস্তিনের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছে, “এ লোক মানুষের অস্থি দিয়ে চিত্রাঙ্কন করে।” ১৯৮৭ সালের ২২ জুলাই লন্ডনে আল ক্বাবাস পত্রিকার অফিসের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। জানা যায়, তাঁর হত্যার পেছনে ছিল পিএলও এবং মোসাদের হয়ে কাজ করা দুজন ফিলিস্তিনী ডাবল এজেন্ট।

হানযালাকে নিয়ে কয়েকটি কার্টুনঃ



উপরের ছবিতে উঠে এসেছে, কিভাবে আরব শাসকরা ফিলিস্তিন প্রশ্নে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মর্জিমতই কথা বলে থাকে।



এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানকৃত অস্ত্র দ্বারা ইসরাইল ফিলিস্তিনের জনপদসমূহকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।



দেখা যাচ্ছে, কিভাবে আরব বিশ্বের তেলসম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাচ্ছে।



কার্টুনটিতে দেখা যাচ্ছে, হানযালা ফুলগাছ সরবরাহ করে বেড়াচ্ছে। এ ফুল মূলত প্রতিরোধের চেতনাকে প্রতীকায়িত করে। এ ফুলগাছ বড় হয়ে কারাগারের শিককে দেয়াল থেকে আলাদা করে ফেলছে। আর এ শিক ভেঙ্গে কারাগারবাসীরা বেরিয়ে আসছে। মূলত এর অর্থ হচ্ছে, স্বাধীনতার চেতনাকে পরিপুষ্ট করে একসময় ফিলিস্তিনীরা ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে একসময় বেরিয়ে আসবে।



ইটালীয় ফিলিস্তিনপন্থী এক্টিভিষ্ট ভিত্তোরিয়ো আরিগনির সাথে হানযালা

তথ্যসূত্রঃ

১) http://handala.org/handala/index.html

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

256956
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:০৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ভালো লাগলো, ধন্যবাদ
২২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:২০
200666
মির্জা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
256962
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৪৫
গ্রামের পথে পথে লিখেছেন : খুব ভাল কথা বলেছেন। ফিলিস্তিনিরা হানডালার মত অহিংস পথ বেছে নিলে এতো দিনে সভ্য সুশিক্ষিত গনতান্ত্রিক স্বাধীন ফিলিস্তিন রাস্ট্র বন্ধুপ্রতিম ইসরাইলী রাস্ট্রের পাশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকতো।

২২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:২৪
200668
মির্জা লিখেছেন : ফিলিস্তিনিরা তথাকথিত অহিংস প্রতিরোধের পথ বেছে নিলে আজ ফিলিস্তিনীদের কোন অস্তিত্বই থাকত না। আর হানযালা অহিংসার কোন প্রতীক নয়। ধন্যবাদ।
২২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৫৭
200674
গ্রামের পথে পথে লিখেছেন : তো, এত আল্লাবিল্লা, জেহাদ, সন্ত্রাস করে ফিলিস্তিনিরা কি পেল? আন্ডা??
২২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:০৫
200676
মির্জা লিখেছেন : যেখানে সেখানে ল্যাদানো আপনার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে ব্লক করলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File