মোবাইল ও ইন্টারনেট বাড়ছে ডিজিটাল নির্যাতন

লিখেছেন লিখেছেন এস কে দোয়েল ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩৮:৩৬ বিকাল

বিশ্বে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। নানা বয়েসী কিশোর থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে মোবাইল এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১০ বছর আগেও ছেলেদের হাতে ঘড়ি একটা শোভাবর্ধন ফ্যাশন ছিল। হাতে হাতে মোবাইল আসায় ঘড়ির কদর যেন মরিচীকায় পৌছেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের অন্যতম ফ্যাশন যেন এখন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট। যার হাতে মোবাইল আছে সে যেন গোটা পৃথিবীর দর্শনীয় রাজা। ইন্টারনেটের আদলে গুগলের মানচিত্র দেখে কয়েক মিনিটে ঘুরে আসা যায় গোটা বিশ্ব। কিন্তু মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারে ডিজিটাল নির্যাতনের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যার কারণে এর অত্যাচার-নির্যাতনে অনেকের জীবন এখন দুর্বীষহে। কেউ ভয়েই মুখ খুলছেন না, মোবাইলের স্কিনে রিংটোন বাজলেই ভয়ে শিউরে উঠেন। কেউ বিরক্ত চিত্তে কলটি রিসিভ করেন না। কেউ সারাদিন ফোনে কথা বলতে বলতে অস্থির হয়ে বন্ধ রাখেন ফোন। মিসড কল অ্যালার্ট থাকায় বন্ধ মোবাইল ওপেন করতেই কেউ দেখেন তার মোবাইলে একাধিক মিসড্ কল। অকপটে বলা যায়, প্রযুক্তির এই মোবাইল হাল ফ্যাশন এখন এক ধরণের নির্যাতনের ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছে।

মোবাইল নিয়ে যেমন নতুন প্রজন্মের আগ্রহের শেষ নাই, তেমনি কিছুদিন ব্যবহারে এটা এক ধরণের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় দেখা যায়। প্রযুক্তির মাল্টিমিডিয়া মোবাইলে যোগ হওয়াতে অডিও, ভিডিও ও রিংটোনের মাধ্যমে নতুন পুরাতনদের নানাভাবে সময় কাটে। কারও গানে গানে সময় কাটে, কারও ভিডিও গান, মুভি, নাটক দেখে সময় কাটে আবার কারও সর্বনাশা নেশা পর্ণভিডিও নেশায় স্বীয় দেহের ওপর মাস্টারভিশনের মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন চালান। কারও প্রযুক্তির নেশা ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডুবে থেকে যাপিত সময় কাটে। তবে মারাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে অস্থির হয়ে উঠছে জীবন। মোবাইল প্রযুক্তি ঘিরেই প্রতিনিয়ত ঘটছে নানারকম সামাজিক অপরাধ ও নির্যাতনের মত ভয়ংকর ঘটনা। বখাটে ইভিটিজারদের হাতে প্রায় মোবাইলে আপত্তিকর ছবি উঠানো, জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে সেই ভিডিও-পিকচার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে আতঙ্কিত হতে দেখা যায় নারীদের। কেউ বাধ্য হয়ে ওই ইভটিজারের সাথে দীর্ঘদিন ধর্ষণের শিকার হয়ে কূল কিনারা না পেয়ে আত্মহুতির পথ পর্যন্ত বেছে নেয়। কেউ প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও মোবাইল কলের মাধ্যমে নানা হুমকিতে আতঙ্কিত সময় কাটায়। আধুনিক নির্যাতনের অন্যতম যেন এখন মোবাইল ফোন।

দেশে মোবাইল ফোনে ডিজিটাল নির্যাতনের শিকার নানা বয়েসী নারীরা। বেশির ভাগ নির্যাতিত হচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণীরা। বখাটেদের উৎপাত, মোবাইলে প্রেমের প্রস্তাব, প্রস্তাব নাকচ হলে ধর্ষণ, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকি, শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোবাইল কলের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, ফোনে দেখা করতে বলে ব্ল্যাকমেইল করে নির্মম নির্যাতনের ঘটনাও জানা গেছে। মোবাইল ছাড়াও কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারেও বাড়ছে যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেইল, প্রাণনাশের মতো নির্যাতনের ঘটনা। বিশ্বে কয়েক কোটি মানুষ ফেসবুক, টুইটার ও অনলাইন পোর্টাল ব্লগ, নিউজপেপারে সময় কাটান। সাধারণত ফেসবুক আর টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে বাড়ছে ডিজিটাল নির্যাতনের সর্বাধিক ঘটনা। গোপন তথ্যফাঁস, ক্যামেরা বা মোবাইলে তোলা ছবি, পারিবারিক দুর্বলতা বিষয়গুলো অগোচরেই প্রচার হয়ে যাচ্ছে এসব সাইটে। বন্ধুর কাছে বিশ্বাস করে বলা কথাটাও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। বিশেষ করে নানা বয়েসী নারীরাই এসব নির্যাতনের সর্বাধিক ভুক্তভুগি। উঠতি বয়সে কিশোরী, টিনএজ তরুণীদের ছবি, মোবাইল নম্বর বিভিন্ন মাধ্যমেই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে ফেসবুক ইন্টারনেটে। যার বিপরীতে ঘটছে এসব নিত্যনৈমিত্তিক ডিজিটাল নির্যাতনের ঘটনা। অকারণেই অনেক নারীরা পড়ছেন অপবাদের মতো নিষ্ঠুর লাঞ্চনায়। যার প্রেক্ষিতে কেউ লজ্জায় মুখ দেখাতে না পেরে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। এসব নিত্যনৈমিত্তিক ডিজিটাল নির্যাতন ঠেকানো যাচ্ছে না যেন কিছুতেই। ইভটিজিং, ধর্ষণ, নির্যাতন, উত্ত্যাক্ত করার আইনকানুন থাকলেও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না আইন প্রশাসন। এসব অপরাধের অভিযুক্ত হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছেন অপরাধীরা। তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইন্টারনেট ও মোবাইল প্রযুক্তির ওপর কঠিন নজর ও অপরাধ ঠেকানোর কৌশল নিলেই হয়তো কমে যাবে এসব ডিজিটাল নির্যাতনের নীলনকশা।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File