কুরআনের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল মান্নান ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:৪৩:৫২ দুপুর

আমরা অনুধাবন করতে পারি আর না পারি এবং স্বীকার করি বা না করি, কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো একটি পূর্ণঙ্গ জীবন বিধান। কুরআনের বিধানের সবটুকু মানার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সমগ্র মানব জাতির কল্যান। কুরআনের আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিভাবে কল্যান সাধিত হবে তাও যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব। তবে আজকের বিষয় সেটা না হওয়াতে সে দিকে যাচ্ছিনা। পৃথিবীর শুরু থেকে মানুষের জন্য আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামের উল্লেখ পবিত্র কুরআনে রয়েছে এবং পৃথিবীতে এটি একটি বর্ধিষ্ণু ধর্ম। কুরআনের বাণী আমাদের জন্য যতই মঙ্গলজনক হোক না কেন, একটা জনগোষ্ঠী এর বিরোধীতা করেই যাবে। শয়তানের প্ররোচনা দ্বার বিভ্রান্ত হয়ে বিভিন্ন রূপ কলা-কৌশলের মাধ্যমে ঐ গোষ্ঠী তা করবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুরআনের প্রতিষ্ঠিত আইনের বিরোধীতা করে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই তার রাষ্ট্র যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তনের কাজটি সুচারু রূপে সম্পন্ন করে। সুতরাং কুরআনের আইনের পূণঃপ্রতিষ্ঠা অথবা প্রতিষ্ঠিত আইন সংরক্ষনের জন্য রাষ্ট্র যেমন মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে ঠিক তেমনই ভাবে আইনের পরিবর্তন বা রহিত করার কাজও রাষ্ট্র করতে পারে। সে কারণেই প্রতিষ্ঠিত কুরআনের আইন সংরক্ষনকারী এবং পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক উভয় দলই রাস্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগানোর সুযোগ পেতে চায়।

কুরআনের আইনের বিরোধীতা করার অর্থকে আমরা দুই ভাবে গ্রহণ করতে পারি। প্রথমটি খোদ পবিত্র কুরআনের অথবা কিছু আয়াতের বিরোধীতা করা এবং দ্বিতীয়টি কুরআনের আলোকে সমাজে প্রচলিত আইনের বিরোধীতা করা। কুর’আন বিরোধী কিছু লোক সরাসরি কুর’আনের এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত কুর’আনের আইন উভয়টির বিরুদ্ধে কথা বলে। তবে প্রথমটি অধিক সংবেদশীল হওয়াতে দ্বিতীয়টির পরিবর্তনের ব্যাপারে কুর’আন বিরোধীদের সাথে সুর মিলিয়ে কুর’আনের অনুসারী হিশাবে দাবিদার কিছু লোকও জোর ওকালতী করে থাকে। এবং তারা তা করে থাকে বুদ্ধিমত্তার সাথে। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশের সরকার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে কুরআনের দু-একটি আইন ছাড়া বেশীর ভাগ আইনকে বিদায় দিয়েছে অনেক আগেই। দু-একটি যাও বা আছে সেগুলিকে কি ভাবে নিশ্চিহ্ন করা যায় তা নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিকগণ কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে।

আধিপত্য বিস্তার করে কোন দেশকে আয়ত্তে আনার জন্য শক্তি প্রোয়োগ ছিল এক সময় একটা বড় কৌশল। তবে একবিংশ শতাব্দিতে শুধু মাত্র গায়ের জোরে দেশ দখল করে নিজের ক্ষমতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার সংস্কৃতি অচল। বর্তমানে কোন দেশকে করতলগত করতে হলে সে দেশে আজ্ঞাবহ একটি পুতুল সরকাকে বসাতে হয়। আধিপত্যবাদী দেশগুলি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসুচী বাস্তবায়নের জন্যে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে আজ্ঞাবহ সরকার গঠন করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে। পৃথিবীর বেশীর ভাগ দেশকে উল্লিখিত পদ্ধতিতে বিশ্বের মোড়লেরা আয়ত্তে রেখেছে। তাছাড়াও অগণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালিত কিছু কিছু দেশকেও তারা সমর্থন দিয়ে থাকে তাদেরই স্বার্থেই। নিকট অতীতে কোন কোন ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করার ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে ইরাক দখল, আফগানিস্তানে আক্রমণ এবং সম্প্রতি লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর হঠকারীতা সে স্বাক্ষরই বহণ করে। এ কথাও সত্য সম্রাজ্যবাদীরা শক্তি প্রয়োগ করার কারণ অধিকাংশ দুনীয়াবাসীকে বুঝাতে সক্ষমও হয়েছে। তারা যা করছে তা প্রয়োজনের তাগিদে ও যৌক্তিক কারণেই করছে। সম্রাজ্যবাদীরা খুবই চতুরতার সাথেই তা করে যাচ্ছে। এখানেই বুদ্ধিবৃত্তিক কথাটা সামনে চলে আসে। আরো একটা কথা মনে রাখতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক হলেই তা ন্যায় হবে তা নয়।

কোন অমুসলিম কুরআন ও ইসলামের বিধি-বিধান পরিবর্তন করতে চাইলে কশ্মিন কালেও তা গ্রহণযোগ্য হবেনা এবং অবধারিত ভাবে গোটা মুসলিম জাতি সংঘবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তাই শুধুমাত্র নামে মুসলমানের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কার্যসিদ্ধি করা হচ্ছে কুরআন বিরোধীদের মোক্ষম হাতিয়ার।

আমাদের দেশের তৌহিদী জনতা কিভাবে বুদ্ধি বৃত্তিক কৌশলের গ্যাঁড়া কলে আটকা পড়েছে তার দু-একটি উদাহরণ পেশ করব। বিরোধিরা নিজেদের লোক দিয়ে জঙ্গী কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছু উদাহরণ সৃষ্টি করে মাদ্রাসাগুলিকে জঙ্গী সৃষ্টির আখড়া হিসাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। কৌশলের সাথে প্রচার শুরু করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, ইতিহাস-ঐতিহ্যে এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা পেতে হলে মাদ্রাসাগুলির পাঠ্যসূচীতে ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে। শিক্ষানীতিতে সেগুলি সন্নিবেশিত হলো। শুনতেও ভাল লাগে এবং সত্যিকার অর্থে সেটা হওয়াও উচিত। কিন্তু সেগুলি যে কুরআনের শিক্ষার প্রসারের জন্য নয় তা সহজেই অনুমেয়। মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্লৌ পয়জনিং এর মাধ্যমে খতম করার এটা একটা দুরভিসন্ধি ছাড়া আর কিছুই না। মাদ্রাসা শিক্ষাকে শেষ করতে পারলে কুর’আনের মূল স্পিরিট একদিন এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৯১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357174
১৮ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File