আমি তোমাদেরকে (গুলেন মুভমেন্ট) বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার এতবড় ক্ষতি করলে’- এরদোগান !!

লিখেছেন লিখেছেন বাচ্চা ছেলে ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৩৫:০০ সন্ধ্যা





গুলেন মুভমেন্ট এই নামটি সম্পর্কে অনেকেই পরিচিত। মুসলমানদের পূনর্জাগনবাদী আন্দোলনের পথিকৃতি ভাবা হয় এই গুলেন মুভমেন্টকে। দলের প্রধান ফেতুল্লা গুলেন কোরআনের হাফেজ ও যার কর্মজীবনের শুরু ইমামমতি দিয়ে। যার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বদিউযযামান সাইদ নুরসির সহচার্যে। তখন থেকে সাইদ নুসরির ‘রিসালায়ই নুর’কে অবলম্বন করে তার ওয়াজ নসিহত চালিয়ে যেতে থাকেন এবং বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর সেই সাইদ নুসরির আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করতে থাকেন। ১৯৬০ সালের তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের বিপক্ষে দাড়িয়েও জনগনের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ফেতুল্লা গুলেন। এইসময় তিনি একটি আন্দোলন শুরু করেন যা হিজমেত বা স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন নামে পরিচিত। পাশাপাশি ওয়াজ নসিহত ইসলামের আলোকে হওয়াই তিনি জনগণের ভালোবাসা ও সহানুভূতি অর্জন করেন যা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলমান রাখেন।

শিক্ষা, গণমাধ্যম, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইত্যাদি নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ আন্দোলনের আওতায় সেক্যুলার কারিকুলাম অনুসারে তুরস্কে তিন শতাধিক এবং বিশ্বের ১৮০টি দেশে সহস্রাধিক স্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে এই গুলেন মুভমেন্টের দ্বারা। দেশজুড়ে রয়েছে গুলেন মুভমেন্টের হাজার হাজার কোচিং সেন্টার। তুরস্কের প্রভাবশালী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক এই ফেতুল্লা গুলেন। এছাড়া তুর্কি ও ইংরেজি ভাষায় বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এমনকি আন্তর্জাতিক মিডিয়া গ্রুপ ‘Cihan News Agency’ রয়েছে তাদের।



বিশ্বব্যাপী গুলেনের মালিকাধীন স্কুলগুলো থেকে প্রতিবছর ১৫-১৬ বসরের যুবতী মেয়েদেরকে নিয়ে তার্কিশ অলিম্পিয়াডের নামে নাচগানের অনুষ্ঠান করে থাকে। এ সম্পর্কে ফেতুল্লা গুলেন বলেন, এই অনুষ্ঠানগুলোতে নাকি রাসূলুল্লাহ (সাHappy স্বয়ং উপস্থিত থাকেন (নাউজুবিল্লাহ)। আর এই অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করা নাকি ওহুদের ময়দানে জিহাদ করার সমতুল্য।



কালেমা শাহাদত সম্পর্কে গুলেন মুভমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা কালেমার অর্ধেক অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ যারা না বলবে তারাও মরহুম ও রহমতের দৃষ্টিতে দেখার যোগ্য। কেননা হাদিসে বলা আছে আল্লাহ তার বিশাল রহমতের দ্বারা আখেরাতে এমনভাবে নুরান্নিত করবেন যে; শয়তান পর্যন্ত বলবে যে, ‘আমিও যদি ফিরে আসি তাহলে মুক্তি পাবো কি?’ দেখুন- [Fasýldan Fasýla-3, page- 144]



তারা এও মন্তব্য করেন, “ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে নাজিলকৃত আয়াতসমূহ; অথবা হযরত মুহাম্মাদ সা:-এর সময়ে কিংবা তাদের নিজেদের নবীদের সময়ে বসবাস রত ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে সেই আয়াতগুলো এখন আর প্রযোজ্য নয়।” [কুরেসেল বারিশা দরু: খুজাদান কেলেবেগে-৩]



একবার তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হিজাব পরার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সর্বত্র এর বিপক্ষে নতুন করে আন্দোলন গড়ে ওঠে। গুলেন সে সময় তার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং এ সংগঠনের অধীনস্থ মেয়েদেরকে হিজাব খুলে ক্লাস করার জন্য নির্দেশ দেন।

কয়েক মাস আগে ইসরাইলি হামলায় আল কুদসের রক্ষার সংগ্রামে অবিরাম যুদ্ধরত সাত ফিলিস্তিনি মোজাহিদ শহীদ হলে গুলেনের মুখপাত্র Samanyolu TV (সামানিয়ল টিভি) বলে, ‘ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের সাত সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।’

২০১১ সালে তুরস্কের একটা এনজিও আইএইচএস মাভি মারমারা নামের জাহাজে করে ফিলিস্তিনের দুর্গত অঞ্চলে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল, ভুমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় ইসরাইল সেখানে বিমান হামলা চালায়, ফলে ৯ জন নিহত হয়। সমগ্র দুনিয়ায় বিষয়টি আলোড়ন তৈরি করে এবং সবাই ইসরাইলকে আইনের মুখোমুখি করানোর দাবি জানায়। কিন্তু ফেতুল্লা গুলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি বলেন মাভি মারমারার উচিত ছিল ইসরাইলের অনুমতি নেয়া। এ ছাড়াও মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা চালানোর সময় তিনি বৌদ্ধদের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, ‘বৌদ্ধ একটা হক ধর্ম।’



সিআইএ এবং এফবিআইয়ের সাথে গুলেনের গভীর সম্পর্কের কথা সেই ৯০ দশক থেকে ওপেন সিক্রেট।

২০০৫ সালে এফবিআই নিজেদের ওয়েবসাইটে তাদের সহযোগী সংস্থাদের নাম প্রকাশ করেন যাতে চার নাম্বারে ছিল ‘দি গুলেন ইনস্টিটিউট’ তথা গুলেন মুভমেন্ট। প্রথমদিকে রজব তায়েফ এরদোগানের ক্ষমতায় আসার জন্য একটি বড় গোষ্ঠীর ভোটের প্রয়োজন ছিল। কারণ তুর্কিবাসীর বিশাল একটা অংশের ওপর গুলেনের অনেক প্রভাব রয়েছে। তাই গুলেন মুভমেন্টের সাথে গভীর একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং পার্টি গঠনের এক বছরের মাথায় ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় আসার পর ফেতুল্লাহ গুলেন যেন অদৃশ্য প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন। তিনি আমেরিকার পেনসিলভানিয়াতে বসে যাকে যে পোস্টে দিতে বলেন তাকে সে পোস্টে দেয়া হয় এক পর্যায়ে দেখা যায় পুলিশ-সেনাবাহিনী থেকে শুরু অফিস-আদালত পর্যন্ত সব জায়গায় গুলেন মুভমেন্টের লোকের ব্যাপক এবং ভয়ঙ্কর উপস্থিতি। গুলেন মুভমেন্টের লোক হলেই পদ দেয়া হয়েছে।

তাদের সর্বপরি বিশ্বাসঘাতকতার কারণে অনেক আগে থেকেই এরদুগান তাদের বলে আসছেন, আমি তোমাদেরকে (গুলেন মুভমেন্ট) বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার এতবড় ক্ষতি করলে।’





উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৫ জুলাই) তুরস্কের স্থানীয় সময় এশার নামাজের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশ। এ সময় ইস্তাম্বুলের এশীয় ও ইউরোপীয় অংশের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সেতুগুলো বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি তারা দখল করে নেয় সরকারি টেলিভিশন টিআরটিসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অফিস। এছাড়া প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস ও পার্লামেন্টের সামনে মোতায়েন করা হয় ট্যাংক। অভ্যুত্থানকারী সেনা সদস্যরা হামলা চালায় অাঙ্কারার পুলিশের বিশেষ বাহিনী এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়েও। ধারনা করা হচ্ছে এই ব্যার্থ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে গুলেন মুভমেন্ট দায়ী। বর্তমানে ফেতুল্লা গুলেন একটি সরকার পতনের ব্যার্থ চেষ্টায় অভিযুক্ত হয়ে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374754
১৬ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
শেখের পোলা লিখেছেন : বত্রিশটা দাঁতের মাঝে জিভকে যেমন সাবধানে থাকতে হয় আজ মুসলীমদের তেমনই হতে হবে। নমনীয় হলেই শয়তানের থাবা। গুলেনের বিষয়ে জানলাম। ধন্যবাদ।
374767
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:৪৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
374775
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ১০:৩১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ক্ষমতার লোভ মানুষকে নিতিভ্রষ্ট করে দেয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File