রোজার নিয়ত করার বিধান

লিখেছেন লিখেছেন সহীহ আমল ২২ মে, ২০১৮, ০৫:০৯:০০ বিকাল



রোজার নিয়ত করা জরুরি এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রতিটি ইবাদতে যেমন নিয়ত করা শর্ত তেমনি রোজাতেও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। নিয়ত ছাড়া রোজা সহীহ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন -

"إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى"

নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল আর প্রতিটি ব্যক্তিই যা নিয়ত করে তাই সে পায়।

নিয়তের পদ্ধতি : রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় অন্তরে উপস্থাপন করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথাব ক্বাজা রোজা রাখছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ রাখছি।

নিয়ত করার সময়: যে প্রকারের রোজাই হোক না কেন নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। রাতের প্রথম অংশে হতে পারে, মাঝের অংশে হতে পারে অথবা শেষাংশেও হতে পারে। ‍‍‍‍‍‍‍‍‍

আয়েশা রা. হতে মারফু হাদিস বর্ণিত -

যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না। ( দারা কুতনি : হাদিসটির সকল বর্ণনা কারিই নির্ভরযোগ্য)

ইবনে ওমর রা. হাফসা রা. হতে এবং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

"من لم يبت الصيام قبل الفجر فلا صيام له"

যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজা রাখা স্থির করে না তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।( আহমাদ, তিরমিজি . আবু দাউদ )

এ ছাড়া রোজা সাধারণত: দিন ব্যাপিই হয়ে থাকে এবং পূর্ণ দিন রোজা রাখাই হলো ফরজ। এখন যদি দিনের কিছু অংশ রোজার নিয়ত করা ছাড়া অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন এ কথা বলা সহীহ হবে না যে, লোকটি পূর্ণ দিন রোজা রেখেছে। কারণ, নিয়ত কখনো যা অতিবাহিত হয়েছে তাকে ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত করতে পারে না। যখন থেকে নিয়ত করে তখন থেকেই তার কার্যকারিতা শুরু বলে বিবেচিত হয়।

নিয়তের স্থান হল মানুষের অন্তর। সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। সুতরাং নিয়ত অন্তরেই করবে, মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। রোজার নিয়তে সেহর- ইফতার খাওয়াই যথেষ্ট। এতে রোজা আদায় হয়ে যাবে।

‍‍‌রোজাদার যখন রাতের খাবার খায় রোজা রাখার ইচ্ছায়ই খায়। এ কারেণইতো রমজানের রাতের খাওয়া এবং ঈদের রাতের খাওয়ার মধ্যে প্রার্থক্য করে। যে ব্যক্তি জানতে পারে যে, আগামি কাল রমজান এবং সে রোজা রাখার ইচ্ছা করে, এতেই তার নিয়ত হয়ে যায়। আলাদাভাবে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের আমল এ রকমই চলে আসছে।,

নফল রোজার নিয়ত: নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায়ও করা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থি কোন কাজ যথা খাওয়া পান করা ইত্যাদি তার থেকে সংঘটিত হতে পারবে না। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত,

"دخل عليَّ النبي صلى الله عليه ذات يوم فقال "هل عندكم من شيء ؟" فقلنا: لا، قال "فإني إذاً صائم" رواه المسلم .

একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করে বললেন, তোমার নিকট খাওয়ার কোন কিছু আছে কি? আমরা বললাম: না, তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম।

( মুসলিম)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাবার চাওয়া দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি ইতি পূর্ব হতে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। আর তাঁর "فإني إذا صائم" বলা প্রমাণ করে, তিনি রোজা আরম্ভ করেছেন দিনের বেলা হতে। এতে বুঝা যায় নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলা করলেও চলবে। সুতরাং এ হাদিসটি পূর্বে উল্লেখিত হাদিস-

"من لم يبت الصيام قبل طلوع الفجر فلا صيام له"

জন্য খাসকারী। অর্থাৎ সে হাদিসটি ফরজ রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নফল রোজার ক্ষেত্রে নয়।

নফল রোজা দিনের বেলা নিয়ত করার মাধ্যমে সহিহ হবে। এ বিষয়টি যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী "إني إذاً صائم"দ্বারা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া আরও প্রমাণ করে যে, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি । যেমন ফরজ নামাজ দাড়ানো এবং জমিনে ভালোভাবে স্থির হওয়া ব্যতিত সহিহ হয় না। আর নফল নামাজে এগুলো আবশ্যিক নয় । নফল সালাত বসে ও বাহনের উপর আরোহণ করে উভয় অবস্থায় সহিহ। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ যে তিনি নফলের ব্যাপারটি প্রশস্ত করেছেন। এ কারণে দেখা যায় নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজের তুলনায় আমাদের জন্য অনেকটা শৈথিল্য দেখানো হয়েছে।

নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করার বিষয়টি একাধিক সাহাবি হতে বর্ণিত হয়েছে, যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মুয়াজ বিন জাবাল, হুজাইফা, আবু তালহা, আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. প্রমুখ।

বিষয়: বিবিধ

৬২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File