"তারা সামান্য হেঁসে নিক, কর্ম ফলের জন্য তাদের অনেক বেশী কাঁদতে হবে৷"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৮:২৪:০১ সকাল

(ধারাবাহিক অনুবাদ, পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আত তাওবাহ, রুকু;-১১ আয়াত;-৮১-৮৯

মোনাফেকদের স্বরূপ উদ্ঘাটনের ধারা বাহিকতায় শুরু হতে যাচ্ছে এ রুকুটিও৷ যারা নিজেরা মিথ্যা অজুহাতে রসুল সঃ এর তাবুক অভিযানে শরিক হওয়া থেকে অব্যাহতি নিয়েছিল, তারা বিভিন্ন কথায় অন্যান্ন সাহাবীদেরও নিরুৎসাহিত করতে থাকল৷

৮১/ فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلاَفَ رَسُولِ اللّهِ وَكَرِهُواْ أَن يُجَاهِدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَقَالُواْ لاَ تَنفِرُواْ فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَّوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ

অর্থাৎ;-যারা পিছনে থেকে গেল তারা আল্লাহর রসুলের বিরদ্ধাচরণ করে, নিজেদের অবস্থানে বসে থাকতে আনন্দ লাভ করল৷ এবং তাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, তোমরা এমন ভিষন গরমের দিনে অভিযানে বের হয়োনা৷ আপনি বলেদিন; জাহান্নামের আগুন উত্তাপে প্রচণ্ডতম যদি তারা বুঝতে পারত৷

৮২/ فَلْيَضْحَكُواْ قَلِيلاً وَلْيَبْكُواْ كَثِيرًا جَزَاء بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ

অর্থাৎ;-তারা সামান্য হেঁসেনিক, তাদের অনেক বেশী কাঁদতে হবে, তাদের কৃত কর্মের জন্য৷

# আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন স্বল্প সময়ের৷ তাই যারা নিজ দায়ীত্ব ও দুনিয়ায় আসার সময় আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা ভূলে আনন্দ ফুর্তীতে থাকতে চায়, তাদের পরবর্তীতে বেশী সময়ের জন্য কাঁদতে হবে৷

৮৩/ فَإِن رَّجَعَكَ اللّهُ إِلَى طَآئِفَةٍ مِّنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ فَقُل لَّن تَخْرُجُواْ مَعِيَ أَبَدًا وَلَن تُقَاتِلُواْ مَعِيَ عَدُوًّا إِنَّكُمْ رَضِيتُم بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُواْ مَعَ الْخَالِفِينَ

অর্থাৎ;-যদি আল্লাহ আপনাকে তাদের কোন দলের কাছে ফিরিয়ে আনেন এবং তারা যদি কোন অভিযানে বের হবার জন্য আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তবে আপনি বলেদিন; তোমরা অবশ্যই আর কোনদিন আমার সাথে বার হবেনা এবং আমার পক্ষ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না৷ তোমরাতো প্রথমবার বসে থাকাই পছন্দ করে ছিলে, অতএব বসে থাকাদের সাথেই বসে থাক৷



# যারা মিথ্যার ছলনা করে জেহাদকে এড়িয়ে আনন্দবোধ করেছিল, তাদের জন্য, নবীর সাথে ভবিষ্যতে জেহাদে শরীক হওয়াকে রোহীত করা হল৷ এতে করে কিছু মোনাফেকের মুখোশ সবার সামনে খুলে গেল৷ ধারণা করা হয় এ আয়াতটি তাবুকে অবস্থান কালে নাজিল হয়ে ছিল৷

৮৪/ وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلاَ تَقُمْ عَلَىَ قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُواْ وَهُمْ فَاسِقُونَ

অর্থাৎ;-তাদের মধ্য হতে কারও মৃত্যু হলে আপনি তার জানাজা কখনও পড়বেননা বা তার কবরের কাছে দাঁড়াবেন না৷ তারাতো আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে আর রসুলের সাথে৷ আর তারা ফাসেক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে৷



# এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে অনেক মোনাফেককে সনাক্ত করা গেলেও এ আয়াতটির কল্যানে, রসুল সঃ যার মৃত্যুতে জানাজা পড়াতে নিজে যেতেন না, সাহাবীদের কাছে তখনই পরিষ্কার হয়ে যেত যে মরহুটি মোনাফেক ছিল৷ যদিও রসুল সঃ সকলকেই চিনতেন, কিন্তু তিনি কোনদিন কাউকেই মোনাফেক বলে পরিচয় দেননি৷ দুনিয়াতেই মোনাফেকদের জন্য এটি দারুন লাঞ্ছনার বিষয়৷ আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন৷

৮৫/ وَلاَ تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَأَوْلاَدُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللّهُ أَن يُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ

অর্থাৎ;-আর তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে চমৎকৃত না করে৷ আল্লাহতো চান এর মাধ্যমেই দুনিয়ায় তাদের শাস্তি দিতে, এবং কাফের থাকা অবস্থায়ই যেন তাদের প্রাণ নির্গত হয়।

# এ সুরার ৫৫ নং আয়াতটিই সামান্য পরিবর্তন হয়েই পুনরায় এখানে এসেছে৷ মোনাফেক বা কাফেরদের ধন-সম্পদ, শৌর্য-বীর্য দেখে নবী সঃ ও মুমিনদের অবাক হতে নিষেধ করা হয়েছে৷ কেননা আল্লাহ এ সবের দ্বারাই তাদের পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান৷ আমরা অনেকেই অনেক বিত্তশালীর অনেক দুঃখ দেখে থাকি, পারতপক্ষে এগুলোই তার শাস্তি৷

৮৬/ وَإِذَآ أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَجَاهِدُواْ مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُواْ الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُواْ ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِينَ

অর্থাৎ;-আর যখন এই মর্মে কোন সুরা নাজিল হয় যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ইমান আন এবং রসুলের সঙ্গী হয়ে জেহাদ কর, তখন তাদের মধ্যের সামর্থবান লোকেরা বলে, আমাদের অব্যাহতি দিন যাতে আমরা বসে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পারি৷

৮৭/رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لاَ يَفْقَهُونَ

অর্থাৎ;-তারা অন্তঃপুরবাসীনীদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর মেরে দেওয়া হল তাদের অন্তরে, ফলে তারা বুঝতে পারেনা৷

৮৮/لَـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থাৎ;-কিন্তু রসুল ও তার সাথে যারা ইমান এনেছে, তারা জেহাদ করেছে নিজেদের মাল ও নিজেদের জান দিয়ে৷ তাদের জন্য রয়েছে যাবতীয় কল্যান ও তারাই সফলকাম৷



৮৯/ أَعَدَّ اللّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ;-আল্লাহ তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নহর সমুহ৷ সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে৷ এটাই বিরাট সাফল্য৷

# ‘ফালাহ’ শব্দের অর্থ সাফল্য করা হয়েছে৷ এ শব্দটির অনেক তাৎপর্য রয়েছে, যা সুরা ‘মু’মিনুন’ এ করার ইচ্ছা রইল৷

বিষয়: বিবিধ

১৪১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File