Rose Roseজীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে!(১১তম পর্ব)Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:০৫:১৬ সন্ধ্যা

আযাদকে নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত হাসপাতালে। তখন মনিরও ব্যস্ত তার বউকে নিয়ে। মনিরের একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। মনির সেই ছলে আযাদকে দেখতে যাওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলেছে ছোট বোনদের। সবাই এতে নিশ্চুপ কারন সে ও তো বিপদেই ছিলো। মনিরের দুষ্টোমির গোপন চেহারাটা সবার কাছে গোপনই থাকলো আপাতত। আযাদের মাকে আযাদের বড় বোনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে কারন একই ঘরে দুইজন রোগীকে দেখা শুনা করা কঠিন আর আযাদের বোনও সংসার ছেড়ে প্রতিদিন এসে মায়ের সেবা করতে পারবেনা তাই মাকে নিয়ে গেছে নিজের কাছে। আযাদের মা ও এবাসায় যেতে চাইছিলো না। তাই তারাও জোর করে নেয়নি। মায়ের কথামত মেয়ের বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আযাদের মা মেয়েকে অস্পষ্ট ভাষায় বলে মারে আমাকে ওখানে নিয়ে গেলে মনির আমাকে মেরে আমার বাপের বাড়ির সম্পদ লিখে নিবে। তুই আমাকে তোর কাছেই রাখ। কারন মনির কয়েকবার আমাকে দেখতে এসে বারংবার বলেছে দলিলে দস্তখাত করে দিতে আমি রাজী হইনি। কারন এসম্পদ আমার বাপের দেয়া সম্পদ। এখানে তোদের সব ভাইবোনের অধিকার রয়েছে। মনির বলে তুমি বাবার কাছ থেকেও সম্পদ পেয়েছ আর তোমার বাপের বাড়ি থেকেও পেয়েছ এত সম্পদ দিয়ে তুমি কি করবে? তুমি এখন খাবে, ঘুমাবে, তোমার যা লাগবে তা তো তোমাকে আমরাই দেবো। তাই সম্পদ গুলো আমার নামে লিখে দাও। এসবকিছু শুনে বোনটা খুবই অবাক হয়। কি বলছে মা এসব। মনির এতটা লোভী আর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, মাকেও নানা রকম ধমকি দেয়? নানা মা আমি তোমাকে আর ওবাড়িতে যেতে বলবো না। তোমার যতদিন ভালো লাগে তুমি এবাড়িতেই থাকো। এবার বোনে বোনে মায়ের কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করে। দুই বোনই সিদ্ধান্ত নেয় মাকে দুই বোনের কাছেই রাখবেন। কারন মায়েরও এমনই ইচ্ছা। আর সম্পদের ব্যাপারে সবাই চুপচাপ থাকি মা সুস্থ হলে যা করবেন তাই সবাইকে মেনে নিতে হবে।

আযাদকে বাসায় আনার পর থেকে আযাদকে খুবই বিষন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে যেন তাকে কোন কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। কানিজ বারংবার জানতে চায় আযাদ কাছ থেকে যে, তোমার কি হয়েছে? কেন তোমাকে এত বিষন্ন লাগছে? এটা তো তোমার বাড়ি তোমার ঘর, তোমার সবকিছু তারপরও কেন তুমি এতটা মনমরা হয়ে আছো? তুমি হাসি খুশি থাকো। তোমার মুখে হাসি দেখতে আমার যা কিছু করা লাগে আমি করবো। তারপরও তুমি আনন্দে থাকো আমি তাই চাই আমি তাই চাই। কানিজের এবার মনে পড়ে জালালের কথা। জালাল তো প্রায় প্রতিদিনই কানিজের সাথে কথা বলেছে আযাদের খোজ খবর দিয়েছে। এমন কি কোনদিন কি রান্না করেছে সে খবরও। কানিজ জালালের খোজ করে জানতে পারে জালাল বাড়িতে নেই তবে জালাল এই বেলায় কোথায় গেলো? জালাল তো না বলে গ্রামেও যায়না। সেদিন জালাল সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসলো। কানিজ ও অপেক্ষাতে ছিল জালাল কখন আসবে? আর জালালের কাছ থেকে আযাদের ছাদে উঠার কথাও জানতে হবে। কানিজ জালালকে ডাকে জালাল কানিজের কাছে আসে তবে মাথা তার নিচু। কানিজ জানতে চায় তুই সারাদিন কোথায় ছিলি? আর চুপচাপ কেন? কি হয়েছে তোর? আর বল তোর ভাই কিভাবে সেদিন ছাদে উঠে ছিলো? আর তুই বা তখন কোথায় ছিলি? বল কি হয়েছে তোর? জালাল এবার কাঁদতে থাকে ভাবী আমাকে মাফ করে দেন আপনি বলেছিলেন আমি যেন ভাইকে ছেড়ে কোথাও না যাই। কিন্তু সেদিন আযাদ ভাইয়ের কথায় পাশের এলাকা থেকে টাটকা লাল শাক আনতে গেছিলাম তখন ভাইজান ঘরেই ছিলো। আপনার ঘরের বারান্দাতেই ছিলো ভাইজান। কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে আমি জানিনা ভাবী। কানিজ বলল এবার বল তুই সারাদিন কোথায় ছিলি? জালাল বলে ভাবী আমি আপনাদের অনেক নিমক খেয়েছি আমি মিথ্যা বলবোনা। তবে আমি আর এখানে থাকতে পারবোনা শেষে কোন প্যাচে পড়ি ঠিক নেই। আপনারা আমাকে মাফ করে দেবেন। কানিজ কিছুটা অবাক হয় কি হয়েছে বল জালাল। জালাল বলতে শুরু করে।

ভাবী আমি সেদিন দেখিনি ভাইয়া কিভাবে ছাদে উঠেছিল? তবে আজকে আঁচ করতে পারছি সেদিন ভাইজান কিভাবে ছাদে উঠেছিলেন। কানিজ আরো অবাক হয়। কিভাবে বুঝলি? জালাল বলে আমাকে কয়েকদিন থেকে মনির ভাই নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং নানা রকম ভয় দেখাচ্ছে আমি যেন এখান থেকে সহসাই চলে যাই নয়তো আমাকে বড় রকমের খেসারত দিতে হতে পারে। আজকে বলেছে কয়েকদিনের মধ্যে যদি চলে না যাই তবে পরিণতি খারাপ হবে। আমি সারাদিন পথে পথে ঘুরেছি আর ভেবেছি যদি না বলে চলে যাই তবে আপনাদের সন্দেহে পড়বো। আর আপনারও আমাকে ভুল বুঝবেন। আর যদি বলে যাই তবে আপনাদের কাছে আমিও সাদা মনের থাকলাম। আর নিজের আত্মাকে কিছুটা শান্তনা দিতে পারবো সেই জন্য আমি সন্ধ্যা করে বাসায় এসেছি সারিদিন নিজের সাথে একরকম যুদ্ধ করে। আপনি বলুন ভাবী আমি কি করবো? আমার কি করার আছে। মনির ভাইয়ের এসব কথায় আমার মনের সকল প্রশ্নের জবাব ও পেয়েছি সেদিন কিভাবে ভাইজান ছাদে গেছে? কিভাবে ভাইজান আবারও অসুস্থ হলো? ভাবী আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না। কানিজের আগের সন্দেহ এবার আরো গাঢ়ো হলো। জালাল আরো বলেছে ভাবী আমি কালকেই চলে যাবো নয়তো আমার জন্য আপনাদেরও সমস্যা হবে আর আমারও। কানিজ বলে এত ভয় পাচ্ছিস কেন? দেশে কি আইন আদালত নেই? আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। জালাল বলে ভাবী আপনি হয়তো জানেন না আমি এবাড়িতে আছি সেই ছোট বেলা থেকে আপনার শশুরের কোলে পিঠে চড়ে বড় হয়েছি কোনদিনও বুঝতে পারিনি এভাবে আমাকে চলে যেতে হবে। আর আপনি এও জানেন না ঢাকাইয়া মানুষের মুখের কথাই আইন। তাদের জোরই আইন। তাদের কথায়ই আইনের লোকেরা উঠে এবং বসে। আপনি দেখবেন এদেশের আইনের লোকেরা কোনই আইনি ব্যবস্থা নেবেনা। কারন তারা জানে ক্ষমতাবানদেরকে আইনের আওতায় এনে কোন লাভ নেই তারা যেকোন ভাবে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসবে। আর আইন থেকে বের হওয়ার সহজ উপায় হলো মোটা অংকের ঘুস দিলেই জেলের তালা খুলে যাবে।

ভাবী আপনারা সাবধানমত থাকবেন। ভাইজানের দিকে খুব খেয়াল রাখবেন। এবস বলতে বলতে জালাল খুবই কাঁদেন মনে হচ্ছে যেন সে আপন ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ভাবী আমি এবাড়িতে বড় হয়েছি এবাড়ির সবার মায়া ভুলতে আমার খুবই কষ্ট হবে। তারপরও এখানে আমি চিরকাল থাকতে পারবোনা। একদিন না একদিন তো যেতেই হবে আমাকে তাই ভালোয় ভালোয় চলে যাওয়াই ভালো। কানিজ বলে তুই ঠিকই বলেছিস জালাল। আসলে আমি এখানে খুবই অসহায় তোর জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না জালাল। তুইও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিস। জালাল বলে না ভাবী আপনারা আমার জন্যে অনেক করেছেন আমি আপনাদের কাছে থাকতে পারলে জীবনকে ধন্য মনে করতাম। কিন্তু নিয়তি আমাকে থাকতে দিচ্ছেনা। ভাবী আপনি ভাইজানকে বলেন আমার চলে যাবার কথা আমি তার মুখোমুখি হতে লজ্জা পাচ্ছি। কানিজ আযাদকে বলে জালালের চলে যাবার কথা। আযাদ শুনে আরো অসহায় বোধ করে। জালাল নিজের ভাইয়ের মত করে আযাদের যত্ন করতো। আযাদের খেয়াল রাখতো। আযাদ স্পষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও কানিজকে বলে কেন জালাল চলে যাবে? কানিজ সংক্ষেপে আযাদকে বিষয়টা বলে। আযাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর অস্পষ্ট ভাষায় বলে কানিজ আমারও চলে যাবার সময় হয়ে গেছে তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও। কানিজ বলে এভাবে বলনা এভাবে বললে আমি যে একেবারে অসহায় হয়ে যাবো। আযাদ নিরব হয়ে যায় আর কতদিন তোমাকে কষ্ট দিবো কানিজ? তোমাকে তো কিছুই দিতে পারিনি এবার আরেকটু কষ্ট দিতে চাই এরপর তুমি মুক্ত। তোমার মনের মত কাউকে বেছে নিয়ে জীবনকে সাজিয়ে নিও। কানিজ জালালকে বেশ কিছু খরচ দিয়ে দিও কারন সে এবাড়িতে অনেক বছর। সে বাবাকে সেবা করেছে, আমাকে করেছে, তার কাছে আমরা অনেক ঋনি। তুমি পারলে ওকে বেশী করে টাকা দিয়ে দিও এখন না পারলে পরে হলেও দিও। কানিজ মাথা নেড়ে সায় দেয় দেয়ার। কানিজ এবার জালালকে ডেকে বলে তোর সবকিছু গুছিয়ে নে তাহলে। আর শুন মাঝে মাঝে আসিস, আমাদের খোজ খবর নিস। জালাল বলে ঠিক আছে ভাবী। কানিজ আরো বলে জালাল তুই একটা জিনিস আমার কাছে পাবি যেকোন সময় এসে নিয়ে যাস কেমন? জালাল মাথা ঝুঁকায়। পরেরদিন জালাল এবাড়ি ছেড়ে চলে যায়। নিজেও কেঁদে যায় আর কাঁদিয়ে যায় আযাদও কানিজকে।

বিষয়: সাহিত্য

১০৪২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

292770
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৪
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Sad Sad পরবর্তি পর্ব চাই তাড়াতাড়ি Sad Sad
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৩
237100
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ধৈর্য ধরুন পাবেন বৈকি.......।
292790
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
মামুন লিখেছেন : সুন্দর সিরিজটিতে সাথেই আছি। প্রাঞ্জল বর্ণনা পাঠককে আরো সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা যোগায়। অপেক্ষায় রইলাম।
শুভেচ্ছা নিরন্তর.. Thumbs Up Rose Rose Thumbs Up
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৩
237103
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনাদের মন্তব্যে প্রেরনা পেয়েই লিখে যাচ্ছি দোয়া করবেন যেন লিখতে পারি সবসময়।
292841
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০৩
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : জীবনের ধাক্কাগুলো অনেকটা এমনই হয় ... একেরপর এক আসতেই থাকে ... ছোট্ট একটা পরামর্শ- কাহিনীতে সাসপেনস না থাকলে পাঠক পড়ার ধৈর্‌য হারায়। আপনার লেখায় প্রাঞ্জলতা আছে, তবুও মাঝখানের দুইটা পর্ব খুবই বোরিং লেগেছে কারণ ঘটনাপ্রবাহ অনেকটা একইরকম ছিলো ... অনেক অনেক শুভকামনা সিরিজটার জন্‌য, পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায়.....Happy
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৫
237105
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : কোন দুইটা পর্ব সেটা উল্লেখ করলে ভালো হতো। আরো কোন ভুল থাকলে সংশোধন করিয়ে দেবেন আশা করি।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য
292897
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩৫
কাহাফ লিখেছেন :
আপনার প্রতিটা পর্বে ভাল লাগা জানিয়ে সাথেই আছি!
আজ মন্তব্যের আকার বড় করলাম না!! Thumbs Up Thumbs Up
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৫
237106
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সাথে থাকার জন্য আপনার সর্বাধিক কল্যান কামনা করছি।
292910
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৫৭
নোমান২৯ লিখেছেন : ভাল লাগ্লো অনেক Happy Happy|খুব সুন্দর বর্ণনাশৈলী Applause Thumbs Up|অনেক ধন্যবাদ আপনাকে| Rose Good Luck Good Luck Rose
১১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৫
237107
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালোলাগা মন্তব্য করে উৎসাহ দেয়ার জন্য মোবারকবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File