প্রবাসীর ঘামে ভেজা শ্রমের টাকার সঠিক ব্যবহার করছে তো পরিবার টি?
লিখেছেন লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:২০:২৭ দুপুর
আমি নিজে প্রবাসী নই। কিন্তু খুব কাছ হতে দেখেছি এমন অনেক অসঙ্গতি। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে এটি বড় ধরনের একটি সমস্যা। দেখা যায়, জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে সংসারের বড় ছেলের প্রবাস জীবনে অর্জিত কষ্টসাধ্য আয় বাকীরা বিলাসিতায় নষ্ট করে। প্রবাসীর রেখে যাওয়া স্ত্রীর প্রতিও অনেকে খারাপ আচরণ করেন। তাঁর প্রতি সহানুভূতি,সহমর্মিতার বদলে তাকে শত্রু ভাবেন। স্ত্রীর জন্য সামান্য হাত খরচের টাকা পাঠানো হলেও তা নিয়ে অনেক কথা হয়। এ অসুস্থ মানসিকতা পরিবর্তন জরুরী। অনেক ঘটনার ভিড়ে একটি বর্ণনা করছি।
এক বড় ভাই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আয় করা মোটা অঙ্কের টাকা ছোটভাইকে পাঠিয়েছিলেন দুই ভাই একত্রে ব্যবসা করবেন বলে। ছোটভাই সে টাকায় শহরে বড় ব্যবসা দাঁড় করায়। দেশে ফিরে বড় ভাইও ব্যবসায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এক মাসের মাথায় বড়ভাইকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করা হয়। কিছুই করার ছিল না। আদরের বিশ্বস্ত(??)ছোটভাই ব্যবসার সমস্ত কাগজপত্র নিজের নামে করে নিয়েছে। সে বড় ভাই এক কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে আবার ধারকর্জ করে বিদেশ গেল। এ হচ্ছে অবস্থা!
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতি সচল রাখে। যারা লক্ষ লক্ষ প্রবাসীর বিন্দু বিন্দু জলের মত বিশাল অংকের রেমিট্যান্সকে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অতি সহজে বিদেশে/সুইস ব্যাংকে পাচার করে দেন, প্রবাসী কাগুজে উপদেষ্টাকে কোটি কোটি টাকা প্রতি মাসে মাসোহারা দেন তারা কি একটু ভেবে দেখেন না- এ অর্থের পেছনে কত দেশপ্রেমিক প্রবাসীর ঘাম আর হাঁড়ভাঙ্গ খাঁটুনি জড়িত?
এবার একটি ধার করা গল্প বলি-
এ গল্পটি সংগৃহীত। অরিজিনাল লেখক এর পরিচয় পাইনি। তাই ‘সংগৃহীত’ হিসেবেই চালাচ্ছি। নাম না জানা সে লেখককে অনেক ধন্যবাদ জানাই এমন একটি অসঙ্গতি নিয়ে লিখার জন্য।
অল্প বয়সী ছেলেটি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আসে। দূর সম্পর্কের আত্মীয় বিধায় আমার বাসায় উঠে। খুব ভোরে উঠে কাজে যায়,কদিন আগেও মায়ের গভীর আদরের গণ্ডির ভিতরে থাকা ছেলেটি ।কাজ থেকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে আমার ড্রইং রুমের সোফায়। রাত গভীরে থাকা তার গোঙ্গানির শব্দ ভেসে আসে। হটাত হাড় ভাঙ্গা খাটুনিতে প্রচণ্ড জ্বর আর ব্যথার গোঙানি। সকালে আমি মেডিসিন দেই, সে খায়। আবার কাজে নেমে পড়ে। এভাবে এক বছর আমার অতিথি ছিল সে।
আয়ের পুরোটাই দেশে পাঠাতে লাগলো। উপরন্ত ধারদেনা করেও পাঠাচ্ছিল, যদিও তার পরিবার মোটামুটি সচ্ছল।
একবছর বাদে আমি দেশে যাই। পরিবারটি আমাকে নিমন্ত্রন করে, আমি যাই। এক পর্যায়ে জানলাম তাদের বাসায় টিভি, ফানিচার সব নতুন অর্ডার করা হয়েছে। চারদিকে চোখ বুলালাম। বললাম" এইগুলো তো অনেক সুন্দর, কেন বদলাচ্ছেন কেন?" ওর মা বললেন, ছেলে টাকা পাঠাচ্ছে নিয়মিতি তাই রদবদল। ছোট ভাই বোনের আব্দার...মায়ের আবদার... সব মিলে সবার আকর্ষণ তার দিকে।
এলোমেলো ভাবনা আর হৃদয় বিদীর্ণ করা দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে বাড়ী ফিরি। ছেলেটির প্রতিদিনকার কাজ শেষে বাড়ী ফেরার করুন মায়াময়,বিসাদমাখা মুখ খানা ভেসে উঠে। গোঙ্গানির সেই শব্দ কর্ণকহরে সুইয়ের মতো বিধে, ঘুমাতে দেয়না আমায়। কুরে কুরে খায় একরাশ কষ্ট!
অবচেতন মনে ভাবি , আমার কেন এমন লাগছে! মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী হয়ে যাচ্ছেনা! নিজেকে নিজেই প্রবোধ দেই।
এই যে অল্প বয়সী ছেলেটি পড়াশুনার করার সময় তা ঠিক মতো না করে , অসময়ে সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে জীবন সংগ্রামে লেগে গেলো। পরিবার থেকে ছিটকে গেলো দূরে, হাজার মাইল দূরে। কত ঈদ আর কত আপনজনের আনন্দময় সময় থেকে দূরে থাকা অনেক আপনজনের চলে যাওয়া। কোন কিছুর বিনিময়েই কি আর সেসব ফিরে পাবে?
যে কারনে এতো কথা, গত ২৬ দিনে ১০৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। এই রেমিট্যান্স এর অপর পিঠে কতো গোপন হৃদয় ক্ষরণ। নির্ঘুম রাত, দীর্ঘশ্বাস, ঘাম ঝরা দুর্বিষহ কষ্ট জড়িয়ে। তা কেউ জানল না, কেউ না। জানা হল না কারো। পরিবারের এক মুঠো সুখের পিছনের গল্প, গল্পই থেকে যায়। যে গল্পের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লেখাটির জন্য শুভেচ্ছা .....
আপনার ধার করা গল্পের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ ।
আমার এক ফুফাতো ভাই দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকে। তার ইচ্ছা ছিল একেবারে দেশে এসে জমানো টাকায় ভাল ব্যবসা শুরু করবে। কিন্তু তার বাবা চিন্তা করলো, ছেলে বিদেশে আছে। এটাই সুযোগ। গ্রামে ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের বিল্ডিং করেছে। সে ভাই এখন ভবিষ্যত চিন্তায় উদ্বিগ্ন। শহরে হলে একটি ব্যাপার ছিল-কিছু ভাড়া পাওয়া যেত। কিন্তু গ্রামের সেই বিল্ডিং লোক দেখানো ছাড়া আর তেমন কোনো কাজের নয়।
প্রবাসীদের নিয়ে আবেগঘন অসাধারণ সুন্দর লেখনীর জন্য অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে।
প্রবাসীরা তাদের ত্যাগের যথাযত মুল্যায়ণ অনেকাংশেই পায় না,চরম সত্য এটা। আলহামদু লিল্লাহ আমার বেলায় কখনো এমন হয়নি। আমার পরিবারের সবাই এবিষয়ে খুব হুশিয়ার, তাদের কে শুকরিয়া জানাতেই হয় সব সময়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন