[b] মিসরে গণহত্যা : মুসলিম ব্রাদারহুডের দাবি—সেনাদের গুলিতে ২২০০ বিক্ষোভকারী নিহত [/b]

লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৪১:১৯ সকাল



এ এক নজিরবিহীন গণহত্যা। খরস্রোতা নীল নদের স্রোতধারার মতোই গতকাল মিসরের রাজধানী কায়রোর রাজপথে ছিল নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের রক্তের স্রোত। গণতন্ত্র রক্ষা ও ইসলামের শাশ্বত বাণীকে ঊর্ধ্বে তুলের ধরার ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় নিয়ে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকরা রাজপথে অবস্থান নিয়েছিলেন। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং ঠাণ্ডামাথায় গতকাল তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে মিসরের সেনাবাহিনী।

নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতার ওপর সেনাদের বর্বর হামলায় শত শত মুরসি সমর্থক নিহত হয়েছেন। মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করেছে, যুদ্ধোন্মাদ সেনাদের গুলিতে অন্তত ২২০০ বিক্ষোভকারী নিহত এবং ১০ হাজার আহত হয়েছে। আলজাজিরা টিভি স্টেশন জানায়, শুধু একটি অস্থায়ী হাসপাতালেই ৯৪টি লাশ গুনে দেখেছেন তাদের এক সাংবাদিক। নিহতদের মধ্যে ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা বেলতাগির ১৭ বছর বয়সী কন্যা আসমা বেলতাগি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্কাইটিভির ক্যামেরাম্যান মিক ডেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, অভিযানে ৬০ জন নিহত এবং ৫২৬ জন আহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৬ জন সদস্যও আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে চারজন সেনাও নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার।

গত ২৮ জুন থেকেই রাজধানী কায়রোর নসর সিটির রাবা আল-আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং কায়রো ইউনিভার্সিটির নাহদা স্কয়ারে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন মুরসি সমর্থকরা। গতকাল ভোরবেলা থেকে সেখানেই অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানে দুই জায়গা থেকেই মুরসি সমর্থকরা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছে সেনা সমর্থিত সরকার।

মিসরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ নির্বাচনে জয়ী মুরসিকে গত ৩ জুলাই উত্খাত করে মিসরের তথাকথিত সেক্যুলার সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে গত মাসে দু’দফা গণহত্যা চালায় সেনাবাহিনী, যাতে প্রায় ৩০০ মুরসি সমর্থক নিহত হয়।

গতকাল খুব ভোরে সাঁজোয়া বুলডোজার নিয়ে রাবা আল-আদাবিয়া মসজিদ ও নাহদা স্কয়ার ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর তাজা বুলেট, গোলাবারুদ, রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও বার্ডশট দিয়ে নিরস্ত্র মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় আকাশ থেকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা। অভিযান শুরুর আগে পুলিশ এর আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। এরপর সেখানে অনবরত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

বিবিসির সাংবাদিকের বয়ানে সেনা অভিযানের আদ্যপান্ত : বিবিসির সাংবাদিক জেমস রেনল্ডস গতকালের সেনা অভিযান সম্পর্কে একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তার দেখা অভিযানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো :

স্থানীয় সময় ভোর চারটা। রাবা মসজিদের সামনে বালির বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া। অন্যপাশে রাইফেল ও টিয়ারগান নিয়ে প্রস্তুত কয়েক ডজন নিরাপত্তাকর্মী। এমন সময় লাঠি হাতে গ্যাসমাস্ক পরা এক মুরসি সমর্থককে দেখা যায়। ফজরের নামাজের আগে দেখা যায় আরও কিছু সমর্থককে। জায়গা ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই কারও মধ্যে।

ভোর পাঁচটা। আলো ফুটতে শুরু করেছে। তখন আওয়াজ পাওয়া যায় গুলি ও বিস্ফোরণের। জ্যাকেট ও গ্যাসমাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বোঝা যাচ্ছে মুরসির সমর্থকদের হটাতে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন রাবা’।

সকাল ছয়টা ৪০ মিনিট। রাবা ক্যাম্পের সামনে অস্ত্র হাতে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে একটি গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা সামনে এগোনোর চেষ্টা করলে গুলি করে তাদের থামিয়ে দেয়া হয়। এমন সময় সেখানে প্রবেশ করে একটি সামরিক বুলডোজার। বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পের দিকে এগোতে থাকে সেটি। রাস্তায় পোড়ানো টায়ার ও বালির বস্তা সরাতে সরাতে নিরাপত্তাকর্মীদের সামনে এগোনোর রাস্তা করে দেয় বুলডোজারটি।

এ পর্যায়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় একটি সাঁজোয়া যান। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে গুলি চালাতে থাকে নিরাপত্তা বাহিনী। থেমে থেমে গ্রেনেড ও গ্যাস ক্যানিস্টার বিস্ফোরণের আওয়াজও পাওয়া যায়। সেই মুহূর্তে গ্যাসমাস্ক ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছিল ।

ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার সামনে এগোনোর পর একজন মুরসি-সমর্থক বিবিসিকে বলেন, ‘ওরা আমাদের মেরে ফেলছে। আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। ওই মুরসি-সমর্থকের শরীর রক্তাক্ত আর চোখ ছিল কান্নাভেজা ।

ওই মুহূর্তে রাবা মসজিদ থেকে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল। রাবা ক্যাম্পের মূল অংশ থেকে ২০০ মিটার দূরে থাকতেই সাংবাদিকদের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। পিস্তল উঁচিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের থামতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি আমাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ফুটেজ কেড়ে নেন।

এরপর সেনা পাহারায় সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে ‘অপারেশন রাবা’য় ঠিক কতজন নিহত হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

ক্র্যাকডাউনের পরও মিসরজুড়ে বিক্ষোভ : ক্র্যাকডাউনের পরও রাজধানী কায়রো এবং দেশজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছে মুরসি সমর্থকরা।

আলেকজান্দ্রিয়া, সুয়েজ, আসুইট ও অন্যান্য শহরেও মুরসি সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন।

দক্ষিণ মিসরের আসওয়ানে কয়েকশ’ মুরসি সমর্থক স্থানীয় সরকারি দফতরগুলোতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

কায়রোর দক্ষিণে বনু সুয়েফ এলাকায় বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়িতে বিক্ষাভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ মিসরের সোহাগে অবস্থিত প্রধান কপটিক খ্রিস্টান গির্জা ও মিনিয়ার একটি গির্জায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বুধবার মুরসি সমর্থকদের নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বানের ফলে রাজধানী কায়রোর সঙ্গে পুরো মিসরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও জানা গেছে।

জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান : গণহত্যা বন্ধে মিসরবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড।

ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ আল-হাদ্দাদ এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘এটা শুধু অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা নয়, বরং সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী ভিন্নমতকে ধ্বংস করে দেয়ার একটি রক্তাক্ত প্রচেষ্টা।’

এর প্রতিবাদে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি। সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে আলেকজান্দ্রিয়াসহ মিসরের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন মুরসি সমর্থকরা। তবে মুরসি সমর্থকদের ঠেকাতে দেশব্যাপী ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয় সরকার।

অভিযানের নিন্দায় মাত্র তিনটি মুসলিম দেশ : মিসরের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, এমনিক মুসলিম বিশ্বও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব তো গণহত্যায় প্রাকারান্তরে সহযোগিতাই করেছে।

তবে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক, ইরান ও কাতার। এই দেশ তিনটি গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে।

তুরস্ক এটিকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ইরান সতর্ক করে দিয়েছে, মিসরে গৃহযুদ্ধ শুরুর ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাতার মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার নিন্দা করেছে।

এ এক নজিরবিহীন গণহত্যা। খরস্রোতা নীল নদের স্রোতধারার মতোই গতকাল মিসরের রাজধানী কায়রোর রাজপথে ছিল নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের রক্তের স্রোত। গণতন্ত্র রক্ষা ও ইসলামের শাশ্বত বাণীকে ঊর্ধ্বে তুলের ধরার ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় নিয়ে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকরা রাজপথে অবস্থান নিয়েছিলেন। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং ঠাণ্ডামাথায় গতকাল তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে মিসরের সেনাবাহিনী।

নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতার ওপর সেনাদের বর্বর হামলায় শত শত মুরসি সমর্থক নিহত হয়েছেন। মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করেছে, যুদ্ধোন্মাদ সেনাদের গুলিতে অন্তত ২২০০ বিক্ষোভকারী নিহত এবং ১০ হাজার আহত হয়েছে। আলজাজিরা টিভি স্টেশন জানায়, শুধু একটি অস্থায়ী হাসপাতালেই ৯৪টি লাশ গুনে দেখেছেন তাদের এক সাংবাদিক। নিহতদের মধ্যে ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা বেলতাগির ১৭ বছর বয়সী কন্যা আসমা বেলতাগি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্কাইটিভির ক্যামেরাম্যান মিক ডেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, অভিযানে ৬০ জন নিহত এবং ৫২৬ জন আহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৬ জন সদস্যও আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে চারজন সেনাও নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার।

গত ২৮ জুন থেকেই রাজধানী কায়রোর নসর সিটির রাবা আল-আদাবিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং কায়রো ইউনিভার্সিটির নাহদা স্কয়ারে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন মুরসি সমর্থকরা। গতকাল ভোরবেলা থেকে সেখানেই অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানে দুই জায়গা থেকেই মুরসি সমর্থকরা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছে সেনা সমর্থিত সরকার।

মিসরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ নির্বাচনে জয়ী মুরসিকে গত ৩ জুলাই উত্খাত করে মিসরের তথাকথিত সেক্যুলার সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে গত মাসে দু’দফা গণহত্যা চালায় সেনাবাহিনী, যাতে প্রায় ৩০০ মুরসি সমর্থক নিহত হয়।

গতকাল খুব ভোরে সাঁজোয়া বুলডোজার নিয়ে রাবা আল-আদাবিয়া মসজিদ ও নাহদা স্কয়ার ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর তাজা বুলেট, গোলাবারুদ, রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও বার্ডশট দিয়ে নিরস্ত্র মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় আকাশ থেকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা। অভিযান শুরুর আগে পুলিশ এর আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। এরপর সেখানে অনবরত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

বিবিসির সাংবাদিকের বয়ানে সেনা অভিযানের আদ্যপান্ত : বিবিসির সাংবাদিক জেমস রেনল্ডস গতকালের সেনা অভিযান সম্পর্কে একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তার দেখা অভিযানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো :

স্থানীয় সময় ভোর চারটা। রাবা মসজিদের সামনে বালির বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া। অন্যপাশে রাইফেল ও টিয়ারগান নিয়ে প্রস্তুত কয়েক ডজন নিরাপত্তাকর্মী। এমন সময় লাঠি হাতে গ্যাসমাস্ক পরা এক মুরসি সমর্থককে দেখা যায়। ফজরের নামাজের আগে দেখা যায় আরও কিছু সমর্থককে। জায়গা ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই কারও মধ্যে।

ভোর পাঁচটা। আলো ফুটতে শুরু করেছে। তখন আওয়াজ পাওয়া যায় গুলি ও বিস্ফোরণের। জ্যাকেট ও গ্যাসমাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বোঝা যাচ্ছে মুরসির সমর্থকদের হটাতে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন রাবা’।

সকাল ছয়টা ৪০ মিনিট। রাবা ক্যাম্পের সামনে অস্ত্র হাতে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে একটি গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা সামনে এগোনোর চেষ্টা করলে গুলি করে তাদের থামিয়ে দেয়া হয়। এমন সময় সেখানে প্রবেশ করে একটি সামরিক বুলডোজার। বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পের দিকে এগোতে থাকে সেটি। রাস্তায় পোড়ানো টায়ার ও বালির বস্তা সরাতে সরাতে নিরাপত্তাকর্মীদের সামনে এগোনোর রাস্তা করে দেয় বুলডোজারটি।

এ পর্যায়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় একটি সাঁজোয়া যান। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে গুলি চালাতে থাকে নিরাপত্তা বাহিনী। থেমে থেমে গ্রেনেড ও গ্যাস ক্যানিস্টার বিস্ফোরণের আওয়াজও পাওয়া যায়। সেই মুহূর্তে গ্যাসমাস্ক ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছিল ।

ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার সামনে এগোনোর পর একজন মুরসি-সমর্থক বিবিসিকে বলেন, ‘ওরা আমাদের মেরে ফেলছে। আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। ওই মুরসি-সমর্থকের শরীর রক্তাক্ত আর চোখ ছিল কান্নাভেজা ।

ওই মুহূর্তে রাবা মসজিদ থেকে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল। রাবা ক্যাম্পের মূল অংশ থেকে ২০০ মিটার দূরে থাকতেই সাংবাদিকদের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। পিস্তল উঁচিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের থামতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি আমাদের কাছ থেকে ক্যামেরা ফুটেজ কেড়ে নেন।

এরপর সেনা পাহারায় সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে ‘অপারেশন রাবা’য় ঠিক কতজন নিহত হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

ক্র্যাকডাউনের পরও মিসরজুড়ে বিক্ষোভ : ক্র্যাকডাউনের পরও রাজধানী কায়রো এবং দেশজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছে মুরসি সমর্থকরা।

আলেকজান্দ্রিয়া, সুয়েজ, আসুইট ও অন্যান্য শহরেও মুরসি সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন।

দক্ষিণ মিসরের আসওয়ানে কয়েকশ’ মুরসি সমর্থক স্থানীয় সরকারি দফতরগুলোতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

কায়রোর দক্ষিণে বনু সুয়েফ এলাকায় বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়িতে বিক্ষাভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ মিসরের সোহাগে অবস্থিত প্রধান কপটিক খ্রিস্টান গির্জা ও মিনিয়ার একটি গির্জায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বুধবার মুরসি সমর্থকদের নতুন করে বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বানের ফলে রাজধানী কায়রোর সঙ্গে পুরো মিসরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও জানা গেছে।

জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান : গণহত্যা বন্ধে মিসরবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড।

ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ আল-হাদ্দাদ এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘এটা শুধু অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা নয়, বরং সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী ভিন্নমতকে ধ্বংস করে দেয়ার একটি রক্তাক্ত প্রচেষ্টা।’

এর প্রতিবাদে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি। সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে আলেকজান্দ্রিয়াসহ মিসরের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন মুরসি সমর্থকরা। তবে মুরসি সমর্থকদের ঠেকাতে দেশব্যাপী ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয় সরকার।

অভিযানের নিন্দায় মাত্র তিনটি মুসলিম দেশ : মিসরের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, এমনিক মুসলিম বিশ্বও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব তো গণহত্যায় প্রাকারান্তরে সহযোগিতাই করেছে।

তবে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক, ইরান ও কাতার। এই দেশ তিনটি গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে।

তুরস্ক এটিকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ইরান সতর্ক করে দিয়েছে, মিসরে গৃহযুদ্ধ শুরুর ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাতার মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার নিন্দা করেছে।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৩১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File