সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ১০

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২০ জুন, ২০১৭, ০১:৩৭:১৮ রাত

মুসলিমِ ভ্রাতৃত্ব আল্লাহ্‌র নিয়ামতঃ

ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾ =

আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো ৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র ৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো৷ তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন।এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন ৷ হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে। (আল-ইমরান/১০৩)

وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ -- এখানে আওস ও খাজরাজ এ দুটি গোত্রের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন। জাহেলি যুগে তাদের মধ্যে ১২০ বছর মেয়াদি দীর্ঘ যুদ্ধ চলছিল। মালেক বিন আজলান খাঁজরাজির মাওলা হুর বিন সুমাইর এর হত্যার মাধ্যমে এ যুদ্ধের সুত্রপাত হয়। তারপর রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’লা শান্তি স্থাপন করেন। কিন্তু ইহুদীদের কাছে এ শান্তি ভাল লাগল না । তারা উভ্য় গোত্রকে অতীত ইতিহাস স্বরণ করিয়ে দিয়ে উস্কানি দিতে লাগল। ফলে তাদের মধ্যে যুদ্ধের উপক্রম হল। তখন রাসূল (সাঃ) সেখানে উপস্তিত হয়ে ফয়সালা করে দেন। এ সম্পর্কেই আয়াতটি নাযিল হয়। (তাবারি, কুরতুবি)

ব্যাখ্যাঃ ইসলাম মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোরআন হাদীসের যত জায়গায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক, লেনদেনের আলোচনা এসেছে সেখানেই পরস্পরকে ভাই ভাই হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন,

(১) إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ- মুমিনরা সবাই ভাই।

(২)- إِخْوَانا كونوا عباد الله- আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।

(৩) এমনকি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব এত মজবুত যে, কোরআনে হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির পরিবারের ভাই হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ٰ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ -- তবে যাকে কিছুটা রেহাই দেয়া হয় তার ভাইয়ের (নিহতের পরিবার) তরফ হতে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সমগ্র মুসলমান একটা দেহের ন্যায়, কোন অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে সমস্ত দেহ যেমন ব্যথা অনুভব করে ঠিক তেমনি কোন মুসলমান আঘাত প্রাপ্ত হলে সমগ্র উম্মাহ ব্যথা অনুভব করবে।

মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব আল্লাহ্‌র অনেক বড় নিয়ামত, এ বন্ধন ওয়ারিশ ও বৈবাহিক অবস্থা ব্যতিত বাকী সকল ক্ষেত্রে সহোদর ভাই-বোনদের বন্ধনের ন্যায় মজবুত। এ বন্ধনের ফলেই পৃথিবীর এক প্রান্তের মুসলমানের প্রতি অন্য প্রান্তের মুসলমান ভালবাসা ও হৃদয়ের টান অনুভব করে, কেউ আঘাত প্রাপ্ত হলে সকলেই দুঃখিত হয়, প্রতিবাদী হয়ে উঠে। কোন দেশ আক্রান্ত হলে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান রাস্তায় নেমে আসে। যেমন আরাকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির ইত্যাদি দেশের জন্য সমগ্র মুসলিম জাতি দুঃখিত ও আন্দোলনরত। সুতরাং বুঝা গেল মুসলিম ভ্রাতৃত্ব আল্লাহ্‌র এক অপরিসীম নিয়ামত- যা টাকা পয়সা বা কোন সম্পদ দিয়ে অর্জন করা সম্ভব ছিল না। কাজেই এ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ্‌ তা’লা নিয়ামতকে গযবে রূপান্তরিত করে দেবেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে - وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ﴿ابراهيم: ٧﴾ -আর স্মরণ করো! তোমাদের প্রভু ঘোষণা করলেন -- ''তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে নিয়ামত বাড়িয়ে দেবো, কিন্তু তোমরা যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে আমার শাস্তি নিশ্চয়ই সুকঠোর।)

অর্থাৎ আমরা যদি নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি তাহলে তিনি নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেবেন, ভ্রাতৃত্বকে শক্তিতে রুপান্তরিত করবেন, পৃথিবীর নেতৃত্বে অধিষ্টিত করবেন। আর যদি অকৃতজ্ঞ হই তাহলে শাস্তি দিবেন, যেমন বর্তমানে দিচ্ছেন। কাজেই এক্ষনে আমাদের আত্নসমালোচনা করতে হবে আমরা ভ্রাতৃত্ব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করছি কিনা। ভ্রাতৃত্বের অনুভুতি থাকলে আমরা পরস্পরকে মারছি কিভাবে? তদুপরি আমরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আরাকান ফিলিস্তিন, কাশ্মির সহ সমগ্র বিশ্বে কাফেররা মুসলমানদের মারছে কিভাবে? তারা তো মুসলমানদের প্রতি চোখ তুলে তাকাবার সাহস রাখারও কথা নয়। এর মূল কারণ হচ্ছে, মুসলমানরা ভ্রাতৃত্বের কোন পরোয়া না করে ভ্রাতৃঘাতি সর্ববিধ্বংসি হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। এজন্যই আজ জাতির এই পতন।

যেমন বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলি, যেমন তরীকতী, দেওবন্দী তাবলীগী ও জামায়াতী ইত্যাদিরা ভারত, চীন ও মার্কিনকে দুবেলা চা চাটছে তিন বেলা পায়ের পাতায় তেল মালিশ করছে। কিন্তু নিজেরা নিজেরা পরস্পরকে ধ্বংসের ষোল আনা কসরত করছে আর ঐক্যান্তিক আকাঙ্ক্ষা করছে প্রতিপক্ষ ফেরকার শেষ প্রানীটা পর্যন্ত ধ্বংস করা হউক। যেমন তরিকতী ও তাবলিগীরা কামনা করে পৃথিবী থেকে জামায়াতের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাক। আবার জামাত চায় পৃথিবী তরিকতী ও তাবলীগী মুক্ত হউক। তদুপরি আওয়ামী লীগ মনে করে জামায়াত হত্যা অত্যাবশ্যক, আর জামায়াত মনে করে আওয়ামী লীগ নাস্তিক মুরতাদ কাজেই তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা জরুরি।

অনন্তর, বৈশ্বিক মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অবস্থা তো আরো শোচনীয়। আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন ইসরাঈলকে দিয়ে হামাস ও ফিলিস্তিনীদের হত্যা করাচ্ছে, ইরান ও কাতারকে সাইজ করার ধান্ধায় আছে। মিসরের ফিরাউন (সিসি) ব্রাদারহুডের রক্ত হালাল করে নিয়েছে। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরান, ইরাকে কখনো সুন্নীরা শিয়াদের শিয়াল কুকুরের মত মারছে, কখনো শিয়ারা সুন্নীদের মারছে। এই হলো মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অবস্থা। আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন,- وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ - অর্থাৎ তার নিয়ামতের নাশুকরি করলে তিনি কঠোর শাস্তি দেবেন। এখন সেই শাস্তিটি কি, কোরআন কি বলে তা একটু অনুসন্ধান করব।

আল্লাহ তা’লা বলেন - قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَىٰ أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ ﴿الأنعام: ٦٥﴾

বলো – ''তিনি ক্ষমতাশীল তোমাদের উপরে শাস্তি আরোপ করতে, তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে, অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দলাদলিতে লিপ্ত রাখতে, আর তোমাদের একদলকে ভোগ করাতে পারেন অন্য দলের নিপীড়ন। দেখো, কিরূপে আমরা নির্দেশনসমূহ নানভাবে বর্ণনা করি যেন তারা বুঝতে পারে! (৬: ৬৫)

অর্থাৎ শাস্তি হিসাবে তিনি মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করে দিবেন ফলে তারা একে অন্যকে বাঁশ দিবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে কাউকে মালামত করার সময় বলা হয় তোমাকে বাঁশ দেয়া হবে, আইখ্যা ওয়ালা বাঁশ। মানুষ মনে করে এখানে বাংলা বাঁশ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এটি আরবি –بأس (বা’স) শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ- শাস্তি, বিপদাপদ, যুদ্ধ, বিষন্ন, অভাব, ভয়, ক্ষুধা ইত্যাদি। হায়রে মুসলমান এখনো কি হুশ হবে না। যাই হউক, বাস্তবতায় বুঝা যাচ্ছে মুসলিমরা ভ্রাতৃত্বের মত নিয়ামতের কদর বুঝল না, তারা পরস্পরকে ধ্বংসের মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে মজলুম জনগোষ্টি রোহিঙ্গা, ইউঘোর, কাশ্মিরী, ফিলিস্তিনী ইত্যাদি মুসলমানদের পক্ষে তারা জেহাদ করে না, সম্মিলিতভাবে কোন পদক্ষেপ নেয় না। তখন আল্লাহ্‌ তা’লা মুসলিম জাতির মধ্যে গজব ঢেলে দিলেন। তিনি ভ্রাতৃত্ব বা ঐক্যকে বিভক্তিতে (تفرق) রূপান্তরিত করে দিলেন। এখন তারা একে অন্যের - بَأْسَ-বাশ খেয়ে চলছে। আর এভাবেই ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে, কামড়া কামড়ি করে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, যদি না ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার ভ্রাতৃত্ব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ফরয, আর সেই ভ্রাতৃত্ব ভঙ্গ করে বিভক্ত হওয়া হারাম।

বাস্তব প্রয়োগঃ সুতরাং আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ইসলামের প্রত্যেকটা ফেরকা একে অন্যকে ধ্বংসের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা করছে, কুকুরের মত কামড়া কামড়ি করে যাচ্ছে। ফলে সত্যিকার অর্থেই তারা কুকুরে পরিণত হয়ে গেছে। গত আয়াতে সবাই দাবী করেছে আমরা আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে ভালবেসে ইসলাম পাওয়ার জন্য নিজ নিজ রুচি পসন্দ অনুযায়ী কেউ মাদরাসায়, কেউ তাবলীগে, কেউ জামাতে, কেউ মাযারে, কেউ বেরেলভীতে যোগ দিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বী বা নেতা নামের আলেম উলামা, পীর মাশায়খরা আমাদেরকে বিভক্ত করে অন্যান্য ফেরকার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে কুকুরে পরিনত করে দিয়েছে। কাজেই আমরা অনুসারিরা প্রকৃত কুকুর নয়, আসল কুকুর হল ঐ মুরুব্বি নামের শয়তানরা- যারা মুসলিম ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে, আমাদের ঈমান ধ্বংস করেছে, কাফেরে পরিনত করেছে, কুকুর বানিয়েছে। কাজেই ওরাই হল আসল কুকুর, ওরা সাপ, সাপের বাচ্চা, ওরা ভণ্ড......।

ইতিমধ্যে সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠল, ‘বন্ধ করেন আপনার এসব অশ্রাব্য গালাগালি, যত কিছুই ঘটুক অন্তত দ্বীনের খুটি সর্ব শ্রদ্ধেয় আলেম উলামা ও পীর মাশায়েখগনের এমনতরো অবমাননা আমরা মেনে নিতে পারি না। উস্তাদজি আপনি এ লোকের বক্তব্য বন্ধ করুন। মাওঃ মোজাহিদ থমকে দাঁড়িয়ে রইল। হাসান মুসান্না দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তুমি অন্যায় কথা বলছ। কারণ আমাদের বর্তমান পর্যন্ত ইসলাম পৌছিয়েছেন এবং চিনিয়েছেন আলেমগন। তাদের অক্লান্ত অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টার ফলেই আজ শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রতিটা মানুষ ইসলাম জানে বুঝে ও চিনে। তাদের অবমাননা করা মানে ইসলাম অবমাননা করা, তাদের থেকে ইসলাম ছিনিয়ে নেয়া মানে মায়ের কোল থেকে সন্তান ছিনিয়ে নেয়া। আমাদের এই আসরের উদ্দেশ্য আলেমদের হেয় প্রতিপন্ন করা নয় বরং তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে তাদের ত্রুটি গুলি ধরিয়ে দিয়ে ঐক্যের পথে টেনে আনা। কিন্তু তুমি তাদের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছ, শালিনতা ও ভদ্রতার গণ্ডি পেরিয়ে গেছ বিধায় তোমার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হল এবং তোমাকে বক্তব্য থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। এখন তুমি ইচ্ছা করলে এখানে থাকতে পার অথবা চলে যেতে পার।

লজ্বায় ও অপমানে মোজাহিদের মুখটা কাল হয়ে গেল। ‘আমি কি আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাব না’ বলে সে হাসান মুসান্নার দিকে তাকিয়ে রইল। তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে বল কি বলতে চাও। সে আবার শুরু করল, ‘মুজিব জিয়া তাদের সময়ে ধন সম্পদ, বিদ্যা বুদ্ধি ও রুপ গুনে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি ছিলেন না। এরপরেও তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হল, তখন সময়ের প্রয়োজনে যা কর্তব্য ছিল তারা সেই ডাক দিয়েছিলেন। তদ্রুপ আপনিও ময়মনসিংহের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি নয়। এরপরেও আমরা সবাই আপনার পাশে এসে ভিড় করেছি, এর কারণ কি? এর কারণ সময়ের প্রয়োজনে আপনি মুসলিম ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, ফিরকাবাজদের ধ্বংস করে উম্মাহর মাঝে ঐক্য স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। আপনার মুখে এই ঘোষণা শুনে যারা ইসলাম ও উম্মাহর চিন্তা করে তারা আপনার পাশে জড়ো হচ্ছে, আপনার অনুসারির সংখ্যা শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার মত বেড়ে চলেছে, এরা সবাই আপনাকে ভালবাসে। কিন্তু এই ভালবাসার প্রাপক আপনি নয়, আপনার ডাক।

আমি ফিরকাবাজ মুরুব্বিদের কুকুর, সাপ, ভণ্ড বলার কারনে আমার বক্তব্য না শুনেই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, এটা ছিল আপনার যুলুম। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আপনি ইনসাফ করেছেন বিধায় আপনাকে ধন্যবাদ। মুরুব্বিদেরকে আমি কুকুর বলেছি, কিন্তু এটা আমার কথা নয়। ভারত বর্ষের অবিসংবাদিত বুজুর্গ যাকে দল মত জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এক ডাকে সবাই চিনে জানে ও মানে- তিনি হলেন মাওঃ আশরাফ আলি থানবী (রহঃ), কথাটা তার। একবার তিনি ট্রেনে কোথাও যাচ্ছিলেন, তখন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্র তাকে চিনতে পেরে কাছে এসে আলাপ শুরু করল, তারা প্রশ্ন করল ‘আচ্ছা হুজুর, জীব জগতের মধ্যে কুকুরের মত উপকারী, অনুগত, প্রভুভক্ত অন্য কোন প্রানী নেই, এরপরেও তাকে কুকুর বলা হয় কেন, ঘৃনা করা হয় কেন? থানবী (রহঃ) উত্তর দিলেন, ‘কুকুর নিজের স্বজাতিকে দেখলে ঘেউ ঘেউ করে তাড়া করে, আক্রমণ করে, কামড়া কামড়ি করে। অর্থাৎ সে অন্য কারো উপকার বিনে অপকার করে না, কিন্তু নিজের স্বজাতিকে সহ্য করতে পারে না, এ জন্যই সে কুকুর।

এখানে, ঠিক এইখানেই আমার কথাটা। আমরা মুসলমানরা আমেরিকা বৃটেন চিন রাশিয়া ভারত এমনকি ইসরাঈল ও অন্যদের সাথে কত সুন্দর পীড়িতি করি, গোলামি করি কিন্তু মুসলমান দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠি। যেমন আমাদের দেশে ডানপন্থী বামপন্থী স্বধর্মি বিধর্মি অনেক দল সংস্থা সংগঠন আছে। কিন্তু জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্য কে আদালতে গিয়েছিল, জাসদ বাসদ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ বা ইসলাম বিরোধি চক্রের কোন দল সংগঠন যায়নি, তরিকত ফেডারেশন জামাত নিসিদ্ধের মামলা করেছিল। ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের সময় বাহ্যত মনে হয়েছে তারা শাহবাগের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে কিন্তু আসলে তারা জামাতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল। তখন হেফাযত নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতি, টকশো, মন্ত্রি এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে তিনটি দাবী পেশ করেছে, শাহবাগিদের উঠিয়ে দিন, তের দফা মেনে নিন, জামাত নিষিদ্ধ করুন আমরা আপনার সাথে আছি। প্রথম দুটি দাবি পুরনের শর্ত হিসাবে একথা বলেনি যে, আমরা আপনার সাথে আছি, এটা শুধু জামাত নিষিদ্ধের শর্ত হিসাবে বলেছে।

কাজেই তারা মুলত শাহবাগের বিরুদ্ধে নামেনি, মেনেছিল জামাতের বিরুদ্ধে। তাদের মনোবাঞ্চনা হল দেশে জাসদ বাসদ বামপন্থিরা থাকবে, নাস্তিক মুরতাদ থাকবে, বিধর্মিরা থাকবে সবাই থাকবে কিন্তু জামাত থাকতে পারবে না। কারণ জামাত ইক্বামাতে দ্বীনের কথা বলে, খোদার আইন চায়, এটাই তাদের অপরাধ। আবার বেরেলভী ওরফে চট্টগ্রামের সুন্নিরা দেওবন্দিদের কাফের ডাকে, পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যেমন হেফাজতের আন্দোলনের সময় বিরোধিতা করেছে। তেমনি দাওরাকে মাস্টার্স সমমান দেয়ার সময় বামপন্থী নাস্তিক মুরতাদ ও হিন্দু বৌদ্ধসহ সবাই খুশি হয়েছে। দেওবন্দিদের বিশ বছরের শিক্ষার একটা স্বীকৃতি দেয়াকে তারা ন্যায়সঙ্গত মনে করেছে। কিন্তু সুন্নিরা ক্রোধে ফেটে পড়েছে, তারা মিটিং মিছিল করেছে, স্বিকৃতি না দেয়ার জন্য সরকারকে অনেক হুমকি ধমকি দিয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের অবস্থা তো আরো শোচনীয়।তালেবানদের নাকের ডগায় চায়না তুর্কিস্থানে, কাশ্মিরে ও ফিলিস্তিনে মুসলমানদের উপর পাশবিক নির্যাতন চলছে কিন্তু তাড়া সেদিকে ফিরেও তাকায় না বরং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মুসলিম গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পেশোয়ারের এক স্কুলে আক্রমণ করে ১৫০ জন শিশু হত্যা করেছে। কাজেই এদেরকে কুকুর বললেও তো কুকুরের প্রতি অবিচার করা হয়, কারণ পৃথিবীতে কোন দিন কোন কুকুর ১৫০টি কুকুর ছানা হত্যা করেনি। আবার ইহুদীরা ফিলিস্থিন জবর দখল করে ধ্বংস লীলা চালাচ্ছে কিন্তু আইসিস সেদিকে ফিরেও তাকায় না, তাড়া শিয়া নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ শিয়ারা আর যাই হউক ইহুদি নয় মুসলমান। মিসরের ফিরাউন সিসি ইসরাইলের সহযোগিতা করছে আর ব্রাডারহুড ধ্বংস করছে। আওয়ামী লীগ নির্বিচারে জামাত হেফাজত হত্যা করছে কিন্তু বর্মি ডাকাতরা যে আরাকানের উপর চালাচ্ছে শতাব্দির নৃশংসতম নির্যাতন সেদিকে ফিরেও তাকায় না বরং হতভাগারা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসে তখন তাদেরকে আবার আজদাহার মুখে ঠেলে পাঠিয়ে দেয় বা সমুদ্রেই হত্যা করা হয়। এই হল মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নমুনা।

কাজেই খোদার কসম, রাসুল (সাঃ) এদেরকেই বলেছেন কিলাবুন্নার- জাহান্নামের কুকুর। এরা যদি কুকুর না হয় তাহলে পৃথিবীতে আর কে, কোন জাতি কুকুর হবে? হিন্দু হিন্দু হত্যা করে না, খৃস্টান খৃস্টান হত্যা করে না। আর ইহুদীরা তো বর্তমানে মুসলমান, কারণ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কোন ইহুদি- সন্তান জন্ম নিলে সাথে সাথে ইসরাইল তার ভাতা জারি করে দেয়। কাজেই বুঝা গেল মুসলমানরাই পৃথিবীতে একমাত্র কুকুরের জাতি। এখন প্রশ্ন হল, আমরা তো কুকুর হয়ে জন্মাইনি, মুসলমান হিসেবে জন্ম নিয়েছি। একটু বড় হয়ে ইসলাম শিক্ষা ও রক্ষার জন্য বিভিন্ন দল, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। আর সাথে সাথে আমাদের মুরুব্বিরা ফিরকায় বিভক্ত করে আমাদেরকে কুকুর বানালেন, কাফের বানালেন, জাহান্নামী বানিয়ে ছাড়লেন। আর একথা সর্বজন বিদিত যে, অশিক্ষিত, কৃষক- শ্রমিক বা আধুনিক শিক্ষিত লোকেরা ফিরকার সৃষ্টি করেনি, আলেমরাই ফিরকা জন্ম দিয়েছে এবং জিইয়ে রাখছে। কাজেই তারাই হল প্রকৃত আদি আসল খান্দানি কুকুর আর আমরা হলাম তাদের ছাও কুত্তা বা উৎপাদিত কুকুর। ইরশাদ হচ্ছে--

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ [١٤:٢٨]

তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামত (ভ্রাতৃত্ব) কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।

আবার আমি ফিরকাবাজ আলেমদের সাপ ও ভণ্ড বলেছি। বস্তুত এ কথাগুলি আমার নয়, বাইবেলের। ইয়াহইয়া- যোহন (আঃ) ইহুদি পণ্ডিতদেরকে সাপ ও সাপের বাচ্চা বলে সম্ভোধন করতেন। যেমন- you snakes- তোমরা সাপ। আর ঈসা- যীশু (আঃ) তো কথায় কথায় ইহুদি রাব্বীদের ভণ্ড মুনাফিক ছাড়া সম্ভোধনই করতেন না। যেমন- you are hypocriites- আপনারা ভণ্ড, মুনাফিক। এর ব্যাখ্যা হল, সাপের বিষ যেমন মানব দেহে ছড়িয়ে গেলে মৃত্যু ঘটে, তদ্রুপ ধর্মগুরু শ্রেণীর অপকর্ম সমাজে ছড়িয়ে পড়লে ধর্মের মৃত্যু ঘটে। যেমন ফিরকাবাজ আলেমরা ফিরকার বিষ ছড়িয়ে দিয়ে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার ধর্মগুরুদের বৃহদাংশ মুনাফিক, কারণ তারা যদিও মুখে বলে তারা আল্লাহর প্রতিনিধি, মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে। কিন্তু আসলে তারা শয়তানের প্রতিনিধি, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে, আর নিজেদের পকেট পুর্তি করে। যেমন ফেরকাবাজ আলেমরা মুসলিমদেরকে ইসলামের নামে ডেকে নিয়ে দেওবন্দি জামাতি বেরেলভী সালাফি ইত্যাদি ফিরকায় বিভক্ত করেছে, আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর হুকুম অমান্য করে ফিরকায় পরিনত করে জাহান্নামের পথে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থাৎ এরা উপড়ে দেখায় আল্লাহর কাজ করছে কিন্তু আসলে কাজ করে শয়তানের পক্ষে। বস্তুত এরা হিযবুশ শয়তান, এরাই আসল মুনাফিক।

অনন্তর ইহুদি খৃষ্ট পোরুহিত রাব্বীরা তাদের ধর্মে যতটুকু বিকৃতি ঘটিয়েছিল ইসলামের আলেমরা তার চেয়ে হাজার গুন বেশি করে ফেলেছে। তদুপরি তওরাত ইঞ্জিল গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ না থাকার কারনে পোরুহিত রাব্বিদের ধর্ম বিকৃতির একটা সুযোগ ছিল কিন্তু কোরান অবিকৃত থাকা সত্বেও তারা ইসলামে বিকৃতি ঘটিয়েছে। যেমন ফিরকাবাজির বিধান লঙ্ঘন করে তারা উম্মাহকে অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত করেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ফরয উপেক্ষা করে তারা কোন্দল ও দলাদলি তে লিপ্ত রয়েছে, একে অন্যকে ধ্বংসের প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। কাজেই ইয়াহইয়া ও ঈসা (আঃ) এ যুগে আসলে ইসলামের আলেমদেরকে শুধু সাপ ভণ্ড ও মুনাফেক বলেই সম্ভোধন করতেন না, বরং আরো কঠোর ভাষায় অভিশংসিত করতেন।

আবার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আপনি বলেছেন, ‘তাদের থেকে ইসলাম ছিনিয়ে নেয়া মানে মায়ের কোল থেকে বাচ্চা ছিনিয়ে নেয়া, তাদের অবমাননা করা মানে ইসলাম অবমাননা করা। আমি পরে এ সম্পর্কে আলোচনা করব তবে এখন সংক্ষেপ উত্তর দিচ্ছি। মা পাগল হয়ে গেলে বাচ্চাকে তার কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে হয় নইলে বাচ্চা মেরে ফেলে। তদ্রুপ ফিরকাবাজ আলেমরা পাগল হয়ে গেছে, এরা ইসলাম, উম্মাহ ও নিজেদের ধ্বংস করছে, ইসলামের বিপরিত কর্মকান্ড করছে। কাজেই এদের হাত থেকে ইসলাম ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্র সমাজের হাতে ন্যস্ত করতে হবে, বিশেষত মাদরাসা ছাত্রদের হাতে। এদের কচি মগজে এখনো ফিরকার পোকা জন্ম নেয়নি বিধায় তারা কোরানের বিধানের সাথে গাদ্দারি করার সাহস পাবে না। এছাড়া ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির অন্য কোন পথ নেই।

আবার আপনি বলেছেন ‘তাদের অবমাননা মানে ইসলামের অবমাননা। একথা কখনো সঠিক নয়। কারণ ফিরকাবাজির কারনে তারা কাফের, কাজেই তাদের প্রতি সম্মান দেখানো মানে কাফেরকে সম্মান দেখালেন, ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসকারীকে সম্মান দেখালেন, ফিরকাবাজিতে উৎসাহ দিলেন, জাতি ধ্বংসের পথ খোলা রাখলেন। কাজেই ফিরকাবাজদের সম্মান দেখানো হারাম, বিলকুল হারাম। এদেরকে কোণঠাসা করতে হবে, জলে স্থলে অন্তরিক্ষে নিরিক্ষে সর্বত্র বয়কট করতে হবে। এরা জাহান্নামের কীট- তা জনগনের সামনে তুলে ধরতে হবে, ওদের নিঃশ্বাস হারাম করে তুলতে হবে যাতে ঐক্যে ফিরে আসে অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। সুতরাং প্রমান হল ফিরকাবাজদের সম্পর্কে আমার উক্তি যথার্থ ছিল, এ প্রস্তাব পাশ করুন। হাসান মুসান্না ভাবলেন, বিষয়টা দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে, তাই তিনি বললেন ‘এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে সামনে চলো। মাওঃ মোজাহিদ আবার শুরু করল--

বিষয়: রাজনীতি

৭৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File