গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৫

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:৩৯:০০ দুপুর

গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ১৫

আলালের অতীত রেকর্ড ভালো থাকায়, দেশী অফিসারের সুপারিশে দুই মাসের ছুটি, দুই মাসের অগ্রিম বেতন এবং আপডাউন টিকেটের ব্যবস্থা হল। তবে শর্ত হল এর পরে তিন বছরের আগে আর ছুটি চাওয়া যাবেনা, ছুটি থেকে আসার পর প্রতিমাসে ৫০০ রিয়াল করে অগ্রিম ২০০০ রিয়াল কর্তন করা হবে। আগের দেনার আট হাজার রিয়ালের বোঝা মাথায় নিয়ে নতুন ভাবে আরো ৭ হাজার রিয়াল দেনা করে শেষ পর্যন্ত আলাল দুই মাসের জরুরী ছুটিতে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।

বিমানটা যখন জিয়া আন্তর্জাতিক (হজরত শাহজালাল) বিমান বন্দরে অবতরণ করল তখনই আলাল সব গ্লানি ভুলে গেল। দ্রু দ্রু মন নিয়ে আলাল গ্রীন চ্যানেল পার হয়ে বাহিরে বের হচ্ছে আর ভাবছে নিশ্চয়ই তাকে রিসিভ করার জন্য বিমান বন্দরে বাবা, ছোট ভাই হেলাল আর জয়নাল ভাইর সাথে ভাবি ও পরি অবশ্যই এসেছে। আলাল আরো ভাবছে সবাকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করবে কিন্তু পরিকে দেখেও না দেখার ভান করবে। আখেরে উনিশ বিশ কিছু বলে পিছে আবার লজ্জিত না হতে হয়। যাবার সময় যে জোড়ে এক চিৎকার দিয়েছিল এবার না জানি আবার কোন পাগলামি করে বসে।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আলাল বিমান বন্দরের ২ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে এল। এদিক ওদিক তাকাতেই হেলালের সাথে চোখা চোখি হল। এক দৌড়ে হেলাল এসে মিঞা ভাই বলে জড়িয়ে ধরল। ততক্ষণে ধির পদে জয়নালও এগিয়ে এল। কুশল বিনিময় শেষে জয়নাল বললঃ

- কিরে আলাল তুই তো দেখছি রোগা হয়ে গেছিস। বিদেশে যারা যায় তারা টাকা পয়সা যাই আনুকনা কেন মাশা’আল্লাহ একটা শরীর বানিয়ে নিয়ে আসে কিন্তু তোর তো দেখছি এক্ষেত্র অবনতি হয়েছে।

- ভাইরে সবারই কি সেই ভাগ্য হয়? যাদের কোম্পানীর ১০/১২ ঘণ্টা ডিউটির পরে ৫/৬ ঘণ্টা পার্ট টাইম করেও হাজার হাজার রিয়ালের দেনা নিয়ে চলতে হয়, রাত্রে ঘুমতে হয় তাদের আবার স্বাস্থ্য, তারা যে বেচে থাকে এটাইতো সৌভাগ্য।

- হ্যারে আলাল আমি জানি তোর কথা, তোর ভাবি আর আমি তোকে যে কতটা অনুভব করি তা তোকে বলে বোঝাতে পারবনা। বাদ দে ওসব কথা, আগে বাসায় চল। ধিরে ধিরে শুনব, তোর সব কথা।

আলাল একবার পরির কথা জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিন্তু কথাটা কেন যেন গলায় আটকে গেল।

বাসায় পৌছুতে পৌছুতে মাগরিবের সময় হয়ে গেছে। জয়নালের বৌ অবশ্য রান্না বান্না করে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে। বাসার কলিং বেল টিপতেই জয়নালের বৌ দরজা খুলে দিল। সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে আঙ্কেল বলে ছালাম দিয়ে এসে আলালের হাত ধরল। সালামের জবাব দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আলাল আদর করে দিল। আলালের বুঝতে বাকী রিলনা যে এটা জয়নালের মেয়ে। ভাবিকে সালাম দিলে তার জবাব দিয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে বসার জন্য তারা দিল। দুনিয়ার সব মেয়েদেরই মনে হয় একই সভাব। দূর থেকে আপন হোক বা পর তাদের প্রথম কথাই হল খাওয়া নিয়ে। আল্লাহ্‌ মেয়ে জাতিকে এমন স্নেহপরায়ণ না বানালে দুনিয়াটা হয়ত এত সুন্দর হতনা।

সন্ধ্যার জাহাজেই আলাল বাড়িতে যাবে। হাতে সময় বেশী একটা নাই, এখনই সদর ঘাটের দিকে রওয়ানা দিতে হবে। চট জলদি আলাল হাত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট ভিসা বাহির করে ভাবির হাতে দিয়ে সাবধানে রেখে দেয়ার জন্য বলল। একটা রিস্ট ওয়াচ বাহির করে জয়নালের দিকে এগিয়ে দিল। ভাতিঝির গলায় একটা স্বর্ণের চেন পরিয়ে দিল। ভাবির হাতে গুজে দিল একজোড়া কানের দুল। আলালের আদিখ্যেতা দেখে জয়নাল আর চুপ থাকতে পারলনা।

- তোকে এত সব আনতে বলেছে কে? বাবুর জন্য চেন এনেছিস ওটাই যথেষ্ট ছিল। ঘড়ি আর কানের দুল নিয়েযা, তোর বোন ভগ্নীপতিদের কাউকে দিতে পারবি।

- আপনারা হলেন বড় ভাই ভাবি, বাবা মায়ের পরেই আপনাদের স্থান। বোন ভগ্নীপতিদের জন্যও কিছু না কিছু এনেছি। আপনারা আমার জন্য যা করেছেন তা চিরজীবন ভুলতে পারবনা। এই সামান্য উপহার যদি ফিরিয়ে দেন তাহলে এমন কষ্ট পাব যা কোনদিন ভুলতে পারব না।

- হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস, তুই আমাকে আর তোর ভাবিকে কোনদিন ভুলতেও পারবিনা আর ক্ষমাও করতে পারবিনা। চল সময় হয়ে গেছে সদরঘাটে তোকে জাহাজে তুলে দিয়ে আসি।

বিষয়: সাহিত্য

৭২৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384768
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকাল ০৯:৩৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আফসোস হচ্ছে এই সিরিজটি শুরু হতে কেন পড়ি নি। বই আকারে প্রকাশ করুন। তখন একসাথে পড়ে নেব ইনশাল্লাহ।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাত ০৮:০৯
317339
আবু জারীর লিখেছেন : সুন্দর পরামর্শ্বের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
384773
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সকাল ১০:৫৩
আবু নাইম লিখেছেন : আগাকেটে গোড়ায় পানি......
পরিমানটা একটু বাড়িয়ে দিন...
গ্যাপটা একটু কমিয়ে দিলে ভাল হয়.......
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাত ০৮:১০
317340
আবু জারীর লিখেছেন : প্রতিদিনই এক পর্ব করে দেয়ার চেষ্টা করব ইনশা'আল্লাহ!
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File