সে জাতি নিশ্চয় অত্যন্ত দুর্ভাগা, যে জাতি নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে পারে না।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৬ জুন, ২০১৪, ০২:৪৮:০৮ দুপুর

যে ধরনের সরকারই হোক না কেন, তাকে সুশাসন প্রদানের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ নির্বাচিত নয় বলে সুশাসন প্রদানের দায়িত্ব থেকে সরকার রেহাই পেতে পারে না। কিন্তু সরকার তো ভেঙে পড়েছে নানাভাবে নানাদিক দিয়ে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও এখন অর্থের বিনিময়ে বা রাজনৈতিক কারণে খুন-খারাবির মতো জঘন্য অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে পালা-পোষা ভাড়াটে খুনিদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। অর্থাৎ জীবনের নিরাপত্তা সম্পর্কেও জনগণ সম্পূর্ণ অসহায়। তারপরও কিছু লোককে পাওয়া যাবে যারা শুধু সরকারের সাফল্যই দেখছে। একটু খতিয়ে দেখলেই দেখা যাবে তারা কীভাবে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।বর্তমান বাজেটে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে প্রচুর টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিচালনায় জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা না থাকায় বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগই যাবে ব্যক্তিবিশেষের পকেটে। এ ধরনের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। ফলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও অচলাবস্থা দেখা দেবে। সরকারের মিথ্যা প্রশংসা না করলে তো দুর্নীতির সুযোগ পাওয়া যাবে না।জাতি এমন এক পরস্পরবিরোধী অবস্থানে উপনীত হয়েছে, যেখানে সরকার সুবিধাবাদীদের, আর দেশ জনগণের। জাতি এখন এমন এক ভয়াবহ ভারসাম্যহীন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ভবিষ্যৎ কেবল অনিশ্চিতই নয়, বিপজ্জনকও বটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, যে জনগণ প্রচুর রক্ত ও চোখের পানিতে, বলা হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করল, তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক লোক জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থ লাভের আশায় তাদের নীতি ও আদর্শকে সহজে বিকিয়ে দিয়েছেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার দেশপ্রেমকে অবজ্ঞা করছেন।

বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ নি:সন্দেহে।এদেশের প্রাকৃতিক অবস্হান,সস্তা শ্রমিক ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে কাজে লাগানোর কোন সরকার গত ৪৩ বছরে তৈরি হয় নি।জিডিপি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার দাবিদার কোন সরকার এককভাবে নয়।এদেশের কৃষক , শ্রমিক , ব্যাবসায়ি ,উদ্যোক্তা ,শিল্পপতি নিজেদের উদ্যোগে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।মাত্র ২% দুর্বিত্ত রাজনীতির ছত্র ছায়ায় থেকে দেশকে বিপর্যস্ত করছে।এটা দেশের জন্য এক দুর্ভাগ্যজনক চিত্র।স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে দেশ যেখানে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি, জড়িয়ে পড়ছি আভ্যন্তরীন কোন্দলে।মানুষ আজ বলতে পারছে না আমরা নিরাপদ।রাজনৈতিক সন্ত্রাসে প্রতিনিয়ত গুম,খুন,অপহরন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।ইদানিং পর পর যে ঘটনাগুলো ঘটে গেল তা নাড়া দিয়েছে জাতিকে কিন্তু সরকারকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে দেখা যাচ্ছে না।পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম পরিচালক রেজোয়ানা হাছানের স্বামী আপহরন হয়ে ফিরে এলেও অনেক গুলো ঘটনা, নারায়ন গন্জে সাত খুন,ফেনি , লক্ষিপুর,মিরপুরে কালশিতে যে ঘটনা গুলো ঘটলো তার কোন বিচার ব্যাবস্হার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না।এ থেকে বুঝা যায় সরকারের সারা দেহে আজ ইনফেক্শন।সেনাবাহিনী , নৌবাহিনী,র্যাব,পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর পিছনে জাতির দেয়া ট্যাক্ক্সের টাকা ব্যায় হলেও তারা জাতিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হচ্ছে।তাদের অনেকেই এখন মানুষ হত্মার মত কাজটি করছে যেখানে তারা মানুষের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল।বিগত বছরগুলোতে যে গুম-খুন হয়েছিল তারা ফিরে না আসার কারন হয়ত নদীর তলদেশে তারা কন্কাল হয়ে গেছে বা কোথাও তাদের ফুঁতে ফেলা হয়েছে।কিন্তু নারায়নগন্জের ৭টি লাশ যেন দৈবদুর্বিপাকে জাতিকে স্মরন করিয়ে দিতে শীতলক্ষায় ভেসে আসলো এ কারনে যে, হে জাতি তোমরা আর বসে থেক না,সোচ্ছার হও,সামাজিক অন্দোলন গড়ে তোল দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে।

আমরা কেন দুর্ভাগা হয়ে যাচ্ছি? যে সাড়ে সাতকোটি মানুষ একত্রিত হয়ে দেশ স্বাধীন করেছে আজ নতুন জেনারেশন মিলে ষোল কোটিতে।৪৩ বছরে স্বাধীনতার যে চেতনা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা,বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা তা হলো না কেন? সেদিন তো গ্রাম আর শহরের মানুষের এত ব্যাবধান ছিল না।নানা রকম অসম্ভব ঘটনা ঘটেছে একাত্তরে। শহর থেকে বিত্তবান, উচ্চ সংস্কৃতি-সমৃদ্ধ পরিবার চলে গেছে গ্রামে, গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে গরিব কৃষকের গৃহে। কৃষকের ঘর একটাই, কৃষক সেটা ছেড়ে দিয়েছে; ছেড়ে দিয়ে রাতযাপন করেছে হয়তো রান্না ঘরে, কিংবা গোয়াল ঘরে। আপ্যায়ন করবে এমন সামর্থ ছিল না। থেকেছিল দিনের পর দিন। চাল ,ডাল, ঘরের পালিত মুরগি ,পাশের তরিতরকারি দিয়ে আপ্যায়ন করেছে।স্বাধীনতার পর সে গ্রামীন মানুষ যখন ঢাকা এলো কোন কারনে দেখা হয়ে গেল সে অতিথিদের সাথে চিনতে পারেনি তারা কিন্তু গ্রামীন মানুষটিই চিনে এগিয়ে আসলো।বাসায় যাওয়ার কথা দূরে থাকুক হাত মিলানোর ফুরসৎ হলো না তাদের কারন তার লেবাছে গরীবত্ব।গ্রামের লোকটি না জানি কি চেয়ে বসে। হাত পাতে। ভিক্ষা চায়। না, তেমন বিপদ ঘটেনি। গ্রামের লোকটি বুঝেছে যে দু’পক্ষের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের আর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গ নেই, ভাষা নেই। বিদায় নিয়েছে তারা পরস্পরের কাছ থেকে। শহরের ভদ্রলোক বলেননি কাউকে, নিজেকেও নয়, যে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন। যেন হানাদার এসেছিল, চলে গেছে। দুটিই সত্য, উভয় ঘটনাই। যেমন মিলন তেমনি বিচ্ছেদ। কিন্তু কোনোটি বেশি সত্য, কোনোটি দীর্ঘস্থায়ী? সন্দেহ কি যে, মিলনের ঘটনাটি ছিল সাময়িক, দূরত্বই হচ্ছে গভীর ও স্থায়ী। শহরের মানুষ বিপদে পড়েছিলেন, তাই আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি ভাঙা ঘরে। সে তো এক দুঃস্বপ্ন। কিন্তু কৃষক? সে কেন আশ্রয় দিল ওই অজানা, অচেনা, বিপজ্জনক পরিবারটিকে? একটা কারণ অবশ্যই এই যে, গ্রামের মানুষ সরল ও অতিথিপরায়ণ। আরেকটা কারণ, গ্রামের মানুষ শহরের মানুষকে সমীহ করে। এসবই আবেগের ব্যাপার। কিন্তু আরো একটি কারণ ছিল যে জন্য সেদিন গ্রামের মানুষ শহরের মানুষকে বিপদের মধ্যেও আশ্রয় দিয়েছে, দ্বিধা করেনি। সেটা হলো স্বার্থ। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়েছিল সবাই। শত্রু ছিল চিহ্নিত। সে লড়াইয়ের সবাই ছিল। আশ্রয় দান এবং লড়াইয়ে অংশগ্রহণ ছিল অভিন্ন ব্যাপার। আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল সমস্বার্থে। শত্রু যখন পরাজিত হয়েছে, পালিয়ে গেছে লেজ গুটিয়ে তখন স্বার্থের ঐক্যটা আর নেই, তখন ঘটনা প্রবাহিত হয়েছে উল্টো দিকে। প্রত্যেকে শত্রু হয়ে উঠেছে প্রত্যেকের এবং সবার শত্রু প্রত্যেকের। এখন গুম, খুন, অপহরণ ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এভাবেই ভুলিন্ঠিত হয়েছিল স্বাধীনতার চেতনা একধরনের স্বাধীনতার কুচক্রিদের হাতে।তারা অর্থে বড় হতে থাকালো,শিল্পের মালিক হলো, ব্যাংক , বিমা, আরো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের, চাকুরি বাগিয়ে নিল ভুয়া মুক্তি যোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে। এদের অনেকেই পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লো।অনৈতিকতার জাল তৈরি হতে হতে এখন গ্রামের ডোবা নালায় পূর্ন হলো।এই কালো টাকার বিস্তারকারিরা তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করলো রাজধানি থেকে গ্রামে।এখন রাজধানিতে বসে পার্লামেন্ট মেম্বার তৈরি হচ্ছে।আবার কোন কোন উপজেলা চেয়ারম্যান এখন ঢাকা থেকেই নেতৃত্ব দেন।তাদের ওখানে মাঝে মাঝে গেলেই চলে কারন লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করা আছে সেখানে।স্বাধীনতার প্রথম পার্লামেন্টে ছিল বেশীর ভাগ আইনজীবি ও শিক্ষক।আজ অবৈধ টাকার কারনে রাজনীতিতে ফরমালিন ঢুকার কারনে সন্ত্রাস ঢুকে গেছে। এখন ব্যাবসায়ি সন্ত্রাসীদের বেশীরভাগ পার্লামেন্টকে দখল করে আছে যাদের নেই দেশ চালানোর মত শিক্ষা। নোয়াখালি ফুলগাজিতে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর একটি বিষয় চোখে পড়লো।পত্রিকায় দেখলাম দেখলাম নোয়াখালীর বিভিন্ন আসনের এমপিদের নাম।এর মধ্যে রহিমুল্লাহ নামে একজনের নাম দেখে আমার সন্দেহ হলো জেদ্দায় একজন ব্যাবসায়ি ছিলেন।গত ২১ বছর ধরে তিনি আমার পরিচিত।জেদ্দায় আওয়ামিলীগের একজন নেতা হিসেবে কাজ করেন।আমার জানা ছিলনা তিনি এমপি হয়েছেন।আমি সাথে সাথে টেলিফোন করে জানতে পারলাম তিনিই এই রহিমুল্লাহ।মানুষ হিসেবে আমরা সবাই আল্লাহর দাস।আর গনতান্ত্রিক দেশে সবারই অধিকার রয়েছে নেতৃত্ব দেয়ার,রাজনীতি করার।হয়তবা তার অনেক গুন আছে যা আমাদের নেই।কিন্তু প্রশ্ন হলো আওয়ামিলীগের মত একটা প্রবীন দলে কিভাবে দেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এ ধরনের লোক সংসদে ঢুকে পড়লো? সেখানে কি আর জ্গানী গুনী চিল না? আমার বুঝতে বাকি নেই, এখন রাজনীতিতে টাকা হলেই যে কেউ নোমিনেশন পেয়ে যায়।এ যখন জাতির অবস্হা তখন সন্ত্রাস না বাড়ার কোন কারন নেই। এখন বড় সন্ত্রাসিদের একটি অংশ পার্লামেন্টে।বড় সন্ত্রাসীর অবসান না হলে ছোট সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম বাড়তেই থাকবে।

সব মানুষের মধ্যেই পশু আছে, পশুই প্রাথমিক এবং মানুষ মাত্রেই স্বার্থপর। কিন্তু পশুত্বের কারণে মানুষ মানুষ হয়নি, মনুষ্যত্বের কারণেই হয়েছে। এই মনুষ্যত্বকে বিকশিত করা এবং তাকে রক্ষা করার যে কাজ সেটা সহজ নয়। খুবই কঠিন। এ কাজ কেউ একলা করতে পারে না, সাহায্য, সহযোগিতা, সমর্থন ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। এ মনুষ্যত্বের জন্য অনুকূল রাষ্ট্র চাই, সমাজ চাই। সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ওই ব্যাপারে বেশ কিছুটা অগ্রসর হয়েছিল। তারা জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, বৈষম্যহীন সমাজও গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বিকশিত মনুষ্যত্বকে ধরে রাখার জন্য যে সংস্কৃতি আবশ্যক সেটা সৃষ্টি করতে পারেনি। চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওই যে মানুষের ভেতরকার পশু সে তো ছিল। তার স্বার্থপরতা একটি আমলাতন্ত্র গড়ে তুলেছিল। যে আমলাতন্ত্র পার্টির নামে চলত, আদর্শবাদের কথা বলত এবং সে জন্য বুর্জোয়া রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তার স্পর্শকাতরতা, স্বচ্ছতা ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে আবার বাইরে থেকে পুঁজিবাদী বিশ্ব তার সংস্কৃতি নিয়ে উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল। ভেতরের আমলাতন্ত্র বাধা হয়নি বরং খুশি হয়েছে। মানুষের ভেতরকার স্বার্থপরতা উসকে উঠেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কেবল যে কিছু পশুর বিরুদ্ধে ছিল তা তো নয়। ছিল পশুত্বের বিরুদ্ধেই। আমরাও চেয়েছিলাম দস্যুতার অবসান ঘটবে। শোষণ থাকবে না। অন্তত মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো মিটবে। জামিলারা আর লাঞ্ছিত হবে না। তারা কাঁদবে না। তারা আশ্রয়হীন হবে না। স্বপ্ন ছিল অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠার। স্বপ্ন ছিল অসম রাষ্ট্র গড়ার। সে কাজে আমরা সফল হইনি। আমরা একদল পশুকে হাঁকিয়ে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু পশুত্বকে পরাভূত করতে পারিনি। পারিনি যে তার নানা প্রমাণ ও লক্ষণ বিদ্যমান।

পরিসংখ্যান বলছে যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন পঞ্চাশটি করে নতুন গাড়ি তালিকাভুক্ত হচ্ছে, পাশাপাশি শহরে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসছে, গ্রাম থেকে। গাড়ি এখন যা আছে তাতেই যানজটে চলাফেরা অসম্ভব হয়েছে, এরপরে মাসে যদি দেড় হাজার গাড়ি বৃদ্ধি পায় তবে শহরে অচিরেই এমন অবস্থা দাঁড়াবে গাড়ির পেছনে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে। কোনো গাড়িই চলবে না। হাজার হাজার মানুষ যে চলে আসছে ঢাকায় তাতে বোঝা যায় গ্রামের অর্থনৈতিক জীবন কি ভীষণ দুর্দশা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। অবস্থা কি তাহলে আরো খারাপ হবে? এসবই অন্তহীন প্রশ্ন বটে। এ দেশের মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পথ আসলে সেটাই। এই প্রতিরোধে ঐক্য প্রয়োজন হবে। কার সঙ্গে কার ঐক্য? না, বড় মাছের সঙ্গে ছোট মাছের ঐক্য নয়, তাতে ছোট মাছের নির্বংশ হওয়ার আশঙ্কা। এই বড়-ছোটর ঐক্যের কথাই খুব করে বলা হয়। বলা হয় সহনশীলতা চাই, সমঝোতা প্রয়োজন, সমন্বয় আবশ্যক। অথচ সত্য হচ্ছে দ্বন্দ্ব। গোটা ব্যবস্থাই বৈরী দেশবাসীর কাছে। সমাজে কোনো বিপ্লব ঘটেনি। ধনী-দরিদ্রের সম্পর্কে পরিবর্তন আসেনি। অথচ স্বাধীনতার প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের জন্য নয়, কিছু লোকের জন্য ধনী হওয়ার পথ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নয়, প্রয়োজন হয়েছিল নতুন সমাজ গড়ে তোলার জন্য। সেই রকমের সমাজ যেখানে মানুষ মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করবে না, পরস্পর পরস্পরের মিত্রে পরিণত হবে। পশুত্বকে পরাভূত করে মনুষ্যত্ব বড় হয়ে উঠবে। আমরা একটি উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তোলার দিকে অগ্রসর হব। স্বর্গে পৌঁছাব না, কিন্তু মানবিক হব। শহরের পরিবারটি হাত ধরবে গ্রামের পরিবারটির। অস্বস্তির সঙ্গে নয়, ক্ষণকালের জন্যও নয়, আন্তরিকতা নিয়ে স্থায়ীভাবে। একাত্তরের হানদাররা কেউ কেউ পরে বলেছে যে, তারা ভুল করেছিল, উচিত ছিল শুধু আওয়ামী লীগের লোকদের আক্রমণ করা, তা না করে তারা সবার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং তার ফলেই পরাজিত হলো। কিন্তু তারা বোঝেনি যে প্রতিরোধটা ততদিনে দলের ছিল না, পরিণত হয়েছিল গোটা জনসাধারণের আন্দোলনে। মুষ্টিমেয় কতিপয় ছাড়া হানাদারদের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো লোক ছিল না বাংলাদেশে। মানুষ তখন লুণ্ঠনকারীদের চিনে ফেলেছে, তারা তাদের হাত থেকে মুক্তি চাইছে, এই ছিল তখনকার বাস্তবতা। আসলে হানাদার দস্যুরা শত্রু চিনতে মোটেই ভুল করেনি। সে জন্যই তারা প্রথমে চড়াও হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও শহরের বস্তিগুলোর ওপর। শিক্ষকরা, ছাত্ররা তাদের শত্রু ছিল, শত্রু ছিল বস্তিবাসী সাধারণ মানুষও। পরে তারা গ্রামে গেছে। গিয়ে দেখে গ্রামবাসীও তাদের শত্রু বটে। গ্রামবাসীরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমে আশ্রয় দিয়েছে এবং পরে নিজেরাই মুক্তিবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। শহরের শিক্ষিত যুবক মিলিত হয়েছিল গ্রামের সাধারণ কৃষকের সঙ্গে তার ফলেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল হানাদের আত্মসমর্পণ যারা অত্যন্ত পরিপূর্ণভাবে সুসজ্জিত ছিল অস্ত্রশস্ত্রে এবং যারা দম্ভ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর একটি বলে।

মুক্তির পথ ওইটাই, ঐক্য। মধ্যবিত্তের সচেতন ও সমাজবিপ্লবী অংশের সঙ্গে শ্রমজীবীর ঐক্য। কিন্তু সামাজিক ঐক্য নয়, তেমনটি নয় যেটি অল্প দিন পরেই ভেঙে যাবে এবং অস্বস্তির কারণ হবে উভয় পক্ষের জন্য; তেমন ঐক্য যা স্থায়ী ও দৃঢ় হবে, যার সামনে লক্ষ্য থাকবে সমস্বার্থের। সেই স্বার্থটি হলো অনিয়ম-অব্যবস্থার অবসান ঘটানো। লক্ষ্য হবে অপরাধীকে তো বটেই অপরাধের আশ্রয় যে রাষ্ট্র ও সমাজ তাকে বদলে ফেলা, তাকে মানুষের শত্রু থেকে মিত্রে পরিণত করা। আমাদের অতীতের আন্দোলনগুলো মধ্যবিত্তই শুরু করেছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের যুদ্ধ-সব কিছুরই সূচনা মধ্যবিত্তের চেতনা ও তৎপরতায়। কিন্তু প্রতিটি আন্দোলনেই সাধারণ মানুষ ছিল। সাধারণ মানুষ ছিল বলেই আন্দোলন জয়যুক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি মধ্যবিত্তেরই দাবি। অসতর্কভাবে দেখলে মনে হবে-ভাষার জন্য আন্দোলন ছিল ছাত্রদের আন্দোলন। হ্যাঁ, সেভাবেই আরম্ভ। কিন্তু সেইখানে থামেনি, থেমে গেলে তাকে উপেক্ষা করা যেত, পরে তাকে দমন করাও সম্ভব হতো, কিন্তু বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলিবর্ষণের ফলে আন্দোলন ছাত্রদের গণ্ডি ভেঙে জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হলো। ছাত্র শহীদ হয়েছে, সাধারণ মানুষও শহীদ হয়েছে। ছাত্র চলে গেছে জনতার কাতারে এবং তখন ওই স্রোতকে আটকে রাখবে এমন কোনো মুক্তি অবশিষ্ট থাকেনি দেশে। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানেও ওই একই ঘটনা। সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিন্তু পরিণতি গোটা বাংলাদেশে, বিশেষ করে গ্রামে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও ছাত্রদের হাতেই, স্বাধীনতার পতাকা তারাই প্রথম উত্তোলন করে, স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে তারাই নিয়ে যায় নতুন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার দাবির দ্বারপ্রান্তে, কিন্তু সাধারণ মানুষ এসেছে আশ্রয় দিয়েছে। যোগ দিয়েছে, তাতেই বিজয় অর্জিত হয়েছে, বাঙালির। বাঙালির ইতিহাসে এত বড় বিজয় আর নেই। আনন্দ অবশ্যই আছে। কিন্তু ক্রন্দনও রয়েছে। সে ক্রন্দন কেবল যে অতীত দুঃখভোগের স্মৃতি থেকে আসছে তা নয়, ক্রন্দন রয়েছে বর্তমানেও। হাজার হাজার তরুণ এখন বেকার, লাখ লাখ শিশু-কিশোর ভবিষ্যৎহীন অন্ধকারে নির্লিপ্ত। অপরাধ বাড়ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা সুবিধাবাদী প্রাণীর প্রস্তুতি সম্ভব করছে, মানুষ তৈরি করছে না। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে মানুষ পরস্পর থেকে। এসব ক্রন্দনের শব্দে কিন্তু আশাও আছে। অতীতে আমরা আত্মসমর্পণ করিনি ভবিষ্যতেও করব না। মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরে শুরু হয়নি। শেষও হয়নি। একাত্তরে তার একটা পর্ব শেষ হয়েছে। যুদ্ধ চলছে, চলবে। তাকে থামতে দিলেই বিপদ। থামিয়ে দিলে আমরা বাঁচব না। অতীতের সব আন্দোলনেরই প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল স্বতঃস্ফূর্ততা একটা বড় গুণ। তাতে প্রাণ থাকে। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ততার একটা সীমাও আছে। যে আন্দোলন কেবলই স্বতঃস্ফূর্ত সে অগোছালো, তার পক্ষে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন এবং সর্বোপরি সে স্বল্পে সন্তুষ্ট। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ততা অবশ্যই প্রয়োজন, মানুষ প্রাণের তাগিদে আসবে, এসে ধরা প্রবাহকে প্রাণবন্ত ও বেগবান রাখবে। কিন্তু কেবল স্বতঃস্ফূর্ত হলে চলবে না, সুসংগঠিতও হতে হবে। অতীতের আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে যে, ঐক্যবদ্ধ হলে বিজয় অর্জন অবশ্যম্ভাবী।

আমরা আশাবাদি, আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের আরো কিছু মৌলিক পরিবর্তনের জরুরি তাহলো, রাষ্ট্র যন্ত্রকে সক্রিয় করা আইনের কঠোর শাসন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে।এ কাজ করার দায়িত্ব সরকারের।সমাজ পরিবর্তনের মুল উপকরন হলো মানুষ।পার্লামেন্ট সহ সব প্রতিষ্ঠানে এ মানুষগুলো বিদ্যমান।তৃনমুল থেকে যদি সুশিক্ষার বিস্তার না হয়,নৈতিক শিক্ষার চর্চা না হয়,উন্নত চরিত্রের ও প্রশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মি তৈরি না হয় কখনোই সম্ভব নয় অন্যায় অবিচার রোধ করা। কোন দেশ বা প্রতিষ্ঠান খারাপ নয়।যখনি সেখানে অনুপযুক্ত শাসক ছেপে বসে তখনি সে দেশ বা প্রতিষ্ঠান অবমুল্যায়িত ও কাঠামো ভংগুর হতে থাকে।সকল প্রতিষ্ঠানে একটা স্বচ্ছ নীতিমালা তৈরি ও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হলে এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যাবস্হা করলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।আমাদেরই আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে,যদি তা না করতে সক্ষম না হই তাহলে ব্যার্থতার গ্লানি আমাদের অনন্তকাল বয়ে বেড়াতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৮০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239193
২৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : সত্যিই বলেছেন, ভাইয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File