একটি সত্য গল্প

লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ২০ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:২৫:২৬ রাত

উমেষ আর গমা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। তাদের একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যত কে সামনে রেখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সেই সুদুর নেপাল থেকে কানাডা এসেছিলো। পেশায় দুজন ইঞ্জিনিয়ার হলেও কানাডা এসে প্রথমে কাজ খুঁজে পাওয়া আট দশজন ইমিগ্র্যান্টের মতো তাদেরও অনেক চড়াই উতরাই পেরুতে হচ্ছে। উমেষ নিয়মিত স্কুল গিয়ে তার পেশা আপগেড করার চেষ্টা করছে পাশাপাশি বিকেলে পিজা ডেলিভারি করে। সেখানেই আমার সাথে তার পরিচয়। কিন্তু বেশীদিন কাজ করতে পারেনি। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী মালিকদের এশিয়ান ব্যাবহারে তার ইগুতে যতেষ্ট প্রভাব ফেলে যা খুবই স্বাভাবিক। প্রায়ই গল্পের ফাকে তার ভবিষ্যত ইচ্ছা তুলে ধরে। তার খুব ইচ্ছা নিজে প্রফেশনাল সার্টিফিকেট পেয়ে একটা ভালো জব পেলে গোমাকে ও সেইম সূ্যোগটা করে দিবে। আর গোমা একটি কফি সপে কাজ করে সংসারের নিয়মিত খরচাদি চালানোর চেষ্টা করছে। সেই পিজা ছাড়ার পর আমার সাথে কোন যোগাযোগ নেই প্রায় দুই বছর। হঠাত করেই গত মাসে তার খুঁজ পেয়ে যাই যা অনেকটা কাকতালীয় এবং বেদনাহত ও বটে। সেদিন আমাদের এক বন্ধুর স্ত্রী কথা প্রসঙ্গে একটা নেপালী পরিবারের গল্প করছিলো। যে ওদের পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা আছে আর একটা বাচ্চা জন্মের পেটে আসার প্রথম মাসেই মেয়েটির ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিছু দিন আগে দ্বিতীয় বাচ্চাটির জন্ম হয়েছে। ডাক্তার বলেছে সর্বোচ্চ চার মাস বাচবে হয়তো। আমার কেন জানি ঘটনা শুনার পর বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো। আমি নেপালী ফ্যামিলিটির সাথে কন্টাক্ট করার ইচ্ছা পোষন করলে ভাবী তাদের নামে ফেসবুকে একটি পেজের সন্ধান দেন। 'প্রে ফর গমা (Pray for Goma)' নামে পেজে ডুকে ছবি গুলি খুঁজে দেখতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ভাগ্যের কি খেলা মেয়েটি সেই উমেষের স্ত্রী। খুব একটা আবেগ তাড়িত হয়ে গেলাম। আমার কাছে তার কোন ফোন নাম্বার নেই তাই আর কোন যোগাযোগ করা হয়ে উঠেনি। মনে মনে অনেকদিন ধরেই এই ফ্যামিলিটিকে ফাইনান্সিয়ালি হেল্প করার কথা ভাবছিলাম। গতরাতে প্রে ফর গমা ফেসবুক পেজে সর্বশেষ ম্যাসেজটি পড়ে নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। উমেষ তার পাঁচ বছরের যে ছেলেটা ছিলো তাকে কারো মাধ্যমে নেপাল পাঠাচ্ছে। টরন্টো এয়ারপোর্ট এ বসা তার ছেলেটির ছবি তার পেজে পোষ্ট করেছে পাশাপাশি ছোট্র একটি স্ট্যাটাস ও লিখেছে। তার পর থেকে আমি সারারাত অনেক কেদেছি, কেন কেদেছি জানিনা। বার বার ছোট কালের একটা ঘটনা মনে পড়ছিলো। আমাদের পাশের বাড়ির খোকনের মা তার এক বছরের সন্তান কে রেখে যখন মারা যায় আমার বয়স তখন আট কি নয় হবে। তখন আমি প্রায়ই আমাদের বাথরুমে বসে ঐ বাচ্চাটার কথা মনে করে কাদতাম। মনে হচ্ছে তখনের সেই ফিলিংসটা এখনো আছে। বার বার কেন জানি ফেসবুকের স্ট্যাটাসটা চোখে পড়ছে। বসে বসে ভাবছিলাম আল্লাহ এই পৃথিবীতে এত মায়া, ভালোবাসা দেয়ার পর কেন আবার এ রকম কঠিন বেদনার মুখোমুখি করে! আল্লাহই জানেন। তার লীলা বুঝা বড় দায়।

স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরলাম।

'Saying good bye with out meeting him

Happiness will prevail where ever you go my dear son.

Enjoy the loving touch of family

You no longer have to wander here and there.

Home sweet home you will love.

Sorry for not being able to comfort you

Its hard for us to depart

But know its the best

To care for your best

I need for you to depart.

Missing you. Lots of love from mami and baba.

God will reunite us soon'

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300870
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:১৫
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : দুঃখের মত পরশ পাথর আর নাই।
300884
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:০৩
shaidur rahman siddik লিখেছেন : Crying
300916
২০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : Sad Sad Sad কষ্টদায়ক লেখা। অনেক কষ্ট পেলাম।
300924
২০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:০১
হতভাগা লিখেছেন : খারাপ লাগলো
300933
২০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৫২
আফরা লিখেছেন : আসলেই অনেক কষ্ট লাগল ।
301105
২১ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০৩
মু নূরনবী লিখেছেন : মানুষের জীবন এমন কেন?...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File