রোযা ও রোযাদারের ফযীলত

লিখেছেন লিখেছেন সহীহ আমল ১৬ মে, ২০১৮, ০৩:২৭:৩৫ দুপুর



সিয়াম বা

রামাদ্বান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হল সিয়াম। আর সিয়াম হল ফজরের উদয়লগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যাতসহ পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা।

সিয়াম পালন তথা রোযা ফরয এবং এটি ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তা’আলা বলেন

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّاما مَّعۡدُودَٰتۚ﴾ [البقرة:]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার - নির্দিষ্ট কয়েকদিন মাত্র ......।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩-

﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ﴾[البقرة:]

‘‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোযা পালন করে।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫)

রোযার গুরুত্বসমুহ থেকে রয়েছেঃ

১. রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেনঃ

একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

আল্লাহ বলেন বনী আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোযার কথা আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ (বুখারী, মুসলিম,)

২. রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِ

‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাদ্বান মাসে রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

৩. রোযাদ্বারদের জন্য জান্নাতে স্পেশাল একটি দরজা রয়েছেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّ فِى الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে রাইয়ান’বলা হয় - কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোযাদ্বারগণ প্রবেশ করবেন। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না..... রোযাদ্বারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ (বুখারী, মুসলিম,)

৪. রোযাদ্বারের জন্য রোযা শাফায়াত করবেঃ

, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ

‘‘রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে পানাহার ও কামনা চারিতার্থ করা থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তার ব্যাপারে আমাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিন.....।’’ (মুসনাদ, আহমদ -মুস্তাদরাক, হাকেম)

৫. রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তমঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ

‘‘যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোযাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ (বুখারী, মুসলিম,)

৬. রোযা ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায়ঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّه

রোযাদারের জন্য দু’টো খুশীর সময় রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।’’ (বুখারী, মুসলিম,)

৭. রোযা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢালঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنْ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বৎসরের দূরত্বে নিয়ে যান।’’ (বুখারী,)

ইমাম আহমাদ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন - রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنْ عَذَابِ اللَّهِ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنْ الْقِتَالِ

রোযা ঢাল স্বরূপ-যদ্বারা বান্দা নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারে, যেভাবে তোমাদের কেউ একজন যুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করে।’’ (মুসনাদ আহমদ)

রোযার আরো ফযীলতের মধ্যে রয়েছে - এতে ইচ্ছা ও সংকল্পে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, চারিত্রিক মাহত্ম্য অর্জিত হয়, শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি তা মুসলিম উম্মাহ্ একতাবদ্ধ হওয়ার এক বাস্তব নিদর্শন।

বিষয়: বিবিধ

৫৪৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385374
১৮ মে ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File