চিঠি- ৩৫ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩:১০ দুপুর

ফার্নিচারের জন্য বেশ আগে থেকেই বলতেছে কিন্তু এ সময় ঝগড়ার মাত্রা বাড়িয়ে দিল আর বলল- এ তারিখের বিল তুলেই ফার্নিচার কিনে দিতে হবে। কিন্তু হাসানের সিদ্ধান্ত হল ফার্নিচার কিনবে না, স্ত্রী যেমন তার কথা শুনে না সেও তার কথা শুনবে না। সে যেমন স্বামীকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায় সেও স্ত্রীর কষ্ট দেখলে আনন্দ পায়। বিল তুলল কিন্তু ফার্নিচার কিনল না। তার মতি গতি, ভাব সাব পরিবর্তন হয়ে গেল, কথা কম বলে, বেশি একটা ঝগড়া করে না, গুরু গম্ভীর হয়ে থাকে। অর্থাৎ সে নিয়ত করেছে আর থাকবে না, চলে যাবে। হাসান মনে মনে হাসে- যাবে কোথায়, তোর বাপের জমিদারি নাই যে বসে বসে খাবি। তোর বাচ্চা হয়ে গেছে, তার উপর তাল পাতার সেপাই যে নাকবুচা মার্কা চেহারা কোন রাজকুমার বসে আছে তোকে নেয়ার জন্য। আমাকে ছাড়া এ পৃথিবীতে তোর আর কোন আশ্রয় নাই। তুই কত বড় জেদি মেয়েটা আমি তা দেখে ছাড়ব। আসলে ওকে জব্দ করার জন্য এ একটি জিনিসই তার হাতে ছিল, সেটাই কাজে লাগাল।

বিল তুলার তিন দিন পর হাসান বাড়িতে যাবে, বের হবার আগে বাথরুমে ঢুকল। সাথে সাথে সে ঘরের মেঝেতে বসে কান্না শুরু করল। এমন সর্ব রিক্ত, সর্বহারার মত কাঁদছে যে কেউ শুনলে বলবে যে, মেয়েটির স্বামী মারা গেছে। হাসান কিসের টয়লেট করবে সব উজিয়ে উঠল, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পাথরের মত শুধু বসে রইল। সে এভাবে আকুল হয়ে প্রায় দশ মিনিট কাঁদল। তারপর হঠাৎ কান্না থামিয়ে বাথরুমের সামনে এসে ডাক দিল- কি হল এত দেরি কেন? হাসান কোন কিছু না করেই বেরিয়ে এল। দেখে তার চেহারায় কান্নার চিহ্ন মাত্র নাই, হাসি খুশি উচ্ছল মুখটা চকচক করছে। এর রহস্য হল আগে সে ভেবেছে, এ তারিখে যাবে আর আসবে না। আর তখনি সে কান্না জুড়ে দিয়েছে। কান্নার মধ্যেই সে সিদ্বান্ত করেছে যাবে না, তখন তো স্বামী সন্তান সংসার টিকে গেল, ব্যস কান্না থেমে গেছে, আর সেও খুশি হয়ে গেছে। এ মেয়েটা ছিল এমনি উন্মাদ।

যাওয়ার সময় তারা দিল- বাড়িতে গেলে তো আর বউ বাচ্চার কথা মনে থাকে না, দেরি করেন না যেন, তাড়াতাড়ি এসে পরবেন। ইতিমধ্যে মনটা একটু নরম হয়ে গেল, ভাবল বাড়ি থেকে এসে যা চায় কিনে দেবে। কিন্তু বাসে বসে বসে আজে বাজে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনটা ক্ষেপে গেল। আরে বাবা, দুনিয়ার কত বিত্তশালি বাবার মেয়ে স্বামীর জন্য পথে ঘাটে, গাছতলায়, রাস্তায় পরে আছে তারা তো স্বামী ফেলে চলে যায় না। আর সে ফার্নিচারের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, যাক গা এমন বউয়ের আমার দরকার কি। তার মনে পরল- পশ্চিম পাড়ার স্বামী-স্ত্রী দুই জন বহু বছর তাদের বাড়িতে কাজ করেছে, মহিলাটা ছিল খুব ধনী বাবার মেয়ে, পুরুষটা তাদের বাড়িতে বছুরে কাজ করত। প্রেম করে পালিয়ে আসে। বাবা নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু যায়নি, বেঁচে নিয়েছে এক লাঞ্চিত ও অভিশপ্ত জীবন অথচ স্বামী ত্যাগ করেনি। আর তার স্ত্রী ফার্নিচারের জন্য চলে যাবে, ধিক শত ধিক এমন স্ত্রীর কপালে। এ বছরের মধ্যে সে কিচ্ছু কিনবে না, দেখবে কি করে।

তিনদিন পর এসে স্ত্রীকে এডির বাসা থেকে আনতে গেল। তাকে দেখেই মেয়ে তার মায়ের কোলে থেকেই হাত পা নাচাচ্ছে আর মাথা ঘুরাচ্ছে। কী অবাক কান্ড, এতটুকু মেয়ে বাবাকে দেখে এত আনন্দিত হল যে, তার দিকে তাকাচ্ছে আর হাত পা ও মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তার মায়ের কোলে নাচছে। ফেরদৌসী বোনকে ডেকে বলল- হাফু আপা দেখ বাপেরে দেখে মেয়ে কী করছে। শুধু মেয়েই না, তার মায়ের চেহারাও খুশিতে চকচক করছে। বাসার সামনে গিয়ে ফেরদৌসী বলল- এখানে গরু এসেছিল।– কী করে বুঝলে? – গরু গরু গন্ধ পাচ্ছি। হাসান আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সেই অনেক দুরে একটা গোবর দেখা যায়। - আশ্চর্য্য, তুমি বুঝলে কেমনে, আমি তো কোন গন্ধই পেলাম না। সে বলল, আমি সব কিছুর গন্ধ পাই, বুঝতে পারি। আব্বা বলত বুচা নাক উচা বেশি। হাসান বলল ঠিকই বলেছ, এজন্যই তো সব সময় তোমার নাকটা আমার মাথার উপর উঠিয়ে রাখ। এটাই ছিল স্বামীর সংসারে ফেরদৌসির শেষ আগমন। এরপর সে মাত্র কয়েক দিন ছিল।

এ তারিখে বাসায় আসার পর আর তাকে সুস্থ বলার সুযোগ ছিল না, মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তবে আগের হিংস্রতাও ছিল না। আহত সিংহী যেমন মাটিতে পরে গিয়ে আক্রমণের জন্য মাটি আঁচড়াতে থাকে তার অবস্থা ছিল অনুরূপ। আসলে যা ঘটতে যাচ্ছিল তার আলামত প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল। এখন আর সে ফার্নিচার, কাজ কর্ম খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি নিয়ে ঝগড়া করে না। এবারের ইস্যু হল শুধু হাসানদের বাড়ি। প্রতিদিন খাওয়ার পর হাসান শুইত আর সে তার কোমরের কাছাকাছি মুখ বরাবর বসে-হাসানদের বাড়ির মানুষ ভালা না, তার ভাইয়েরা ভালা না, ঢালাও ভাবে গালমন্দ করত। হাসানকে বলত- আপনের ভাইয়েরা আপনেরে মানে না তাহলে দুইদিন পর পর লেজ খাড়া কইর‍্যা বাড়িতে দৌড়াতে হয় কেন। বউ বাচ্চার দরদ নাই, খালি ভাইদের জন্য দরদ। এই ভাইয়েরাই একদিন শায়েস্তা করবে, ভাই দরদ পাছা দিয়ে বাইর করব। তারা সব কিছু লোটেপোটে খাইতাছে আপনেরে কি দেয়? প্রতি বছর জমি রাখে আপনের নামে দেয়? তারপর হাসানকে ওয়াদা করানোর চেষ্টা করত আর বাড়িতে যাবে না, বাড়ির জমি বণ্টন করবে, আলাদা ঘর করবে।

হাসান ছিল দুধের পোকা। বাড়িতে সব সময় তাদের প্রচুর দুধ থাকত। তার মা বড় একটা পাতিলে দুধ গরম করতেন, পাতিলে অনেক সর লেগে থাকত। ছোট বেলা থেকেই মা তাকে পাতিল ও একটা চামচ দিতেন, সে চামচ দিয়ে কুড়ে কুড়ে সর খেত। এটা ছিল তার খাদ্য তালিকার সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য। বাসায় এক কেজি করে দুধ রাখত মেয়ে কিছুটা খেত বাকিটা তার মা খেত, হাসান এক ফোটাও খেত না। একদিন রাত্রে খেতে বসে দেখে দুধের পাতিলে লালচে বর্ণের সর লেগে আছে, বিড়ালের মত তার জিবের ডগায় পানি এসে গেল। পাতিলটা কাছে টেনে নখে আচড় দিয়ে একটু সর মুখে দিল। অমনি সে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে- এত খাইতে মন চায় তো সবটা খান- বলে পাতিলটা ধরে উপোর করে হাসানের পাতে ঢেলে দিতে চাইল। সে শক্ত করে ধরে ফেলল তবুও কিছু দুধ পরল পাতে, কিছু মাটিতে আর কিছু পাতিলে থাকল।

সে রাগে খাবার ছেড়ে উঠে নাচতে লাগল আর হাসানকে গালাগালি শুরু করল, এত দুধ খাইতে মন চায় বেশি করে আনলেই তো হয়। বউ বাচ্চার জন্য আনা দুধের দিকে এত লোভ কেন? কিনার মুরোদ নাই খাওয়ার লোভ। দুই কেজি করে দুধ আনুক, তাইলেই তো খাওয়া যায়। এজন্যই তো মেজো আপা উচিত কথাই বলেছিল। একবার তার শাশুড়ি বেড়াতে গেল। তখন বাচ্চার জন্য আধা কেজি করে দুধ আনত। ওমা বেটি বলেকি- দুধ না খেয়ে তোর নাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে- বলে দুলা ভাইয়ের পাতে দুধ দিল। তখন মেজো আপা বলল- এত খেতে মন চাইলে এক কেজি করে আনলেই তো হয়। সে আরো লজ্বাস্কর উপমা দিতে শুরু করল।

হাসান লজ্বায় ঘৃণায় অপমানে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিল। তার একটা অভ্যাস কোন দিনই কারো কাছে কিছু চেয়ে খায় না, এটা তার স্ত্রীও জানে। মায়ের কাছে পর্যন্ত কোন দিন কিছু চেয়ে খায়নি। মা দেখলেই এই তোর খিদা লাগছে খেয়ে যা, এটা ওটা জোর করে খাওয়াতেন। এটা তার মুদ্রা দোষ। ক্ষিধেয় মরে গেলেও স্ত্রীর কাছে কোন দিন চেয়ে খায়নি। অথচ আজ একি হল, ছি ছি সে তো দুধ খেতে চায়নি, একটু সর মাত্র- যা প্রতিদিন সে ধুয়ে ফেলে দেয়। আর এটুকুর জন্য এতটা অপমান হতে হল। দুঃখে কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে অপমান সহ্য করছে আর নাক বেয়ে দর দর করে পাতে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। হাত ধুয়ে উঠে মনটা হালকা করার জন্য বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ ঘোরাফিরা করে সিদ্ধান্ত নিল এভাবে আর চলে না, তিন রুমের একটা বাসা নিয়ে নিজে এক রুমে নির্বাসন গ্রহণ করতে হবে। পরদিন থেকে বাসা খোজা খোজি শুরু করল। অনেকের সাথে আলাপ করল কিন্তু পর্দাসহ পসন্দ মত বাসা পাচ্ছিল না।

সে গত গ্রীষ্ম কালীন ছুটিতে হাসানদের বাড়ি হতে আসার পর থেকেই শাশুড়ির কিছুটা সমালোচনা করতে চাইত। তার অভিপ্রায় হাসান বুঝে, এরা সাধারণত শাশুড়ি বিদ্বেষী, সে চাইত শাশুড়ির সমালোচনা করে বাড়ির সাথে ও মায়ের সাথে হাসানের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে। সুযোগ পেলেই সে শাশুড়ির বদনাম করার চেষ্টা করত। তখন হাসান ধমক দিয়ে বলত- দেখ আমার সম্পর্কে, আমার ভাইদের সম্পর্কে তোমার যা মন চায় বল আপত্তি নাই। কিন্তু আমার মা সম্পর্কে সাবধান একটি কথাও বলবে না, আমার মা খুব দুঃখি বেচারি, এমন শাশুড়ি পাবে না। সে জানত তার স্ত্রীর মত খাংকি মাগিরা কোন দিন শাশুড়ির খেদমত তো করেই না বরং হিংসা করে, মেরে ফেলতে চায়, এদের সবগুলি বোন এই চরিত্রের। তবুও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাখার জন্য সে বলত- আমি বড় ছেলে, আম্মা তো আমার সাথেই থাকবেন, তোমাকে খেদমত করতে হবে। সে ছিটিয়ে উঠত- আমি কেন আপনি করবেন। - আমিই তো করব কিন্তু আমার দায়িত্বটা তো তোমার উপর বর্তায়। - কেন কোরআন হাদীসে আছে নাকি যে শাশুড়ির খেদমত করতে হবে। - হাসান অবাক হয়ে যেত, এরা কোন ধরণের ধার্মিক, কোন ধর্মের অনুসারী, কোন গ্রহের বাসিন্দা। সে খেদমত করবে না সেটা জানে কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে অস্বীকার করা ও কোরআন হাদীসের দলীল চাইতে কোথাও শুনেনি।

তখন সে বলত- তাহলে কি তোমার মতে পৃথিবীর এইসব বিদায়ি অতিথিরা-যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদের জীবন তিলে তিলে ক্ষইয়ে পৃথিবীটাকে আমাদের জন্য প্রশস্ত করে যায়, তারা অক্ষম বয়সে পৌঁছে অচ্যুত হয়ে তিলে তিলে রোগে শোকে ধোকে ধোকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে, কেউ তাদের প্রতি ফিরেও তাকাবে না, এটাই কি তোমার অভিপ্রায়? সে বলত- আমি এত কিছু জানি না, আপনের মা আপনে খেদমত করেন না করেন সেটা আপনের ব্যাপার কিন্তু আমি পারব না। তখন হাসান কোরআন হাদীসের দলীল দিত আর শুরু হত ঝগড়া। তার সাথে হাসানের পার্থক্য ছিল এই যে, সে স্বামী হয়েও তার মাকে বাসায় এনে খেদমতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আর ফেরদৌসী স্ত্রী হয়ে তার মায়ের নাম পর্যন্ত শুনতে পারত না। এভাবেই ধীরে ধীরে তার সাহস বেড়ে যাচ্ছিল।

হাসান দুপুরে খেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, ফেরদৌসিও অভ্যাস মত তার কোমর বরাবর এসে বসল। আর এ দিনই ঘটল চূড়ান্ত ঘটনাটা। সে প্রথমে হাসানদের বাড়ির বদনাম শুরু করল। হাসান তার বকবকানি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, কান দিত না, অন্য মনস্ক হয়ে থাকত। কিন্তু তখন কান লাগাল যখন সে বলল- আমি যে ঐ বাড়িতে পায়ের ধূলা ফালাইছি এইডাই তো বেশি। আমারে আবার কাজের অর্ডার দেয়। বেটিটার সাহস কত বড় আমারে কাজের হুকুম করে, তখন চুলের মুঠিটা ধইর‍্যা কোমরে কয়েকটা লাগাইয়্যা দিলেই উচিত শিক্ষা হইত। আরো কি সব বলতে লাগল। কিন্তু এতটুকু শুনেই হাসান স্তম্ভিত হয়ে গেল, তার কান বন্ধ হয়ে গেছে। একটা লৌহ শলাকা তার বুকটা এপোর ওপোর করে দিল। সহসা যেন আকাশটা ভেঙ্গে তার উপর পড়ল, তড়িৎ বেগে সব রক্ত মাথায় উঠে গেল, চোখে অন্ধকার নেমে এল। শরীরটা বোমার মত ফেটে পরার উপক্রম হল। মন চাচ্ছিল কুত্তিটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে ওর দেহের প্রতিটা কোষ থেকে কোষ আলাদা করে ফেলে। কিন্তু ধৈর্য্য ধারনে সে অভ্যস্ত ছিল। বুঝল বাসায় থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল, জামা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

মনে হচ্ছে টাল খেয়ে পড়ে যাবে, মাথা ঘুরছে, বাসা থেকে বেরিয়েই কেঁদে ফেলল। পাগলের মত উর্ধ্বশ্বাসে ছোটে চলেছে, কোথায় যাচ্ছে জানে না। মন চাইছিল রাস্তার পথিকদের জড়িয়ে ধরে ধরে কাঁদে- ও ভাই শুনেন, আমার বউ আমার মাকে কী কথাটা বলল। ও চাচী দাড়ান, আমার মা সাত বছর বয়সে ইয়াতিম হইছিল। ও আপা শুনেন- আমার মা পয়ত্রিশ বছর বয়সে নয়টি সন্তান নিয়ে বিধবা হইছিল। ও চাচা দাঁড়ান, বহুদিন আমি দেখেছি গভীর রাত্রে মা বসে বসে আমার ছোট ছোট ভাই বোন গুলিকে হাত পাখার বাতাস করছে আর কাঁদছে।ঐ একটা বাজারি বেশ্যা, জাহান্নামের কুত্তি আমার জনম দুঃখী মাকে কী কথাটা বলল। আমার মা আমার পনের বছরের দুর্বল কাঁধে হাত রেখে কত কষ্ট করে এই ভবদরিয়া পাড়ি দিয়েছেন- আমি এর চাক্ষুস সাক্ষী। কষ্টাতিশয্যে যেন সে বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, পায়ে পায়ে বারি লাগছে, পরনের লুঙ্গি পাত পাত করে পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাথা চেপে ধরে উর্ধ্বে তাকিয়ে গুমরে কেঁদে উঠল- হায় আল্লাহ্, সারা জীবন কষ্টের এই বুঝি তুমি প্রতিদান দিলে। একটা জাহান্নামের কুকুরিকে তুমি আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে দিলে, এই বুঝি তোমার ইনসাফ। হঠাৎ সামনে নদী দেখে বুঝল ব্রক্ষপুত্রের কিনারে পৌঁছে গেছে।

সে ভাবল- এর অত্যাচারে আমার জীবনটাই জাহান্নাম হয়ে গেছে। এখন তো দেখি এই জাহান্নামের কুত্তি আমাকেও টেনে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আমার মা তাকে বলেছিলেন আমাকে আম কেটে দিতে। দু ঘণ্টা বলার পরেও যখন কাটল না তখন তিনি বলেছিলেন তুমি নামাযে যাও আমিই কেটে দিচ্ছি, তোমাকে আর কাটতে হবে না। এটুকু রাগ দেখালেন কেন এজন্য আজ সে এমন জঘন্য কথাটা বলল। আরেকটু হলে তো এ ধরনের মেয়েরা শাশুড়ির গায়ে হাতও তুলতে পারে। এরা বস্তির মেয়ে, বাজারি মেয়েদের চেয়েও নিকৃষ্ট। না যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। আজই ওকে তালাক দিয়ে বিদায় করতে হবে। বদমেজাজি মুখরা স্ত্রী নিয়ে ঘর করা যায় জাহান্নামের কুত্তি নিয়ে ঘর করা যায় না। সে নিজের সাথে আমাকেও জাহান্নামের পথে টেনে নিয়ে যাবে।

হাসানের মা ছিলেন একটা প্রতাপশালী ও প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে- যে পরিবার টানা এক শত বছর ধরে ইউ পি চ্যায়ারম্যান পদ ধরে রেখেছে। সর্বোপরি তিনি ছিলেন জোয়ান তাগড়া ছয়টি ছেলের মা, এমনকি মা বাবা দুটোই। কারণ হাসানের বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার কাছে যা প্রয়োজন ছেলেদের তা মায়ের কাছেই চাইতে হত, আবার মায়ের কাছে যা প্রয়োজন তাও মায়ের কাছে চাইত। এজন্যই ছেলেরা কৌতুক করে মাকে আম্বা বলে ডাকত এবং পৃথিবীর যে কারো চেয়ে মাকে অধিক ভালবাসত। কাজেই তাদের মাকে এমন কুৎসিত কথা অন্য কেউ বললে ততক্ষণে তার লাশ মাটিতে গড়াগড়ি যেত।

সে ভাবল- মায়ের খিদমত করা ফরয, আর আমার স্ত্রী মায়ের চুল ধরতে চায়। এধরনের স্ত্রী নিয়ে ঘর করা হারাম, তালাক দেয়া ফরয হয়ে গেছে। তাছাড়া একথা আমার ভাইয়েরা শুনলে তো ওকেও মেরে ফেলবে, আমাকেও বাড়ি ছাড়া করবে। কাজেই যার রূপ- গুন- শিক্ষা কিছুই নাই এমন একটা জাহান্নামি নারীর জন্য আমার ইহকাল পরকাল নষ্ট করব কেন? এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করার জন্য সে নদীর ধারে একটা গাছের তলায় গিয়ে বসল।

বিষয়: সাহিত্য

১৫৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File