প্রসঙ্গ টি এস সি : জয় ভোগবাদের , জয় পূজিবাদের

লিখেছেন লিখেছেন আলোক যাত্রী ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:৫৪:৫৭ দুপুর

পহেলা বৈশাখের ঘটনাকে আসলে 'পাশবিকতা' বললে ভুল হবে । পশুদের চিন্তাশক্তি নেই । যার কারনে তারা তাদের চাহিদা আকাঙ্ক্ষা পূরনের ব্যাপারে নিত্যনতুন পদ্ধতি বের করতে পারে না । অন্যদিকে মানুষ তার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা পূরনের জন্য নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারে । আগে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের স্বভাবজাত আকংখাটা বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে পত্রমিতালী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল । এখন সেই চাহিদা কোন পর্যায়ে গিয়েছে সেটা সাম্প্রতিক ঘটনাতেই পরিষ্কার ।

আমার নিজেরই একটা ঘটনা বলি । তখন বসুন্ধরা সিটি নতুন নতুন খুলেছে । যদিও উদ্বোধন হয়েছিলো বেশ কিছুদিন আগে তবুও মানুষের কাছে নতুন ছিল অনেকদিন ধরে । ঈদের সময় পুরো মার্কেট বন্ধ থাকলেও সিনেপ্লেক্স আর ফুড কোর্টগুলোর কারনে উপরের তলা পুরো জমজমাট থাকত । ঈদে আমার সেখানে যাওয়া হয়েছিল দুইবার । সেই দুইবারই একই ঘটনা ঘটতে দেখলাম । ফ্লোরে যখনই কোন মেয়ে আসছে তখনই কিছু ছেলে তাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠছে , তার সাথে সাথে ফ্লোরের সব ছেলেদের মধ্যে কোরাস আকারে এই চিৎকার যেন ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে । তারপর আর ঈদের সময় সেদিকে পা মাড়ানো হয়নি , তবে এই ঘটনা এখনও না ঘটা অস্বাভাবিক ।

এই ধরনের ঘটনা আমাদের এলাআয় , বিভিন্ন পাব্লিক প্লেসে অহরহ অথবা বিশেষ কোনো দিনে অহরহই ঘটছে । তাই পহেলা বৈশাখের লাঞ্চনার ঘটনা মোটেও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা না । এই ঘটনার শুরু হয়েছে সেই আমাদের আগের জেনারেশন থেকে যখন পাড়ার বখাটে ছেলেদের জ্বালাতনে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে বাধ্য হতেন বাড়ির কর্তা । এরপর এই ধরনের মানসিকতার ঢালপালা ছড়িয়েছে নানান দিকে । এই টি এস সি র থার্টি ফার্স্টের লাঞ্চনা থেকে শুরু করে এসিড সন্ত্রাস , ধর্ষন , যৌন হয়রানি ইত্যাদি নানান মাত্রার পর এখন গ্যাং রেপ ধাচে লাঞ্চনা হয়েছে ।প্রতিনিয়ত এমন উদ্ভাবনি 'মানসিকতার' বিকাশ ঘটানো জন্য চিন্তার খোরাকও ছিল যুগোপোগী । সেই আগের দিনের খুরশীদ আলমের "ওই মনের দরজা খোল না , কাল কি হবে জানিনা " থেকে মাকসুদের "বখাটে ছেলেদের থেকে ললনাদের রেহাই নাই " গান যেমন ছিল । তেমনি ভালবাসার নাটক , রোমান্টিক সিনেমা ইত্যাদিও খুবই সুকৌশলে পুরুষদের মধ্যে কামনার উস্কানি দিয়েছে । এবং অল্প অল্প করে এই উস্কানীর ডোজ বাড়ানো হয়েছে । কারন প্রথমদিন ঘোমটা ছাড়া শাড়ি পরা মেয়ে দেখার পর পরের দিন বিকিনি দেখলে আপনি আঁতকে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক । তাই মাঝখানে স্লিভলেস এরপর শর্টস্কার্ট দেখানোর পক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ে যেয়ে আপনাকে অভ্যস্ত করা হবে । যেন আস্তে আস্তে যৌন বিকৃতির বিকাশ অবচেতনভাবেই মনের মধ্যে গেঁথে যায় এবং ব্যাপারটাও যেন নিজের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায় ।

বর্তমানে চাইনিজ মুঠোফোনে পর্যন্ত যেকোনো x মাত্রার রগরগে দৃশ্য দেখা যায় । আইটেম সং , এয়ারটেলের নাটক এখন টিভির নিয়মিত প্রোগ্রাম । আপনার টিভি, কম্পিউটার , মোবাইল কিছুই নেই - নো চিন্তা , ডু ফুর্তি ; বাইরে বের হলে বিলবোর্ডের দিকে তাকালেই মজা লুটতে পারবেন । "ছুয়ে দিলে মন" আপনার মনকে শুধু ছুবেই না , সুড়সুড়ি দিয়ে ছাড়বে । ঘরে-বাইরে অনবরতভাবে যৌন উস্কানির মধ্যে থেকে একেকজনের মধ্যে একেক রকমের মানসিক বিকৃতি দেখা দেয় । সবাই কাপড় টানে না , কেউ পর্নোফগ্রাফিতে আসক্ত হয় , কেউবা নিষিদ্ধ পল্লিতে যায় , কেউ পহেলা বৈশাখের মতো স্পেশাল দিনে স্পেশাল মানুষকে নিয়ে লিটনের ফ্ল্যাটে যায় স্পেশাল কিছু করতে ।

এই ঘটনায় জয় হয়েছে পূজিবাদের । পূজিবাদ মন্ডা-মিঠাই-চরকির মামূলি বৈশাখি মেলার দিনকে মজা করার , ফেসবুকে ছবি দিয়ে জাহির করার , যুগলদের স্পেশাল খায়েশ মিটানোর ভোগ সর্বস্ব দিনে পরিণত করেছে । শুধু বৈশাখ না ঈদ বলুন আর পূজা , ভালেন্টাইন বলুন আর থার্টফার্স্ট সবকিছুই যেন এক । এমন শ্লীলতাহানী , উগ্রতা প্রতিটা উৎসব মুখর সময়গুলোর স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে । আর পুজিবাদি প্রশাসনও তাদের স্বার্থের সাথে যায় না বলে এসব ধর্ষকদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ কোন ব্যাবস্থা নেয়নি , যেমন্টী নেয়নি জাহাঙ্গির নগরের ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরী করা মানিকের বিরুদ্ধে । এখন এসবের বিচার চাইবেন এই পূজিবাদি বিচারব্যবিস্থার কাছে !? থার্টফার্স্ট নাইটের কালপ্রিট , কয়েকদিন আগেও বইবেলার লাঞ্চনার বিচার হয়েছে কি !? তাহলে উলুবলে মুক্তা না ছড়িয়ে সঠিক সমাধানের কথা চিন্তা করা উচিত নয় কি !? যেই সমাজব্যাবস্থা নারী-পুরুষের সম্পর্ককে শুধুমাত্র যৌনাকাংখা মেটানোর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে সেটার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এমন ঘটনা আবার হবে, আর মানুষও বিচার চাইতে চাইতে এক সময় এই ঘটনা আবার ভুলবে । এভাবেই চলছে , এভাবেই চলবে ...

বিষয়: বিবিধ

১২০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315979
২০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৮
হতভাগা লিখেছেন : এসব জায়গায় ছেলেরা যায় মেয়েদেরকে টিজ করতে আর মেয়েরা যায় টিজ খেতে ।

ঢাবি এখন এসব নোংরামির তীর্থস্থান , হেন কোন অপরাধমূলক কাজ নেই যার সূতিকাগার ঢাবি নয় ।

এখানে এখন পড়াশুনা ছাড়া এসব নোংরামীই হয় বেশী ।

এটা নাকি কোন এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল ! ভাবতেই লজ্জা লাগে ।

এখন ঢাবি হয়ে গেছে প্রাচ্যের সেক্সফোর্ড
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:২৫
282435
আলোক যাত্রী লিখেছেন : সহমত ... Happy>-

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File