বাড়াভাতে ছাই (পর্ব-০৪)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২০ জুলাই, ২০১৭, ০২:৪৭:১৫ দুপুর

বাড়াভাতে ছাই (পর্ব-০৪)

আমার বন্ধুরা আমাকে নানা ধরণের প্রশ্ন করে বিভ্রত করার চেস্টা করছিল যা তারা এতদিন করেনি, এটা আরিফের নতুন চাল কিনা জানিনা।

তারা যেসব প্রশ্ন করছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল, শিবির রগ কাটে, অস্ত্র রাখে, বোমাবাজি করে, মানুষ মারে, হল দখল করে ইত্যাদি।

আমার সাংগঠনিক বয়সও বেশী দিন না তাই এগুলোর জুতসই জবাব দিতে পারছিলামনা আর ইসলাম ভাইর ব্যক্তিত্বের কাছে এমন প্রশ্নের জবাব চাওয়ারও সাহস হচ্ছিলনা। শুধু তাই না তারা এমন কথাও বলছিল যে শিবিরের সাথীদের মাসে ৫০০ টাকা এবং সদস্যদের ১০০০ টাকা করে বেতন দেয় এবং অস্ত্রেরও ট্রেনিং দেয়।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে মারামারি হচ্ছে তাতে শিবিরের ছেলেরা যেমনি শহীদ হচ্ছে তেমনি অন্য সংগঠনেরও ২/১ জন ঘায়েল হচ্ছে। পত্র পত্রিকার ভাস্য মতে সব দোষ শিবিরের! এমতাবস্থায় আমার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকার পরেও তাদের এহেন কথাবার্তা আর পত্র পত্রিকা পড়ে নিজের মধ্যেও শিবিরের গোপন ট্রেনিং আর গোপন অস্ত্র দেখার শখ জাগে যায় তাই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকি কবে পাব শিবিরের গোপন ট্রেনিং আর অস্ত্র দেখার চান্স?

আমাদের মেসে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যে তিন ভাই থাকত তাদের বড়জন ছিলেন পুলিশ সার্জন, মেঝজন জবিতে মাস্টার্সে পড়তেন আর ছোটজন ছিল আমার ক্লাসমেট সে পড়ত আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে।

আমাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের একটা ভাব ছিল তবে গভির কোন সম্পর্ক ছিলনা। তাকে আমি নামাযে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করতাম, মাঝে মধ্যে যেত আবার মাঝে মধ্যে যেতনা। হঠাৎ দেখি তার মতিগতিও কিছুটা বদলে গেছে। আমি যখন পড়ি তখন সে উচ্চ শব্দে গান শুনে।

একদিন সকালবেলা তার বড় ভাই ডিউটিতে এবং মেঝভাই ইউনিভার্সিটিতে গেলে সে উচ্চ শব্দে হিন্দী গান শোনা শুরু করে অন্যদিকে আমি পড়ছিলাম। ইকোনমিক্সের মুদ্রস্ফিতির চ্যাপ্টারটা আমার কাছে একটু প্যাচালো মনে হচ্ছিল তাই যখন খুব মনযোগের দরকার ছিল ঠিক তখনই ওর গান শোনার সখ যেগেছে!

আমি গিয়ে ওকে বললাম বন্ধু দয়া করে সাউন্ড কমিয়ে গান শোন, কিন্তু কে শোনে কার কথা? সে আপন মনে শুনেই যাচ্ছে। সে এক দিকে আমার চেয়ে সাইজে বড়, তারপর লীগ আর বড় ভাই পুলিশ সব মিলিয়ে তার দাপটের আর শেষ নাই।

এবার সে সাউন্ড আরো বাড়িয়ে দিল, আমি পুনরায় গিয়ে তাকে সাউন্ড কমাতে বললে সে বরং উল্ট বল্ল যে সে সাউন্ড কমাবেনা। তার কথায় আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলে আমি বল্লাম সাউন্ড না কমালে বিদ্যুতের মেইন স্যুইজ বন্ধ করে দিব।

এমন জবাবের জন্যই যেন সে অপেক্ষা করছিল। আমার কথা শুনে সে ভলিউম আরো বাড়িয়ে দিল আর আমি বাধ্য হয়েই মেইন স্যুইস বন্ধ করে দিলাম। এবার আর যাই কোথায় সে আমার দিকে তেরে আসছিল আর আমি নেহায়েতই গোবেচারার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম।

একদিকে ইসলাম ভাইর মানা আর অন্য দিকে সে আমার চেয়ে সাইজে বড় এবং তার বড় ভাই পুলিশ সব মিলিয়ে আমার নিরব থাকাই উত্তম, তাছাড়া আমার বিশ্বাস ছিল সে হম্বি-তম্বি করলেও গায়ে হাত তুলতে সাহস করবেনা।

আমার নিরবতাকে সে দূর্বলতা মনে করে কাছে এসেই সজোড়ে বুক বরাবর কিক করে বসল, এমতাবস্থায় চুপচাপ থাকার চেয়ে বড় বোকামি অন্তত আমার ডিক্সনারীতে নাই তাই তার বগা ঠ্যাঙটা বাম হাতে ধরে ডান হাত দিয়ে একদম সিনার উপর একটা মৃদুমন্দ বক্সিন দিয়ে দিলাম।

ওবাবা! এ দেখি লাউ শাকের ডগার মত একদম নেতিয়ে পরেছে! তাদের রুমে তার বড় ভাইর এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের প্রভাষক স্পেশাল বিসিএস দেয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি একজন নামাজি মানুষ তবে ভণ্ডপীরের মুরিদ, কুর’আন শরীফ মাথার উপর রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জিকির করে এবং বিনা অজুতে তার পীর বাবার বয়ানের অডিও শোনাকে নাজায়েজ মনে করেন। তার ওয়াজ শোনার সময় একদিন আমি তার কাছে গেলে সে সাথে সাথেই তা বন্ধ করে আমার অজু আছে কিনা জানতে চায়। নাসূচক জবাব দিলে সে আমাকে অজু করে আসতে বলে! আমি তার পীরের ওয়াজ শোনার জন্য অজুও করিনি আর শুনিওনি বরং নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসেছিলাম।

শুরু থেকে সে ঘটনার সাক্ষি কিন্তু এতক্ষন চুপচাপ ছিলেন। যখন ঘটনা ঘটে গেছে তখন বাংলা সিনেমার পুলিশের মতে লাশ উঠাতে এসেছে। দুজন মিলে ওর মাথায় পানি দিয়ে সতেজ করলাম। সেই বড় ভাই আমাকে মেস ছেড়ে চলে যেতে পরামর্শ্ব দিলেন যাতে ওর বড় ভাইরা এসে আমার কোন ক্ষতি করতে না পারে।

আমি কোথায় যাব, একদিকে সামনে পরীক্ষা আর শুরুটা ও করেছে, আমি না। তার বড় ভাইরা এসে আমাকে যে মেরে ফেলবেনা এতটা আত্মবিশ্বাস আমার ছিল তাছাড়া শেখ কামালের বন্ধু এলাকার দাপুটে লোক হাল আমলে আমাদের সুধী মন্টু ভাইকে ঘটনা জানাতে পারলে ওরা তেমন কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। হয়ত সাময়িক ২/৪টা চড় থাপ্পর খাওয়া লাগতে পারে। পরীক্ষা এবং সাংগঠনিক স্বার্থে এটা মেনে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েই আমি জোহরের নামায পড়তে মসজিদে গেলাম।

নামায পড়ে রুমে এসে রুমমেটদের অপেক্ষা না করে খাবার খেতে বসলাম। ওরা তিন ভাই আলাদা খেত আর আমার রুমে সিরাজ গঞ্জের আরো যে দুইজন ছিল তারা মিলে একত্রে খেতাম। তাদের একজন ছাত্রদল আর একজন ছাত্রলীগ সমর্থক ছিল। প্লেটে ভাত তরকারি নিলাম ঠিকই কিন্তু অজানা শঙ্কায় খেতে পারলাম না। ভাতের প্লেট সরিয়ে রেখে বিছানায় সুয়ে সুয়ে নিজের বোকামির জন্য নিজেকে দুষতে লাগলাম আর আসরের পরেই যে কপালে খারাবি আছে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলাম।

(চলবে...........................।)

বিষয়: বিবিধ

৭৩১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383602
২১ জুলাই ২০১৭ রাত ১২:৩৪
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার ,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File