‘’যেমন কর্ম তেমন ফল’’

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৮ জুন, ২০১৩, ১২:৪৫:৫৩ দুপুর

‘’যেমন কর্ম তেমন ফল’’

হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর অভ্যাস ছিল, প্রত্যহ ফজরের নামাজ শেষে সাহাবীগণের দিকে মুখ করে বসতেন এবং কেউ কোন খাব (মানে স্বপ্ন) দেখেছে কি না, বা কারো কোন কথা বলার আছে কি না, জিজ্ঞাসা করতেন। কেউ কোন কথা জানতে চাইলে হুজুর (সঃ) তাকে যথাযথ উপদেশ প্রদান করতেন।

একদিনের ঘটনাঃ- অভ্যাস মত একদিন হযরত (সঃ) বললেন কারো কিছু বলার আছে কি না? কেউ কিছু না বলায়, তিনি নিজেই বললেন, আজ রাত্রে আমি অতি সুন্দর এ বিস্ময়কর একটি স্বপ্ন দেখেছি। (আগেই বলে রাখি নবীগণের খাব ও অহী সম্পূর্ণ সত্য, ইহাতে বিন্দু মাত্র সন্দহ নাই) দেখলাম দুই ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমার হাতে ধরে এক পবিত্র স্থানের দিকে নিয়ে চলল। কিছু দুর যাওয়ার পর দেখলাম,

১/ একজন লোক বসে আছে, আর একজন লোক তার নিকট দন্ডায়মান আছে। দাড়ানো লোকটির হাতে একটি লোহার জম্বুরা (মানে কড়াত) আছে। দাড়ানো লোকটি তার হাতের জম্বুরা দ্বারা বসা লোকটির মস্তক চিড়ছে (মানে কাটছে) একবার মুখের এক দিক দিয়ে ঐ জম্বুরা ঢুকিয়ে দিয়ে মাথার পিছন পর্যন্ত কেটে ফেলে। আবার অন্য দিক দিয়েও এরুপ করে। একদিক কেটে যখন অন্যদিক কাটতে যায়, তখন প্রথমদিক জোড়া লেগে যায়। আমি এঅবস্থা দেখে অত্যন্ত ভীত হয়ে, সাথীদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম বন্ধুগণ! ব্যপার কি? সাথীদ্বয় বললেন, সামনে চলুন। আমরা সামনে অগ্রসর হলাম। সামনে গিয়ে দেখি,

২/ একজন লোক শুয়ে আছে, আরেকজন লোক একটা ভারী পাথর নিয়ে তার নিকট দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো লোকটি তার হাতের পাথর দিয়ে, শোয়া লোকটির মাথা চূড় চূড় করে দিচ্ছে। পাথরটি এতো জোড়ে নিক্ষেপ করছে যে, মস্তকটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বহুদুরে গিয়ে পড়ে, দাড়ানো লোকটি নিক্ষিপ্ত পাথর কুড়িয়ে আনার পূর্বেই বিভক্ত মস্তক জোড়া লেগে পূর্বের ন্যায় হয়ে যায়। এই ভাবে বার বার করতে থাকে, এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে আমি ভীত ও সস্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। সাথীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যপারটা খুলে বলুন। তারা কোন জবাব না দিয়ে বলল, আগে চলুন। আমরা কিছু দুর অগ্রসর হয়ে, প্রকান্ড গর্ত দেখতে পেলাম।

৩/ দেখলাম গর্তটির মুখ সরু, কিন্তু অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত গভীর এবং প্রশস্থ- যেন একটি তন্দুর, উহার ভীতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, আর বহু সংখ্যক নর-নারী তাতে দগ্ধীভূত হচ্ছে। আগুনের তেজ এতঅধিক যে, যেন আগুনের ঢেউ খেলছে। ঢেউয়ের সাথে যখন আগুন উঁচু হয়ে ওঠে, তখন লোকগুলি উথলিয়ে গর্তেরদ্বারদেশে পৌছে, গর্ত থেকে বের হওয়ার উপক্রম হয়। আবার যখন আগুন নিচে নামে, তখন লোকগুলিও সাথে সাথে নিচে নেমে যায়। আমি ভীত হয়ে সাথীগণকে বললাম, বন্ধগণ! এবার বলুন এই ব্যপার কি? কোন জবাব না দিয়ে, তারা আগে চলতে বললেন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হলাম। কিছুদুর গিয়ে দেখি।

৪/ আমরা একটি রক্তনদী দেখতে পেলাম। তীরে এক লোক দাড়ানো আছে, তার নিকট স্তূপীকৃত কতকগুলি প্রস্তর আছে। নদীর মধ্যে একলোক হাবু-ডুবু খেয়ে অতি কষ্টে তীরে আসতে চেষ্টা করছে। তীরের নিকটবর্তী হলেই তীরস্থ লোকটি তার মুখে এতো জোড়ে পাথর নিক্ষেপ করে যে, সে আবার নদীর মাঝখানে চলে যায়। এভাবে যখনই সে তীরে আসতে চায়, তখনই তীরস্থ লোকটি পাথর নিক্ষেপ করে তাকে দুরে সরিয়ে দেয়। এমন নির্মম ব্যবহার দেখে, ভয়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে সাথীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলাম, বন্ধুগণ! বলুন একি ব্যপার? তারা কোন জবাব দিলেন না। বললেন আগে চলুন। আমরা আগে চললাম। কিছুদুর অগ্রসর হয়ে,

৫/ আমরা একটি সুন্দর শ্যামল উদ্যান দেখতে পেলাম। উদ্যানের মধ্যভাগে একটি অতি উচ্চ বৃক্ষ। উহার নিচে একজন বৃদ্ধ লোক বসা আছে। বৃক্ষটির অপর পার্শ্বে আরও একজন লোক বসা আছে। তার সম্মুখে আগুন জ্বলছে। ঐলোকটি আগুনের মাত্রা আরও প্রবলভাবে বৃদ্ধি করছে। সাথীগণ আমাকে বৃক্ষে আরোহন করালেন। বৃক্ষটির মাঝামাঝি গিয়ে দেখলাম এক সুদৃশ্য অট্টালিকা। এমন সুন্দর ও মনোরম অট্টালিকা এর পূর্বে আমি কখনো দেখতে পাইনি। অট্টালিকার ভেতরে পুরুষ-নারী, বালক-বালিকা সকল শ্রেনীর লোক আছে। অট্টালিকা হতে বের হয়ে সাথীদ্বয় আমাকে আরও উপরে নিয়ে গেলেন। তথায় অপর একটি অট্টালিকা দেখতে পেলাম, উহার ভীতর দেখলাম শুধু বৃদ্ধ ও যুবক। আমি সাথীদ্বয়কে বললাম আপনারা আমাকে নানা স্থান ভ্রমন করিয়ে, ঘুরিয়ে, ফিরিয়ে আনলেন। এখন বলেন দেখি ঐসব কি ব্যপার দেখলাম? সাথীদ্বয় বললেন-

১/ প্রথম যে লোকটির মস্তক ছেদ করছে দেখেছেন, সে লোকটির মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। সে যে, মিথ্যা বলত তা দুনিয়াময় মশহূর (মানে প্রসিদ্ধ) হয়ে যেত।

নাউযুবিল্লাহ

২/ দ্বিতীয় যে লোকটির মস্তক প্রস্তরাঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়েছে, সে দুনিয়ায় আলেম ছিল। কোরআন হাদীস শিক্ষা করে ছিল। কিন্তু তদ্বনুযায়ী সে নিজেও আমল করে নাই, অন্যকেও শিক্ষা দেয় নাই, যাতে করে এলমে দ্বীন প্রচার হইতে পারত। রাত্রে শুয়ে আরামে কাটাত। আ’লমে বরযখে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাস না হওয়া পর্যন্ত তার এইরুপ আযাব হতে থাকবে। নাউযুবিল্লাহ

৩/ তৃতীয় আপনি যাদের আগুনের তন্দুরের ভেতর দেখেছেন, তারা দুনিয়ায় ছিল ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভীচারী নারী। কেয়ামত পর্যন্ত তাদের এইরুপ আযাব হতে থাকবে। নাউযুবিল্লাহ

৪/ চতুর্থ আপনি যে, লোকটিকে রক্তের নদীতে হাবু-ডুবু খেতে দেখেছেন, সে ঘুস, সুদ খেয়ে, চুরি করে, এতীম ও বিধবার মাল আত্মসাৎ করে, লোকের রক্ত শোষন করে ছিল। কেয়ামত পর্যন্ত তার এইরুপ আযাব হতে থাকবে। নাউযুবিল্লাহ

৫/ ১. তৎপর বৃক্ষের নীচে যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখেছেন, তিনি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। ছেলেপেলেগুলো মুসলমান নাবালক ছেলে মেয়ে। আর

২. যিনি অগ্নিপ্রজ্বলিত করছিলেন, তিনি জাহান্নামের দারোগা! মালেক ফেরেশতা। বৃক্ষের উপর।

৩. প্রথম যে অট্টালিকা দেখেছেন, উহা সাধারন ঈমানদারদের জান্নাতের বাড়ীঘর। সুবহানাল্লাহ! তৎপর।

৪. দ্বিতীয় যে অট্টালিকা দেখেছেন, উহা ঐশহীদানের অট্টালিকা, যারা দুনিয়াতে দ্বীন ইসলামের জন্য শহীদ হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

আমি জিব্রাইল ফেরেশতা, আমার সাথের লোকটি মিকাইল ফেরেশতা। [এরপর জিব্রাইল (আঃ) হযরত (সঃ) কে বললেন] আপনি এখন উপরের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। আমি উপরের দিকে তাকালে, এক খন্ড মেঘ সাদা মেঘের মত দেখলাম। জিব্রাইল (আঃ) আমাকে বললেন উহা আপনার অট্টালিকা। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আমার অট্টালিকায় চলে যাই। জিব্রাইল (আঃ) বললেন: এখনও সময় হয়নি, এখনো দুনিয়ায় আপনার হায়াত বাকী আছে। দুনিয়ার জীবন শেষ হলে পর এখানে যাবেন।

শিক্ষণীয়ঃ- এই হাদীসে কয়েকটি বিষয়ের অবস্থা বুঝা যায়।

প্রথমতঃ মিথ্যার কি ভয়াবহ সাজা।

দ্বিতীয়তঃ বে-আমল আলেমের পরিণতি।

তৃতীয়তঃ যিনার প্রতিফল ও

চতুর্থঃ সুদ খোরের ভীষন আযাব।

পরিশেষে ফরিয়াদঃ- আল্লাহপাক সকল মুসলমানকে এই সকল গুনাহের কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। এবং আমল করার মত মন-মানষিকতা তৈরী করে দিন। ও সকল উম্মতে মোহাম্মদীকে তার বিশেষ অনুগ্রহে ক্ষমা করে দিন।

আমিন।

বিষয়: বিবিধ

২১৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File