ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (দ্বাদশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৮ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:০৫:১২ দুপুর
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (দ্বাদশ পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ এত কিছুর পরেও শাকিলের বিষয়ে সাদীর যে আরো অনেক কিছুই জানার বাকী রয়ে গেছে তা কে জানত?
দাফন কাফন শেষে সাদী যখন শাকিলদের ঘরে প্রবেশ করল, তখন প্রায় মধ্য রাত। দুদিনের টানা ধক্কল গেছে সাদীর উপর দিয়ে। ক্লান্তিতে চোখ মুদে আসছিল তাই সকলের সাদাসাদি উপেক্ষা করে সুধু এক গ্লাস পানি পান করেই সে শুয়ে পরল।
সকালে ফজরের নামায শেষে মসজিদ থেকেই, শাকিলের বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে চেয়েছিল সাদী, কিন্তু আমজাদ শেখ আর ওয়াকিল মিলে তার দুই হাত এমন ভাবে চেপে ধরল যা ছাড়িয়ে চলে আসা সম্ভব হলনা। বাপ বেটা মিলে টানতে টানতে সাদীকে ফের ঘরে নিয়ে গেল।
নাস্তা শেষে টেবিলে বসে আমজাদ শেখ, নিজের জীবন যৌবন, শাকিল, ওয়াকিল ও তাদের মায়ের স্মৃতিচারণ করছিল। ওয়াকিল পারিবারিক ডাইরী এনে সাদীর হাতে দিল। সাদী কিন্তু এখনও জানেনা যে জীবিত শাকিল দেখতে কেমন ছিল। এ্যালবামের পাতা উল্টাতেই সাদীর চোখ আটকে গেলো। চাপা আর্তনাদে সাদীর কলিজাটা যেন ফেটে যাচ্ছিল। বুকের সাথে এ্যালবামটা চেপে ধরে সাদী বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আমজাদ শেখ আর ওয়াকিল হতচকিত হয় জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে’?
- দেখ দেখ ওয়াকিল, শাকিল ভাই কাকে বিএনসিসির ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছে?
- কই দেখি দেখি, ও মাই গড, এত মনে হচ্ছে আপনার ছবি।
- হ্যা, তুমি ঠিকই ধরেছ। আজ থেকে সাত বছর পূর্বের ছবি। তখন শাকিল ভাই ছিলেন বিএনসিসির অধিনায়ক। আমাদের নাবাগতদের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে উনিই আমাকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়াও ওনার সাথে আমার আর একটা আত্মিক সম্পর্কও ছিল যা এখন কারো কাছে বলাও দায় হয়ে গেছে।
- ভাই আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, আমি এবং বাবা ঠিকই বুঝতে পেরেছি। প্রথম দেখায়ই আপনাকে আমার চেনা চেনা মনে হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে আপনি নতুন ছাত্র ছত্রীদের যে সম্ভর্ধ্বনা দিয়েছিলেন সে অনুষ্ঠানে আমিও ছিলাম।
- আচ্ছা ওয়াকিল, তুমিকি বলতে পার, এমনটা কেন হল?
ওয়াকিল কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় বাজার থেকে তার বন্ধু রাসেল ২/৩টা পত্রিকা নিয়ে এসেছে যে গুলোতে শাকিল হাত্যাকান্ডের খবর লিড নিউজ করা হয়েছে। জনতার কণ্ঠ, মানুষ জমিন আর নয়া দিন পত্রিকা। তিন জন তিনটা পত্রিকা হতে নিল। তিনটা পত্রিকা তিন রকম নিউজ করেছে! ঘটনা একটা কিন্তু তিন পত্রিকায় তিন রকম খবর! শুধু তিন রকম খবরই না, বলতে গেলে একটার সাথে আর একটার, শতভাগ বৈপরিত্ব!
- দেখ বাবারা, আমি এদের কথা বিশ্বাস করিনা। তবে নয়া দিন যা লিখেছে তা হয়ত সত্যের কাছাকাছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা, গোয়েন্দা পুলিশে একটানা ত্রিশ বছর কাজ করেছি আর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অভিজ্ঞতার আলোকে যা বুঝেছি তাই সত্য বা সত্যের কাছাকাছি। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে সেজন্য বরং আমি গর্বিত। পাপের এই দুনিয়া থেকে যে সে আমার আগেই বিদায় নিয়েছে সেজন্য আমি আনন্দিত!
“ঘটনার পিছনের ঘটনা” শিরনামে নয়া দিন পত্রিকা যা লিখেছে তা হলঃ
বর বেশে বিবাহ করতে যাওয়ার পথে, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ওসি এসআই শাকিল, যদিও ঢাকা-মাওয়া মাহাসড়কে অবরোধের মধ্যে জনতার দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে জীবন দিয়েছেন কিন্তু ঘটনার অন্তরালে এক গভির রহস্য লুকিয়ে আছে বলে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানতে পেরেছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্র সমিতির সভাপতি ও মধাবি ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম আমিন গত বুধবার নানা এমাজ উদ্দিন মোল্লার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়, কিন্তু তাকে থানায় হাজির না করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন সকালে অরিয়ল বিলে তার লাশ পাওয়া যায়। আমিনের নানা এমাজ উদ্দিন মোল্লা সরকার দলের বিদায়ি কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি, নিজের নাতির এমন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একেবারেই মেনে নিতে পারছেননা। তাছাড়া ছাত্র নেতা ও মেধাবী ছাত্র হিসাবে আমিন মুন্সীগঞ্জে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার জনপ্রিয়তা আর বংশীয় প্রভাব ও মুক্তিযোদ্ধা নানার প্রভাবে সে ছিল মূলত অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক উদিয়মান নেতা, যা প্রিতপক্ষ কক্ষনই মেনে নিতে পারেনি। তাকে কেন্দ্র করেই মূলত ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পরে তার নানা সরকারদলের জেলা সভাপতির পদ থেকে স্তেফা দিয়েছিল। তার নানার প্রতিপক্ষ গ্রুপটা বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ডামাঢোলের মধ্যে ঘোলাপানিতে আমীনকে এঙ্কাউণ্টারের মাধ্যমে রাজনীতির ময়দান থেকে চিরতরে বিদায় করে দিয়েছে। যার পিছনে জনতার কণ্ঠের সম্পাদক আতিক খান মাসুমেরও হাত আছে বলে অনেকে মনে করেন। ফলে এমাজ উদ্দিন মোল্লার সমর্থক ও ছাত্র সমিতির লোকেরা জনতার কন্ঠের সম্পাদক আতিক খান মাসুমের বাড়ি ঘেরাও করে এবং রাস্তা অবরোধ করে। একই পথ দিয়ে শ্রীনগর থানার ওসি, এস আই শাকিল, বরযাত্রী হয়ে বিবাহের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। অবরোধকারীদের বাঁধায় বরের গাড়ি আটকে গেলে শাকিল, ছাত্র সমিতির সেকরেটারীকে ফোন করলে সে এসে নিজ দায়িত্বে শাকিলের গাড়িকে ছেড়ে দেয়। শাকিলের গাড়ি যখন হাসারা নামক স্থানে পৌছে তখন সরকারদলীয় ক্যাডার ও এমাজ উদ্দিন মোল্লার প্রতিপক্ষ শরিফ উদ্দিনের ডান হাত বলে খ্যাত কানা বাবুল দেখে ফেলে। আন্দলন যেহেতু স্থানীয়, তাই দলমত নির্বিশেষে সকলেই একাকার। কানা বাবুলের সাথে এস আই শাকিলের আগে থেকেই একটা বিরোধ ছিল। শ্রীনগর থানার ওসি হিসেবে সে কানা বাবুলের অন্যায় আবদারকে কখনই প্রশ্রয় দেয়নি যে কারণে কানা বাবুলের সকল অবৈধ ব্যবসাই মন্দা যাচ্ছিল। এত দিন কানা বাবুল যে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, না চাইতেই সে সুযোগ যখন তার হাতের নাগালে তখন এমন সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র সে নয়। মুহুর্তেই কানা বাবুল আর তার সংগিরা হামলে পরে শাকিলের গাড়ির উপর। ভাংচুরের সাথে সাথে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘আমিনের হত্যাকারী ওসি শাকিলকে পাওয়া গেছে, মার শ্যালারে একেবারে মেরে ফেল”। আবেগি জনতা অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই হামলে পরে শাকিলের গাড়ির উপর। সুযোগ বুঝে কানা বাবুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দিয়ে শটকে পরে। খবর পেয়ে ছাত্র সমিতির সেক্রেটারি আলাউদ্দিন এসে ছাত্র জনতার সহায়তায় শাকিলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। ৪ ঘণ্টার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ে শাকিল চলে গেছে না ফেরার দেশে! ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।
(চলবে)....
বিষয়: সাহিত্য
১২৫৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
খুনি যতো সূক্ষ্মভাবেই হত্যাকান্ড সম্পন্ন করুক না কেন, কিছু না কিছু আলামত রেখেই যায়, যা প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।
চলবে যখন আমিও চলব।
ধন্যবাদ।
গল্পটি এখন মনে হচ্ছে নিছক শুধু শুভ পরিনয়ের গল্প নয়, এর অভ্যন্তরে রয়েছে এক বিষাদময় সত্য ইতিহাস! আশাকরি এই অধ্যায়টি জানার সাথে সাথে আমরাও একটি সঠিক জীবনকাহিনীর সাথে পরিচিত হব!
জাযাকাল্লাহু খীর!
আমাদের দেশেসের অনেক সাধারণ মানুষের জীবন কাহিনীর একটা অঙ্কন করার চেষ্টা করছি। বাস্তবতার সাথে অনেকটা মিলিয়ে লেখার চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ/
আসসালামুআলাইকুম শ্রদ্ধেয় আবু জারীর ভাই
এই পর্বের গল্পটি পড়ে এখন মনে হচ্ছে নিছক শুধু শুভ পরিনয়ের গল্প নয়, এর অভ্যন্তরে রয়েছে এক বিষাদময় সত্য ইতিহাস! আশাকরি এই অধ্যায়টি জানার সাথে সাথে আমরাও একটি সঠিক জীবনকাহিনীর সাথে পরিচিত হব!
বাস্তবতা কতটা কঠিন তাই বুঝতেছি পদে-পদে.....।
এটা মোটেই শুভপরিণয়ের গল্পনয়। একটা অনুষঙ্গ মাত্র।
ধন্যবাদ আপু।
এভাবে আর কত প্রাণ ঝরে যাবে
আর কত বাবা মার বুক খালি হবে ?
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন