নিজেদের ইতিহাস নিয়ে এত অজ্ঞতা! এ লজ্জা রাখি কোথায়?

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৫ মে, ২০১৪, ০৫:৫৮:২৮ বিকাল



দক্ষিণ ইথিওপিয়ার (Kaffa) ‘কাফ্ফা’ নামক অঞ্চলের এক রাখাল বালক, নাম খালেদ, মাঠে মাঠে তার উট, ছাগল আর দুম্বা চরিয়ে নিয়ে বেড়াতো। একসময় সেই রাখাল বালক খেয়াল করল তার উট, ছাগল আর দুম্বাগুলো তাদের অঞ্চলের আনাচে কানাচে যত্র-তত্র জন্ম নেয়া একধরনের রসালো ফল খেয়ে কেমন যেন বেশী মাত্রায় চঞ্চল হয়ে ওঠে। খালেদ সেই ফলগুলোকে, কখনও কখনও তার বিচিগুলোকেও সেদ্ধ করে একধরনের পানীয় বানায়, পালের অন্যান্য ছাগল দুম্বাকেও খাওয়ায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তারাও সেই একই ধরনের চঞ্চল আচরণ শুরু করে! কেমন যেন পরিপুষ্ঠ, প্রাণবন্ত দেখায় তাদের।

ব্যাপারটা কি? পরখ করার জন্য নিজেও সেই ফল সেদ্ধ করা পানীয় পান করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের সতেজভাব অনূভব করতে থাকে। সেই শুরু। তার সেই পানীয় বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-পড়শীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। সেকালে ইথিওপিয়ার সাথে ইয়েমেনের ব্যাপক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইয়েমেনের। অচিরেই খালেদের সেই পানীয় ইথিওপিয়ানদের দ্বারাই চলে আসে ইয়েমেনে। এখানে মুসলিম সূফী সাধকরা নতুন এই পানীয়কে লুফে নেন, কারণ এই পানীয় পান করলে তাদের ক্লান্তি যেমন সহজেই দুর হয়, তেমনি রাত জেগে ঈবাদাত করার ক্ষেত্রে আলস্যতা কমে আসে।

সূফীদের মধ্যে পানীয়টি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, তাদের নিত্যদিনের অনিবার্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় তা। এদের মাধ্যমেই ষোড়ষ শতাব্দীতে উক্ত পানীয় এসে হাজির হয় মক্কা’র সুফীদের মধ্যে। এবং তা অচিরেই সর্বসাধারনের পানীয় হয়ে দাঁড়ায়! তখন মক্কা ছিল ওসমানিয়া খেলাফতের আওতায়। সেখান থেকেই তুর্কীদের মাধ্যমে তা আসে তুরস্কে। আর সেখান থেকে তা পাড়ি জমায় প্রথমে গ্রিসের ভেনিস শহরে ১৬৪৫ সালে।

তার মাত্র পাঁচটি বৎসর পরে ১৬৫০ সালে Pasqua Rosee নামের একজন টার্কিশ ব্যবসায়ি এই নতুন পানীয়টি নিয়ে আসেন ইংল্যন্ডে। তিনি ইংল্যন্ডের লন্ডন শহরের Lombard Street-এ ইংল্যন্ডের প্রথম ‘কফি হাউজ’ খুলে বসেন! ইথিওপিয়ার সেই Kaffa অঞ্চলের নামানুসারে রাখাল বালক খালেদ তার নব উদ্ভাবিত পানীয়টির নাম রেখেছিলেন ‘কাফ্ফা’!

সেই ‘কাফ্ফা’ পরবর্তিতে ইয়েমেন হয়ে ষষ্টদশ শতাব্দীর শুরু দিকে মক্কায় পৌছে আরবী নাম ধারন করে ‘ক্বাহ্ওয়া’ (আজও আরবদের কাছে ‘ক্বাহ্ওয়া’ অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়। এমন কোন দিন নেই, যেদিন একজন আরব দু-চার দশ কাপ ‘ক্বাহ্ওয়া’ পান না করে তার দিনটি পার করবেন) আরবদের কাছ থেকেই ওসামানিয় খেলাফতের টার্কিশরা নিয়ে গেছে এই ‘ক্বাহ্ওয়া’ নিজেদের দেশে। কিন্তু তুরস্কে পৌছে তা নাম ধারন করেছে ‘ ক্বাহভে ' !

তুরস্কের সেই ‘ক্বাহভে’ ১৬৪৫ সালে গ্রীস ও ইতালীতে গিয়ে হয়েছে ‘ক্বাফে’। আর ১৬৫০ সালে তা ইংল্যন্ডে এসে ‘ক্বাফে’ থেকে হয়ে যায় আজকের বহুল সমাদৃত পানীয় coffee ‘কফি’। আজ কোন ইউরোপিয়ান একটা দিন পার করার চিন্তাও করতে পারেন না অন্তত এক কাপ কফি বিহনে! ইতিহাস না জানার কারণে আমরা এই মুসলমানরা কফিকে ভেবে বসেছি ইউরোপিয় পানীয়! নিজেদের ইতিহাস নিয়ে এত অজ্ঞতা! এ লজ্জা রাখি কোথায়?

(আরো বিস্তারিত জানতে আমার লেখা ‘অন্তর মম বিকশিত করো’ বইয়ের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠা পড়ে দেখার বিনিত অনুরোধ রইলো।)

বিষয়: বিবিধ

১৭৬০ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

221906
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০২
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান।
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৩
169329
হককথা লিখেছেন : অনেক পথেই তো এগুতে চাই, অনেক পথ বাঁকি। সাথে থাকবেন তো?
221928
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৮
আঁধার কালো লিখেছেন :
জাজাকাল্লা খাইরান.. অনেক ভালো লাগলো পড়ে
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৯
169337
হককথা লিখেছেন : পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
221931
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২০
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : ওরে আল্লাহ কফি তাহলে সেখান থেকে এসেছে? ইতিহাসটা জেনে ভালো লাগলো। মুসলমানরা আসলেই দিন দিন নিজেদের ইতিহাস ভুলে পরের দাসত্বে পরিণত হতে চলেছে যা তাদের জন্য খুবই বেমানান।
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৪
169341
হককথা লিখেছেন : ছিঁচকে চোর ভাই! কাজটা এবং নামটা ছাড়তে পারলেন না? পুলিশে কি খবর দেয়া লাগবে?
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
169346
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ এইডা আপনি কি হুনাইলেন। এক্কেরে পেটের উপর পাড়া। এইডা আমার পেশা এন্ড নেশা। ছাড়া অত সহজ নারে ভাই। Big Grin Big Grin Big Grin Big Hug
221946
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
ফেরারী মন লিখেছেন : ঘটনা সত্যি নাকি? হায়রে মুসলমান তোমাদের দেখে এখন আফসোস লাগে। এই জাহানের গোটাটাই একসময় যাদের করতলে ছিল আজ তারাই মার খাচ্ছে পদে পদে। তবে ইতিহাসটা জেনে ভালো লাগলো।
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
169348
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য। হ্যাঁ, ঘটনা একশতভাগ সত্যি।
221965
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
সালাম আজাদী লিখেছেন : ঘটনা টা পড়ে আমরা তিনবার হেসেছি। নাজানার কারনে। এতদিন পরে জানার কারনে। জানার পর এখনো মুসলিম মনে না হওয়ার কারনে।
তবে আপনার জন্য দুআ হয়েছে ঢের....
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
169358
হককথা লিখেছেন : আল্লাহু আকবর! আপনার দুআ তো আমার কাছে মহার্ঘ, অতি মহার্ঘ জনাব। যাজাকাল্লাহ খাইর।
221977
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য, তাদের হারানো সেই খেলাফত কি আর কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবে? আমরা কবে সেই মুসলমান হবো?
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
169364
হককথা লিখেছেন : শুরুটা তো করা লাগবে? চেস্টা ছাড়া কি কিছু অর্জন হয় ভাই?
222020
১৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৫০
সুন্দরের আহবান লিখেছেন : ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না।
১৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৫৩
169408
হককথা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।।
222021
১৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৫২
সবুজেরসিড়ি লিখেছেন : আমাদের মুসমানরা আমাদের নিজেদের ইতিহাস না জানার কারনেই আমরা আমাদের ঐতিহ্য ভুলে গেছি . . . আমরা ভুলে গেছি আমাদের ইতিহাস কতটা সমৃদ্ধ . . .
১৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
169410
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
222072
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:০৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : বরাবরের মত অসাধারণ লিখা। মুসলমানদের সমৃদ্ধ গাঁথা ইতিহাস কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। আমাদের না জানার এ দৈন্যতার লজ্জা তাই আজ আমরা এবং আগামী দিনের প্রজন্মরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। শুকরান। জাজাকাল্লাহ খাইরান।
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:১১
169469
হককথা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ পড়া ও সুন্দর, প্রাণবন্ত মন্তব্যের জন্য।
১০
222079
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আগেও পড়েছি। আবারও পড়লাম।
আমরা তো সেই আত্মবিস্মৃত জাতি যারা ভুলে গেছে তাদের পুর্ব পুরষ স্থাপন করেছিল প্রকেীশল,রসায়ন,স্থাপত্য,সমাজবিজ্ঞান এর ভিত্তি। আজকে আমরা এতই ভুলে গেছি যে মুসলিম নামধারি কিছুলোক তো এই দাবি করে যে মুসলিম ইতিহাসের একহাজার বছর নাকি পৃথিবির কোন অগ্রগতিই হয়নি। ভুলে যাওয়া এক অধ্যায় কে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:২৩
169475
হককথা লিখেছেন : বিশ্বে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিই হয়েছে মুসলমানদের হাতে। আজ বিশ্বে যা কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক, তার মুলে মুসলিমদের অবদান। জানি কথাটা শুনে অনেকেই চোখ তুলবেন কপালে। তার পরেও বলছি। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো, রগরগে উপন্যাস পড়ার পাঠক হলেও মুসলমানদের মধ্যে ইতিহাসের পাঠক পাওয়া দুস্কর। এরাই্ আবার জিহাদ জেহাদ করে গলা ফাটায়! আপনাকে অনেক ধন্যাদ পড়ার জন্য।
১১
222140
১৫ মে ২০১৪ রাত ১১:৪৮
নিশা৩ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ইতিহাস স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্য। আজকের যুগে আমরা যা ব্যাভার করি তার বেশীর ভাগ এর মুল আবিস্কারক মুসলিমরা। তবে আমাদের আলো আজ আর আমাদের আলোকিত করেনা। আলোর উৎস থেকে সরে আসার কারনে।
১৫ মে ২০১৪ রাত ১১:৪৯
169534
হককথা লিখেছেন : পড়া ও মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
১২
222157
১৬ মে ২০১৪ রাত ১২:২৬
শুভ্র আহমেদ লিখেছেন : বইয়ের পিডিএফ লিংক আছে? থাকলে দিতে পারেন।
১৬ মে ২০১৪ রাত ১২:৪৫
169551
হককথা লিখেছেন : Please visit the following links
http://www.ziaulhaque.co.uk/

http://www.ziaulhaque.co.uk/published_books/Ontor momo Bikoshito koro he.pdf
১৩
224035
২১ মে ২০১৪ রাত ০৪:২৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আহ হা রে, অতি চমৎকার একটি ইতিহাস জানলাম। এখন বন্ধু বান্ধবদের বলে নিজে বেশি জানি এরকম একটা ভাব নেব।
২১ মে ২০১৪ দুপুর ০১:২৭
171413
হককথা লিখেছেন : Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
১৪
224496
২২ মে ২০১৪ সকাল ০৮:৪১
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : যাদের ঈমানের বেসিক নলেজ নেই তাদের ইসলামের ইতিহাসের জ্ঞান যাচাই করতে গেলে লজ্জা তো পেতেই হবে! ঘরের দেয়ালে ছবি টাঙ্গানোর আগে ঘরের খুঁটি ঠিক করানো প্রয়োজন।
২৬ মে ২০১৪ রাত ০২:২০
173244
হককথা লিখেছেন : পড়া ও মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৫
231186
০৬ জুন ২০১৪ রাত ১২:২২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আমরা নিজেদের ইতিহাস না জানার কারনেই আমরা আমাদের ঐতিহ্য ভুলে গেছি। অন্তর মম বিকশিত করো’বইটি পাইনি। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:২৬
179492
হককথা লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ার জন্য। বইটাতে সম্ভবত আপনার নাম আছে কোনা এক জায়গায়। নীচের লিংক এ পড়তে পারেন-
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/2910/hero/45209#.U5V9RSh7QtU
১৬
232785
০৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
হককথা লিখেছেন : ধন্যভাদ পড়ার জন্য। বইটাতে সম্ভবত আপনার নাম আছে কোনা এক জায়গায়। নীচের লিংক এ পড়তে পারেন
http://www.ziaulhaque.co.uk/published_books/Ontor momo Bikoshito koro he.pdf

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File