সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী কি আসলেই সাহাবা বিদ্বেষী ছিলেন!!!

লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:৪৮:৩৫ রাত

ANISUR RAHMAN

মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম ‘রুহামাউ বাইনাহুম’ ছিলেন?

প্রশ্নঃ কয়েকদিন পূর্বে আমার সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা’ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়। বক্তৃতা প্রসঙ্গে আমি নিম্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা করি, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। আর যেসব লোক তাঁর সঙ্গী সাথী, তাঁরা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেরা পরস্পর পূর্ণ দয়াশীল’

বক্তৃতা শেষ করার পর এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো, কুরআন তো সাহাবায়ে কিরামের এই বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। কিন্তু বাস্তব ঘটনাবলীর চিত্র এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সিফফীন ও জামালের যুদ্ধে উভয়পক্ষেই বড় বড় সাহাবীরা বর্তমান ছিলেন। হযরত আয়িশাহ (রাঃ) পর্যন্ত এক পক্ষে ছিলেন। এসব ঘটনাবলীর আলোকে ‘তাঁরা পরস্পর পূর্ণ দয়াশীল’ আয়াতাংশটির তাৎপর্য কী হতে পারে?

এ বিষয়ে আমার সাধ্যানুযায়ী চিন্তা করেছি। কিছু কিছু দীনী কিতাব অধ্যয়ন করে দেখেছি। আলেম বন্ধুদের নিকট জানতে চেয়েছি। কিন্তু কিছুতেই পূর্ণ আশ্বস্ত হতে পারিনি। তাই আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম। মেহেরবানী করে উক্ত ঘটনাবলী সম্মুখে রেখে আয়াতাংশটির ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য জানাবেন- যাতে করে এ বিষয়ে যাবতীয় সন্দেহ সংশয় বিদুরিত হয়ে যায়।

উপরোক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মওদুদীর জবাবঃ

আমি দুঃখিত যে, অনেক দেরি করে আপনার পত্রের জবাব দিচ্ছি। এ মাসে দারুন ব্যস্ততা ছিল, যার কারনে প্রাপ্ত চিঠিপত্র পড়ারই সময় হয়নি, জবাব দেয়া তো দুরের কথা। আশা করি আমার সমস্যা ও অপারগতার প্রতি লক্ষ্য রেখে দেরি হবার জন্য মনে কিছু নেবেননা।

আয়াতটি সম্পর্কে সম্মানিত প্রশ্নকর্তা যে সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করেছেন তার ভিত্তি দুটি অনুমান ও কল্পনার উপর। আর উভয়টিই প্রকৃত সত্যের বিপরীত অবাস্তব। প্রথম অনুমানটি হচ্ছে এই যে, কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির প্রসংশা করে কোনো কথা বলা হলেই সে কথার এই অপরিহার্য অর্থ ধরে নেয়া যে, সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির মধ্যে কখনো উক্ত প্রসংশার বিপরীত সামান্য আংশিক ত্রুটি-বিচ্যুতিও পাওয়া যেতে পারবে না। অথচ যখনই মানুষের প্রসংশা করা হয়, তখন তা করা হয়ে থাকে তার ভুমিকার প্রভাবশালী অবস্থার ভিত্তিতে। কখনো কখনো এর বিপরীত কোনো কিছু তার মধ্যে পরিলক্ষিত হলে তা তার সামগ্রিক বৈশিষ্ট্যকে বাতিল করে দেয়না। আমরা সাহাবায়ে কিরামকে পৃথিবীর সর্বাধিক পরহেযগার ও নেককার লোক সমষ্টি বলে আখ্যায়িত করি। তাঁদের জীবন চরিতের সামগ্রিক বিচারে তাঁদের এ বৈশিষ্ট্য নিরুপিত হয়েছে।

কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, মানুষ হিসাবে কখনো তাঁদের মধ্যে কোনো প্রকার মানবিক দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হত না।সে যুগেও তো কারো কারো ব্যাভিচারের, কারো চুরির, কারো মিথ্যা দোষারোপের শাস্তি হয়েছিল। আর সেই সাজাপ্রাপ্ত লোকেরা সাহাবিত্বের মর্যাদায়ই অধিষ্ঠিত ছিলেন। কেননা ঈমান আনার পর যে ব্যক্তিই নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তিনি সর্বাবস্থায় সাহাবি ছিলেন। আর এ ধরনের অপরাধী হয়ে যাবার ফলে না তাঁদের ঈমান চলে গিয়েছেল আর না বাতিল হয়েছিল তাঁদের সাহাবি হবার মর্যাদা। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তাঁদের সমাজে ব্যাভিচার, চুরি ও অপরাধের প্রকাশ ঘটেনি। এগুলো ছিল নিতান্তই বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা। সংস্কার সংশোধন এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর দিক থেকে তাঁরা উচ্চতম শিখরে আরোহণ করতে পেরেছিলেন। পৃথিবীর কোনো মানব সমাজ কখনো সেই স্তরে পৌঁছুতে পারেনি। এখন বলুন তো উক্ত দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাঁদের এই সামগ্রিক গুন বৈশিষ্ট্যকে মসিলিপ্ত করতে পারে কি?

এমনি করে ‘রুহামাউ বাইনাহুম’ বৈশিষ্ট্যটি তাঁদের সামগ্রিক চরিত্র ও বিজয়ী স্বভাবের ভিত্তিতে নিরূপিত। এ ব্যাপারেও প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে এই যে, কখনো কোনো মানব সমাজকে পারস্পরিক মায়া মুহাব্বাত, দয়া অনুগ্রহ এবং সহমর্মিতা ও কল্যাণ কামনার দিক থেকে আর পরস্পরের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিক থেকে এতোটা উচ্চ স্তরের পাওয়া যায়নি, যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন সাহাবায়ে কিরামের সমাজ। সমষ্টিগত দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এ গুণটি তাঁদের মধ্যে সম্ভাব্য পরিপূর্ণতা লাভ করে, যতটা অন্য কোনো মানব সমাজের ব্যাপারে কল্পনাই করা যেতে পারে না।

কিন্তু মানুষ যতক্ষণ মানুষই থাকছে ততক্ষন তাঁদের মধ্যে অবশ্যই মতপার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে। মতপার্থক্য ঝগড়া-বিবাদের রুপও ধারন করতে পারে। সাহাবায়ে কিরামও মানুষই ছিলেন। ঊর্ধ্বজগত হতে কোনো অতিমানবগোষ্ঠী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহচর্যের জন্য নাযিল হয়ে আসেননি। একে অপরের সঙ্গে উঠা-বসা, লেনদেন ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে অবশ্যি মানুষ হিসাবে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হতো এবং এই মতপার্থক্য কখনো কখনো শক্ত আকারও ধারন করতো। কিন্তু এসব খুঁটিনাটি ঘটনা দ্বারা তাঁদের সেই সামষ্টিক সোনালি বৈশিষ্ট্য ‘রুহামাউ বাইনাহুম’-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি হতো না। কেননা এটা ছিল তাঁদের শক্তিশালী বিজয়ী বৈশিষ্ট্য।

এই সন্দেহ সংশয়ের পিছনে দ্বিতীয় যে অনুমানটি কাজ করছে তা হচ্ছে- সাহাব্যে কিরামের মধ্যে কখনো কোনো মতপার্থক্য প্রকাশিত হয়ে থাকলে তার গুরুত্ব এতোই বেশি যে, তাঁদের ‘রুহামাউ বাইনাহুম’ বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে গেছে। অথচ তাঁদের মতপার্থক্যের যে ইতিহাস আমাদের নিকট পৌঁছেছে তা সাক্ষ্য প্রদান করছে যে, এই পবিত্রাত্মা লোকদের পরস্পরের মধ্যে যখন লড়াই পর্যন্ত সংঘটিত হতো, তখন লড়াই ক্ষেত্রে পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ‘রুহামাউ বাইনাহুম’-এর অনুপম বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হতো।

জামাল ও সিফফীনের যুদ্ধে অবশ্যি তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু পৃথিবীর কোনো যুদ্ধের ইতিহাসে আপনি কি যুদ্ধ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের কাউকেও পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে দেখেছেন- যেমনটি দেখা গেছে এই বুজুর্গ সাহাবিগনের মধ্যে? তাঁরা একান্তই নেক নিয়ত ও আন্তরিকতার সাথে নিজেকে হকের পক্ষে মনে করে লড়াই করেছেন। ব্যক্তিগত শত্রুতা ও ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য কেউ লড়াই করেননি। অপরপক্ষ তাঁদের পজিশনকে ভুল মনের করেছে এবং স্বীয় ভুল পজিশনকে ভুল বলে অনুভব করতে পারছেনা বলে তাঁরা আফসোস করতেন।

তাঁরা একপক্ষ অপরপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুদ্ধ করেননি। বরঞ্চ নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী অপরপক্ষকে সঠিক পথে আনতে চাইতেন। তাঁদের কেউ অপরের ঈমানকে অস্বীকার করতেন না। অপরের ইসলামী অধিকার সমুহ অস্বীকার করতেন না। এমনকি অপরের মর্যাদা এবং ইসলামের জন্য কৃত সেবাসমুহকেও অস্বীকার করতেন না। তাঁরা একে অপরকে হীন লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেননি। যুদ্ধের সময় অবশ্যি তাঁরা যুদ্ধের হক আদায় করেছেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে আহত ও নিহতদের প্রতি তাঁদের ছিল প্রানভরা মুহাব্বাত। যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে মুকাদ্দামা দায়ের করা, তাঁদের শাস্তি প্রদান করা কিংবা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা তো দুরের কথা, তাঁদেরকে বন্দী করে ফেলে রাখা এবং তাঁদের উপর কোনো প্রকার জিদ উঠানো পর্যন্ত ছিল তাঁদের নীতিবিরুদ্ধ।

লক্ষ্য করে দেখুন, জংগে জামালে উভয়পক্ষ যখন মুখোমুখি দণ্ডায়মান, হযরত আলী (রাঃ) অপরপক্ষের হযরত যুবাইর (রাঃ)-কে কাছে ডাকেন। তিনিই নির্দ্বিধায় তাঁর নিকট চলে আসেন। তাঁদের উভয়ের কারোই অপরের সম্পর্কে এ আশংকা ছিল না যে, তিনি হঠাৎ করে তাঁকে আক্রমন করবেন। উভয় ফৌজের মাঝখানে তাঁরা একে অপরকেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। উভয় পক্ষের সৈন্যরা তাঁদের অবস্থা দেখে হয়রান হয়ে যান। যেখানে তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছেন, সেখানে তাঁরা একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। একান্তে কথাবার্তা বলে তাঁরা নিজ নিজ ফৌজের দিকে ফিরে যান।

হযরত আলীর ফৌজের লোকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, আমীরুল মু’মিনিন! কেন আপনি উক্ত যুদ্ধের ময়দানে বিরুদ্ধ পক্ষের এক উন্মুক্ত তরবারীধারী ব্যক্তির সঙ্গে একা একা সাক্ষাত করতে গেলেন? এর জবাবে তিনি তাঁর সম্পর্কে বললেন, জানো তিনি কে? তিনি রাসুলের ফুফু সাফিয়া (রাঃ)-এর পুত্র। আমি রাসুলুল্লাহর একটি কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেছেন, কতোই না ভালো হতো আরও পূর্বে যদি আমার এ কথা স্মরণ হতো। তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করতে আসতাম না। একথা শুনে লোকেরা বলল, আলহামদুলিল্লাহ! আমীরুল মু’মিনিন, তিনি তো রাসুলের হাওয়ারী। তিনি তো রাসুলে খোদার শাহসওয়ার। তাঁর জন্যই আমরা বেশি ভয় পাছিলাম।

অপরদিকে হযরত যুবাইর স্বীয় বাহিনীর নিকট ফিরে গিয়ে বললেন,- শিরক এবং ইসলামের মধ্যে সংঘটিত কোনো লড়াইয়ে যখনই আমি অংশগ্রহন করেছি, তাতে আমি বিচক্ষনতার সাথে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এ যুদ্ধে না আমার মন সাড়া দেয় আর না বিচক্ষনতা। এ কথা বলে তিনি ফৌজ থেকে বের হয়ে চলে যান।

একইভাবে হযরত আলী এবং হযরত তালহা (রাঃ)-এর মধ্যে উভয় বাহিনীর মাঝখানে একান্তে সাক্ষাত হয়। তাঁরা একে অপরকে নিজ মত মানাতে চেষ্টা করেন। লড়াই আরম্ভ হলে হযরত আলী নিজ বাহিনীকে সম্বোধন করে ঘোষণা করেন, সাবধান! কাউকেও শাস্তি দিয়ে হত্যা করবেনা। আহতদের গায়ে হাত উঠাবেনা। বিরুদ্ধ পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে যাওয়া মাল তোমরা গ্রহন করতে পার। কিন্তু তাঁদের শহীদদের ঘরে যে মাল সম্পদ রয়েছে, সেগুলো তাঁদের উত্তরাধিকারীদের হক। তাঁদের স্ত্রীদের জন্য ইদ্দত পালন করতে হবে। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, যেহেতু তাঁদের মাল সামান আমাদের জন্য বৈধ, তবে তাঁদের স্ত্রীরা জন্য বৈধ হবে না কেন? হযরত আলী (রাঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তাঁর মাতা আয়িশাহ (রাঃ)-কে গ্রহন করতে প্রস্তুত? লোকেরা সমস্বরে বলে উঠলো, আস্তাগফিরুল্লাহ!

যুদ্ধশেষে হযরত আলী নিহতদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত তালহার পুত্র মুহাম্মাদের লাশ দেখতেই অবলিলাক্রমে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন! তুমি ছিলে বড় ইবাদতগুজার! নিশি রাতে জেগে নামাজ আদায়কারী। কঠিন গরমের সময়ে রোজাদার।

হযরত যুবাইরের হত্যাকারী পুরস্কারের আশায় হাযির হলে, তিনি তাঁকে জাহান্নামের সুসংবাদ(!) প্রদান করেন। হযরত আয়িশার তাঁবুর নিকট পৌছলে কেবল এতটুকুই বলেন, হে তাঁবুবাসিনী! আল্লাহ আপনাকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আপনি যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে এসেছেন। অতঃপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে তিনি তাঁকে মদীনা পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে হযরত আয়িশাহও এই সদাচরণের জন্য তাঁকে দিল খুলে দোয়া করেন, আল্লাহ আবু তালিবের পুত্রকে জান্নাত দ্বারা পুরস্কৃত করুন।

হযরত তালহা (রাঃ)-এর পুত্র মুসা (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করতে আসলে তিনি তাঁকে বসতে দিয়ে বলেন, আমি আশা করি তোমার পিতা সেসব লোকদের মধ্যে হবেন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমরা তাঁদের অন্তরের সমস্ত কালিমা বিদুরিত করে দেবো আর তাঁরা জান্নাতে মুখোমুখি আসন সমুহে ভাই ভাই হিসাবে উপবেশন করবে’’ এক ব্যক্তি প্রশ্ন করে, এ কে আপনার নিকট এসেছিল? তিনি বলেন, সে আমার ভাতিজা। লোকটি বলল, সে যদি আপনার ভাতিজাই হয়ে থাকে, তাহলে আমরা তো বদবখত হয়ে যাই। হযরত আলী লোকটির উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! আল্লাহ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বলে দিয়েছেন, আমি তোমাদের মাফ করে দিয়েছি, তোমরা যেরুপ ইচ্ছা আমল করো।

এবার চিন্তা করে দেখুন, তাঁদের পারস্পরিক লড়াইয়ের প্রকৃতি কিরূপ ছিল। তাঁরা পরস্পরের প্রতি তলোয়ার উত্তোলন করেও ‘রুহামাউ বাইনাহুম’ ছিলেন। কঠিন যুদ্ধাবস্থায়ও তাঁদের পরস্পরের মর্যাদা, সম্মান, মুহাব্বাত, ইসলামী অধিকার সমুহ পরস্পরের নিকট সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন ছিল। পূর্বের তুলনায় তাতে বিন্দুমাত্র পার্থক্য সৃষ্টি হয়নি। পরবর্তী লোকেরা তাঁদের কারো প্রতি দরদী হয়ে যদি অপরকে গালি দিয়ে থাকে, তবে তা এ লোকদেরই বততমিজী। কিন্তু সাহাবাহে কেরাম শত্রুতার বশবর্তী হয়ে পরস্পরে বিরুদ্ধে লড়াই করতেন না। আর লড়াই করেও তাঁরা পরস্পরের শত্রু হতেন না।

(তরজমানুল কুরআন, যুলহাজ্জ ১৩৭৬ হিজরী, সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ ঈসায়ী)

(রাসায়েল ও মাসায়েল, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী; ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নঃ ১০৫-১১০)

বিষয়: বিবিধ

২১১৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380236
২৮ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:৩০
স্বপন২ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্ট।
380241
২৮ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
380275
২৯ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৩
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : ভালো লাগলো
380457
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০৫
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File