পিঞ্জর ভাঙ্গার শদ্ব Crying

লিখেছেন লিখেছেন বিবর্ন সন্ধা ০৪ মে, ২০১৬, ০৮:২২:৪৪ রাত

আসসালামু আলাইকুম



প্রচন্ড গরম, ঘরের ভিতর টা ঘোমট হয়ে আছে,

চার দেয়ালের ভিতর সিলিং ফ্যান আর ঘামের

ধাওয়া পালটা ধাওয়া যুদ্ধে গায়ের অবস্থা স্যাঁতস্যাঁতে,

শানু সিড়ির দিকে পা বাড়াল,

ছাদে যদি একটু হিমেল ছুয়া মিলে,,,

একাকী পায়চারির ফাঁকে,

পাশের বাড়ির পরদা ঢাকা জানালায় দৃষ্টি আটকালো, একবার আলো জ্বলছে আর নিবোছে,

অজান্তে শানু হেসে উঠলে,

বুঝলো দুজনের দুষ্টুমিতে,

আলো-আধারী­র খেলা চলছে বুঝি .



সেদিন পাশের বাড়ির সজিব ভাইয়ের

নতুন বৌ কে দেখতে গিয়ে,

শানুর সারারাত মনের ভিতর খছ খছ করতে লাগলো,

টা কে খুব পরিচিত লাগছিল,

কিন্তু ভারী মেকাপ আর গহনার আধিক্য থাকায়,

সে,ঠিক বুঝতে পারছিলো না,

তাছাড়া এত ভিরের মধ্যে উলটা পালটা কিছু বলে

লজ্জা পেতে চায় নি বলে, সে চুপ করে থাকলো,

যদি ও নতুন বৌকে আড়চোখে কয়েক বার তার দিকে তাকাতে দেখেছে সে,,

ধ্যাত, বৌ তো সবার দিকে ই একটু আধটু তাকাচ্ছিল,,



সন্দেহ দূর করতে,

পরদিন ঐ বাড়িতে যেতে ই, ছন্দা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো, "আমার কালকে ই মনে হচ্ছিলো,

এটা তুই, কিন্তু এই কয় বছরে তুই এত সুন্দরী হয়েছিস যে, আমি ঠিক সিউর হতে পারছিলাম না, শেষে সজিব কে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম, "

কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে থামলো, ছন্দা।

পাশের ঘর থেকে সজিব ভাই, মজা করে বলছিলেন,

সুন্দরী কোথায়,!!

সুর্যের আলো পায় না বলে,

চামরা শ্বেত রুগীদের মত সাদা দেখাচ্ছে,

বলেই তিনি পাল্টা আক্রমণ হওয়ার আগে ই বাসা থেকে বেড়িয়ে যান,

এই সব কথার কোন জবাব দেয় না শানু,

কলেজে উঠার পর সে যখন হঠাত করে,

হাত মুজা, পা মুজা সহকারে বোরকা পড়া শুরু করে,

তখন থেকে ই এই ধরনের খুচা তাকে প্রায়ই শুনতে হচ্ছে, তবে তাতে তার মন খারাপে বদলে এক চিলতে হাসি পায়,।



ছন্দা, শানুর স্কুলের সহপাঠি,

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একেক জন একেক কলেজে চলে যাওয়ায়, বেশ কয়েক বছর দুজনের মধ্যে

কোন যোগাযোগ ছিল না,

সেদিন অনেক কথা হয় দুই বান্ধবী মিলে,

কার কোথায় বিয়ে হয়েছে, কে কোথায় পড়ছে, কার কয়টা প্রেম চলছে, ইত্যাদি কোন আলোচনা ই বাদ যায় নি ।



আজ সাতদিন ওদের বিয়ে হলো,

প্রতিদিন ই তাদের আলাপ জমে,

কখনো একে অপরের বাসায় এসে,

কখনো ছাদে দাঁড়িয়ে,

আবার কখনোবা মুখোমুখি জানালায়,,

-

- কিরে নামাজ কালাম পড়িস কিছু?

কোন আলামত তো দেখিনা

- দেখ না কত্ত ঝামেলা, পড়া হয়ে উঠছে না,

কালকে হানিমুনে যাব, এসে ই সব করবো ভাবাছি।

-

আজ ২০ দিন,

ওরা মধুচন্দ্রিমা সেরে ফিরেছে দু দিন হয়,

আজ ছন্দা নিজে ই এসেছে দেখা করতে,

অনেক হাসি খুসি দেখাচ্ছে ওকে,

সজিব ভাই একটু পর পর ফোন দিয়ে

দুপুরের খাবার খেয়েছে কিনা জিজ্ঞাস করছে,

( খাওয়া দিনে তিন বেলা অথচ

এই খাওয়ার কথা ৮২ বার জিজ্ঞাস করে

আর নামায দিনে পাঁঁচবার

অথচ নামাযের কথা একবারো জিজ্ঞেস করেনা..)

শানু জিজ্ঞাস করলো

- তুই হ্যাপি তো??

- হুম্ম অন্নেক, সজিব অনেক ভালো স্বামী ,

ঠিক যেমন টা আমার স্বপ্ন ছিল।

- আল্লাহর শুকরান আদায় করেছিস এর জন্য??

- এমনিতে তো করি ই কিন্তু নামাজ পড়ে করা হয় নি,

ভাবছি করতে হবে, যাই রে,

একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

- কেনো, নতুন কেউ আসছে নাকি??

- আরে নাহ, (লজ্জায় লাল হয়ে গেল ছন্দা)

কিযে বলিস না, ওকে নিয়ে যাব, ওর বুকে নাকি

মাঝে মধ্যে ব্যাথা লাগে,।



পরিক্ষার জন্য পরের কয়েক দিন দেখা করা হয় নি,

তাই শানু ভাবলো, আগামী কাল দেখা করতে যাবে,

পরদিন ভোরে ফজরের নামাজের সময়

মসজিদ থেকে কারো শোকসংবাদ এর খবর শুনতে পেলো,

নামাজে থাকায় নামটা খেয়াল করা হয় নি,

কি যে হলো, প্রায় প্রতিদিন ই ফজরের নামাজের পর এই শোকসংবাদ এর মাইকিং হয়,

যদি ও সে শুনেছে, এই ভাবে মাইকিং করা নাকি জাহিলিয়াতি বেদাত,

নামাজ শেষে মৃত ব্যাক্তির আত্মার মাগফিরাত কামনা করে, জায়নামাজ গোছিয়ে রাখতে রাখতে,

কান্নার শব্দ শুনতে পেল সে,

তাহলে কি আশেপাশে কেউ,,,,,,??????



দ্রুত জানালা খুলে, পাথর হয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

সজিব ভাইদের বাসা থেকে আসছে শব্দটা,

ছন্দার কিছু হলো??

অজানা আশংকায় কেপে উঠল সে,

মাথার ভিতর এলোমেলো ভাবে

যোগ বিয়োগ পুড়ন ভাগ গুলো

সমাধান হীন হিসেব কষে যাচ্ছে।।

বোরখা টা গায়ে জড়িয়ে, ছুটলো সে,

পরিক্ষা শেষ হওয়ায় গত রাতে সকাল সকাল

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, এর মধ্যে না জানি কি হয়েছে,

সজিব ভাইদের বাড়িতে গিয়ে দেখে কয়েক জন খাটিয়া পরিষ্কার করছে,

খুব অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে,

এদিকে এত আয়োজন আর সে জানে ই না ঘটনা কি,,।

এর মধ্যে অনেকে ই ভিড় জমিয়ে ফেলেছে,

ওই তো মাকে দেখা যাচ্ছে,

একটা মহিলাকে পিঠে, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিচ্ছে, (মহিলাটি মনে হহয় ছন্দার মা)

ইসস মার উপর খুব রাগ হচ্ছে তার,

আমাকে একবার ডেকে বলে ও আসলো না,

তার চোখ দ্রুত ছন্দা কে খুজছে, কিন্তু কিন্তু কিন্তু,,,,

"বড় ভালো ছেলে ছিল,"

বলে দুই জন পাশ কেটে যাচ্ছে,

বুঝতে আর বাকি রইলো না, সজিব ভাই আর নেই,,,,,,,, জীবনের সব সুখ অল্প কয় দিনে বিলিয়ে দিয়ে,

চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি,



শোবার ঘরের বিছানায় মহিলাদের একটা জটলা দেখা গেলো, সে দিকে ই এগিয়ে গেল,

ছন্দাকে ঘিরে ই এই জটলা,

মূর্তি র মত ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে

বিছানার চাদরের দিকে,

চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কান্না করতে ভুলে গেছে,

ক্ষণে ক্ষণে কেবল ওর মা ই কেঁদে চলছে,

কয়েক জন অতি উতসুক মহিলা ফিস ফিস করে

বলাবলি করছে,

"কি পাষাণী রে বাবা, স্বামী মরে গেলো, অথচ চোখ থেকে একফুটা পানি ও বেরুলো না,"

(ঠিক ই তো মরা বাড়িতে , হাউমাউ করে কপাল, মাটি চাপড়ে কান্নাকাটি না হলে, দেখতে এসে কোন মজা আছে)



শানু হাত রাখলো ছান্দার কাদে,

এই বার সে মুখ তুলে উপড়ে তাকালো,

যেন ওর জন্য ই অপেক্ষা করছিল এতক্ষণ,

" আমি যদি সুখের সময়

আল্লাহর কাছে শুকড়িয়া আদায় না করি, তবে দুখের সময় কোন অভিযোগ করার অধিকার কি আমার আছে?? "

কথাটা বলছে আর নিসশব্দে অঝোর ধারা বয়ে চলছে,

এত কষ্ট লাগছে কথাগুলো শুনতে,

গলাটা ও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে

,একটা শুকনা ডুক গিলে নিচের ঠোটটা কে কামড়ে ধরে, অনেক কষ্টে কান্নাটাকে আটকিয়ে তার পাশে বসলো শানু।



এদিকে গোসল সহ সব আয়োজন শেষ ,

এখন সজিব ভাইয়ের পরিচয় সে একজন "লাশ "

স্থায়ীয় মসজিদে প্রথম জানাজা দিয়ে

লাশ কে নিয়ে যাওয়া হবে গাঁয়ে,

আর এই লাশের প্রয়োজন নাই কারো,

কেউ ভালোবেসে দু'চারদিন ঘরে রাখবে না

যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল।



কেউ একজন আগরবাতি জ্বেলে নিয়ে আসলো,

শানুর মুখ ফসকে বেড়িয়ে এলো,

সুগন্ধি র জন্য আতর মেখে দেন,

আগরবাতি জ্বালতে হবে কেনো?

এটাতো বেদাত।

মুরুব্বী একজন তার দিকে আগুন চোখে তাকালো,

(যেন এই পুচকি কিসের জ্ঞান দেয়?

ওর কাছ থেকে শিখতে হবে!!)

এখন এই সব বলে কোন লাভ নাই বলে

শানু চুপচাপ বাড়ী চলে এলো।



এতক্ষণে লাশ নিয়ে সবাই গাঁয়ে রওনা দিল।

খোলা জানালা বসে ওদের চলে যাওয়া দেখছে সে

আর ভাবছে,

ওদের বিয়ে হয়েছে আজ ২৫ দিন,

হাতের মেহদী মুছতে না মুছতে ই বিধবা হয়ে গেলো,

হয়তো ওর আবারো বিয়ে হবে,

নতুন স্বামী , সংসার, সন্তান সব ই হবে,

কিন্ত সজিব ভাইকে কি সে কখনো ভুলতে পারবে??

অন্য সংসারে যখন কোন কষ্ট পাবে,

তখন কি উনার জন্য বুকের ভিতর টা

হাহাকার করে উঠবে না?

সুখের কোন রুপ নেই,

কিন্তু তার কাছে সুখ মানে ই সজীব নামের

এই স্বামী টি ই হয়তো হয়ে থাকবে,

কিন্তু সব কথা ছাপিয়ে একটি কথা ই

বারবার মনে পড়ছে,

"সুখের সময় যদি শুকড়িয়া না জানাই,

তবে দুখের সময়........ " Broken Heart Broken Heart

##########





এবার নিজের কিছু কথা,

ইসসস কত্ত দিন পর সূর্যের আলো দেখলাম, Bee Bee

ইয়ে মানে,

৮/৯ দিন আগে হঠাত করে

ব্লগে ঢুকতে পারছিলাম না,

সামনে, পিছে, উল্টা, সিদা যে রাস্তা দিয়ে ই যাই,

ফলাফল গেইট লক,

দুই দিন এই মিলে যাবার পর

এটা সেটা ডাওনলোড দিলাম

, একটা নামাই তো আর একটা এসে হাত বাড়িয়ে বসে থাকে,

যাই হোক সবাইকে বসতে দিবার পর জেলখানার তালা তো খুলল বটে কিন্তু শুধু প্রথম পৃষ্টায় নজর বুলানো র অনুমোদন মিল্ল,

নোটিফিকেশন সহ পুরু লিখাটা পড়া বা মন্তব্য কিছু ই করা বা দেখা গেল না,

এই ভাবে আরো দুইদিন,

অত:পর আমি মুক্তির স্বাদ পেলাম,

কিন্তু ইয়া আল্লাহ,

আইডি লগ আউট হলো কিভাবে!! Crying Crying

আবার যে লগিং করবো,

ইউজার - পাস সব তো খেয়ে বসে আছি,

কোথায় যে লিখে রেখেছিলাম,

সারা বাড়ী খুজে তন্ন তন্ন,

তাছাড়া বাড়িতে

দরজা, জানালা, মেঝে,, বই, খাতা, কাপড়, ফার্নিচার এমন কিছু নাই যেখানে আমার বাবাটার শিক্ষার স্বাক্ষর খুঁজে পাওয়া দূস্কর,।

কিন্ত শেষ মেষ আমার হাত থেকে ব্লগ পিছলে যাবে কিভাবে?

ছাই দিয়ে ধরে ফেলবো না। Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

লিখাটা একটু বড় হয়ে গেলো??

হোক,

কত্ত দিন পর দেখা,

কত কথা জমে আছে পেটে,

একটু কথা যদি না বলি,

পেটটের ভিতর ভট ভভট করে

বদ হজম শুরু হয় যদি।।। Big Grin Big Grin

বিষয়: বিবিধ

১২৬৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

367997
০৪ মে ২০১৬ রাত ০৮:৩৯
আফরা লিখেছেন : কেমন আছেন আপু ? লিখাটা বড়ঢ়লে ও পড়তে খারাপ লাগেনি তবে লাইন গুলো এরকম কেন ?

যাক ভাল লাগল সব সমস্যার সমাধান করে এবার আসতে পেরেছেন ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
০৪ মে ২০১৬ রাত ০৯:০২
305371
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ্‌
ভালো,
কত দিন পর তোমাকে দেখতে পেলাম।Love Struck

আমি নইইজে ও জানি না
প্রতিটা লাইনের মাঝে ই ফাকা থাকে কেন??:Thinking
অবশ্য আমি ব্লগের অনেক কিছু ই জানি না Crying
368022
০৫ মে ২০১৬ রাত ১২:১৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দারুন গল্প লেখেন দেখছি। গল্পের ভেতর দিয়ে অনেক কিছু শেখানো যায়। জাজাকাল্লাহ খায়রান
০৬ মে ২০১৬ সকাল ১০:০৭
305524
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফী Good Luck

গল্পে কিছু প্রশ্ন ও ছিলো,
সমাধানের ধারে কাছে ও তো গেলেন না Crying Rolling on the Floor
368035
০৫ মে ২০১৬ রাত ০২:৩৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Nice story.
০৬ মে ২০১৬ সকাল ১০:০৫
305523
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম। Good Luck

জাঝাক আল্লাহ খাইরান, আপু Love Struck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File