গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৬

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:২১:০২ বিকাল

গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৬

লাগেজ নিয়ে জয়নাল আর হেলাল ইতিমধ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছে। আলাল বের হতে গিয়েও বেরলনা। পিছন ফিরে ভাবির হাতে একটা ছোট্ট বক্স দিয়ে বলল, ‘ভাবি এটা ওর জন্য’।

- ওর জন্য! ও ওটা আবার কে?

- কেন ভাবি? আপনি কি আমার সাথে রসিকতা করছেন?

- আহারে আমার চান্দু? তোমার সাথে রসিকতা করতে আমার বয়েই গেছে। নাও এটা তোমার সাথেই নিয়ে যাও, যার জন্য এনেছ সে তোমাদের বাড়িতেই আছে।

- তার মানে?

- মানে ঠানে বুঝিনা, ধর।

ওদিকে জয়নাল ভাই আবার কি মনে করে তাই কথা না বাড়িয়ে বক্সটা নিয়ে পকেটে রখে বাসা থেকে বেরিয়ে এল। কিন্তু আলাল তাজ্জব হল ভাবির কান্ড দেখে! জয়নাল বেরুতেই এমন জোড়ে দরজাটা লাগালো যেন মনে হচ্ছিল আলাল যদি আর কোনদিন এ বাসায় না আসে তাহলেই জয়নাল এবং জয়নালের বৌ হাফ ছেরে বাচে। আলালের সাথে জয়নালের বৌর শেষ মুহুর্তের আচরণ যে জয়নাল লক্ষ্য করেনি তা নয় কিন্তু সে একেবারেই না দেখার ভান করেছে যা আলালকে আরো ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।

জাহাজের কেবিনে আলাল আর হেলালকে বসিয়ে জয়নাল যখন বিদায় নিবে তখন আলাল, ভাবির অমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে জয়নাল বলল, ‘আলাল আগে বাড়ি থেকে ঘুরে আস তার পরে সব বলব। বড় ভাই হিসেবে একটা উপদেশ দিব আর তা হল, ভাই সর্বদা মাথা ঠাণ্ডা রাখবি, বাড়িতে যদি এমন কিছু দেখিস যা তুই কোনদিন কল্পনাও করিসনি তাও তোর বড়ত্বের গুনে ধৈর্যের সাথে মেনে নিবি। সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ শেষে ফুফুকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় নিয়ে আসবি। ভাই, আর কথা বলার সময় নাই, এখনই জাহাজ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্‌ হাফেজ’।

সদর রাস্তা থেকে ছোট্ট একটা পথ বেয়ে আলালদের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। ঘরের সামনের আঙিনা পেরিয়ে বসত ঘর, বসত ঘরের পিছনে উঠন, আর উঠন পেরিয়ে পাকের ঘর। বসত ঘর আর পাকের ঘরের মাঝে যে উঠন সেখানে শীতের সকালে খড়কুটার উপর পাটি ফেলে আলালের অসুস্থ মা রোদ পোহাচ্ছিল আর দুলালের বৌ পরি, শ্বাশুরির হাতে পায়ে তেল মালিস করে দিচ্ছিল।

নিজেদের বাড়ি বলে কথা। আলাল কোন প্রকার হাঁকডাক না করেই একেবারে সদর দরজা পেরিয়ে বাড়ির ভিতের প্রবেশ করল। পাটির উপর রুগ্ন এক মহিলাকে দেখে আলালের বুঝতে কষ্ট হয়নি যে উনিই আলালের জনম দুঃখিনী মা। মা-ছেলের চোখাচোখি হতেই আলাল, মায়ের বুকে আছরে পরল। শক্তিহীন মা তার সর্ব শক্তি একত্র করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মা-ছেলের মধ্যে অনেকক্ষণ কেটে গেল নিরাবতায়।

আলালের বাবা এসে যখন ছেলের মাথায় হাত রাখল তখনই কেবল নিরবতা ভাঙল। এবার দাড়িয়ে আলালা বাবার বুকে আশ্রয় নিল। কতদিন যে আলাল এরকম স্নেহের পরশ থেকে বঞ্চিত ছিল ভাবতেই গুমট ভাবটা কেটে পৌষের সকালে পিতা পুত্রের নয়নে অঝড় ধারায় বারিপাত শুরু হল।

বাড়ি ঘরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আপন ভাইবোন বাদে আলাল আর তেমন কাউকেই চিনতে পারছেনা। ছয়বছর আগে যাদের শিশু কিশোর দেখে গেছে তাদের অনেকেই এখন যোয়ান মর্দ হয়ে গেছে। আলালিতো রিতীমত দুই সন্তানের জননী আর দুলালীও কিছুদিনের মধ্যেই মা হতে যাচ্ছে। আলাল বাড়িতে প্রবেশ করে তার মায়ের হাতে পায়ে তেল মালিস করতে যে রূপসীকে দেখেছে সেতো

আলালী দুলালী নয়। তাহলে সে কে? গেলই বা কোথায়? আলাল তার মায়ের কুশল জিজ্ঞেস করে সেই সেবিকার কথাও জানতে চাইল।

সবাই যেন নিশ্চুপ হয়ে গেল। কারো মুখে কোন ভাষা নাই। কে মুখ খুলবে? আলালের প্রশ্নের জবাব কে দিবে। যা ঘটেছে তা মহা অন্যায় না হলেও আলালের সামনে ঘটনা খুলে বলার হিম্মৎ কারো হচ্ছিলনা।

বিষয়: সাহিত্য

৬১৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384778
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকাল ০৯:৫৪
আবু নাইম লিখেছেন : কষ্টে আছি আইজুদ্দিন.........বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেললেন.......মনে হচ্ছে কষ্টগুলো বুকে বিধছে.......

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File