সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ১১

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২১ জুন, ২০১৭, ০১:০৬:০৪ রাত

উম্মাহর সফলকাম শ্রেণি-

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে ৷ (আল-ইমরান/১০৪)

যোগসুত্র ও ব্যাখ্যাঃ- পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার নিদের্শ প্রদান করেছেন। আর ঐক্যের ভিত্তি হবে কোরআন, সবাই কোরআন আঁকড়ে ধরে থাকবে। তাহলে আর ফিরকাবাজি ও বিভক্তির আশংকা থাকবে না। কিন্ত এরপরেও সম্ভবনা থেকে যায়। কারণ পূর্বের ইহুদী, খৃষ্টান ও অন্যান্য জাতিগুলি অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে। তাছাড়া শয়তান তো পিছনে লেগে আছেই । সে তো ভাল করেই জানে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি থেকে বিরত রাখলে মুসলিম জাতির তেমন কোন ক্ষতি হবে না, বরং তাদেরকে বহু ফিরকায় বিভক্ত করতে পারলে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ ধবংস করা যাবে এবং সহজেই শয়তানের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। যেমন বর্তমানে মুসলিম জাতির বিভক্তি ও কেন্দ্রচ্যুতির কারণে বিশ্বময় দাজ্জালতন্ত্র (পশ্চিমা সভ্যতা) প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এ জন্যই আল্লাহ্‌ তা’লা নির্দেশ দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকবে যারা সর্বদা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করতে থাকবে। তবে এ নির্দেশটি যেহেতু ঐক্য ও বিভক্তি সংক্রান্ত আয়াতের পর এসেছে –বিধায় বুঝা যায় এ দলটির প্রধান কাজ হবে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, কোন ভাবেই বিভক্তির সুযোগ না দেয়া। কিন্তু এরপরেও যদি মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি ও হানাহানি দেখা দেয় তখন আল্লাহ্‌র নির্দেশ হচ্ছে-

وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ فَإِن فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا ۖ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ [٤٩:٩] =

আর যদি মুমিনদের দুই দল লড়াই করে তাহলে তাদের উভয়ের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো। কিন্তু তাদের একদল যদি অন্যদের বিরুদ্ধে বিবাদ করে তবে তোমরা লড়াই করবে তার সঙ্গে যে বিবাদ করছে, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্‌র নির্দেশের প্রতি ফিরে আসে। তারপর যখন তারা ফেরে তখন তাদের উভয়ের মধ্যে শান্তিস্থাপন করো ন্যায়বিচারের সাথে, আর নিরপেক্ষতা অবলন্বন করবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ নিরপেক্ষতা-অবলন্বনকারীদের ভালবাসেন।

ইমাম কুরতুবী আমরে বিল মা’রুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার সম্পর্কে ছয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তন্মধ্যে সামান্য তুলে ধরা হল। তিনি বলেন, আমরে বিল মারুফ উম্মতের উপর ফরযে কেফায়া(فَإِنَّهُ يَدُلُّ عَلَى أَنَّ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ فَرْضٌ عَلَى الْكِفَايَةِ، )। এটা পুর্ববর্তি উম্মতের উপরও ওয়াজিব ছিল, নবীগনের প্রধান দায়িত্ব এটাই। উম্মাহর সর্ব সম্মত অভিমত হল, সক্ষম ব্যক্তির উপর অন্যায় প্রতিরোধ করা ওয়াজিব। তবে প্রতিরোধে অক্ষম হলে শক্তি প্রয়োগ না করে জিহ্বায় প্রতিরোধ করতে হবে, তাও না পারলে অন্তরে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করবে।

وَفِي التَّنْزِيلِ:" الْمُنافِقُونَ وَالْمُنافِقاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ" ثُمَّ قَالَ:" وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِناتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِياءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ" «2». فَجَعَلَ تَعَالَى الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ فَرْقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُنَافِقِينَ، فَدَلَّ عَلَى أَنَّ أَخَصَّ أَوْصَافِ الْمُؤْمِنِ الْأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ،

ইরশাদ হচ্ছে, মুনাফিক নর- নারী একে অন্যের সহযোগী- তারা মন্দ কাজে আদেশ করে আর ভাল কাজে বাধা দেয়। পক্ষান্তরে মুমীন নর-নারী একে অন্যের অভিভাবক, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর মন্দ আজে বাধা দেয়। অত্র আয়াতে আল্লাহ তালা আমরে বিল মারুফকে মুমিন ও মুনাফিকের পার্থক্য নির্নয় করেছেন, আর এটাই মুমিনের প্রধান বৈশিষ্ট এবং উক্ত আয়াতের দাবী। .

وَقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (بِئْسَ الْقَوْمُ قَوْمٌ يَقْتُلُونَ الَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ، بِئْسَ الْقَوْمُ قَوْمٌ لَا يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَلَا يَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ، بِئْسَ الْقَوْمُ قَوْمٌ يَمْشِي الْمُؤْمِنُ بَيْنَهُمْ بِالتَّقِيَّةِ"

রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, সেই জাতি কত নিকৃষ্ট যারা উত্তম কাজের আদেশ দাতাকে হত্যা করে। সেই জাতি কত নিকৃষ্ট যারা ভাল কাজের আদেশ দেয় না ও অন্যায় প্রতিরোধ করে না। সেই জাতি কত নিকৃষ্ট যাদের মধ্যে মুমিনদের তাকিয়া করতে হয়। (ফিতনা বা নির্যাতনের ভয়ে মনের কথা গোপন রেখে মুখে ভিন্ন কথা বলাকে তাকিয়্যা বলা হয়) ।

قَالَ الْحَسَنُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَنْ أَمَرَ بِالْمَعْرُوفِ أَوْ نَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ فَهُوَ خَلِيفَةُ اللَّهِ فِي أَرْضِهِ وَخَلِيفَةُ رَسُولِهِ وَخَلِيفَةُ كِتَابِهِ). وَعَنْ دُرَّةَ بِنْتِ أَبِي لَهَبٍ قَالَتْ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: مَنْ خَيْرُ النَّاسِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: (آمَرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَأَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأَتْقَاهُمْ لِلَّهِ وَأَوْصَلُهُمْ لِرَحِمِهِ).

রাসূল (শাঃ) ইরশাদ করেন, যে আমরে বিল মারুফ করে সে ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ্‌র খলীফা, রাসূল (সাঃ) এর খলীফা ও কোরানের খলীফা। দুররাহ বিনতে আবু লাহাব বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকট এসে প্রশ্ন করল ‘সর্বোত্তম মানুষ কে হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)। তিনি উত্তর দিলেন, যে সৎকাজের আদেশ দেয়, অন্যায় প্রতিরোধ করে, মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখায় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।

السَّادِسَةُ- رَوَى أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ: قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى نَتْرُكُ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ؟ قَالَ: (إِذَا ظَهَرَ فِيكُمْ مَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ). قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَنَا؟ قَالَ: (الْمُلْكُ فِي صِغَارِكُمْ وَالْفَاحِشَةُ فِي كِبَارِكُمْ وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ). قَالَ زَيْدٌ: تَفْسِيرُ مَعْنَى قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ) إِذَا كَانَ الْعِلْمُ فِي الْفُسَّاقِ. خَرَّجَهُ ابْنُ مَاجَهْ..

হজরত আনাস বিন মালেক বলেন, রাসুলকে কেউ জিজ্ঞেস করল ‘আমরা কখন আমরে বিল মারুফ পরিত্যাগ করব? রসুল উত্তর দিলেন, যখন তোমাদের মধ্যে সেই সব উপগর্গ প্রকাশ পাবে- যে গুলি তোমাদের পুর্ববর্তি উম্মতদের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছিল। তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল পুর্ববর্তি উম্মতদের মধ্যে কি প্রকাশ পেয়েছিল? তিনি বললেন, রাজনীতি ও রাষ্ট্র ক্ষমতা থাকবে নীচ প্রকৃতির ছোট লোকদের হাতে। বিত্তবান- বড় লোকদের মধ্যে থাকবে অশ্লীলতা, আর ইলম বা ধর্ম থাকবে নিকৃষ্ট লোকদের হাতে, অর্থাৎ ফাসেক লোকদের হাতে।

ব্যাখ্যাঃ কতই না বাস্তব, বর্তমানের আলেম সমাজ ফিরকাবাজি ও অন্যান্য অনেক বিষয়ে কোরান হাদিসের বিধান গোপন রেখে আল্লাহ রাসুল, ইসলাম ও উম্মাহর সাথে ফাসেকি ও মুনাফেকি করছে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ).

‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন অসৎকাজ হতে দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা প্রতিহত করে। তবে যদি সে ঐরূপ করতে অক্ষম হয়, তাহলে কথা দ্বারা যেন তাকে প্রতিহত করে, যদি এরপরও করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেন অন্তর দিয়ে তাকে ঘৃণা করে। আর সেটা হবে সবচাইতে দুর্বল ঈমান। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এর বাইরে বিন্দুমাত্র ঈমান নাই।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমানে মুসলিম জাতীর প্রধান মুনকার বা অন্যায় কর্মটি হল ফিরকাবাজী। এই বিষ বৃক্ষটির কারনে আজ ইসলাম ও উম্মাহ সমূলে ধ্বংস হতে চলেছে। কাজেই উম্মাহর উপর ফরজে আইন হয়ে গেছে এই বিষ বৃক্ষ ধ্বংস করে ঐক্য স্থাপন করা। তারপর খিলাফত বা মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে উম্মাহর মুক্তি নিশ্চিত করা। এটাই হাদিসের নির্দেশ।

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ولَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ، أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْ عِنْدِهِ، ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ فَلا يَسْتَجِيبُ لَكُمْ".

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ-তার কসম, তোমরা অবশ্যি অবশ্যি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে, অন্যথায় খুব শীঘ্রই আল্লাহ তা’লা তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন। তারপর তোমরা দোয়া করবে কিন্তু আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না।

ব্যখ্যাঃ- আমরা অহর্নিশ নিজের জন্য,পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করছি, কিন্তু বুঝা যাচ্ছে আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না। বিশেষত পৃথিবীর কোটি কোটি মসজিদে দৈনিক পাঁচবার, জুমা, ঈদ, রমজান ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ণ সময় গুলিতে মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করছি, ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মির, জিংজিয়াং ইত্যাদিতে নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করছি। কিন্তু দোয়া তো কবুল হচ্ছেই না বরং আল্লাহ যেন আরো ক্রোধান্বিত হয়ে গযবের ভাণ্ড উপুড় করে ঢেলে দিচ্ছেন। বিধর্মী কতৃক মুসলিম নির্যাতনের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সাথে নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠন জন্ম নিচ্ছে আর দস্তুরমত মুসলিম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে আমরা পুর্নাংগ রুপে উক্ত হাদীসের মেসদাক হয়ে গেছি। কিন্তু কেন? উম্মাহর মধ্যে এমন কোন দল নাই যারা আমরে বিল-মা’রুফ এর দায়িত্ব পালন করছে না। প্রত্যেক ফেরকা নিজ নিজ পরিমণ্ডলে আমরে বিল মারুফ নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এরপরেও কেন আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না?

বাস্তব ভিত্তিক এর দুটি উত্তর হতে পারে। প্রথম উত্তর হচ্ছে--

কোরআন হাদীসের নির্দেশনা মাফিক বুঝা যায়, আমরে বিল মারুফ ও নেহি আনিল মুনকার এর আওতায় প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, ফিরকাবাজির সুযোগ না দেয়া। কিন্তু কেউ এ দায়িত্ব পালন করছে না বিধায় উম্মাহর মধ্যে শত শত ফিরকার জন্ম হয়ে গেছে এবং ধবংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

অথবা প্রত্যেক ফিরকা নিজ নিজ ফিরকার চিন্তা ও দর্শন অনুযায়ি যা মারুফ তার আদেশ করছে আর যা মুনকার তার নিষেধ করছে। কিন্তু তারা ইসলামের প্রকৃত আমরে বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার এর দায়িত্ব পালন করে না, করলে উম্মাহর মধ্যে এত শত ফেরকার জন্ম হতে পারত না। অনন্তর যারা আমরে বিল-মা’রুফের দায়িত্ব পালন করবে অর্থাৎ উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবে তাদের সম্পর্কে রাসূল (সা) ৭২ ফিরকার হাদীসে সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন- كُلُّهَا فِي النَّار إِلَّا وَاحِدَةٌ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ، - সবাই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল, সেটি হল জামাত বা ঐক্যবদ্ধ দল।

দ্বিতীয় প্রকার উত্তর হচ্ছে-

প্রত্যেক মসজিদের ইমাম কোন না কোন ফিরকার সাথে জড়িত। এরা দুই প্রকার। এক শ্রেনি বিশ্বাস করে স্ব স্ব ফিরকাই একমাত্র সঠিক অন্যরা ভ্রান্ত, কাজেই অন্যদের সাথে আপোসের কোন সুযোগ নাই ফেরকাবন্দি হয়েই থাকতে হবে। অর্থাৎ ফিরকাবাজিকে তারা শুধু জায়েযই মনে করছে না আবশ্যক মনে করছে। ফলে তারা কোরান হাদীসের অসংখ্য নস অস্বিকার করল, ‘ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম’ এই বিধান অস্বিকার করল, আর সাথে সাথে কাফের হয়ে গেল। যারা ফেরকাবাজি জায়েয মনে করে তারা কাফের, এতে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নাই। কাজেই এসব কাফেরের পিছনে তো নামাযই আদায় হছে না সেখানে দোয়া কবুল হয়া তো সুদুর পরাহত। সুতরাং এ শ্রেণীর ইমামরা যতক্ষন পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুসুল্লিদের সামনে তওবা না করবে এবং একথার স্বীকৃতি না দিবে যে, তারা ফিরকাবাজিতে বিশ্বাস করে না- ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পিছনে বিলকুল নামায আদায় হবে না, পড়লেও আবার দোহরিয়ে পড়তে হবে।

দ্বিতীয় প্রকারের আলেম হচ্ছে যারা ঐক্য ফরজ ও বিভক্তি হারাম জানে, মানে ও বিশ্বাস করে। কিন্তু বিভক্তি মাড়িয়ে ঐক্যের জন্য প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালায় না, তারা কবিরা গুনাহে লিপ্ত। কারণ তারা ফরজ লঙ্ঘন করেছে ও হারামে মুবতালা রয়েছে। বর্তমানের আলেম সমাজ এই শ্রেণী ভুক্ত। কারণ তাদের মধ্যে সম্ভবতঃ এমন মুর্খ কেউ নেই যে ঐক্য ফরজ ও বিভক্তি হারাম বলে বিশ্বাস করে না, তবে পরস্পর হিংসা- বিদ্বেষ, নমনিয়তা উদাসীনতা ও সুযোগের অভাবে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন কেউ নামায রোজা ফরজ জেনেও তা আদায় করে না, আবার শুকরের মাংস হারাম জেনেও তা ভক্ষন করে। এ ব্যক্তি যেমন কবিরা গুনায় লিপ্ত বর্তমানের ফেরকাবাজ আলেমরাও তদ্রুপ কবিরা গুনায় লিপ্ত। আর এসব আলেমরাই আমাদের ধর্মানুষ্ঠানগুলি পরিচালনা করছে, নামাযের ইমামতি করছে। সঙ্গত কারণেই তাদের পিছনে নামায আদায় হচ্ছে না। নামায হচ্ছে না বলেই দোয়া কবুল হচ্ছে না। তাই আমরা নিজের জন্য, পরিবার, সমাজ, দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও উম্মাহর জন্য যে দোয়া করছি তা কবুল হচ্ছে না বরং আল্লাহতালা আরো ক্রুধান্বিত হচ্ছেন। ফলে পূর্বের ইহুদী জাতির জেরুজালেম ও যিহুদার বাসিন্দাদের প্রতি ক্রুধান্বিত হয়ে তিনি যেমন সম্রাট নেবুচাদ নেজারকে দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তদ্রুপ আমাদের উপরও হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রিস্টানের মত অভিশাপ চাপিয়ে দিয়েছেন। কাজেই মুক্তির একমাত্র পথ মুসলিম জাতীয় ঐক্য ।

উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশের অধিকাংশ ইমামতি আমাদের দেওবন্দিদের দখলে। ইলম ও আমলে আমরাই এখানে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করি, অন্য কোন ফেরকা আমাদের সমপর্যায়ের নেই। কাজেই ইসলামের প্রধান খাদেম হিসাবে অন্যান্য ফেরকার সাথে আমাদের বড় ভাই সুলভ দায়িত্ব পালন করা দরকার ছিল। আমাদের কর্তব্য ছিল তাদেরকে কাছে টেনে এনে বিভক্তির সুযোগ না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাখা কিন্তু আমরা তা না করে ফিরকার খেলায় মেতে উঠেছি। কাজেই সর্বাগ্রে এ ধারার ইমামদের সচেতন হতে হবে, প্রকাশ্যে তওবা করতে হবে, নচেৎ তাদের পিছনে বিলকুল নামায আদায় হবে না।

মাসয়ালাঃ দেওবন্দ, তাবলীগ, জামাত, বেরেলভী, সালাফি ইত্যাদি যে কোন ফেরকার সাথে জড়িত থাকা সমস্যা নয়। সমস্যা হল ফিরকাবাজি জায়েয মনে করা। যেসব ইমাম স্ব ফেরকার ওকালতি করে ও ফেরকাবাজি জায়েয মনে করা সে কাফের, তাকে মসজিদ থেকে বের করে দিতে হবে। তার পিছনে নামায আদায় হবে না, পড়লেও আবার দোহরাতে হবে। কাজেই প্রত্যেক মসজিদের মুসুল্লিদের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে নিজ নিজ ইমামকে বাজিয়ে নেয়া এবং ফিরকা নিরপেক্ষ ইমাম নিয়োগ দেয়া। অন্যথায় নামায আদায় হবে না।

বিষয়: রাজনীতি

৮৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File