কুরআনের একটি আয়াত, একজন সাঈদি এবং আমি

লিখেছেন লিখেছেন প্যরাপিন ১৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:০৪:১৮ সন্ধ্যা



সম্ভবত ১৯৯৮ সাল। তখন আমরা খুলনা থাকতাম। রমজানের ঠিক একদিন আগে খালিশপুরের ঝিল-পুকুর মাঠে ( টেলিভিশন সেন্টারের উল্টোদিকে) সাঈদী সাহেবের মাহফিল। যাবো কিনা চিন্তা করতে ছিলাম কারণ শাবানের ২৯ তারিখ । চাঁদ দেখা গেলে পরদিন রমযান। মানে তারাবির নামাজ পড়তে হবে, আমি আবার রমজানের খতম তারাবি পারতপক্ষে মিস করিনা । চিন্তা করতে ছিলাম কি করবো। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম মাহফিলে যাবো , বড় হয়ে উনার মাহফিল সরাসরি শুনা হয়নি। যদিও ঘরে উনার ওয়াজের ক্যাসেট আছে অনেক।

মাগরিব নামাযের পর , ইসলামি সংগীত গাইল একটা ছেলে খুব ভালো লাগলো এর পরে সাঈদী সাহেব আসলেন মঞ্চে। সালাম দিয়ে দরুদ শরীফ পড়ে, উনি তিলাওয়াত কলেন

٢٨ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ ۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

“হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্র”।

তারপর ঐ দিনের পুরটা সময় তিনি আয়াতটির ব্যাখ্যা করলেন , খুব ভালো লেগেছিল সেদিন। এখন ও সে আয়াতটি আমার কানে বাজে । কেউ সাঈদী সাহেবের কথা বললে আমার প্রথমে ঐ আয়াতটির কথা মনে পড়ে। মাহফিল শেষে একজন ভাই ইসলাম গ্রহণ করলেন। সাঈদী সাহেব তার নাম রাখলেন আব্দুর রহমান। এরপর থেকে সাঈদী সাহেবের মাহফিল মিস করতাম না। সব মাহফিলে দেখতাম ২-১ জনে নওমুসলিম থাকতেন।

একটা ঘটনা, খুব অবাক লাগে আমার কাছে , সার্কিট হাউজ মাঠে একবার মাহফিল ছিল, মাহফিলে শেষে শুনলাম জানাজা নামায আছে, খুলনার সুপরিচিত এক রাজনৈতিক ব্যক্তির মা । উনি নিয়ত করেছিলেন, সাঈদী সাহেব যেন উনার জানাজা পড়ান , দেখুন কি আশ্চর্য ঐ মহিলা অসুস্থ ছিলেন কিন্তু যেইদিন সাঈদীর মাহফিল খুলনায়, সেই দিনই বাদ-যোহর মারা গেলেন।

কয়েক বছর ধরে উনার মাহফিল আমরা দেখতে পাইনা, জানিনা কত জন নও-মুসলিম থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। আমি দেখেছি শহর কিংবা গ্রামে, অনেকের ঘুম ভাঙ্গে সাঈদী সাহেবের ওয়াজের আওয়াজ শুনে, হয়তো এখন ও সেটা ঘটে, আমি প্রবাসে তাই শুনতে পায়না। তবে বিদেশে এসে দেখছি অনেক বাঙ্গালীর রুমে সাঈদীর মাহফিলের সিডি আছে সময় ফেলে তারা সিডি চালিয়ে উনার আলোচনা শুনে।

উনার মাহফিলে সাধারণ মানুষের সাথে, অনেক আলেমও যেতেন যা আমার কাছে খুব অবাক লাগতেন। আমাদের ইমাম যিনি একজন হা-ফেজ মাওলানা উনিও যেতেন সব মাহফিলে। পরের জুমায় ঐ আলোচনাটা করতেন। মিল এলাকায় ডিউটির কারণে অনেক ভাই মাহফিলে যেতে পারতেন না তাই তাদেরকে উনি সে আলোচনা শোনাতেন। খুলনার শিল্পাঞ্চলে ফরিদপুর–গোপালগঞ্জের মানুষ বেশী স্বভাবত আওয়ামীলীগ কিন্তু সাঈদী সাহেবকে ভালোবাসতেন , শ্রদ্ধা করতেন, অনেকের অনুযোগ ছিল, সাঈদী সাহেব যদি জামাত না করতেন, কিংবা যদি নিজে কোন দল করতেন। একজন মুদি দোকানদার ছিলেন উনি মিল এলাকায় দোকান করতেন, ছুটির দিনে বেচাকেনা সাধারণত বেশী হয় , উনি সেই দিন সাঈদীর মাহফিলে যেতেন , দোকান বন্ধ রেখে।

Dark Justice নামে একটা English সিরিয়াল দেখতাম বিটিভিতে, সেখানে তথ্য প্রমাণের অভাবে সাধারণ লোকজন হেরে যেত। পরে দেখতাম জজ সাহেব নিজে ছদ্ম-বেশে গিয়ে সঠিক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতেন, আদালতে উপস্থাপন করতেন, সাধারণ মানুষ গুলো সঠিক বিচার পেতেন পরিণামে তাদের মুখে হাসি ফুটতও। আমার কি আশা করবো, যখন বলা হয় আমার ৭১ সালের দেলোয়ার শিকদারের বিচার করেছি, বর্তমান সাঈদীর নয়। বুঝতেপারিনা ১৯৫৭ সালে সাঈদী ছিলেন, উনি কেন ৭১ সালের জন্য শিকদার হন অথবা যে শিকদার ৭১ সালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হলেন , সে কিভাবে সাঈদী হন। মহান সংসদে যে বিচারপতি নিয়ে সমালোচনা হয়, তাকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।আবার তাকে প্রমোশন দিয়ে আপিল বিভাগে আনা হয় ।

জানিনা কি হবে , তবে এই টুকু বুঝি, প্রত্যেকটা মানুষের কাছে বড় আদালত তার বিবেক , আসামি সে নিজেই, আমি কিংবা আপনি যে, যেখানে আছি, মাঠে , ঘাটে, ব্যবসায়, চাকুরী , কিংবা আদালতে। আর সবার উপরে একজন আছেন এটা সবাই মানি , দেখা যাবে তার ফয়সালা কি ।

আমি প্যারাপিন , জৈব রসায়নের নিষ্ক্রিয় একটি নাম , কোন প্রতিক্রিয়া নাই।

আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি, আমার একটি প্রাণের বিনিময়ে যদি ইসলামের এই খাদেম আবার ময়দানে ফিরে আসে , খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে কিংবা , চট্টলার প্যারেড গ্রাউন্ডে , তবে আমি প্রস্তুত সে কুরবানি দিতে।

সেই দিন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গিয়াছিল কিনা আমি জানিনা, সে বিতর্কে আমি যেতেও চাইনা, তবে "গোলাম মাওলা রনি" সাহেবের মত বলতে চাই, সাঈদী সাহেব আপনার অবস্থান সত্যি চাঁদে।

আল্লাহর রাসুলের হাদিস, “ তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ব্যক্তির থেকে আমার মর্যাদা যতো বড়ো, একজন বে'আমল আবেদ ( যিনি আলেম নন) এর ছেয়ে একজন আলেমের মর্যাদা তত বড়ো”।

বিষয়: বিবিধ

১৬০৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

209069
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হৃদয়ছোঁয়া লিখাটির জন্য ধন্যবাদ।
মিথ্যার উপর যে বিচারের নামে হত্যার আয়োজন হচ্ছে ইনশাআল্লাহ তারও বিচার হবে।
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
157692
প্যরাপিন লিখেছেন : আমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি যেন সত্যের জয় , আর মিথ্যা পরাজিত হয়। আপনাকে ধন্যবাদ
209085
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : সাইদীর ফিরে আসার দিন শেষ। আর কোনদিন তিনি মাতাবেন না খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠ কিংবা চট্টলার প্যারেড গ্রাউন্ড বা বগুড়ার সুলতান আলী মাঠ
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫০
157697
প্যরাপিন লিখেছেন : আললাহর ফয়সালা ,সব চেয়ে সেরা। অফেক্ষা করুন।
209091
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
বুঝিনা লিখেছেন : আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি, আমার নিজের একটি প্রাণের বিনিময়ে যদি ইসলামের এই খাদেম আবার ময়দানে ফিরে আসে , খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে কিংবা , চট্টলার প্যারেড গ্রাউন্ডে , তবে আমি প্রস্তুত সে কুরবানি দিতে।
Praying Praying Praying
209106
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : যুগে যুগে ইসলামি আন্দোলনের ইতিহাস যারা রচিত করেছেন সাঈদীতো তাদেরই একজন । অতএব আল্লাহর ফয়সালার উপর আমরা সন্তুষ্ট।
209123
১৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৪
শেখের পোলা লিখেছেন : কোরবাণীর জন্য আপনি একা নন অনেকেই প্রস্তুত কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই মুমিনের ইচ্ছা৷ ধন্যাদ আপনাকে৷
209148
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:০৯
হককথা লিখেছেন : আল্লাহর ফায়সালা সবচেয়ে বড় ফয়সালা। ওয়া হুয়া আল্লাহ কুল্লু শায়্যিন ক্বাদির। আর তিনি সকল চকছুরে উপরেই ক্ষমতাবান। আমরা তাঁর সেই ক্ষমতা ও কৌশলের উপরেই ভরসা রাখি।
209149
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:০৯
নীল জোছনা লিখেছেন : ভাবতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই যে আর কয়দিন পর সাঈদী সাহেবের গলায় দড়ি পড়বে। বাঙালী জনতা একটি প্রশান্তির নিশ্বাস নিবে এই বাংলার জমিনে। তারা সমন্বরে বলে উঠবে রাজাকার মুক্ত হলো বাংলাদেশ
০৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩৫
196833
ব্লগার সাদমান লিখেছেন : অপেক্ষা করুন......Crying
209165
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৩২
মাটিরলাঠি লিখেছেন : আল্লাহর ফয়সালার উপর আমরা সন্তুষ্ট। আর আল্লাহ্‌ পরীক্ষা নিবেনই।
251978
০৭ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৫২
জিয়া্ মির্জা লিখেছেন : অসাধারন লেখা। আবেগ বাস্তবতা আর নিয়তির নিষ্টুরতায় ঠাসা। ক্যারি অন ব্রাদার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File