নারী আর টাকা ===========

লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:০৩:২৬ রাত



ঘটনা-১: ১ নভেম্বর ২০১৩ শুক্রবার। বিকাল ৫টা। মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে নামলাম। গন্তব্য মিরপুর। বাস স্ট্যান্ড হতে কিছুটা উত্তরে আসতে হয় রেলগেটের কাছ থেকে গাড়ীতে উঠব বলে। বাস স্ট্যান্ডের কাছে এক রিকসাওয়ালার কাছে দুটি নারী দাড়িয়ে আছে। দর কষাকষি হচ্ছে, রিকসা ওয়ালাটি জিজ্ঞাসা করে কত? একটি নারী বলে ১৫০০। এদেরকে দেখে চিনতে কেউই ভুল করবে না এরা কারা? ওরা ভাসমান পতিতা। সুশীলদের কথায় ওরা যৌনকর্মী। পেটের তাগিদেই হোক বা অন্য যে কোন কারণই হোক তাদের উদ্দেশ্য একটাই টাকা।

ঘটনা-২: রেলগেটের কাছে এসে দাড়ালাম পাশেই মসজিদ, মাদরাসা। রাস্তার বাঁ পাশে এক সুদর্শন যুবক ডিম সিদ্ধ করে বিক্রি করছে। তার পাশেই ছোট একটি ফুটপাতের দোকানী তার পসরা সাজিয়ে বসে আছে। ওরা অস্থায়ী ব্যবসায়ী দেখেই বুঝা যায়। পুলিশ তাড়া করলেই সব মাল গুটিয়ে ভৌ দৌড়। গাড়ীর অপেক্ষায় আছি। ফুটপাতের দোকান থেকে মাদরাসার ছাত্ররা কিছু ক্রয় করতে দেখলাম। আমিও তাদের পাশে দাড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য মিরপুরের বাসে উঠা। রাস্তার দুপাশে গতি নিয়ন্ত্রক ফেলা হচ্ছে মনে হচ্ছে ট্রেন আসবে। ক্রিং ক্রিং আওয়াজ হচ্ছে। কিছু লোক রডটি উপরে তুলেই মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে। নিয়ম মানছে না তারা। কোথা থেকে দুই তরুণী হাজির। পোশাক কোন ভদ্র ঘরের নারীর নয়। হাতের বাহু খালি।শরীরের ভাজগুলি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি। আশেপাশে দৃশ্যগুলি লক্ষ্য করছিলাম। এক সময় দেখতে পেলাম মেয়েটি ইচ্ছে করেই একটি ছেলের গায়ে পিছন থেকে ধাক্কা খেল। শহুরে ছেলে। কোন রকম সরি না বলেই রাস্তা পাড় হল। এখানে ওর উদ্দেশ্যটা যতটুকু বুঝতে পারলাম। খদ্দের ধরা আর ইনকামের পথ খোলা। উঠতি বয়সের ছেলেপেলে, রিকসাওয়ালা আর ভবঘুরে লোকগুলি এসব স্থানে বেশি থাকে।

ঘটনা-৩: একটু পরেই মিরপুরের গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ী কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর দেখলাম। একটি প্রাইভেটকার দাড়িয়ে আছে। ট্রাফিক সিগনালে পড়েছে। একটি ১৩-১৪ বছরের কিশোরী। হাতে একটি ন্যাকড়া। প্রাইভেটকারটির ধূলো ভরা কাঁচ মুছে দিচ্ছে। ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই তার কাজ শেষ। ড্রাইভিং সীটের পাশে বসা মালিক। জানালার গ্লাস খুলে ভদ্র লোক একটি ৫ টাকার নোট ধরিয়ে দেয় মেয়েটির দিকে। হাসিমুখে মেয়েটি পিছনের দিকে এগিয়ে যায়। আরও কোন গাড়ি আসে কি না। উদ্দেশ্য টাকা আয়। সারাদিন মনে হয় এটিই তার কাজ। এই বয়সে হয়তো অনেক মেয়েই নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ায়। ইচ্ছে করলে সেও পারতো রেলগেটের পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির পথ অনুসরণ করতে পারতো।

ঘটনা-৪: ঢাকায় আসার ২ দিন পর থেকেই হরতাল চলছে। বাসায় থাকতে থাকতে একঘেয়ে লাগছে। ভাবলাম শহরের ভিতরে যেহেতু বাস চলে তাই একটু চিড়িয়াখানায় গিয়ে ঘুরে আসি। ১০ টাকার টিকিট কিনে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পশ্চিম পাশের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আর কখনোই এখানে আসিনি। একটু এগিয়ে গিয়ে একটি ছেলের সাথে সাক্ষাত। বললাম তুমি কই যাবে ভাইয়া? সে বলল আমি এর ভিতরে থাকব । এখানে আমার বোনের বাসা। ভগ্নিপতি এখানে চাকুরী করেন। আমি বললাম চিড়িয়াখানায় কিভাবে যেতে পারব? সে বলল আমার সাথে আসেন আমি মূল গেটের কাছাকাছি যাব। ওখানেই বোনের বাসা। পথে চলতে চলতে ঘন বন দেখছি আর মাঝে মাঝে ছেলেটির কাছ থেকে অনেক কিছুই জেনে নিচ্ছি। বললাম আমরা তো শুনি এখানে অনেক ছেলে মেয়েরা আসে। ও বলে- আসে ঠিক। তবে এখন কম। পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাই খুব কম মানুষই এখন এখানে আসে। দেখলাম বাগান প্রহরীরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের কোন কাজ নেই। একটু সামনে এগিয়ে দেখি এক জোড়া কপোত কপোতী। বয়স অনুমান চল্লিশের কোঠায় হবে। ওদের এই বয়সের ভিমরতি চোখে পড়ল। আপন মনে সামনে এগুতে থাকি। আরও ২-৩ জোড়া তরুণ তরুণীকে দেখলাম গায়ে গায়ে মিশে বসে রঙীন স্বপ্নে বিভোর। ২০ মিনিটের মাথায় আমি মূল ফটকে এসে গেলাম। বাহির হইয়া চিড়িয়া খানায় প্রবেশের একটি টিকিট কিনলাম ২০ টাকা দিয়ে। ১৯৯৪ সালে নানার সাথে এসেছিলাম প্রথম। তখন আমি ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। তখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম। আর আমার ‍নানা ছিলেন সেকেলে যুগের মানুষ। ভাষানটেক থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত রাস্তা আমরা হেঁটে এসেছিলাম। আমার এখনো দিব্যি মনে আছে। চিড়িয়াখানায় আর হাঁটব কি! বাহিরেই সব কষ্ট করে এলাম। এরপরেও ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম।

ঘটনা-৫: যাই হোক, টিকিট নিয়ে আমি সোজা ডান পাশে হাঁটতে শুরু করলাম। কারণ বানর দেখার ইচ্ছে নেই। হরিণ দেখে বাঘের খাঁচার দিকে যাব এমন সময় চোখে পড়ে দর্শণার্থীদের জন্য তৈরী পুকুর পাড়ের পাকা চেয়ারে দুই কেয়ারটেকার বসে আছে। পাশেই একটি মেয়েকে ফুসলাচ্ছে। মেয়েটির মুখের কিছু কথা আমার কানে আসে। ছি: তুমি মিয়া এই বয়সে কি লংড়ামি কথা কও ? তুমি কি মনে কর টাকা দিলেই হয়। ওই লোকগুলি জানে এই মেয়ের বয়সী মেয়েটির টাকার কাঙাল তাইতো সকাল সকাল এইখানে। এইখানে একজনের উদ্দেশ্য টাকা কামানো আর অপর জনের উদ্দেশ্য স্বাদ নেয়া।

আর কিছু শুনার অপেক্ষা না করে জোড়ে কদম বাড়ালাম সামনে বাঘের খাঁচার দিকে। দূর্গন্ধে কাছেই যাওয়া যায়না। দেখলাম একটি বাঘ গাছে নিচে শোয়া। আর একটি ভিতরে হাঁটছে। তবে অসুস্থ। একটি পা খুব কষ্ট ফেলছে। আমার সাথে আরো কয়েকটি ছেলের দেখা হলো। ওরা খুব দুষ্ট। বাঘটিকে খোঁচা দেওয়ার চেষ্ঠা করছে। গাছের ডাল দিয়ে ঢিল ছুড়ছে। আর একটি বাঘ ভিতর থেকে বাহিরে এসে রোদে শুয়ে পড়ল। ছেলে গুলির যন্ত্রণায় একবার উঠে দাড়াল। বললাম দাড়াও একটু বাপু। তোমাদের দেখি। তোমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটার। কয়েকদিন ধরে তোমাদের নাম মিডিয়ায় ও মানুষের মুখে মুখে খুব উচ্চারিত হচ্ছে। পাশের এক ভদ্র হেসে দিলেন। সত্যি বলেছেন। এরা বাংলাদেশের ক্রিকেটার।

একটু সামনে এগুলাম। সিংহের খাঁচা। একটি সিংহকে দেখলাম বাহিরে বসে আছে। আর একটি ভিতরে। কয়েকবার জোরে জোরে ডাক দিল। আমরা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলাম না সেখানে। কারণ ওইখানেও খুব বিশ্রি গন্ধ আসছে। সামনে এগিয়ে গিয়ে কুমির দেখলাম। এভাবে ঘুরে ঘুরে সব দেখতেছি। দেখলাম দুটি কিশোরী মেয়ে আমাদের পিছু পিছু দেখতেছে সব কিছু। ওদের সাথে বয়স্ক কোন পুরুষ নেই। একদল উঠতি বয়সের ছেলে ওই মেয়ে দুটির পিছু নিয়েছে। ওদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্ঠা করছে। এক সময় দেখলাম কথাও বলতেছে। একটি ছেলে মেয়েটির মোবাইল নম্বর চাচ্ছে। মেয়েটি বলছে, কি যে বলেন, আপনাকে চিনিনা, জানিনা। আমি আমার মত সামনে এগুচ্ছি। মাঝে মাঝে খেয়াল করছি। ছেলেগুলি চিড়িয়াখানা দেখা বাদ দিয়ে ওই মেয়ে দুটির পিছু নিয়েছে। মেয়েগুলি বেশ সুন্দরী। এই বয়সে অভিভাবকরা তাদেরকে একা পাঠানো ঠিক হয়নি। সর্বশেষ যখন জাদুঘরের কাছে আসলাম। সেখানে দেখলাম আরেক ভেল্কিবাজী। এখানেও টিকিট কিনতে হয় ৫ টাকা দিয়ে। ওরা খুব চালাক। টিকিটটি আবার নিজেরা রেখে দেয়। জাদুঘরটি দেখে বুঝতে পারলাম। ওইটা সম্পূর্ণ ধোকাবাজী। দর্শকদের প্রবেশের জন্য ওরা মাইকে আহবান করছে। বন মানুষটা দেখে যান...। কেউ যদি শুরুতেই ডান দিকে না গিয়ে বাম দিক থেকে দেখতে শুরু করে তাহলে এখানে এসে টিকিট কেনার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ একদিকে গেট আর গেটম্যান থাকলেও অপরদিকে নেই। যে কেউ ইচ্ছামত বের হতে পারে কোন টিকেট চেক করা হয় না। হাতি দেখার পর গন্ডারদ দেখার জন্য সামনে এগুলাম। দেখলাম ছেলেটি মেয়েটি কাত করে ফেলেছে শেষ পর্যন্ত। ওরা জাদুঘরের টিকিট কিনে মেয়েগুলিকে বিনামূল্যে দেখাল ও পরে এক জায়গায় বিশ্রাম নিচ্ছে ওরা। একটি ছেলে মেয়েগুলি চানাচুর, আরো অনেক কিছু কিনে দিচ্ছে। আর মেয়েগুলি খুব খুশিতে এগুলি গ্রহণ করছে এবং আর হাসাহাসি করছে। যাক সব শেষে বুঝতে পারলাম। টাকার কাছে নারীরা হার মানে। তা সে যে বয়সেরই হোক। প্রায় আড়াই ঘন্টা ঘুরে ঘুরে চিড়িয়াখানা দেখলাম। অনেক কিছুই অসামঞ্জস্য চোখে পড়ল। সব তো উল্লেখ করার মত নয়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসলাম।

ঘটনা-৬: বাসে করে আশুলিয়া আসার পথে দেখলাম ৩ জন মধ্য বয়সী নারী। একজন ভ্যানগাড়ী সামনে থেকে টানছে। আর পিছনের দুজন নারী প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে ওই ভ্যান গাড়ীতে ভরছে। উদ্দেশ্য জীবিকা। কেউ অবৈধ পথে টাকা আয় করছে আর কেউবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে নিজের পেটের যোগান দিচ্ছে।

ঘটনা-৭: আশুলিয়া বেড়ীবাঁধের কোণাটায় দেখলাম কিছু ছোট ছোট নৌকা ঘাটে বাঁধা। সাজানো ওই নৌকা গুলির ছাঁদ একটি কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে রাঙানো। টাকা ভাংতির জন্য একটি দোকানে গেলাম। দেখতে পেলাম কয়েকটি যুবতী নারীর সাথে হাতাহাতি করছে কিছু খদ্দের। এমন সব কথা বার্তা বলছিল যে তাদেরই লজ্জা হচ্ছিল। আমাকে দেখে পুরুষ লোকটি মেয়েটিকে বলে, ওই মানুষ গুরু দেখিস না। সাবধানে কথা বলিস। আর মেয়েটির হাতের উপরে সজোড়ে একটি থাপ্পড় মারল। ওরা ওই খানের নৌকার বিনোদনকারীনী। কিছু পেলেই ওরা নৌকার সাথী হয়। আরও একটু দক্ষিণ দিকে দেখলাম ছোট ছোট ঘর। পানির উপর বাঁধা। একটির সাথে আরেকটির পথ রয়েছে। ওখানে প্রমোদবালারা খদ্দেরদের বিনোদন দিতে আসেন। উদ্দেশ্য টাকা। আর ওই সব পুরুষগুলির উদ্দেশ্য ক্ষনিকের ফূর্তি করা। যাক না টাকা। চাই সেই টাকা হাড়ভাঙা খাটুনির ফসল হোক বা যে কোনভাবে আয় করা।

ঘটনা-৮: চিড়িয়াখানা দেখার পর মুসাফির হিসেবে যে কয়দিন ছিলাম ঢাকায় সেখানে ফিরছি। বাসায় প্রবেশের মূল ফটকের কাছে দেখলাম এক মধ্য বয়সী নারী ঘাস তুলছে। আমার আত্মীয় যে বাসাটায় ভাড়া থাকেন অনেক বড় একটি বাসা। প্রচুর ঘাস রয়েছে ভিতরে। জানতে পারলাম, প্রতিদিনই এই মহিলা ঘাস তুলতে আসেন। ঘাস কেটে বিক্রয় করেন। পেটের তাগিদে আর কোন পথ না থাকায় সর্ব শেষ এই পেশাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। উদ্দেশ্য টাকা। আর টাকা হলেই সংসারের সমস্যাগুলি মেটানো যাবে।

পরিশেষে: পাঠক হয়তো ভাবছেন এসব কি লিখছি। চলতে পথে অনেক কিছুই চোখে পড়ে। আসলে ভাল আর মন্দের দ্বন্দ্বটা চিরকাল থেকেই যায়। যা মন্দ দেখি তা থেকে নিজে দূরে থাকি আর অন্যকে সাধ্যমত চেষ্ঠা করি দূরে রাখতে। কেউ যদি এসব দেখে সঠিক শিক্ষা পায় তাহলেই কামিয়াব হবে এই সব লেখা। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদেরকে তাঁর সঠিক পথে পরিচালনা করেন এটাই প্রত্যাশা করি। আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত।

বিষয়: বিবিধ

৩১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File