ফিরে দেখাঃ হেফাজতে ইসলাম,১৩ দফা দাবি ও ৫ মে (নিজ স্মৃতিতে )

লিখেছেন লিখেছেন শুভ কবি ০৫ মে, ২০১৬, ০২:৪০:৪১ দুপুর



২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ” সংগঠনটি চট্টগ্রামের প্রায় ১০০টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক শাহ আহমদ শফি এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ইযহারুল ইসলাম এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। মূলত এদেশে ২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটুক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবী করে ব্যপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে এবং এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করে সকলের আলোচনার কেন্দ্রে উপনীত হয়।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফাদাবি সমূহঃ

১।সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।

২।আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।

৩।শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।

৪।ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।

৫।ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।

৬।সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।

৭।মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।

৮।জাতীয় মসজিদ বায়তুল মকারম দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।

৯।রেডিও-তেলিভিশনের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাতক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।

১০।পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।

১১।রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র রাসুলপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।

১২।সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।

১৩।অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও রাসুলপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।





দেশব্যাপী মোসলমানদের হেফাজতের ডাকে সাড়া প্রদানঃ

হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষিতে দেশের মুসলিমদের মাঝে প্রচুর পজেটিভ সাড়া পরে যায়। যার ফল স্বরূপ দেশের সকল বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করে এবং সেই সকল সমাবেশে বিপুল জন সমাগম হয়। দেশের সকল স্তরের মুসলমানগণ হেফাজতের প্রতিটি সমাবেশকে স্বাগত জানায়।





ঢাকায় লংমার্চ ও সমাবেশঃ

৬ই এপ্রিল, ২০১৩ হেফাজতে ইসলাম সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ করে এবং ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে তাদের প্রথম সমাবেশ করে। এই সমাবেশে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। এসময় বিভিন্ন বাধার কারণে অনেক কর্মী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তারা চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে সমাবেশ করে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের কর্মীদের সাথে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং কিছু হতা-হতের ঘটনা ঘটে।





ঢাকা অবরোধঃ

২০১৩ সালের ৫ই মে, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং ঢাকার মতিঝিলে তাদের দ্বিতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। ৫ ও ৬ই মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এই সংগঠনের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে বহু হেফাজতে ইসলামের কর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্য নিহত হয় এবং সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হয়। সেদিন স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে বায়তুল মকারম মসজিদের ফুটপাতের দোকানে আগুন লাগিয়ে কোরআন শরীফ পোড়ানো হয়। পল্টন মোড় ও সিপিবির কার্যালয়ের সামনে পুরোনো ৩৫টি বইয়ের দোকানের মধ্যে ৩টি বাদে সবগুলোই পুড়িয়ে দেওয়া হয়।যদিও আওয়ামি সংগঠন উপরন্তু হেফাজতের উপরই কোরআন শরিফ পোড়ানোর অভিযোগ আনে।





৬ই মে, সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে, ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ৫ই মে শাপলা চত্ত্বরে গভীর রাতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে হেফাজতের কর্মীদের বানিজ্যিক এলাকা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে সরকারী আইন-শৃংখলা বাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করে। পুলিশ,RAB ও বিজিবির সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া এই অভিযান পরিচালনার পূর্বেই সরকার বিরোধী স্যাটেলাইট টেলিভিশন – দিগন্তটিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ৫ই মে শাপলা চত্তরে গভীর রাতে সরকারি আইন-শৃংখলা বাহিনী হেফাজতে ইসলামের শত শত কর্মীকে হত্যা করে এবং তাদের লাশ গুম করে। এশিয় মানবাধিকার কমিশন থেকে বলা করা হয়, বিভিন্ন ইন্টারনেট রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তারা ২৫০০ বা তারও বেশি হেফাজত কর্মী ওই হামলায় নিহত হতে পারে বলে ধারনা করছে এবং এজন্য তাদের রিপোর্টে একে গণহত্যা বলে অভিহিত করে।





এদেশে ঘটনা ঘটে কিন্তু সেই ঘটনার পিছনে পর্দার আড়ালের লোকেরা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়। হেফাজতের উপর ঘটা ৫ই মের ঘটনা তেমনি। যেসব মিডিয়া ছিল প্রকাশের হুমকি সেগুলোর মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে পৃথিবীর কোন কিছুই চাপা থাকেনা। পাপও বাপকে ছাড়েনা। আজ না হয় কাল ৫ই মের ঘটিয়মান রাতের আধার কেটে আসবে সোনালী সকাল। আর সেইদিন হয়ত সে রাতের নেপথ্যের ব্যক্তি বর্গের ললাটে বয়ে আসবে তিমির রাত।

বিষয়: রাজনীতি

২০৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368093
০৫ মে ২০১৬ রাত ০৯:৫২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

পৃথিবীর কোন কিছুই চাপা থাকেনা। পাপও বাপকে ছাড়েনা। আজ না হয় কাল ৫ই মের ঘটিয়মান রাতের আধার কেটে আসবে সোনালী সকাল। আর সেইদিন হয়ত সে রাতের নেপথ্যের ব্যক্তি বর্গের ললাটে বয়ে আসবে তিমির রাত।


যথার্থই বলেছেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File