@@@***### মানিকজোড় ### ***@@@ ***** (জীবনের গল্প) *****

লিখেছেন লিখেছেন জানে আলম রেজা ০৪ জুন, ২০১৬, ০৩:৪৭:৫৫ রাত



বন্ধু সাইফুল! ছোট বেলা থেকেই খুব শান্তশিষ্ট।নম্র,ভদ্র সাদাসিধে এক ছাত্র।খুবই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট খ্যাতি অর্জন করে অল্প দিনেই। মেরিট পাওয়ার ও হাতের লিখনি এতই মাধুর্যপূর্ণ যে এক কথায় মাদ্রাসার মধ্যে অন্যরকম ভাল স্টুডেন্ট। হ্যান্ড রাইটিং সম্পর্কে যদি বলতে হয় শুধু মাদ্রাসা না দেশের মধ্যেই দু'একজন খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। পাশের গ্রামেই বাড়ি, মাদ্রাসায় ভর্তির পর থেকেই আমার সাথে সখ্যতা।দুজনে সেই থেকেই একে অপরের আপন ভাবতে শুরু করি। তাই আপন ভুবনে দুজনের একসাথে পথচলা।বন্ধু হই দুজন। বন্ধুত্ব বন্ধনে যখন গভীর ভাবে আবদ্ধ হই, তখন দুজনে আরো কাছাকাছি থাকার জন্য আমার বাড়িতে ছোট ভাই বোনদের পাড়ানোর জন্য হাউজ টিউটর হিসেবে নিয়োগ দিই। তারপর দ্বীগুন শক্তি পায় বন্ধুত্বের বন্ধন। দুজনে একসাথে থেকে পড়ালিখা করি।

সেই থেকেই যেন দুই বন্ধুর চলা ফেরাতে ও আসে মানিকজোড় ভাব। একসাথে, মাদ্রাসায়,খেলার মাঠে,পড়ার টেবিলে,নাওয়া, খাওয়া , বেড়াতে যাওয়া এমনকি পরনের পোষাকেও ছিল দারুন মিল। আমরা প্রায় একি রকম পোষাক কিনে পড়তাম। সব কিছু দেখে যে কারোই কষ্ট হতনা মানিকজোড় ভাবতে। গ্রাম অঞ্চল তাই অনেকের ভাবনা মুখে প্রকাশ না করলেও, বুঝতে দেরী হয়না আমাদের দিকে চেয়ে থেকে যেন তারা বলতে চাইছে,ঐ দেখ!! যায়.... "মানিক জোড়"।এভাবেই কাটে আমাদের দুই বন্ধুর গ্রামের ছাত্র জীবনের মধুময় স্বপ্নীল দিন গুলো। দিন, মাস, বছর,ঘুরে বয়ে চলে স্মৃতিময় অনাবিল সুখের দিনগুলো। আমিও স্টুডেন্ট হিসেবে মন্দ ছিলামনা। নাম্বার ওয়ান সিরিয়ালটা বন্ধুর জন্য আগে থেকেই বরাদ্দ থাকলেও নাম্বার টু থ্রি আমার বরাদ্দ ছিল। সেটা অবশ্য ক্লাস এইটের পর থেকেই। কারণ সেখানেও ছিল বন্ধুর চমৎকার হিস্টোরী। ক্লাস সিক্সে বার্ষিক পরীক্ষায় খুবই ভাল রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে হয়েছিল মাদ্রাসার সেরা মার্ক অর্জনকারী। সেই সুবাদে সম্মানিত শিক্ষকদের অনুরোধে মাননীয় প্রিন্সিপ্যাল মহোদয় তাকে মানোন্নয়ন দিয়ে ক্লাস সেভেনের বদলে ক্লাস এইটে তুলে দেন। মুলতঃসেখান থেকেই আমরা ক্লাস মিট। বন্ধুত্বতা আগে থেকে থাকলেও নতুন মাত্রা পায় ক্লাস মিট হয়ে।

সে যাই হোক, দুজনে এক সাথেই দাখিল পরীক্ষায় আশানুরূপ সফলতা অর্জন করলাম। স্মৃতিময় জিনিস কোড করে রাখা ভাল। তাই জানিয়ে রাখছি, আমাদের বেইজ ছিল ১৯৯৯ ইং পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ২৩ ।আমরা ১০ জন ফাস্ট ডিভিশন ১১জন সেকেন্ড ডিভিশন। ২জনের ফলাফল খারাপ ছিল। পরীক্ষায় সফলতার সহিত পাশ করে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে চারজন উচ্চশিক্ষার আশায় বুক বেধে যাই টাউনে।ওখানে যার যার ইচ্ছেমত ভর্তি হলেও দুই বন্ধু লেগেছিলাম আঠার মত। নতুন গিয়ে দিকবেদিক ঘুরতে ঘুরতে ঠাঁই হয় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একটি মেসে।আনন্দে কাটাই দিন আবারো দুই বন্ধু। কলেজ জীবনের নতুন অভিঙ্গতা পাই। নতুন জায়গা, নতুন টাউন, নতুন পরিবেশ, যানজটপূর্ণ ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলোর জীবন যুদ্ধ। এ যেন ভিন্ন এক অনূভূতি। কোলাহলময় প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়া আমাদের জন্য এ যেন এক নতুন পাঠ। অবসরে দুই বন্ধু ঘুরি মনের আনন্দে।ফয়েজ লেক, পতেংগা সী বীচ, জিয়া স্মৃতি যাদুঘর, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চিটাগাং কলেজ সংলগ্ন প্যারেড ময়দান, লাল দীঘির মাঠ ও রেলওয়ে স্টেশন গুলো যেন আমাদের বিনোদনের খোরাক। তেমনি আন্দরকিল্লা, চন্দনপুরা, চকবাজার, নিউ মার্কেট, বহদ্দার হাট, আগ্রাবাদ সহ ব্যস্ততম এলাকা গুলোতে ও হত আমাদের সমান পদচারণা। কারণে অকারণে হয়তবা জীবনের চলার তাগিদে। কারণ সে সময়ে টিউশনি ছিল আমাদের চালিকা শক্তি।

এভাবেই কাটছিল বেশ শহুরে জীবন। রিকশায় বা হেটে যেখানেই যাই দুজন যেন একে অপরের অংশ। সেই মানিকজোড় এর মত। অবিশ্বাস্য সত্যি তখনো আমরা দুজন কারো মুখ থেকে স্পষ্ট শুনিনি আমাদের মানিক জোড় বলতে। এমনিতেই কলেজে অনেক বন্ধুরা প্রশ্ন করত আমরা কি দু ভাই? মুচকি হেসে দু'জনেই পরিচয় দিতাম, হ্যাঁ আমরা দু'ভাই। আসলে বলবেই তো!! একি রকম পোষাক, জুতো, ব্যাগ, একিসাথে চলা। সব মিলিয়ে আমরাও মানিকজোড় অনুভূতির আনন্দ স্বাদ নিই। খুব মজাও পাই।

এরই মাঝে হঠাৎ সেদিন!! দু'জনেই সেইম পোষাকে রিকশায় করে বের হলাম কোথায় যেন ঘুরতে। কিছুদুর গিয়ে শহরের বলুয়ার দীঘির পাড়ে রিকশাজট লাগে।আস্তে আস্তে থেমে থেমেই চলছিল সব রিকশা।বিরক্তকর অবস্থা নিরবে সয়ে দু'বন্ধু হেসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি রিকশা যখন ঠিক সামনা সামনি আসলো, তখন হঠাৎ রিকশারোহী দু'মহিলা মুচকি হেসে বলে উঠে "এইযে যায় মানিকজোড় "।

দু'রিকশা পাস কেটে দু দিকেই চলে যায়। চিনিনা জানিনা ভাল করে দেখিও নাই ওরা কারা।

দুই বন্ধু সেদিন বলেছিলাম যাক বাবা,,,,অবশেষে কেউ না কেউ তো বললো!!! আমরা ""মানিকজোড়""

দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল।এখন দু'জন দুই মেরুর বাসিন্দা। সে থাকে মদীনা শরীফ আর আমি দাম্মামে। দুই জনেই সৌদিআরব বটে, দেখা হয় কালে ভাদ্রে। তাতে কি? স্মৃতিতে সব অমলিন। দুজনে কথা হয়, অনলাইনে চ্যাটিং হয় এই যেন নতুন আরেক গল্প।ছুটছে দু'জনের জীবন যুদ্ধের গতিপথে ব্যক্তিগত রেলগাড়ি। এই বেশ ভাল আছি দুই জনই। পাশাপাশি না থাকলে কি হবে, আছি মনের বন্দরে কাছাকাছি। কথায় আছে, চোখের আড়াল হলে নাকি মনের ও আড়াল হয়ে যায়। আমরা দুই জন সে কথাটা একেবারেই বিশ্বাস করিনা।।

বিষয়: বিবিধ

১০৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File