ইমাম যে অবস্থায়ই থাকুন, মুসাল্লিগণ ইমামের সঙ্গে শরীক হবেন

লিখেছেন লিখেছেন শান্তিপ্রিয় ১২ জুন, ২০১৮, ০৯:২২:৪৮ রাত



যখনই মুসাল্লি মসজিদে প্রবেশ করবে, ইমাম যে অবস্থায়ই থাকুন না কেনো, মুসাল্লি ইমামের সাথে গিয়ে শরীক হবেন। চাই দাঁড়িয়ে থাকুন কিংবা রুকুতে অথবা সাজদায় কিংবা দুই সাজদার মাঝখানে।

১। হযরত আবু হুরায়রা থেকে হাদীস বর্ণিত; রাসূল (সা.) বলেছেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلا تَعُدُّوهَا شَيْئًا, وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاةَ - رواه أبو داود (৮৯৩) وحسنه الألباني في صحيح أبي داود

-তোমরা যদি মসজিদে এসে দেখো আমরা সাজদারত আছি, তবে তোমরাও (সরাসরি) সাজাদ করো। কিন্তু সেই সাজদাওয়ালা রাকাতকে তোমাদের জন্যে এক রাকাত গণ্য করোনা। তবে যে পূর্ণ রাকাত পেয়েছে, সে পুরো নামাযই পেয়েছে। (আবু দাউদ: ৮৯৩)

২। আবু কাদাতা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ سَمِعَ جَلَبَةَ رِجَالٍ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ مَا شَأْنُكُمْ قَالُوا اسْتَعْجَلْنَا إِلَى الصَّلاَةِ قَالَ فَلاَ تَفْعَلُوا إِذَا أَتَيْتُمْ الصَّلاَةَ فَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا

আবূ কাতাদাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়ায শুনতে পেলেন। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কী হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ করবে না। যখন সালাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা (ইমামের সালাম ফিরানোর পর) পূর্ণ করবে। (মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০৩, আহমাদ ২২৬৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৭ )

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) ফাতহুল বারীতে বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে ইমাম যে অবস্থায়ই থাকুন, সেই অবস্থায়ই মুসাল্লিকে ইমামের সাথে শরীক হতে হবে। (২/১১৮)

وعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضي الله عنه قال : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلاةَ وَالإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الإِمَامُ ) رواه الترمذي (৫৯১) وصححه الألباني في صحيح الترمذي .

৩। মু'আয ইবনু জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামায আদায় করতে এসে ইমামকে কোন এক অবস্থায় পেল। ইমাম যেরূপ করে সেও যেন অনুরূপ করে (তাকে যে অবস্থায় পাবে সেই অবস্থায় তার সাথে নামাযে শারীক হয়ে যাবে।) সহীহ তিরমিযী: ৫৯১, সহীহ আবু দাউদ- ৫২২ ,

আবু ঈসা বলেনঃ এটি গারীব হাদীস। উল্লেখিত সূত্রটি ছাড়া আর কোন সূত্রে এ হাদীসটি কেউ বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। বিদ্বানগণ এ হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। কোন ব্যক্তি মাসজিদে এসে ইমামকে সাজদাহরত অবস্থায় পেলে সেও তার সাথে সাজদাহয় শারীক হবে। যদি ইমামকে রুকূতে না পায় তবে সেই রাকাআত পেল না। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক ইমামের সাথে সাজদাহয় শারীক হওয়া পছন্দ করেছেন। কোন কোন বিদ্বান প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, তারা বলেছেন, আশা করা যায় এ সাজদাহ হতে মাথা তোলার আগেই তাকে মাফ করা হবে।

উপরের দলীলের ভিত্তিতে একথাই প্রমাণিত হলো যে, মুসাল্লি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে তখন ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই শরীক হবে।

ইবনে হিযাম (রহ.) বলেন; এভাবে মুসাল্লিকে ইমামের সঙ্গে শামেল হওয়ার উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (মারাতিবুল ইজমা‘: ২৫)

সকলে একমত যে, কোন মুসাল্লি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করেছে, যে নামাযের সব রোকনই শেষ, শুধু সালাম ফিরানো বাকী, তখনও মুসাল্লি ইমামের সাথে শরীক হবেন।

অনেক মুসাল্লিদের লক্ষ্য করা যায় যে, মসজিদে প্রবেশ করে দেখে যদি ইমাম সাজদায় কিংবা দুই সাজদার মাঝে আছেন, তারা তখন ইমামের সাথে সেখানে শরীক হন না। যতক্ষণ না তিনি দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়ান কিংবা তাশাহহুদেও জন্য বৈঠক করেন। এটি ঠিক না। কেননা এমনটি করাতে মুসাল্লি নিজেকে একটি সাজদার সাওয়াব হতে বঞ্চিত রাখেন।

তুহফাতুল আহওয়াযি ২/১৯৯ এই হাদীসের (ইমাম যা করেন, মুসাল্লিগণও তাই করবে) ব্যাখ্যায় বলেন: ইমাম যে অবস্থায় থাকুন না কেনো, মুসাল্লিকে তাঁর অনুসরণ করতে হবে। কিয়াম রুকু সাজদা যেখানেই থাকুন না কেনো। ইমামের দাঁড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। যা সাধারণ মুসাল্লিগণ করে থাকেন। ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা (ফাতাওয়া স্থায় কমিটি) (৭/৩১২-৩২৩)

বিষয়: বিবিধ

৮৩১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385517
১৩ জুন ২০১৮ রাত ০৩:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশা আল্লাহ খুবই সুন্দর হয়েছে সময় উপযোগী পোস্ট আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
২৪ জুন ২০১৮ রাত ০৯:০৩
317810
শান্তিপ্রিয় লিখেছেন : লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ||
385526
১৫ জুন ২০১৮ রাত ০২:৩৫
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : অসম্ভব ভাল লিখেছেন মাশাল্লাহ খুবই ভাল লেগেছে জাযাকাল্লাহ খায়র ভাইজান , আশা করছি এইরকম ছোট খোটাে বিষয় নিয়ে আরও কিছু পোস্ট পাবো।
২৪ জুন ২০১৮ রাত ০৯:০৩
317811
শান্তিপ্রিয় লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ লিখেবা। দোয়া করেবন।
লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ||
385549
১৬ জুন ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:১৬
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ মুহতারাম
২৪ জুন ২০১৮ রাত ০৯:০৪
317812
শান্তিপ্রিয় লিখেছেন : ওয়া জাযাক।
লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ||

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File