<><><> অর্থ;-আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার রয়েছে৷ আমি নির্দিষ্ট পরিমানই তা অবতরণ করি৷<><><>

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:১৮:৪৭ রাত

(উর্দুবয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)

সুরা হিজর রুকু;-২ আয়াত;-১৬-২৫

১৬/وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ

অর্থ;-আর নিশ্চয় আমি দূর্গ সৃষ্টি করেছি ও তাকে দর্শকদের জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি৷

# এ আয়াতটি ‘মোতাশাবেহাতের’ অন্তর্গত৷ তবে ধারণা করা হয় আল্লাহ তায়ালা আসমানকে সুরক্ষিত করেছেন৷

১৭/وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ

অর্থ;-আর আমি আসমানকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান হতে সু রক্ষিত করেছি৷

১৮/إِلاَّ مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُّبِينٌ

অর্থ;-কিন্তু কেউ যদি চুরি করে কিছু শুনে পালায়, এক উজ্জ্বল অগ্নিশিখা তার পশ্চাদ্ধাবন করে৷

# আল্লাহ তায়ালা গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টি করে আসমানকে দর্শকদের জন্য সুশোভিত করেছেন আর তা শয়তানের হাত থেকে নিরাপদে রেখেছেন৷ প্রাণী সৃষ্টির তালিকায় মানুষের অবস্থান অনেক শেষের দিকে৷ হয়তোবা এখনও অনেক সৃষ্টির কথা আজও মানুষ জানেনা৷ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করার আগে আগুনের তাপ বা আঁচ থেকে (শিখার উপরে যে অংশটি দেখা যায়না অথচ আগুন অপেক্ষা দাহ্য) জ্বীন সৃষ্টি করেছেন৷ তারও আগে নূর হতে ফেরেশ্তা সৃষ্টি করেছেন৷ মানুষের রূহকেও ঐ সময় সৃষ্টি করেছেন৷ আগুন এবং নূর কাছাকাছি জিনিষ৷ তাই ফেরেশ্তাদের যেমন সর্বত্র অবারিত মুহূর্তে যাতায়াত, শয়তানেরও তাই৷ আর সেজন্যই আজাজীলের (ঈবলীশ) ফেরেশ্তাদের সাথেই ওঠাবসা ছিল৷ উপাদানের ভিত্তিতে শক্তি সামর্থ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের চাইতে জ্বীনের বেশী৷ ধারণা করা হয়, সৌর জগতের বাইরে একটি বিশেষ গণ্ডীর বাইরে যাবার অধিকার শয়তানের নাই৷ আর সেখানেই হয় আল্লাহ তায়ালার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত৷ কোন শয়তান কোন ভাবে কোন সিদ্ধান্ত ফাঁস করার জন্য চুরিকরে শুনে পালাতে চায় তখনই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র তার পিছু ধাওয়া করে৷ ঐ নক্ষত্রগুলো শয়তান নিধনে মিজাইল হিসেবে কাজ করে৷

একটা উদাহরণে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে৷ প্রধান মন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের দপ্তরে যদি কাউকে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তা টাইপ করে নিয়ম মাফিক প্রাপকের কাছে পৌঁছতে কিছু সময় লাগবে৷ আর যদি ঐ অফিসের টাইপিষ্ট ফোনে প্রাপক কে নোটিশের বিষয়ে জানিয়ে দেন তবে, ঐ নোটিশের গুরুত্বে হেরফের হতেই পারে৷

১৯/وَالأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونٍ

অর্থ;-আর আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং সেখানে নোঙ্গর স্থাপন করেছি, আর সেখানে সব ধরণের বস্তু পরিমিত ভাবে উৎপন্ন করেছি৷

# ভূ-পৃষ্ঠের পাহাড় পর্বতকে নোঙ্গর বলা হয়েছে আর আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জিনিষই পরিমান মত সৃষ্টি করেছেন৷

২০/وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَن لَّسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ

অর্থ;-আর আমি সেখানে তোমাদের জন্য জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের জীবিকাদাতা তোমরা নও৷

# সকল প্রানীর জীবিকা আল্লাহই দিয়ে থাকেন৷ আমাদের গৃহ পালিত প্রানীগুলোর আহার আমাদের হাত দিয়েই যায়, তাই মানুষকে তাদের জীবিকা দাতা বলা হয়েছে৷ এ ছাড়াও পৃথিবীতে অসংখ্য প্রানী রয়েছে যাদের রিজিক আল্লাহ সরাসরি যুগিয়ে থাকেন৷

২১/وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلاَّ بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ

অর্থ;-আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার রয়েছে৷ আমি নির্দিষ্ট পরিমানই তা অবতরণ করি৷

# আল্লাহ তায়ালার ভাণ্ডারে কোন জিনিষের কমতি নাই৷ তিনি প্রয়োজন মোতাবেকই তা পৃথিবীতে পাঠান৷ সবের মধ্যেই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করেন৷ একটা মাছ যে পরিমান ডিম দেয় তার সবকটি যদি বাচ্চা হত তবে একটি মাছের দ্বারায়ই পৃথিবীর জলাশয় পূর্ণ হয়ে যেত৷

২২/وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ

অর্থ;-আর আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি৷ অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষন করি৷ এর পর তোমাদেরকে তা পান করাই৷ বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভাণ্ডারই নেই৷

# জলীয় বাষ্প বাতাসের দ্বারা উপরে ওঠে ও তাথেকে মেঘের সৃষ্টি হয়৷ আর তা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বর্ষন করে প্রানী জগত ও বৃক্ষ জগতের পানির চাহিদা পূরণ করে৷ এ ছাড়া পাহাড় পর্বতে বর্ষনের ফলে বরফের সৃষ্টি হয়ে পানির বিরাট মজুদ গড়ে তোলে৷ ঝর্ণা হয়ে তা পূনরায় সমুদ্রে ফিরে যাবার পথেও পানির সরবরাহ গড়ে তোলে৷ আমরা দীঘি, টিউব ওয়েল বা কূপের থেকে যে পানি পাই তাও মূলত মেঘ অথবা ঝর্ণা হতেই মজুদ থাকা পানি৷ পানির এ পরিক্রমা বা এত বিরাট পানির মজুদ মানুষের সাধ্যে নেই৷ এছাড়া বাতাসের আরও একটা কাজ হল উদ্ভিদ জগতে পরাগায়ন করা৷

২৩/وَإنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ

অর্থ;-আমিই জীবন দান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী৷

২৪/وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِينَ

অর্থ;-আর আমি জেনে রেখেছি তোমাদের অগ্রগামীদেরকে এবং আমি জেনে রেখেছি তোমাদের পশ্চাদগামীদেরকে৷

# এটি প্রাথমিক অবস্থার সুরা, তাই কারা দাওয়াত পাওয়া মাত্র হেদায়েতের হকদার হবে আর কারা পরে আসবে আর কারা হাজার অনুরোধেও ইমান আনবে না তা আল্লাহর জানাই ছিল৷ আমরা সুরা তওবার ১০০ নং আয়াতে এ বিষয়ে জেনে এসেছি৷

২৫/وَإِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ

অর্থ;-অবশ্যই আপনার রব তাদেরকে একত্র করবেন, নিশ্চয় তিনি হেকমত ওয়ালা, সর্বজ্ঞ৷

# হেদায়েত নসীব আগে হোক আর পরে, অথবা নাই হোক সকলকেই আল্লাহর সামনে একই সময় হাজির করা হবে৷

বিষয়: বিবিধ

১৩৪২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364870
০৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam respected brother. Very touchy n beautiful presentation with nice explanation mashallah in the light of al quran. Jajakallahu khair.
০৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৪:৩৪
302678
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলাইকুমুস সালাম,
আমিন৷ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
364904
০৭ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:৫১
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সর্বোচ্চ আসমানী গ্রন্থের অনুবাদ ও সারমর্ম তুলে ধরার জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর
০৭ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
302737
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলাইকুমুস সালাম৷ আমিন৷ অনেক অনেক ধন্যবাদ৷
364946
০৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:৩৮
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের চাচাজান ।
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৫:৩১
302782
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল আছ তো? কয়েক দিন আস না৷ শুভেচ্ছা নিও৷ ভাল থাকো৷
০৯ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:১৭
302899
আফরা লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ !ভাল আছি চাচাজান তবে পড়াশুনা ও জব নিয়ে খুবব্যাস্ততা যাচ্ছে । আমার জন্য দুয়া করবেন চাচাজান ।
364961
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:৩০
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ইসলাম প্রচার করে এমন ব্লগার সংখ্যা কম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
০৮ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
302810
শেখের পোলা লিখেছেন : শুধু ব্লগার কমই নয়, পাঠকও কম৷ যারা ইসলাম নিয়ে বড় বড় ওয়াজ নসিহত লেখেন তারাও অনেকে আমার এ কোরআনের কথা পড়তে আসেন না৷ ককেউ না পড়লেও আমি আমার প্রচার করেই যাব ইনশাআল্লাহ৷ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
ব্লগের উপর বোধ হয় আবার হামলা হয়েছে৷ এখন ওপেন করতে সমস্যা হল৷
365645
১৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৬
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়ের
১৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
303349
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File