@ সৌদি প্রবাসীদের একাল-সেকাল @

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল গাফফার ৩০ জুলাই, ২০১৭, ০৩:৩৩:৫০ রাত



দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় সৌদি আরব। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ হতে অনভিপ্রেত কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে যায় সৌদি আরবের শ্রমবাজার এবং সেই থেকেই দীর্ঘ এই সময়টিতে বাংলাদেশিরা ইমেজ সঙ্কটে পড়ে ।যদিও নাম মাত্র জনশক্তি ওই সময়ের মধ্যও সৌদিতে গেছেন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সৌদি আরবে কর্মী যাওয়া বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়ে পুরো শ্রমবাজারে। জনশক্তি রফতানি অর্ধেকে নেমে আসে।আরব আমিরাত , কাতার, ওমান, বাহরাইনের মতো ছোট দেশে কর্মীর চাহিদা না থাকার পরেও চাপ বেড়ে যায় এবং উল্লেখিত দেশ গুলোতেও একটি সময় জনশক্তি রফতানি সংকিচিত হয়ে যায় ।ফলে বিদেশ ফিরত সহ নানান নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করে । এমতাবস্থায় সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্তরায় দূর হয়েছে যা আমাদের জন্যে পরম আনন্দের এবং খুবি ইতিবাচক ।

২০১৫ সালের আগ মহত্ব পর্যন্ত সৌদি আরব ছিলো টিকসই অর্থনীতির দেশ এবং সেই সময় সে দেশে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের রিজাব ছিল ৭৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আমাদের দেশের সর্বচ্চো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে তফাৎ দেখুন । এবং কি ভারতের মত ১২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশের চেয়েও বেশি । ২০১৫ সালে শুরু হওয়া ইয়ামানের সাথে যুদ্ধ, সৌদিতে উল্লেখ্য যোগ্য হারে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত তৈলের দাম , স্বর্ণের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবের অর্থনীতিতে অকল্পনীয় হারে ধস শুরু হয় । যা আজো অব্যাহত আছে । সেই অর্থনীতির ধস সামাল দিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সহ অনেক হাস্যকর সিদ্ধান্তও নেয় সৌদি সরকার যা অধিকাংশই দেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের ঝুঁকিতে ফেলে দেয় এবং প্রবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন । প্রশ্ন থেকেই যায় অর্থনীতির এহেন অবস্থায় ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত কত টুকু যথোপযুক্ত ছিল? সিদ্ধান্তটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনীতিক, বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে পাশে পাবার এবং গৃহ কর্মী সঙ্কট মোকাবেলার কৌশল মাত্র । যা এখন অনেক খানিই স্পষ্ট । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা একাধিক সংবাদ বিশ্লেষণে এটাই বাস্তবতা সৌদি অর্থনীতি যে ঝুঁকিতে রয়েছে তা সহসায় কেটে উঠা সম্ভব নয়। ফলে বাংলাদেশের মত নিম্ন মধ্য বিত্ত রাষ্ট্র গুলোর জন্য আপাততঃ কোন সুখবর নেই । কারণ সৌদিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ায় ২০১৭ জানুয়ারি থেকে সৌদিতে জনশক্তি রপ্তানি আকাশছুঁয়া গতি পায় । ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে গত এক বছরের চেয়েও বেশি কর্মী রপ্তানি হয় । জানুয়ারি থেকে মার্চে মোট কর্মী এসেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৬ জন। এবং অধিকাংশ দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক কাজ না পাওয়ায় অতিরিক্ত কর্মী আসার বিষয়টি উদ্বেগজনক জানিয়ে সৌদি বাংলাদেশী দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন । '' এখনই কারণ অনুসন্ধান করে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও শ্রমিকদের দক্ষ করতে হবে তবুও যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ না হয় তাহলে এত কর্মী আসা বন্ধ করতে হবে । সৌদি অর্থনীতির বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য সৌদি থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স উল্লেখ্য যোগ্যও হারে কমে যাওয়াও একটা বড় প্রমাণ । এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা সামনে দিনে আরো মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে । বাংলাদেশের মানুষ খুবি আবেগপ্রবণ বিশেষ করে মক্কা - মদিনা এবং এলাকার পরিচিত পরিজন থাকায় তাদেরকে কোন ভাবেই এই দেশের বাস্তবতা বুঝানো যাচ্ছেনা । ফলে ধার দেনা , জমি জমা ,উচ্চ মূল্যে সুদি টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে । দিক কূল না পেয়ে দেশে ফিরত যেতে চেয়েও পাচ্ছেনা ফলে মানসিক টেনশনে কেউ কেউ স্টক করা সহ বিভিন্ন শাররিক -মানসিক রোগে ভোগছেন ।এই দেশে প্রায় এক যুগের বেশি হতে চললো আমার । দেশ থেকে এই সুযোগে অসংখ্য লোক পাড়ি জমিয়েছে , কেউ কেউ বাড়িতে যেয়ে নাম্বার চাচ্ছে কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারি কিনা এ আশায় ! আসলে বাস্তবা মেনে নেওয়া ছাড়া এখন কিবা করার । এই তো কয়েক মাসের সাধারণ ক্ষমায় বিভিন্ন দেশের প্রায় ১ মিলিয়ন শ্রমিক স্বেচ্ছায় কারণ দেখিয়ে , এদেশ থেকে চলে গেছে। এসবের মধ্য বাংলাদেশী শ্রমিক প্রায় ৫০ হাজারেরও কিছু বেশি । এসব শ্রমিকরা দীর্ঘ প্রবাস জীবনে অদক্ষ থেকে দক্ষ হয়েও সব কিছু অনুকূলে না থাকায় দেশ ছাড়ার মত সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এসব ছাড়াও অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে । চলবে .........।

বিষয়: বিবিধ

৮২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File