হাদিস ছহিহ ও যঈফ হয় কিন্তু জাল্ হতে পারেনা

লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:০৩:৫৩ দুপুর

বর্তমানে আহলে হাদিসের ভাইয়েরা সাহীহ,ও যঈফ এই দু

ই প্রকারের হাদিস নিয়েই বিশেষ আলোচনা করে থাকেন এবং মানুষকে এভাবে বুঝিয়ে থাকেন যে আমরা কোরআন আর ছহিহ হাদিস মানি আর ছহীহ অর্থ সঠিক ও সত্য আর যঈফ অর্থ নকল মিথ্যা বানোয়াট জাল্। এটাই মানুষ স্বাভাবিক ভাবে ছহীহ এবং জাল শব্দের অর্থ বুঝে থাকেন।এবং বুঝিয়ে থাকেন আসলে কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় বরং হাদিসের ক্ষেত্রে ছহিহ এবং যঈফ কাকে বলে তা আমাদের প্রচলিত পরিভাষা দিয়ে বুঝলে হবেনা বরং কোরআন-হাদিসকে তার নিজস্ব পরিভাষা দিয়েই বুঝতে হবে অন্যাথায় হীতে বিপরীত হবে।

এই জন্য আগে এ সংক্রান্ত কিছু ব্যবহারীত কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে হবে যেমন

রিওয়ায়ত (رواية)]

হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়ত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়ত বলা হয়। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়ত (হাদীস) আছে।

সনদ (سند)[]

হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।

মতন (متن)

হাদীসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।

এবার আসুন মূল কথায়

যেমন হাদিসের পরিভাষায় সাহীহ (صحيح) বলা হয়:-

যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উলে¬খিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবতা-গুণসম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্র“টি মুক্ত তাকে সাহীহ হাদীস বলে।এবং এর দ্বারা আক্বাইদ সংক্রান্ত মাছয়ালা প্রমানের সাথে সাথে শরয়ী বিধি বিধানও প্রমানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

হাসান حسن বলা হয়;-

যে হাদীসে কোন রাবীর যারতগুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফিকহবিদগণ সাধারণত সাহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরী‘আতের বিধান নির্ধারণ করেন।

যঈফ (ضعيف)] বলা হয়:-

যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।যঈফ হাদিসের দ্বারায় ফাজায়েল তরগীব ও তরহীব সম্পর্কিত বিধান প্রমানীত হয়।

উপরোক্ত সংজ্ঞাটি আলেম ওলামা সহ যারা হাদিস অধ্যয়ন করেন তাদের জন্য। তাই অনেক ক্ষেত্রে উক্ত সংজ্ঞাটি সাধারনের বুঝতে অনেক কষ্ট হয়ে যায় এই জন্য সাধারনের সুবিধার্থে এই ভাবে বলা হয় থাকে যে,

যেমন হাদিস বর্নণাকারীদের অবস্হার পরিপেক্ষিতে হাদিস ছহিহ, হাছান বা যঈফ হয়ে থাকে।

যেমন হাদিসের বর্নণাকারী যোগ্যতার মাফকাঠিতে তিন ধরনের হয়ে থাকে 1. উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী 2.মধ্যম যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী ও3. নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন হাদিস বর্নণাকারী (অর্থাৎ ফাস্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, ও থার্ট ক্লাস) তাই উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিস কে "সাহীহ হাদিস" বলা হয়। মধ্যম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিসকে "হাসান হাদিস" বলা হয়। আর নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের হাদিস কে "যঈফ হাদিস "বলা হয়।

কিন্তু নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন বর্নণাকারীদের বর্নণাকৃত হাদিসকে কোন ভাবেই জাল মিথ্যা বানোয়াট হাদিস বলার সুযোগ নেই। হাদিস বর্নণাকারীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসকে দুর্বল বা যঈফ বলা হয়, অন্যথায় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথাই যঈফ নয়।

যঈফ (ضعيف) বলা হয় ঐ সকল হাদিসকে

যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।যঈফ হাদিসের দ্বারায় ফাজায়েল তরগীব ও তরহীব সম্পর্কিত বিধান প্রমানীত হয়।

বিঃদ্রঃ:-- রাবীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসকে দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথাই যঈফ নয়।যঈফ অর্থ দূর্বল কিন্তু একে জাল বলে আখ্যায়িত করা অনূচীত। বরং যে বা যাহারা যঈফ হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেন,জাল হাদিস, জাল হাদিস বলে মুখের ফেনা বাহির করে ফেলেন মূলত তারা এ কর্মের দ্বারা রসুল সাঃ এর উপর মিথ্যার এলজাম দিয়ে থাকেন পরোক্ষ ভাবে।যেমন সাধারণত জাল্ শব্দের অর্থ নকল, মিথ্যা, বানোয়াট,ই বুঝায়, যার আরবী হল তযবীর অর্থাৎ জাল্। কিন্তু হাদিসের পরিভাষায় যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।আর "যঈফ" ইহা একটি আরবী শব্দ এর অর্থ হল দূর্বল।কিন্তু কোন প্রকারেই জঈফ হাদিসকে "জাল" হাদিস বলা যাবেনা।বা "যঈফ" শব্দের অর্থ "জাল" বলা যাবেনা।

যারাই বলেন মূলত তারা সাধারনকে ধোকা দিয়ে ,শব্দের অপব্যাখ্যা করে অদৃশ্য কোন ফায়দা হাছিল করতে চায়।

যেমন ধরুন যারা বলেন আমরা কোরআন এবং ছহীহ হাদিস মানি ও ছেহাহ ছিত্তার হাদিস মানি এর অর্থ দাড়ায় যে ছেহাহ ছিত্তার বাহিরে আর কোন ছহিহ হাদীস নেই?আসলে তা নয় বরং ছেহা ছিত্তার বাহিরেও অসংখ্য ছহি হাদিস বিদ্ধমান । অথচ ছেহাহ ছিত্তায় গডে মিলে সর্বমোট ৩৮৭৭৫ টি হাদিস (তকরার সহ)অথচ নবী সাঃ হইতে রেওয়ায়েত কৃত হাদিসের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষাধীক।আর ইমাম বোখারীর সংকলন কৃত সেই বোখারী শরিফে হাদীসের সংখ্যা-7275 টি হলেও তাঁর সংকলনে ছিল প্রায় ৬ লক্ষাধীক হাদিস। আর মুখস্হ ছিল প্রায় ৩ লক্ষাধীক হাদিস।তাহলে পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের উপর আমল করতে হলে 38775 টি হাদিস কি যথেষ্ট? তাই যদি হয় তাহলে অন্যান্য হাদিসের উপর কি ভাবে আমল করা সম্ভব? তাছাড়া যদি ৩৮৭৭৫ টি হাদিস কে যদি ছহিহ মানী আর বাকী সব হাদিসকে যঈফ জাল্(তাদের ভাষায়) বলি তাহলে এর অর্থ কি দাড়াল ? আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ, যিনি সমস্ত গুনাহর থেকে পাক পবিত্র নিশ্পাপ হওয়া সত্বেও প্রায় ৯,৬০,০০০টির মত জাল অর্থাৎ নকল, মিথ্যা বানোয়াট, ও ভূল কথা বলেছেন ।নাউযুবিল্লাহ!

এমন কথা বলা বা বিশ্বাস করা কোন ঈমানদার মুসলমান কি করতে পারে?এক কথায় বলব যে , না, না,কখনো কোন মুসলিম এমন আক্বিদাহ বিশ্বাস রাখতে পারেনা। তাহলে কেন সাধারন মুসলমানকে ধোকা দেয়ার জন্য কথায় কথায় ছহিহ হাদিসের জিকির করা হচ্ছে?কার সার্থে? কাকে খুশি করার জন্য।না জানি এর পিছনে কোন গভীর চক্রান্ত লুকায়ীত আছে!

তাছাড়া এখানে আরও একটি বিষয় স্বরন রাখা জরুরী যে যঈফ হাদিসকে জাল্ হাদিস বলে চালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কৌশলে ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে নিন্ম যোগ্যতা সম্পন্ন নবীর ছাহাবীদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তাদের যোগ্যতা ও কর্মকে অস্বীকার করা হচ্ছে।এতে পরোক্ষভাবে ছাহাবিদের অস্বীকার করার নামান্তর।মূলত এমন চরিত্র শিয়াদেরই মানায়,

আল্লাহ আমাদের সকলকে হক কথা বুঝার তাওফিক দান করুন,

তাছাডা এখানে আরও একটি কথা স্বরণ রাখা দরকার যে আমাদের দেশে কোন কোন আরবী মোকুলাতকে বা কোন মনিষীর আরবী বাক্যকে না জেনে না বুঝে অনেকে হাদিস বলে চালিয়ে দেন সেটা ভিন্ন কথা, যেমন حب الوطن من الايمان এই জাতীয় কিছু আরবী শব্দ বা মোকুলাত এইগুলোকে জাল্ বলাতে কোন সমস্যা নেই।মূলত এগুলো হাদিস নয়।

লেখক:-া

মাওঃ আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

লেখক,গবেষক ও ইসলামী কলামিষ্ট এন্ড ব্লগার

বিষয়: বিবিধ

২৬০০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

359707
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৩৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৩০
298258
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
359760
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:১০
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : মাউদু মানে কি?
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৩০
298257
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : মাওযূ’ (موضوع)
যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ’ হাদীস বলে। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৬
298259
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : হাদিসে মাওযু দ্বারা শরিয়তের কোন বিধান প্রমানীত হয়না।
মাওযূ’ (موضوع) বলা হয়
যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ’ হাদীস বলে। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। তার পরও হাদিসের পরিভাষায় এই সকল হাদিসকে "মাওযু" হাদিস বলা হয়ে থাকে কিন্তু জাল্ হাদিস নয়।
359763
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:২৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সুন্দর গবেষনামূলক পোষ্ট। মিথ্যা বা বানোয়াট হাদিসকে জাল বলা যেতে পারে। কিন্তু যয়ীফ হাদিসকে জাল বলা কোন অবস্থাতেই জায়েজ হবে না।

যারা এগুলো করে, তারা মূলত জ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়।
সমাজে ফেৎনার সৃষ্টি করে থাকে। আর নিজেকেই একমাত্র সহীহ মুসলিম হিসেবে দাবী করে।

আল্লাহ তায়ালা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক। আমীন।

জাযাকাল্লাহ খাইর

359769
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কিন্তু জাল হাদিস তো কিছু আছে যা আসলে হাদিস নয় কিন্তু হাদিস বলে পরিচিত।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:২৮
298256
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ, আমার কথা হল যারা যঈফ হাদিসকে জাল হিসাবে সাব্যস্হ করেন তাদের ব্যাপারে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৭
298260
এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ, আমার কথা হল যারা যঈফ হাদিসকে জাল হিসাবে সাব্যস্হ করেন তাদের ব্যাপারেوو
তাছাডা এখানে আরও একটি কথা স্বরণ রাখা দরকার যে আমাদের দেশে কোন কোন আরবী মোকুলাতকে বা কোন মনিষীর আরবী বাক্যকে না জেনে না বুঝে অনেকে হাদিস বলে চালিয়ে দেন সেটা ভিন্ন কথা, যেমন حب الوطن من الايمان এই জাতীয় কিছু আরবী শব্দ বা মোকুলাত এইগুলোকে জাল্ বলাতে কোন সমস্যা নেই।মূলত এগুলো হাদিস নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File