আপনি যত বড় বা ছোট গুনাহ ই করুন সত্য তাওবা তা মুছে দিবে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫২:২১ রাত

আমরা সৃষ্টিগতভাবে সবাই এক আল্লাহর বান্দাহ ও দাস।আল্লাহ আমাদের মু'মিন মুসলিম হিসেবে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।মানুষ মাত্রই পাপ থাকবে সেজন্য আল্লাহ ব্যাবস্হা ও রেখেছেন বান্দাহ যেন মাপ পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে।আল্লাহ সূরা আল ফাৎহের ১-৩ আয়াতে বলেন,'আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে বিজয় দিয়েছি এক উজ্জল বিজয় এই জন্য যে, আল্লাহ যেন তোমাকে মুক্তি দিতে পারেন তোমার সেই সব অপরাধ যা গত হয়ে গেছে ও যা রয়ে গেছে আর যেন তোমার উপর তার অনুগ্রহ পূর্নাঙ করতে পারেন সহজ সঠিক পথ দিয়ে আর আল্লাহ যেন সাহায্য করতে পারেন এক বলিষ্ঠ সাহায্যে।' ছহি বোখারি ও মুসলিমে বর্নিত রাসূল সা: দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার পর্যন্ত তাওবা করতেন।

মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। এমন কোন মানুষ নেই যে ভুল করে না।রাসূল সা: বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুল কারি।এমনকি আমাদের আদি পিতা আদম আ: ও ভুল করেছিলেন আল্লাহর কথা অমান্য করে।আল্লাহ বলেছিলেন হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্হান কর কিন্তু এ গাছের কাছে যেওনা কিন্তু সয়তানের প্ররোচনায় তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি কি ভুল করে বসেছিলেন? তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন সূরা আ'রাফের ২৩ আয়াতে এই বলে,' আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নিজেদের উপর অন্যায় করেছি,তুমি যদি ক্ষমা ও দয়া না কর তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।' মানুষের ঈমান ও সততার অবস্হার পরিবর্তন হয় সঠিক পরিবেশে না থাকলে।একজন লোক যদি খারাপ লোকের সহঅবস্হানে থাকে তাহলে সেই খারাপ লোকের আচর প্রাপ্ত হয়। আবার যদি ভাল লোকের সাথে তাহলে ভাল গুন গুলো লাভ করতে পারে।সে জন্য ঈমানের বাড়তি বা কমতি হয় অর্থাৎ ঈমান উঠানামা করে।মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো মানুষ ভুলে যায়।আর সর্বশ্রেষ্ঠ ভুলকারি হলো যে সাথে সাথে তাওবা করে ফেলে।আল্লাহর একটি নাম হলো আত্তাউয়্যাব বা তাওবা কবুল কারি।তাওবা করার অর্থ হলো ফিরে আসা।সূরা ফোরকানের ৭০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' সে ব্যাতিত যে তাওবা করে ও ঈমান আনে ও পুর্ন পবিত্র কাজকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজকে সৎ কাজ দিয়ে বদলে দিবেন।' আর যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে তাদের জন্য তাওবা নয়। সূরা নিসার ১৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তাওবা তাদের জন্য নয় যারা কুকর্ম করেই চলে যে পর্যন্ত তাদের কারো কাছে মৃত্যু এসে পড়লে সে বলে।'আমি অবশ্যই এখন তাওবা করছি।' আর কারো কাছে মালাকুল মওত এসে পড়লে তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

সূরা তাহরিমের ৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহর দিকে ফির বিশুদ্ধ ফিরায়।হতে পারে তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন সেই জান্নাতে যার নিছ দিয়ে বয়ে চলছে ঝরনা রাজি।' প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করনীয় কর্তব্য পাপ করার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে মার্জনা কামনা করা।তাওবার মাধ্যমে সার্বিক কল্যান ও মুক্তি পায় বান্দাহ।এখানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যান রয়েছে।মুসলিম জাতির ৯০% লোক নামাজ ছেড়ে দিয়েছে কারন এখানে নগদ কিছু পাওয়া যায় না।ইছ্ছা মত নামাজ পড়ে। এক ওয়াক্ত পড়লে আর এক ওয়াক্তের খবর থাকে না।রাত ৩টায় যদি ডিউটি থাকে সেখানে যাওয়া সম্ভব কিন্তু সারা রাত ঘুমানোর পরও ফজরে উঠতে পারে না।রাসূল সা: বলেছেন, মোনাপেকরা যদি জানতো ইশা ও ফজরে কি ফযিলত আছে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে মসজিদে যেত।'আল্লাহ মু'মিনদের পুরস্কারের যে ওয়াদা করেছেন তা পরিপূর্ন করবেন কারন তিনি ওয়াদা খেলাফ করেন না।যার এ সম্পর্কে সামন্য পরিমান সন্দেহ থাকবে সে কুফরির মধ্যে অবস্হান করছে।আল্লাহ সূরা মুনাফিকুনের ৯-১১ আয়াতে বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ ! তোমাদের ধন সম্পত্তি ও তোমাদের সন্তান সন্ততি যেন আল্লাহ থেকে ফিরিয়ে না রাখে।আর যে তেমন করে তারাই তবে ক্ষতিগ্রস্হ।আর আমরা তোমাদের যা জীবনোপকরন দিয়েছি তা থেকে খরচ কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে পাছে তাকে বলতে হয়,আমার প্রভু ! তুমি আসন্নকাল পর্যন্ত সময় দাও নি তাহলে তো আমি দান খয়রাত করতাম ও সৎ কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।আর আল্লাহ কোন সত্তাকে অবকাশ দেন না যখন তার অন্তিম সময় এসে যায়।' হায়াত যতক্ষন আছে আল্লাহর নেয়ামতকে লোপে নেয়ার সময় ততক্ষন।মৃত্যু এসে গেলে শত চেষ্টা করলেও কোন লাভ হবেনা।নূহ আ: তার স্বজাতিকে ৯৫০ বছর ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন।দিনরাত প্রকাশ্যে ও গোপনে দাওয়াত দিয়েছিলেন।আরো বলেছিলেন তোমাদের প্রভুর কাছে পরি্ত্রান খোঁজ , নিশ্চয় তিনি হছ্ছেন পরম ক্ষমাশীল।কিন্তু তারা কানের ভিতর আংগুল দিয়ে পালিয়েছে।তিনি বলেছিলেন যদি তোমরা ইস্তেগফার কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের বৃষ্টি পাঠাবেন প্রচুর পরিমানে,তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনদৌলত ও সন্তান সন্ততি দিয়ে,তোমাদের জন্য তৈরি করবেন বাগান ও নদী নালা।যখন শুনলো না তখন বদদোয়া করলেন আর পানিতে ডুবিয়ে দিলেন।তাহলে বুঝা গেল ইস্তেগফারের মাধ্যমে শুধু আখেরাতেরই কল্যান নেই দুনিয়ার ও কল্যান রয়েছে।মুসলিমদের মধ্যে এখন শরিয়তের বিধি বিধান পালিত হয় না।কেউ কেউ অকেশনাল ইবাদাত করে।যেমন শুক্রবারে নামাজ পড়া,রমজানে ইবাদাত করা,কদরে ইবাদাত করা ইত্যাদি।ইমাম আহমেদ বলতেন,সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ জাতি যে জাতি রমজান ছাড়া ১১ মাস আল্লাহকে চিনে না।ইহুদি ও খৃষ্টান যেমন ২৫শে ডিসেম্বর আসলে অশ্লিল আনন্দে মেতে উঠে তেমনি এক শ্রেনির মুসলিম ঈদের দিনকে যেনা ব্যাভিচারে ভরিয়ে দিয়েছে।তাদের কোন পরোয়া নেই।কোন ইস্তেগফার নেই।রাসূল সা: যখন মজলিসে থাকতেন তখন কিছুক্ষন পর পরই ইস্তেগফার করতেন এই বলে, ইস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইহি।'খালেছ তাওবা করলে গুনাহ মাফ হবে তবে নিম্নের শর্তগুলো পালন করতে হবে:

১-ইখলাছের সাথে তাওবা: তাওবা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।তাওবার সময় কৃত গুনাহকে স্মরন করে বিনম্র হৃদয়ে মাপ চাইতে হবে।

২-গুনাহ বন্ধ করতে হবে।অপরাধ স্মরন হলেই গুনাহ বন্ধ করে নেক আমল করতে হবে।

৩-গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।রাসূল সা: বলেন , যে গুনাহ বলে বেড়ায় আল্লাহ কখনো তাকে মাপ করবেন না।'

৪-ভবিষ্যতে গুনাহ না করার প্রতিজ্গা করা।

৫-মানুষের হক্ক আদায় করা: সকল প্রাকার কৃত খেয়ানত ও মানুষের সাথে লেনদেন ,অসৎাচরন,ঋন পরিশোধ ও অপারগ হলে মাপ চাইতে হবে।কেউ শহিদ হলেও ঋনের জন্য তাকে জবাবদীহি করতে হবে।রাসূল সা: বলেছেন ,'তোমরাকি জান হতভাগ্য কে? সাহাবারা বললেন যার কোন মাল বা দিরহাম নেই।তিনি বললেন আমার উম্মতের সর্বহারা ঐ ব্যাক্তি যে হাসরের মাঠে নামাজ রোজা ও যাকাত নিয়ে আসবে তার সাথে গালিগালাজ,মিথ্যা অপবাদ,কারো মাল আত্মসাত,মারামারি এগুলো নিয়ে আসবে।এরপর মজলুমদের ডাকা হবে।এক এক করে গুনাহের বিনিময়ে নেক আমল দিয়ে দেয়া হবে।একসময় নেক আমল শেষ হবে কিন্তু আরো মজলুম বাকি থাকবে।এবার তাদের বদ আমল তার ঘাড়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

সুতরাং আমাদের সবার উচিত গুনাহ সম্পর্কে সজাগ থাকা ও গুনাহ হয়ে গেলেই আল্লাহর কাছে ইস্তেগফারের মাধ্যমে মাথা নত করা।যত বড় গুনাহই হোক আল্লাহ মাপ করবেন যদি খাঁটি তাওবা করা হয়।এটা আল্লাহর সাথে বান্দাহর সম্পর্ক।অনেক জাহেল বা মূর্খ মনে করে অনেক পাপ করছি আল্লাহ কি করে মাপ করবেন আর সারা জীবন এভাবে পাপের মধ্যে ডুবে থাকে।তাদের জন্য পরিশেষে রাসূল সা: এর একটি হাদিস বলতে চাই।একজন লোক ৯৯ জন লোককে হ্ত্বা করেছে।এরপর তার পাপ সম্পর্কে সচেতনতা এসেছে কিভাবে সে এ থেকে পরিত্রান পায়।সে একজন আবেদের( এলেম নাই তবে শরিয়তের হালাল হারাম মেনে চলে) কাছে গিয়ে বললো আমি ৯৯ জনকে হত্বা করছি এখন পরিত্রানের উপায় কি।আবেদ বললো তুমি এত মানুষ হত্বা করেছে তোমার পরিত্রানের কোন উপায় নাই। সে কথা শুনে তাকেও হত্বা করলো। এরপর আবার কোন জ্গানীর খোঁজে বের হলো।একজন জ্গানীর সন্ধান পেয়ে তার কাছে গিয়ে ঘটনা বললো।তিনি বললেন এ পাপ থেকে মুক্ত করার মালিক আল্লাহ।এটা তোমার আর তোমার রবের সাথে সম্পর্ক। তবে তুমি ওমুক যায়গায় যাও যেখানে ভাল লোকরা থাকে।সে যাত্রা শুরু করলো পথিমধ্যে মালাকুল মওত এসে হাজির।এখন দু'রকম ফেরেস্তা নাজিল হলো।আজাবের ফেরেস্তারা বললো আমরা তার জান কবজ করবো কারন সে মানুষ হত্বা করেছে।আর নেক লোকের জান কবজের ফেরেস্তারা বললো সে ইসতেগফারে বের হয়েছে সে জন্য আমরা তার জান কবজ করবো।বাদানুবাদের সময়ে জিবরিল আমিন এসে উপস্হিত।তাকে বিষয়টি বলা হলো। তিনি বললেন যায়গাটি পরিমাপ কর সে যেখান থেকে ইস্তেগফারে বের হয়েছে।যদি নেকের দিকে যাত্রা বেশি হয় তাহলে নেককার ফেরেস্তারা আর যদি কম হয় তাহলে আজাবের ফেরেস্তারা জান কবজ করবে।দেখা গেল সে নেকের দিকে আধা হাত রাস্তা বেশি পার হলো।আর তার জান্নাতের ফায়সালা হয়ে গেল।সেজন্য যত গুনাহই বান্দা করুক কারো এটা বলা অনুচিত যে, এ লোক জান্নাতে বা জাহান্নামে যাবে। কাকে আল্লাহ জান্নাত দিবেন ও জাহান্নাম দিবেন এটা আল্লাহর ক্ষমতা ও এখতিয়ার।বান্দার চোখে হয়ত দেখে মনে হবে একজন লোক নেককার হতে পারে সে আল্লাহর চোখে বদকার আবার বান্দার চোখে মনে হতে পারে একজন বদকার কিন্তু আল্লাহর চোখে সে লোক হতে পারে নেককার।কারন আমরা কারো অন্তরের কার্যকলাপ দেখি না।আল্লাহ আমাদের সব কার্যকলাপ অবলোকন করেন। আমাদের কাজ প্রত্যেককে বার বার নসিহত করা।কারো প্রতি বিরক্ত হলে চলবে না।আবার দ্বীনের ব্যাপারে জোর জবরদস্তিও চলবে না।উত্তম নসিহতের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার করতে হবে।আর কাউকে নসিহত করার আগে নিজের জীবনকে নসিহত করতে হবে সর্বাগ্রে। তা নাহলে নসিহতকারি তার নিজেরই ক্ষতি করবে না, ক্ষতি করবে আমাদের এই চির সুন্দর ইসলামকে। আল্লাহ আমাদের সঠিক দ্বীন বোঝার ,আমল করার ও অন্যায় করার সাথে সাথে ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন।

বিষয়: বিবিধ

৩০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File