আল কোরআনের সম্মোহনী শক্তি ও আমাদের বিচারক সমাজ পর্ব – ২

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:০০:৪০ রাত

ইবনে ইসহাকের অপর বর্ণনা হল – একদিন হযরত উমর (রাঃ) রাসূলে করীম (সাঃ) কে হত্যা করার জন্য নগ্ন তরবারী নিয়ে রওয়ানা হলেন। সাফা পাহাড়ের পাদদেশে কতিপয় সাহাবীর সাথে নবী করীম (সাঃ) একটি ঘরে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে ছিলেন। সেখানে প্রায় চল্লিশ জনের মতো পূরুষ ও মহিলা ছিলো। পথিমধ্যে নাঈম বিন আব্দুল্লাহর (রাঃ) সাথে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন – উমর! কোথায় যাচ্ছো? উমর (রাঃ) তার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলেন। হযরত নাঈম বললেন - বনী আবদে মুনাফের শত্রুতা পরে করো। আগে নিজের বোন ফাতিমা ও ভগ্নিপতি সাঈদ বিন যায়িদকে সামলাও। তারা মুসলমান হয়ে গিয়েছে।

তখন ফারুকে আযম (রাঃ) বোনের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, খাব্বাব (রাঃ) তাদেরকে কুরআন পড়াচ্ছেন।

ফারুকে আযম (রাঃ) সরাসরি ভেতর ঢুকে পড়লেন এবং ভগ্নিপতি সাঈদকে ধরে ফেললেন। নিজের বোন ফাতিমাকে মাথায় আঘাত করে রক্তাত্ত করে দিলেন। কিছুক্ষণ বাক বিতন্ডার পর তারা যা পড়ছিলো, তা দেখতে চাইলেন। তখন সূরা ত্বা-হা থেকে কিছু অংশ পাঠ করে তাকে শুনানো হলো। যখন সূরা ত্বা-হা’র কিছু অংশ শুনলেন, তখন মন্তব্য করলেন। এতো অতি উত্তম কথাবার্তা। তারপর তিনি রাসূলে করীমﷺ (সাঃ) এর নিকট গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন।

===============================

২) ওয়ালীদ বিন মুগিরা

মক্কার স্যেকুলার প্রধান কয়েকজন নেতার মধ্যে ওয়ালীদ বিন মুগিরা হলেন অন্যতম। ওয়লীদ ছিলেন কুরাইশদের মধ্যে এক সম্ভান্ত ও সম্মানিত ব্যক্তি। আল কোরআনের মাত্র কয়েকটি আয়াত শুনে প্রভাবিত হয়েছিলেন। কোরাইশগণ বলাবলি শুরু করলো সে মুসলমান হয়ে গিয়েছে। ওয়ালীদ বিন মুগিরাকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য আবু জাহেলকে তার নিকট পাঠানো হলো। দুই স্যেকুলার নেতার মধ্যে কথা হল।সময় নিয়ে আলোচনা হল।

ওয়ালীদ বিন মুগিরা বললেন – আমি কোরআন সম্পর্কে কি বলবো?

“আল্লাহর কসম! আমি কবিতা ও কাব্যে তোমাদের চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখি। কিন্তু মুহাম্মদের কাছে যে কোরআন শুনেছি তার সাথে এগুলোর কোনো মিল নেই। কা’বার রবের শপথ! তার কাছে যা অবতীর্ণ হয় তা অত্যন্ত চমতকার ও মনোমুগ্ধকর এবং তা প্রাঞ্জল ভাষায় অবতীর্ণ। যা তার সামনে আসে তাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

আমার বিশ্বাস - আল কোরআন বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে পরাজিত হতে আসেনি।”

আবু জাহেল বললো –

যতোক্ষণ তুমি আল কোরআনকে অবজ্ঞা না করবে ততোক্ষণ তোমার কওম তোমার উপর নারাজ থাকবে। ওয়ালীদ সামাজিক ভাবে খুবই সম্মানিত ছিলেন। তিনি আবু জাহেলকে বললেন – আমাকে একটু চিন্তা করার অবকাশ দাও।

আল কোরআন তাগুত এই নেতা সম্পর্কে সূরা আল মুদ্দাসসিরের ১৮ থেকে ২৪ এ আলোচনা করা হয়েছে। আল কোরআনের আয়াত শুনে তার ভাবান্তর, মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আল কোরআন নিজে বর্ণনা করেছে এভাবে -

إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ ﴿١٨﴾فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ ﴿١٩﴾ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ ﴿٢٠﴾ثُمَّ نَظَرَ ﴿٢١﴾ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ ﴿٢٢﴾ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ ﴿٢٣﴾فَقَالَ إِنْ هَـٰذَا إِلَّا سِحْرٌ يُؤْثَرُ ﴿٢٤﴾

তরজমা – সে চিন্তা করেছে এবং মনস্থির করেছে। সে ধ্বংস হোক, কিভাবে সে মনস্থির করেছে, (আবার বলছি) সে ধ্বংস হোক, কিভাবে সে মনস্থির করেছে। দেখেছে সে আবার ভ্রুকুঞ্চিত ও মুখ বিকৃত করেছে। অতপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে এবং অহংকার করে বলেছে। এতো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত যাদু বৈ আর কিছুই নয়।

# প্রভাবের তারতম্য -

এবার চিন্তা করুন – আল কোরআন দু’জনের উপরই প্রভাব ফেললো। কিন্তু তাদের আচার আচরণে আসমান –জমিনের পার্থক্য।

হযরত ওমর রাঃ আল্লাহকে ভয় পাবার কারণে আল্লাহ তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। পক্ষান্তরে ওয়ালীদ বিন মুগিরাকে অহংকার দাম্ভিকতা ও নেতৃত্বের মোহ ইসলাম থেকে দুরে সরিয়ে দিলো।

হযরত ওমর রাঃ কোরআন শুনে বা পড়ে হলেন পৃথিবীর সেরা মানুষ। আর ওলীদ বিন মুগিরা রাসূলের জবানে আল কোরআন শুনে হলেন ধিকৃত। ওয়ালীদ বিন মুগিরা রাসূলের নিকট পৌছলে নিজের অজান্তেই তার মন ও মাথা ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু যখন নিজেদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় – স্বজনের কাছে ফিরে আসে তখন সম্মান ও প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্য বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।

এই দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের সমাজের বর্তমান চরিত্র মূল্যায়ন করা যায়। আমাদের নেতৃত্ব পর্যায়ের যারা তারাও আল কোরআন পড়েন।

সকাল বেলা কোরআন পড়ার কথা জনগনকে জানান দেন।কোরআন না পড়ে রাষ্ট্রের কোন কাজ শুরু করেন না।এরকম আরো অনেক তথ্যই বংশবদ মিডিয়া দিয়ে প্রচার করেন।

অথচ মহান! এই আল কোরআন পড়ুয়া প্রধান নির্বাহীর হাতে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম মুছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও অবিচল বিশ্বাসের স্থলে কুফরী মতবাদ ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান করে দিয়েছেন।

যে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত কোরআন পড়েন - তিনি সাংবিধানিক ভাবে ১৬ কোটি মানুষকে ঈমানহীন করেছেন।


আল কোরআনের সুবিধা নেয়ার পাঠক আর বাস্তবে আল কোরআনের পাঠকের মধ্যে পার্থক্য ছিল অতীতে - আছে বর্তমানে - থাকবে ভবিষতে।

৩য় পর্ব - আগামী দিন।

প্রথম পর্বের লিংক।

http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/54868#.VDrp3Xl00cB

বিষয়: বিবিধ

১৪১৭ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273778
১৩ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৪৭
সাদাচোখে লিখেছেন : উপসংহারের - বিন মুগিরা ও কোরআন পড়ার কথা জনগনকে জানান দেয়া সরকার প্রধানদের - যে ইক্যুয়েশান দেখালেন - বাংলাভাষীদের জন্য আজকের যুগের মানুষকে বোঝাতে - চমৎকার একটা উদাহরন বা রেফারেন্স হিসাবে গৃহীত হবে বলে প্রত্যাশা করি।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
217833
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। একমত আপনার সাথে জনগনকে জানানো প্রয়োজন।
273805
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৫১
জহুরুল লিখেছেন : আল্লাহ অহংকার থেকে আমাদেনর হেফাযত করুক।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
217834
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আবশ্যই অহংকার থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
273820
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৪৩
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : সুন্দর পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। যারা কুরআন বিরোধী কাজ করে কুরআন পড়ার দাবি করে থাকেন, তাদের এ আমল কবুল হওয়া দুরের কথা, আল্লাহর কাছে তাদের ঈমানও গ্রহণ হওয়ার কথা নয়। আল্লাহপাক তাদের হেদায়াত দিন।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০১:১৪
217835
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
273891
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:১০
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : তুলনামুলক আলোচনা শেষে শিক্ষাটা সত্যিই চমতকার ও যুগোপযোগী। হিন্দু ধর্মের মতই এদের কাছে কোরান এক ধরেনের মন্ত্রের মত। ব্যক্তিগত জীবনে উপেক্ষিত কোরআন আজ র্স্বাথ ছাড়া অার কোন কাজে আসেনা। ধন্যবাদ।
273918
১৩ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৩
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে মোবারকবাদ। অবশেষে আপনার মন্তব্য পাওয়া গেল। আপনি লিখলে আরো ভাল করে লিখতেন।
273992
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ সাথে আছি৷
274043
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
আরবি ভাষিরা শুধু কুরআনের ভাষা ও লালিত্যে নয় এর বক্তব্যে প্রভাবিত হতেন। কিন্তু তাও তাদের অহংকার তাদেরকে সত্য গ্রহনে বিচ্যুত করেছিল। যেমন সম্রাট হিরাক্লিয়াস রাসুল(সাঃ) কে সত্যি নবি যেনেও ইসলাম গ্রহন করেননি লোভে।
আমাদের নেতা-নেত্রি রা কুরআন এর অর্থও জানতে চাননা। শুধু পড়েই সওয়াব কামাতে চান।
১৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:১৯
218157
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : শুধু পড়ে ই সওয়াব কামাতে চান - এমন সংখ্যাটা ই বেশী। আপনাকে ধন্যবাদ।
274092
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:১৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

সুরা বাকারায় আল্লাহতায়ালা ওদের ব্যাপারে বলেছেন-

৭৪) কিন্তু এ ধরনের নিশানী দেখার পরও তোমাদের দিল কঠিন হয়ে গেছে, পাথরের মত কঠিন বরং তার চেয়েও কঠিন ৷ কারণ এমন অনেক পাথর আছে যার মধ্য দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয় আবার অনেক পাথর ফেটে গেলে তার মধ্য থেকে পানি বের হয়ে আসে , আবার কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়েও যায় ৷ আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বেখবর নন ৷
৭৫) হে মুসলমানরা ! তোমরা কি তাদের থেকে আশা করো তারা তোমাদের দাওয়াতের ওপর ঈমান আনবে ?
অথচ তাদের একটি দলের চিরাচরিত রীতি এই চলে আসছে যে , আল্লাহর কালাম শুনার পর খুব ভালো করে জেনে বুঝে সজ্ঞানে তার মধ্যে ‘তাহরীফ’ বা বিকৃতি সাধন করেছে ৷

**

৭৮) এদের মধ্যে দ্বিতীয় একটি দল হচ্ছে নিরক্ষরদের ৷ তাদের কিতাবের জ্ঞান নেই, নিজেদের ভিত্তিহীন আশা-আকাংখাগুলো নিয়ে বসে আছে এবং নিছক অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে চলছে ৷
...
...
৮০) তারা বলে, জাহান্নামের আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না , তবে কয়েক দিনের শাস্তি হলেও হয়ে যেতে পারে ৷


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
274248
১৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:২০
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
১০
274412
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:১৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভাইয়ার বিশ্লেষন খুব ভালো লাগলো
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৩
219908
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
১১
274730
১৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আবু ফারিহা লিখেছেন : যারা শিখতে চায় তাদের জন্যে অনেক কিছুই শিখার অাছে এই পর্বে। অার যারা মানুষকে ধোকা বা বেকুব বানানোর জন্যে কোরঅান পড়ে তারা কোরঅান থেকে কি-ই-বা শিখবে। অার যারা সত্যিকারের মু'মিন তারা কখনো তাহাজ্জুদ নামাজের কথা বলেনা। এটা একান্তই অাল্লাহ ও বান্দাহর গোপনীয় এবাদত। ধন্যবাদ অাপনাকে।
১২
275984
১৯ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : সু্ন্দর মন্তব্য করেছেন। জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File