আগর বাগান আর আতর তৈরীর কারখানা দেখলাম।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৩:১৭ দুপুর



আগর কাঠের বাগান।

কচুকাটা মোকাম দেখে আমি আর রানা ভাই রাস্তা দিয়ে হাটতেছিলাম। পথে একটা সিএনজি পেয়ে তাতে উঠে বসে চলে গেলাম কাঠালতলী বাজার। সেখানে সিএনজি বদল করে এবার চলে গেলাম আগর গ্রাম আজিমগঞ্জ বাজার।



আজিমগঞ্জ বাজারে আছে আগর ও আতর ব্যবসায়ীদের এসোসিয়েশন। আমি যখন এই সাইনবোর্ডের ছবি তুলছিলাম এক ব্যাক্তি পিছন থেকে ডাক দিলেন! ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কেন ছবি তুলছি? আমি বললাম আমরা ঢাকা থেকে এসেছি আগর বাগান এবং আতর তৈরী দেখতে। এই কথা জানার পর তিনি বললেন আমি এই এসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি নিজ দায়িত্বে একটি রিক্সা ডেকে আমাদের আতর তৈরীর কারখানায় পাঠিয়ে দিলেন এবং রিক্সাওয়ালাকে বলে দিলেন আমাদের যেন এই জায়গায় আবার নিয়ে আসে।



কারখার ভেতরে অনেকগুলো চুলোয় আগর কাঠ জ্বাল করা হচ্ছে।

রিক্সাওয়ালা আমাদের নিয়ে চলে গেলে আতর কারখানায়। আমরা এসোসিয়েশনের সভাপতির কথা বলে, অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকে আতর কারখানা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ভেতরে বিশাল বিশাল পাত্রে গ্যাসের চূলায় আগর কাঠ জ্বাল করা হচ্ছে। তারপর প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে আতর তৈরী করা হবে।



আগর কাঠে জ্বাল হচ্ছে।

আগরগাছ লাগানোর পর ছয়-সাত বছর বয়স হলেই পুরো গাছে এক ইঞ্চি পরপর পেরেক মারা হয়। তখন গাছ থেকে একধরনের রস বের হয়। পেরেকের চারপাশে সেই রস জমে কালো রং ধারণ করে। এভাবেই তিন থেকে পাঁচ বছর রাখা হয়। এরপর গাছ কাটা হয়। ছোট ফালি করে কাটার পর পেরেক খোলা হয়। তখন গাছের কালো ও সাদা অংশ আলাদা করা হয়। সেই কাঠ কারখানার হাউস কিংবা প্লাস্টিকের ড্রামে রাখা পানিতে ভেজানো হয়। এভাবে ফেলে রাখা হয় এক থেকে দেড় মাস। তারপর সেগুলো স্টিলের ডেকচির মধ্যে দিয়ে অনবরত জ্বাল দেওয়া হয়। তখন পাতন পদ্ধতিতে ফোঁটায় ফোঁটায় আতর নির্দিষ্ট পাত্রে জমা হয়।



আতর তৈরীর প্রক্রিয়া।

আতর তৈরির প্রক্রিয়া শেষে ব্যবহৃত কাঠ গুঁড়ো করে বিক্রি হয়। এক কেজি ৫০ টাকা। এগুলো মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৭ হাজার মার্কিন ডলারের আগর কাঠ রপ্তানি হয়। একই সময়ে আতর রপ্তানি হয় মাত্র ৩৪৮ ডলারের। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৬২ হাজার ডলারের আগর কাঠ রপ্তানি হয়। তবে কোনো আতর রপ্তানি হয়নি। যদিও প্রবাসীদের মাধ্যমে প্রতিদিনই মধ্যপ্রাচ্যে আতর যাচ্ছে।(তথ্য সংগৃহীত)



এগুলোতে কাঠ ভিজিয়ে রাখা হয়।

আতর তৈরীর কারখানা দেখে আমার পুনরায় আজমীরগঞ্জ বাজারে চলে এলাম। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে পরে হাজীগঞ্জ বা অন্য কোন নামে এক বাজারে গিয়ে জুম্মার সালাত আদায় করলাম।



মাইয়াজুরি বিল

জুম্মার পর আমরা আবার এক সিএনজিতে উঠে বসলাম। সোজা চলে গেলাম কানুনগো বাজারের উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য হাকালুকি হাওড় দেখা।কিন্তু বাজারের আগেই সুন্দর একটা বিল দেখে নেমে গেলাম দুজনেই। সেখানে কিছু সময় ঘুরাফিরা করে হাটা দিলাম কানুনগো বাজারের দিকে। মাঝপথে সিএনজি পেয়ে উঠে বসলাম।



বিলের মাঝের রাস্তা দিয়ে হেটে যাইতেছি বাজারের দিকে।

কানুনগো বাজারে গিয়ে দুজনে দুপুরের খাবারের জন্য হোটেল খুঁজতে থাকলাম। অবশেষে একটা দোকান কাম হোটেল পেয়ে ভাত খেলাম ডাল আর শুটকি ভর্তা দিয়ে। দুজনের বিল এল ৫০ টাকা!



মৎস অভয়াশ্রম।

ভাত খেয়ে ক্ষুধা দুর হল ঠিক কিন্তু হাওড় দেখার সাধ মিটে গেল। সোজা গিয়ে সিএনজিতে বসলাম বড়লেখার উদ্দেশ্যে। বসতেই পড়লাম বড় এক বিপদে! সিএনজি ওয়ালা লাগল মারামরি! একজন দৌড়ে কোথা থেকে একটা বড় রামদা নিয়ে এল! আমাদের সিএনজি ওয়ালাকে কোপ দিবে! ভয়ে তাড়াতাড়ি নেমে অন্য সিএনজিতে উঠে সোজা বড়লেখা বাজার।আজই শ্রীমঙ্গল যেতে হবে আমাকে। সেখানে শাহেদ ভাই অপেক্ষা করছেন তার বাইক নিয়ে, আমাকে শ্রীমঙ্গল ঘুরে দেখাবেন বলে!



কিছু সময় নৌকায় সময় কাটিয়ে হাওড় দেখার সাধ মিটালাম।লগিপোতা নৌকা নড়েও না চড়েও না!



রোদে গামছা মাথায় হাটছেন রানা ভাই।

বিষয়: বিবিধ

১৬১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377902
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আগর গাছ দেখেছি কিন্তু কারখানা দেখিনি। শুনেছি কুটির শিল্প হিসাবেও অনেকে আগর এর আতর তৈরি করেন ওখানে। আগর কাঠের গুড়া থেকেও বোধহয় সুগন্ধি তৈরি হয় কিছু। সিলেটের একজন ধনি ব্যাক্তি নাকি এখন মধ্যপ্রাচ্যে পারফিউম ব্যবসার প্রধান। এই অগর এর আতর এর ব্যবসা করেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File