ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩১'তম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২১ জুন, ২০১৫, ০৫:০২:০৭ বিকাল

ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩১'তম পর্ব)

বিচারকগণ এজলাস ছেড়ে চলে গেলে পুলিশ এসে সাদীকে জেলখানার উদ্দেশ্যে নিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে সাদী আইনজীবী শায়লা ও অভিভাবক আমজাদ শেখ সাহেবকে আপীল করার পরামর্শ্ব আর বন্ধুদের ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সিদ্ধন্তের উপর খুশি থাকার পরমর্শ্ব দেয়ে যায়।

- ===========৩১

শায়লা এবং আমজাদ শেখ সাহেব ছুটে গেলেন বিচারকের খাস কামড়ায়। সেখান থেকে তারা রায়ের কপি এবং পিপি কর্তৃক উপস্থাপিত ভিডিও কলপটি সংগ্রহ করলেন, যাতে যথা সময় আপীল করা যায়।

সাদী এখন আর সাধারণ বন্ধী নয় সে এখন সাজা প্রাপ্ত ফাঁসির আসামি, তাই এখন থেকে তার ঠিকানা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীদের জন্য বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট পোষাক! জেলখানায় প্রবেশ করেই জেল কর্তৃপক্ষ তাকে সেই পোষাক পরিয়ে কন্ডেম সেলের দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য! দলমত নির্বিশেষে সব বন্ধিই তার জন্য চোখের পানি ফেলছিল। সেন্টি, জমাদার, মিয়া, ফালতু কেউ বাদ ছিলনা যে সাদীর জন্য চোখের পানি ফেলেনি।

সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীর পোষাকে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার বহনকারী আদর্শ ছাত্র নেতা সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদ ধিরে ধিরে কন্ডেম সেলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। বিকেলের সূর্যটা যেমন ধিরে ধিরে অস্তপানে এগিয়ে চলে তেমনি ২৫ বছরের এক টগবগে যুবকও অস্মিত সূর্যের মত জীবনের শেষ ঠিকানার দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। পড়ত সূর্যের সোনালী রোদে জেমন তেজ থাকেনা, থাকে কোমলতার পরশ তেমনি সাদির ভিতরে উদ্দিপনা নেই আছে শ্রষ্ঠাকে কাছে পাওয়ার আকুলতা। তার পরেও মুনষতো মানুষই, সে তো আর ফেরেস্তা না, তাই সাদীরও আছে মানুষ হিসেবে মানবীক দূর্বলতা।

জেলখানার পরিচিত পরিবেশ সাদীর কেন যেন আজ অপরিচিত মনে হচ্ছে। জীবনের ২৫টি বছর সে অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে কিন্তু কখনো আজকের মত এত অসহায় মনে হয়নি। সাদী আক্ষরিক অর্থেই আজ একা হয়ে গেল একেবারেই একা। সে জানেনা তাকে কতদিন এমন একাকিত্বের মধ্যে কাটাতে হবে।

দশ বাই ছয় ফুট আয়তকার একটা কন্ডেম সেলে সাদীকে প্রবেশ করিয়ে বাহির থেকে লক করে দেয়া হল। তার মনে হচ্ছিল জীবনের স্বাধীনতার সূর্যটা বুঝি অস্তমিত হয়ে গেল। বৃদ্ধা মায়ের কথা মনে পরতেই নিজের অসহায়ত্বকে ছাপিয়ে বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউয়ের মত হৃয় ফেটে বানের পানি চোখ দিয়ে অঝর ধারায় ঝড়তে লাগল। আজ কোন লজ্জা নাই, দেখার কেউ নাই তাই চোখের পানি নিয়ন্ত্রণের কোন তাড়াও নাই। হৃদয় বিগলিত করে সাদী কতক্ষণ যে তার রবের কাছে ধর্না দিয়ে চোখের পানি ফেলেছে সে নিজেও বলতে পারবে না।

এক সপ্তাহ পরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়ে আমজাদ শেখ সাহেব আপীল করল। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ প্রমাণ জোগাড়ে শায়লা কোমড় বেঁধে নেমে পরল। শাকিল যেদিন নিহত হয়েছিল সেদিনকার আন্দোলনকারীদের মধ্যে হুবাহু সাদীর সাথে মিলে যায় এমন এক যুবককে ঠিকই ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে! যদিও সে সাদী নয়। সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করে শায়লা বুঝতে পারল যে ভিডিওতে দেখা যুবককে খুজে বের করতে না পারলে আপিলের রায়ও সাদীর বিপক্ষেই যাবে।

শায়লা এবং আমজাদ শেখ সাহেব পুরা মুন্সিগঞ্জ তন্ন তন্ন করে খুজেও সেই যুবককে উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকেই অবশ্য যুবককে চিনতে পেরেছে তবে সে যে কোথায় এবং কোন গ্রামের ছেলে তা কেউ বলতে পারেনি। অবশ্য তারা অচেনা যুবককে বিগত সরকারী দলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

অনেক খোজাখুজির পরেও অচেনা যুবককে আদালতে হাজির করতে না পারায় আপীলের রায়ও সাদীর বিপক্ষে চলে যায় এবং ফাঁসীর রায়ই বহাল থাকে।

সাদীর দলের আইন মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকেরা রায় কার্যকরের দিন তারিখ জানতে চাইলে তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন আসামী যদি এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে জীবন ভিক্ষা না চায় তাহলে এক সপ্তাহ শেষ হতেই পরবর্তি ত্রিশ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করতে কোন বাঁধা থাকবেনা। হায়রে মন্ত্রী, কিভাবে ভুলে গেলেন যে কোন মুমিম কোন মানুষের কাচ্ছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেনা কারণ প্রাণের মালিক কোন মানুষ না, হোক না সে রাষ্ট্রপতি।

সাংবাদিকরা সাদীকে মন্ত্রীর দলীয় কর্মী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে এবং বিগত সরকারের আমলে আন্দলন সংগ্রামে তার ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিলে, মন্ত্রী মহদয় আইন নিজের গতিতে চলবে বলে মন্তব্য করেন।

সাদীর মামলার চুড়ান্ত রায় হয়ে গেলে, সাদী, শায়লা ও আমজাদ শেখ সাহেবের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের সামনে আল্লাহর করুণা ছাড়া আর কোন সাহায্য নজরে আসছিলনা। শায়লা এবং আমজাদ শেখ সাহেব সম্ভাব্য সব জায়গায়ই ধর্না দিয়েছে কিন্তু কোন ফল হয়নি।

সর্ব শেষ যে অপশানটা বাকী আছে তা হল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতিও নির্বাচিত হয়েছে। যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি সাবেক বিচারপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। বিষয়টা তার সামনে উপস্থাপন করলে একটা হাল হলেও হতে পারে কিন্তু সাদী রাষ্ট্রপতির কাছে যে ক্ষমা চাইবেন না তা শায়লা এবং আমজাদ সাহেব প্রায় শত ভাগ নিশ্চিত।

এক সপ্তাহ! মাত্র সাতটা দিন! শায়লার জীবনের এই সাতটা দিন যে কত দ্রুত পাড় হয়ে যাচ্ছিল তা সে কল্পনাও করতে পারছিলনা। আল্লাহর একান্ত করুণা ছাড়া তার নজরে আর কোন সম্ভাবনাই ধরা দিচ্ছিলনা। কিন্তু আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্যও তো একটা বাহানা চাই।

সেই বাহানা খোজার জন্য শেষ পর্যন্ত শায়লা শেষরাতে আল্লাহর কাছে ধর্ণা দিতে লাগল কিন্তু সেখান থেকেও আশানুরূপ কোন সারা মিল্ল না। এভাবে এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, চার দিন এমনকি পাচটা দিন কেটে গেল। পঞ্চম দিন আল্লাহর কাছে ধর্ণা দিয়ে সেজদারত অবস্থায় শায়লা তন্দ্রাচ্ছন হয়ে পড়লে সে সাদীকে স্বপ্নে দেখল। সাদী যেন তাকে বলছিল, ‘তুমি কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে আমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছ? আমিতো তোমার জন্য পর পুরুষ। পর পুরুষের জন্য কৃত দোয়া আল্লাহ্‌ কবুল করবেন বলে কোথাও ওয়াদা করেন নি। বরং স্বামী-স্ত্রী সন্তানের জন্য কি বলে দুয়া করতে হবে তা আল্লাহ্‌ পবিত্র কুর’আনের সূরা ফোরকানে বলে দিয়েছেন এভাবেঃ “হে আমাদের রব, আমাদের স্বামী/স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম৷”।

ফজেরের আজানের শব্দে শায়লার ঘুম ভেঙ্গে গেলে নিজে নিজেই স্বপ্নের তাবির করতে লাগল কিন্তু কিছুর সাথেই কিছু মিলাতে পারছিলনা। সে সিদ্ধান্ত নিল আজই সে সাদীর সাথে দেখা করে স্বপ্নের তাবির জানতে চাইবে।

===========৩২

বিষয়: সাহিত্য

১৪৪৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327013
২১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:২৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ভাইয়া! তবে কি কো সাক্ষী মিলবেনা? বড্ড জুলুম হবে সাদীর সাথে! চালিয়ে যান সাথেই আছি! পরের পর্ব আরো তাড়াতাড়ি চাই! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.....।
২১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
269241
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম।
আফরা মণি না কি অচেনা যুবককে কোথাও দেখেছে।
দেখা যাক শায়লা সেই যুবককে খুজে বের করতে পারে কিনা?
ধন্যবাদ আপু।
327023
২১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫২
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : চলুক Love Struck Love Struck Love Struck
২১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৫
269251
আবু জারীর লিখেছেন : চলবে ইনশা'আল্লাহ।
327042
২২ জুন ২০১৫ রাত ১২:১৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, চরম উত্তেজনা মুহুর্ত বিরাজ করছে। তাড়াতাড়ি পরের পর্ব চাই।
২২ জুন ২০১৫ রাত ০১:০৭
269271
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম।
চার ছক্কা হৈ হৈ ইন্ডিয়ানরা সব গেল কৈ?
327047
২২ জুন ২০১৫ রাত ০৩:২৪
আফরা লিখেছেন : শায়লাকে আমি কোথায় পাই ভাইয়া ? সাদীর চেহারার সাথে মিলে সেই যবুক তো জেল খানাতেই আছে ।
২২ জুন ২০১৫ রাত ০৪:৫৪
269272
আবু জারীর লিখেছেন : সেল ফোনে ডায়াল করুণ। জেল খানায় থাকলে লাভ কি? শায়লা যেমনি সেই যুবকের অবস্থান সম্পর্কে জানেনা তেমনি সাদীও জানেনা যে সেই যুবকের জন্যই তার বিরুদ্ধে এই রায়।
দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়?
ধন্যবাদ আপু।
327121
২২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২১
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুবই মর্মস্পর্ষী!
২৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৫:১১
269406
আবু জারীর লিখেছেন : হুম! ধন্যবাদ বদ্দা।
336776
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:৪৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : বুঝতে পারছিনা কি হবে।
২০ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
278838
আবু জারীর লিখেছেন : দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত?
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File