কিশোর প্রেমিক লিমনের পিছু ছেড়েছে ভালবাসা

লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:১৩:০৬ দুপুর

১৯৯০/৯১ সালের কথা। লিমন থাকত আইসফ্যাক্টরী রোডে। আম্মুর পিটিআই ট্রেনিং তাই চট্টগ্রাম শহরে থাকা। নালাপাড়ার ইয়া বড় একটা মাঠে খেলত লিমন ৪০/৪৫ জন বন্ধু বান্ধবী নিয়ে। বয়স আট। দুরন্ত কিশোর লিমন যখন বিকাল বেলা খেলত মাঠে ভুগোলী নামে এক সুন্দরী কিশোরী মাঠের পূর্বপাশের ছোট্ট একটা সিড়িতে বসে থাকত।অপরুপ ৫ বছরের ভুগোলীর সেই ছবি আট বছরের লিমনের মনে গেথেঁ যায়। কথা হয়নি কোন দিন লিমন ভূগোলীর। কিন্তু কি এক মায়া , শিহরন , অনুভূতি , টান ভালবাসা , রোমাঞ্চ লিমনের মনে ভর করেছে যা বলার ভাষা পথ খুজে পাবেনা নিশ্চিত। প্রেম ও সেক্স না বুঝার আগে এমন অদ্ভূত ভালবাসা ইসলাম বা কোন ধর্ম সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছে কিনা আমার জানা নাই। কিন্তু ভালবাসা হৃদয় জুড়ে স্বপ্নীল ছবি আকেঁ কল্পনার ছন্দ দিয়ে। চলে দিন চলে যায় ১৯৯১ সালটি । একসময় লিমন চলে যায় গ্রামে। আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলে ভূগোলীকে। হৃদয় জুড়ে ভুগোলী , মনে প্রানে ভূগোলী । লিমন মিস করে যায় খেলার সাথী মান্নি , পূর্নি খুকুকে। রবিন রুহিন মুক্তাকে। ইব্রাহিম , লিপু সহ আরো অনেককে। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় লিমনদের গ্রুপটি ধানের শীষের মিছিল করত। শিশুলীগ লিপুর সাথে লিমনের সেই কি ফাইট ! মনে পড়ে বৈকি! দুরন্ত কিশোর জীবন তারুন্যে রুপ নেয় হৃদয় ক্যানভাসে ভূগোলীর জন্য ভালবাসা বুনে বুনে। সময়ের ব্যবধানে ভালবাসা বিবর্ন হয়। ফ্যাকাশে হয় ভুগোলীর প্রতি ভালবাসার অনূভূতি।

৫ম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষা শেষে নানার বাড়িতে জম্পেশ বেড়ানোর সময় লিমনে অনুভূতিতে আবার নাড়া দেয় সমবযসী খালাম্মার লজিং ছাত্রী নাছিমা । তার সাথেও কথা বলা হয়নি কখনো লিমনের। ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত এক নাছিমার চেহারা মনে করতে করতেই পার হয়ে যায়। তারপর আসে আবার এক কিশোরী তাবাস্সুম। বোরকা নেকাবে আবৃত্ত ৬ষ্ট শ্রেনীর এই ছাত্রী নবম শ্রেনীর লিমনের মনে কঠিন ভাবে দোলা দেয়। স্কুলের ক্লাস , বাসায় পড়ালেখা , দুরন্তপনা আর ছুটোছুটির ভিতর শুধুই তাবাস্সুম। ভালো ,মন্দ ,প্রেম, সেক্স আর ধর্মীয় অনুশাসন যখন বুঝেই উঠলনা লিমন অথচ সেই বয়সেই মনে রেখাপাত করল তিন জন কিশোরীর সরল চাদঁমুখ। ইসলাম এই সম্পর্কে কোন সাজেশান দেয় কিনা জানা নেই। প্রেম রোধ করাই যদি ইসলামের মূল আপীল হয় তবে কিশোর জীবনের এই প্রেমের ব্যাখ্যা খুজে ফিরি আমি। মনের ডাইমেনশন বুঝার মত মনোবিদ কোন ইসলামপন্থী বোধ হয় হতে পারেনি।

তারপর বেলা অন্যভাবে গড়াল। লিমন আর তাবাস্সুম দুই জনই ইসলামী আন্দোলনের পথিক । তাই আল্লাহর রংয়ের সামনে মানুষের চেহারার রং মনে ঠাই করেনি। কিশোর জীবনের ভালবাসার এখানেই মৃত্যু ঘটে। প্রেমের লাশের কফিনে ব্যস্ততার ফাকেঁ পড়ে সামান্য দীর্ঘশ্বাস। লিমন বারে বারে বিপ্লবী হয়ে উঠে , সংগ্রামী হয়ে উঠে । কোন এক সামান্য অবসরে কিশোরীর চেহারা মনে ভেসে আসে বারবার । গভীর ঘুমেও স্বপ্নরা ধরে এনে লিমনের কাছে হাজির করে কিশোরী তাবাস্সুমের চাদঁমুখ । কেউ জানেনা কেউ দেখেনা। তবে কি স্বপ্নরা শয়তান!!!তাবাস্সুম কি ভাবে লিমনকে নিয়ে কে জানে! একটি দ্বৈত ভাবনার নিয়ে বেড়ে উঠে লিমনের ছেলে বেলা। অসম্ভব পাপবোধ থেকে ভালবাসা মুখ ফুটে বের হয়নি। তবে নয়নের অশ্রু কেউ আটকাতে পারেনি। গোপনে অশ্রুপাতের ভিতর সংগ্রামী তরুন বনে যাওয়া লিমনের নির্মল প্রেমাবেগ ইসলামপন্থীরা ব্যাখ্যা করে কি? এই মনের শুশ্রুষার হাসপাতাল কোথায়?

বিষয়: বিবিধ

১৪২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File