জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা নাই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।

লিখেছেন লিখেছেন দাবী আদায়ের বালক ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:১৩:৪৬ দুপুর

আমার এক বন্ধু ২০১৫-১৬ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। গতকাল ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসছে। আমাকে ফোন দিল- দোস্ত আমি ত বাড়িতে এসেছি, কাল আমার সাথে দেখা কর। আমিও মনের আনন্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম। অনেক দিন ধরে দেখা হয় না প্রিয় বন্ধুটির সাথে। তাই রাত পর্যন্ত বসে আড্ডা মারলাম। অনেক কথা হল। ২০১৫-১৬ সেশনে আমার আরও দুই জন বন্ধু ঢাবিতে পড়ে। উল্লেখ্য যে তারা কেউ'ই SSC বা HSC জিপিএ ৫ পাই নি। যারা পেয়েছে তারা কেউ'ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই নি। আর আমার যে তিন বন্ধু চান্স পেয়েছে তাদের জিপিএ(আলাদাভাবে) কারোরই ৪.৩০ এর উপরে না। তার মানে SSC বা HSC তে মিলে ৯, ৯.৫০ বা ১০ পয়েন্ট নিয়েও অনেকে ঢাবি বা তার সমমান কোনো ভার্সিটিতে চান্স পাচ্ছে না। কিন্তু ৭.৫০, ৮.০০ বা ৮.৫০ নিয়েও অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে। তার এক মাত্র কারণ ভর্তি পরিক্ষা। ঢাবির একটা বড় ভুল হচ্ছে, দ্বিতীয় বার পরিক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়া।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা বাতিল ঘোষনা করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সব শিক্ষার্থীদের সপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। এবং শেষ সপ্ন থাকে পাবলিকে চান্স না পেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল কোনো বিষয়ে পড়বে। কিন্তু সেই সপ্ন যে সপ্নই থেকে যাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়

বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকড় ধরে বেঁচে আছে অতি

গরীব, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী

ছাত্রছাত্রীরা। আর এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভরসা, আস্থা রেখে ছাত্রছাত্রীরা

পথ চলছে জীবনে ভাল কিছু পাওয়ার আশায়। আগে ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

সেশনজট নামক ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। সেটা

ছাত্রছাত্রীদের এমন ভাবে আকড়ে ধরতো যে,

ছাত্রছাত্রীদের দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এমনকি বছর পর

বছর অতিবাহিত হতো তবুও মিলতো না সপ্নের ঠিকানা। শেষ হতো না অনার্স বা

ডিগ্রি কোর্স। মূল কারন এই সেই সেশনজট। বুড়ো হয়ে যাওয়া সত্বেও আদু ভাই হয়ে

ভার্সিটি বারান্দায় পা রাখতে হতো কবে যে পাশ করে বের হবে এই আশায়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশন জট কমানোর নামে মেধার অবমূল্যায়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে

ধ্বংস করার গোপন ষড়যন্ত্র করছে। যা তাদের পূর্ববর্তী কয়েক দিনের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

সরকারি কলেজসমূহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুক্ষিগত না রেখে এসকল কলেজে পড়ুয়া লক্ষ লক্ষ ছাত্র- ছাত্রীর দুর্দশা লাঘব ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন সকল সরকারি কলেজসমূহ দ্রুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে নিয়ে এর যথাযথ মানোন্নয়নের জন্য।

এই সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কিছু উদ্ভট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা মূলত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এবং

ভর্তিচ্ছু সকল ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতকেই প্রকারান্তে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।

তারা সেশন জট কমানোর নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর

জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কখনোই

মেনে নেবে না।

জাবি কর্তৃপক্ষ ক্রাশ কোর্সের নামে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থী ভাই ও বোনদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার গভীর ষড়যন্ত্র

শুরু করেছে এবং দেশের সামগ্রীক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় ঠেলে দিতেই তারা এখন শুধুমাত্র জিপিএ’র মাধ্যমে

অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে চায়।

সেশন জট কমানো বা ক্রাশ কোর্সের ধোয়া তুলে শুধুমাত্র জিপিএ’র মাধ্যমে ভর্তি করানোর মতো অন্যায্য দাবি কোন মুক্ত চিন্তার মানুষের

পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারন আমাদের দেশে প্রচলিত বহুমূখী (সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি, ইংরেজি মাধ্যম ও

অন্যান্য) শিক্ষা ব্যবস্থা একই সাথে থাকার কারনে এই পদ্ধতি ১০০ ভাগ ত্রুটি পূর্ণ।

এছাড়া শহর ও গ্রমের বা মফস্বলের শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে রয়েছে চরম বৈষম্য।

কারণ গ্রামে বা মফস্বলে ভালো মানের কলেজ বা শিক্ষক দুটোরই অভাব রয়েছে এবং এর সাথে যোগ হয় চরম অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাও। এর ফলে শহরের তুলনায় জিপিএ ৫.০০

এর সংখ্যা গ্রামের কলেগুলোতে অতি নগন্য হারে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই জিপিএ ৫.০০ এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় না যে গ্রামের

ছাত্রছাত্রীরা কম মেধা সম্পন্ন। তার বড় উদাহরণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেখানে শহরের ছাত্রছাত্রীদের সাথে তারাও পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এত প্রতিকূলতা থাকা

স্বত্তেও তারা তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ লাভ করতে পারছে শুধুমাত্র

ভর্তি পরীক্ষা থাকার কারণে নাহলে তারা অংকুরেই ঝরে যেত। সবথেকে বড় কথা শুধুমাত্র জিপিএ’র মাধম্যে ভর্তি সমাজের কোন স্তরের মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ কারণেই জিপিএ’র ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরীক্ষিত পুরনো পথেই ফিরে এসেছে।

তাই বলব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন হঠকারী

সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে পূর্বের মতো জিপিএ এবং ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ে অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। আসলে সেশন জট দূর করার নামে দ্রুত চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণ ও শুধুমাত্র জিপিএ’র মাধ্যমে অনার্সে ভর্তি করা এগুলো শুধুই আইওয়াশ মাত্র। তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যই এসকল উদ্ভট কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের ব্যর্থতা ক্রমান্বয়ে ভারি

হচ্ছে। হুট করে একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন ধ্বংস করছে। জাতীয়

বিশ্ববদ্যালয়ের চলমান ব্যর্থতা- তিন মাসের রেজাল্ট দেওয়ার কথা বলে ৫ মাস পর

রেজাল্ট দেয়। ব্যাপক ত্রুটিপূর্ণ রেজাল্ট দেয়, যে ভাল রেজাল্ট করার কথা উল্টো তাকে ফেল বা এবসেন্ট করে দেয়। একজন স্টুডেন্ট কে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। বলা নেই কওয়া নেই পরীক্ষার টাইম হুট করে দিয়ে দেয়। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার ফলে অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট অনার্স চান্স পাচ্ছে না।

সরকার বার বার নির্দেশ দিলেও জাতীয় বিশ্ববদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ গুলাকে পাবলিক বিশ্ববদ্যালয়ের আন্ডারে না যাওয়ার খেসারত কড়ায় গন্ডায় দিতে হচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে আকূল আবেদন, অসংখ্য ছাত্র- ছাত্রীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তটি বাতিল করুন।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File