চোরের উপর বাটপারি

লিখেছেন লিখেছেন মিশন ০৭ মে, ২০১৩, ০৩:০৮:০৪ দুপুর

আমি কয়েকদিন আগে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বাড়ি যেতে হলে প্রথমে ব্রডগেজ তারপর মিটারগেজ ট্রেনে চড়তে হয়। পরিক্ষার পর যেহেতু ক্লাস বন্ধ হয়নি তাই হরতালের অনিদিষ্টকালিন ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রেনে চেপে বসলাম। ট্রেন ছুটে চলল দ্রুত গতিতে আমার কিছুটা ভয় করতে লাগল নাকি জানি কোথাও যদি ট্রেন লাইনের স্লিপার উঠানো থাকে তাহলে ট্রেন দূর্ঘনায় পতিত হতে পারে। এই ভয় নিয়ে চলতে চলতে অবশেষে ট্রেনটি পৌছে গেল হিলি স্টেশনে তারপর ঘটে গেল কিছু ঘটনা।



ঘটনার শুরুতে যেটি ঘটল তা হল ট্রেন হিলি স্টেশনে অপেক্ষা করার সুযোগে আমি ট্রেন থেকে নেমে বর্ডার এলাকার কিছু ছবি ক্যামেরায় ধারন করতে লাগলাম ঠিক সেই মুহুর্তে এক ভাই আমাকে বলল আপনি কি আপনার মোবাইল ফোন হারাতে চান। আর যদি না চান তাহলে ছবি তোলা বন্ধ করেন নাহলে বুঝতে পারবেন। আমি মনে মনে ভাবলাম এখানে যেহেতু চোরাকারবারিরা যাতায়ত করে তারা হয়তো মোবাইল কেড়ে নিতে পারে তাই দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়লাম।

এরপর এক বিজিবি সদস্য আমার কাছে আসলেন এসে জিজ্ঞেস করলেন যে আপনি কেন মোবাইল দিয়ে ভিডিও করলেন। তখনি ধীরে ধীরে আমার মেজাজটা খিটখিটে শুরু করলো। আমি বললাম ভিডিও করিনি কিন্তু ৩-৪ টি ছবি তুলেছি সে বলল ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে হবে আমি বললাম কেন? সে বলল যদি আমি ছবি ডিলেট না করে দেই তাহলে সে আমার মোবাইল নিয়ে নিবে। আমি এই কথা শুনে আরও কিছুটা ঘাবরে গেলাম তারপর একে একে ছবিগুলো ডিলিট করতে শুরু করলাম কিন্তু ফোন মেমোরী থেকে ছবিগুলো মেমোরীতে না যাওয়ায় ছবিগুলো ডিলিট করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারপর সে আমাকে বলল মোবাইলে যদি কোন ছবি পাওয়া যায় তাহলে আপনার মোবাইল ফোন দেয়া হবে না বা মেমোরী খুলে নেওয়া হবে এই কথা বলে আমার মোবাইলটি সে হাতে নিল। পাশে থেকে দুই একজন ভাই বলতে লাগলেন মোবাইলটা দিয়ে দেন এটা কোন ব্যাপার না। আমি তাকে রীতিমত অনুরোধ করতে শুরু করলাম তারপর সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল আপনি কি করেন, কোথায় যাবেন, কার অনুমতি নিয়ে ছবি তুলেছেন, আপনি কি সাংবাদিক এরকম আরও নানা প্রশ্ন। আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না কি ছিল আমার অপরাধ। আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল যে আমার ছবি তোলা বেশি অপরাধ না চোরাকারবারীদের বাধা না দেয়া কোনটি বড় অপারাধ?

হিলি স্টেশন হচ্ছে চোরাকারবারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান। এই পয়েন্ট দিয়েই প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র সেই সাথে যুব সমাজ ধ্বংসকারী মাদকদ্রব যেমন ফেন্সিডিল, গাঁজা, মদ, ইয়াবা ইত্যাদি যা বিজিবির কতিপয় কর্মকর্তা ও সৈনিকদের ফাকি দিয়ে হরহামেশাই এদেশে প্রবেশ করে চলেছেই কিন্তু অনেকেই দেখার পরেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আরও একটি মজার বিষয় ঘটেছিল যে হরতালের কারনে প্রত্যেক বগিতে ২-৩ জন করে পুলিশ ছিল। সেই পুলিশের মধ্যে একজন বিজিবির এক সদস্যকে লক্ষ্য করে বললেন লাঠি পেটা করে কি লাভ তার চেয়ে কিছু নিয়ে ছেড়ে দেন অর্থাৎ উনি বোঝাতে চেয়েছেন যে কিছু টাকা নিয়ে নেন। দুর্নীতি দেশের প্রত্যেক পরতে পরতে প্রবেশ করায় দুই একজন ভাল থাকলেও কোন লাভ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কি যে হতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

আবার আরও একটি বিষয় দেখে বড় আশ্চর্য হলাম যে চোরের উপর বাটপারি করা দেখে। অর্থাৎ মরার উপর ক্ষারা এর মত। চোরাকারবারিদের মালামালের উপর ভিত্তি করে একশ্রেনীর দালাল তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে অর্থ উপার্জন করেই চলেছে। অনেকের কাছে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে যে এরা ঐ এলাকার প্রভাবশালী। এদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসলেও তারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোয়ার বাইরে কারন তাদের পশ্চাতে রয়েছে বড় বড় গং।

বিষয়: বিবিধ

২৩২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File