গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৫

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০২:২০:৩১ দুপুর

#গল্প_প্রবাসী_বড়_ছেলেঃ২৫

দুলালের ছেলে মুন্না ঢাকায় তার খালু জয়নালের বাসায় থেকে কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবছর এসএসএসসিতে ‘এ’প্লাস পেয়ে পাশ করেছে। ছেলেটা বেশ ভদ্র নামাযি। যদিও সে দুলালের ছেলে কিন্তু ভদ্রতা নম্রতা অনেকটা আলালের মতই। মুন্না তাদের পারিবারিক সব ঘটনাই জানে। নিজের স্বার্থপর বাপকে অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন ফল হয়নি।

আলালের সাথে দুলাল এ পর্যন্ত যতই স্বার্থপরতা দেখাকনা কেন সেজন্য মুন্না এবং তার মা পরির প্রতি আলালের মনভবের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং নিজের সে মুন্নাকে নিজের ছেলের মতই আদর করে। মুন্নার দীনদারীও আলালকে পুলকিত করে। রেজাল্ট পেয়ে মুন্না বাড়িতে এসেই প্রথম বড় চাচা আলাল যাকে সে আম্মি বলে তার সাথে দেখা করতে গেল।আরব দেশে চাচাকে আম্মি বলাহয় তাই আলাল যেহেতু সৌদি’আরবে ছিল তাই মুন্না তার বড় চাচাকে সম্মানের সাথে আম্মি বলে ডাকে।

- আসসালামু’আলাইকুম, আপনি কেমন আছেন আম্মি?

- ওয়ালাকুম’আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছি। তুমি কেমন আছ বাবা?

- আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমিও ভালো আছি। আম্মি, এসএসসিতে আমি এ+ পেয়েছি।

- আলহামদুলিল্লাহ্‌ বেচে থাকো বাবা দুয়া করি। সর্বদা সৎ পথে চলবা। ভালো ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবা।

- জি আম্মি।

ছোট ভাই য়ের ছেলে হলেও আলাল মুন্নাকে নিজের ছেলের মতই আদর করে। অষ্টম শ্রনীতে বৃত্তি পাওয়ার পর আলালই মামাত ভাই জয়নালের সাথে পরামর্শ্ব করে তার ছেলে যাভেদ যে স্কুলে পড়ে মুন্নাকেও সেই স্কুল অর্থাত ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে ছিল, এমন কি ভর্তির টাকা, স্কুল ড্রেস, বই পুস্তক এবং স্কুল ব্যাগও আলালই দিয়েছিল। সর্বং সহা উদার মনের এই মানুষটি আজ বেকার, কর্মহীন রোগা। আগামী দিন গুলোতে সংসার কিভাবে চালাবে সে তাও জানে না। নিজের মেয়ে মুন্নি দুলালের ছেলে মুন্নার চেয়েও ভালো ছাত্রী। অষ্টম শ্রেনীতে ট্যালন্টপুল বৃত্তি পেয়ে এবার দশম শ্রেণীতে পড়ে। বৃত্তির টাকায় হয়ত এসএসসি পর্যন্ত পড়তে পারবে কিন্তু তার পর কি হবে তা আলাল জানেনা।

মুন্নার সাথে জয়নালের ছেলে জাভেদও গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। যাভেদ এবছর কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কবি নজরুল কলেজের নামটা অবশ্য কবি নজরুল ইসলাম কলেজ ছিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে দেশকে ধর্মহীন সেকুলার করার স্বার্থে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠি অনেক প্রতিষ্ঠনের নাম থেকেই ইসলাম ও মুসলিম শব্দ গুলো বাদ দিয়েছিল। এমন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থকে কুর’আনের আয়াত ‘রব্বি যিদনি ইলমা’ বাক্যটিও বাদ দিয়েছিল। অথছ নেতারা তাদের নিজের নাম থেকে কোন মুসলমানিত্ব অংশ বাদ দেয়নি! এইমনকি কোন অমুসলিম পরিচয়বাহি ধর্মীয় নাম বিশিষ্ট প্রিতিষ্ঠান থেকেও কোন ধরণের কাট ছাট করা হয়নি। ব্যাপারটা এমন যে দেশকে ধর্মহীন সেকুলার করার জন্য শুধু ইসলাম ও মুসলমানদেরই কাট টু সাইজ করতে হবে।

মুন্নি দশম শ্রেণীর ছাত্রী, বিজ্ঞান ভিভাগে পড়ে কিন্তু বাবার আর্থিক সংকটের কারণে প্রাইভেট পড়তে পারছেনা। সাধারণ বিষয়ত বটেই উচ্চতর গণিতের এলজাব্রা, জ্যামিতি এমনকি তৃকোনমিতীর মত কঠিন বিষয় গুলোও উদাহরণ দেখে দেখে সমাধান করে! মাঝে মধ্যে স্কুল ছুটির পরে গণিত স্যারের সাহায্য নিত কিন্তু স্যার অবিবাহিত বলে অনেকেই আলতু ফালতু কথা বলে তাছাড়া কিছুদিন আগে তাদের পার্শ্বের স্কুলের ইংরেজী স্যার এমন এক অসহায় ছাত্রীকে গ্রামার পড়ানর বাহানা করে মেয়েটির সর্বস্ব লুটে নিয়েছে, তাই মুন্নিও এখন আর স্যারের কাছে একাকি যেতে সাহস করেনা। অবশ্য মুন্নির স্যার খুবই ভালো কিন্তু তার পরেও বলা যায়না শয়তান কাকে কখন কিভাবে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ফেলে।

মুন্নির প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে। আগামী কাল উচ্চতর গণিত পরীক্ষা অথছ এক চ্যাপ্টারের অংক স্কুলেও করায়নি আর উদাহরণ দেখেও মুন্নি কিছুই বুঝতেছেনা। মুন্নার যে সাহায্য নিবে তাও সম্ভব না কারণ মুন্নার উচ্চতর গণিত ছিলনা। সে বানিজ্য বিভাগের ছাত্র। এ চ্যাপ্টার থেকে একটা অংক আসবেই। সাত পাঁচ ভেবে সরম লজ্জার মাথা খেয়ে শেষ পর্যন্ত চাচি পরির সাহায্যে যাভেদের দারস্ত হল।

বিষয়: সাহিত্য

৮০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File