আসুন নিজে নিজেই যাচাই করি : আমরা প্রিয়নবী (সা)এর কেমন উম্মত?(পর্ব-১)

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৫ আগস্ট, ২০১৫, ০২:১৬:১৮ দুপুর



বর্তমান বিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলমান হযরত মোহাম্মদ (সা)এর উম্মতের দাবীদার। জন্মগতভাবে আমরা মুসলমান কিন্তু আমাদের মুসলমানিত্ব কতটুকু বজায় আছে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আমরা কেমন নবীর উম্মত? আমরা আকন্ঠ শিরক-কুফরী-বিদআতে লিপ্ত আছি, নাফরমানীতে ডুবে আছি, অহরহ পাপাচারে নিমজ্জিত। আমরা নবীর শিক্ষাকে জানি, কিন্তু আমল করি না, বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করি না, আর কেউ করলে তার বিরুদ্ধে লাগি। আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে তাগুতের আইনে মাথা নোয়ায়ে দিয়েছি, বিভিন্ন বাদ মতবাদে শির নত করে দিয়েছি। রাসূল (সা) এর জীবনাদর্শ যে শান্তির, সুখের, জান্নাতের, মুক্তির-তাঁর প্রদর্শিত পথই আল্লাহর সন্তুষ্টির, একথা জানার পরও আমরা কতটুকু মেনে চলছি? আমরা কেমন মুসলমান? আমরা আমাদের ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করি, অধীনস্থদের নির্যাতন করি, তাদের অধিকার দিই না, অন্য জাতির অনুকরণ করি, ছিনতাই, লুটপাট, হত্যা রাহাজানিতে লিপ্ত আছি, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করছি, জাতিকে সঠিক পথে না চালিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করছি। স্ত্রীর অধিকার দিচ্ছি না, কন্যার অধিকার দিচ্ছি না, আসল প্রভুকে বাদ দিয়ে নকল প্রভুর গোলামী করছি, দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কলম ধরছি। আমরা ছোটদের স্নেহ করা কমিয়ে আনছি, বড়দের সম্মান করা ভুলে যাচ্ছি, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ভুলতে বসেছি। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ কুতুব (র) ঠিকই প্রশ্ন করেছেন তার লিখিত একটি গ্রন্থের মাধ্যমে, আমরা কি মুসলমান?



নামে মুসলমানদের মাঝেও অনেককে আল্লাহর রাসূল (সা) তাঁর উম্মত নয়, তাঁর দলের লোক নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আসুন কে বা কারা রাসূল (সা)এর উম্মত নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন তা হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্তভাবে পর্যালোচনা করি।

১। যারা বিয়ে না করে বৈরাগ্যবাদ গ্রহণ করে তারা আমার উম্মত নয় :

হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার তিন ব্যক্তির একটি দল নবীজী (সা)এর ইবাদত পদ্ধতি জানার উদ্দেশ্যে তাঁর স্ত্রীদের গৃহে এলেন। তাদেরকে এ ব্যাপারে জানানো হলে তারা এগুলিকে সামান্য মনে করলেন। তারা বললেন, কোথায় নবী করীম (সা) আর কোথায় আমরা? আল্লাহ তো তাঁর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন আমি আজীবন সারা রাত সালাত আদায় করব। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি সারা জীবন প্রতিদিন রোজা রাখব। কখনো দিনের বেলা রোজা ভাঙবও না, খাবও না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী সংশ্রব বর্জন করব এবং সারা জীবন অবিবাহিত থাকব। এমন সময় নবীজী (সা) এসে পড়লেন। তিনি বললেন, এই ধরনের কথাগুলি কি তোমরাই বলছিলে? শুনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি এবং অতি সতর্কতার সাথে তাঁর হুকুম মেনে চলি। কিন্তু এরপরও আমি দিনের বেলা রোজা রাখি, আবার রোজা ভেঙ্গেও থাকি। আমি রাত জেগে সালাত আদায় করি, আবার ঘুমাইও। আর আমি বিয়ে-শাদীও করেছি। কাজেই যারা আমার নীতি থেকে বিচ্যুত হবে তারা আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য হাদীসে রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “বিয়ে করা আমার আদর্শ ও স্থায়ী নীতি, যে লোক আমার এ সুন্নত অনুযায়ী আমল করবে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” ( ইবনে মাযা)

তিনি আরো বলেছেন, “যে লোক বিয়ে করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।”(দারেমী)



২। যারা ছোটদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না, তারা আমাদের দলভুক্ত নয় :

হযরত আমর ইবনে শোয়াইব (রা) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও দাদা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি (দাদা) বলেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, “যে আমাদের ছোটদের স্নেহ ও মমতা করে না এবং আমাদের বয়স্কদের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে জানে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ ও তিরমিযী)

৩। যে সুমধুর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে না, সে আমার দলভুক্ত নয় :

হযরত আবু লুবাবা বশীর ইবনে আবদুল মুনযির (রা) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা) বলেছেন, যে সুমধুর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)



অনুরূপ বর্ণনা হযরত আবু হোরায়রা (রা)এর রয়েছে সহীহ বুখারীতে।

৪। যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিখে, তা ছেড়ে দিল সে আমাদের দলভুক্ত নয় :

হযরত আবু হাম্মাদ ইবনে আমর-আল-জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে তীরন্দাজী শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, এরপর সে তা ছেড়ে দিল সে আমাদের দলভুক্ত নয়। অথবা (তিনি বলেছেন) সে যেন নাফরমানী করেছে।” (মুসলিম)

এখানে আত্মরক্ষা, দেশরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা নীতির ব্যাপারে সুষ্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। তাই আমাদেরকে অত্যাধুনিক যত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে তার সবগুলিই অর্জন করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সকল কলা-কৌশলও রপ্ত করতে হবে।

৫। মৃতের জন্য বিলাপ করে ক্রন্দনকারী আমাদের দলভুক্ত নয় :

মৃতের ব্যক্তির জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে শোকের সীমা কতটুকু, এই হাদীস থেকেই বুঝা যায়।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিপদের সময় নিজের মুখে চপেটাঘাত করবে, বুকের বস্ত্র ছিড়ে মাতম করবে এবং অজ্ঞতার যুগের লোকদের ন্যায় বিলাপ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

৬। যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে সে আমাদের জামায়াত ভুক্ত নয় :

হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করবে সে আমাদের জামায়াতভুক্ত নয়।” (মুসলিম)

অন্য হাদীসে আছে, যার জবান ও হাত থেকে আরেক মুসলমান নিরাপদ, সেই প্রকৃত মুসলমান বলে ঘোষণা হয়েছে।



৭। যে ব্যক্তি মানুষের সাথে প্রতারণা করে, ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় :

হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (মুসলিম)

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সা) খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের কাছে দিয়ে গমনের সময় স্তুপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁর হাতের আঙ্গুল ভিজা মনে হল। তিনি বললেন, হে শস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, ইয়া রাসূল¬ (সা) বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে। তিনি বললেন, তবে এসব ওপরে রাখনি কেন? তাহলে লোকজন দেখে শুনে ক্রয় করত। যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”



৮। যে ব্যক্তি স্ত্রী অথবা বাঁদীকে ধোঁকা দেয় চরিত্র নষ্ট করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় :

হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি স্ত্রী অথবা বাঁদীকে ধোঁকা দেয় ও তার চরিত্র নষ্ট করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)

৯। তাকদীর বিশ্বাস ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে সে আমার দলভুক্ত নয় :

হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেছেন, যে ব্যক্তি তাকদীরের ওপর বিশ্বাস ব্যতীত মৃতু্যৃবরণ করলো, সে আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়।”

(কিতাবুত তাওহীদ-শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব, পৃ.২২৮)

১০। বিজাতীয় অনুকরণকারী আমার দলভুক্ত নয় :

রাসূল (সা) বলেছেন, “সাবধান! পাদ্রীদের মতো পোশাক পরো না। যে ব্যক্তি তাদের পোশাক কিংবা তাদের সাদৃশ্য পোশাক পরবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (তাবরানী)



[আরো অনেক বিষয় আছে, যা করলে রাসূল (সা)এর উম্মত নয় বলে ঘোষণা করেছেন। কারো নজরে আসলে এ বিষয়ে আশা করি লিখবেন। কোন ভুল চোখে পড়লে সংশোধনী সাদরে গ্রহণীয়।]


(আগামী পোস্টে সমাপ্য.. ..)

বিষয়: সাহিত্য

২১৭৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

333872
০৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:০১
নৈশ শিকারী লিখেছেন : আসলে আমরা আমাদের রাসুল (সা: ) এর সবচেয়ে নিকৃষ্ট উম্মত।
০৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:০৫
275977
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : একদম ঠিক কথা বলেছেন!Good Luck Good Luck Good Luck
333889
০৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন, মানুষ কিছুটা হলেও নিজের অবস্থান নিয়ে চিন্তা করবেন। এবং সচেতন হবেন। ধন্যবাদ।
০৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
276017
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ, চমৎকার মন্তব্য শেয়ার করে নিজস্ব অনুভুতি প্রকাশ করার জন্য।আশাকরি রাসূল(সা)এর উম্মতেরা এ ব্যাপারে সচেতন হবেন।
333911
০৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ..
০৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
276016
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
333944
০৫ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আমরা তো এখন আল্লাহর বিধান এর চাইতে সং এর বিধান নিয়েই বেশি ভিত!
০৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
276188
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য শেয়ারিংএর জন্য..
333950
০৫ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:০১
এ,এস,ওসমান লিখেছেন :

এখানে আত্মরক্ষা, দেশরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা নীতির ব্যাপারে সুষ্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। তাই আমাদেরকে অত্যাধুনিক যত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে তার সবগুলিই অর্জন করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সকল কলা-কৌশলও রপ্ত করতে হবে।


আমি সামরিক বা বেসামরিক বাহিনীর লোক ব্যতীত কি করে প্রশিক্ষণ পেতে পারি Surprised Surprised

হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেছেন, যে ব্যক্তি তাকদীরের ওপর বিশ্বাস ব্যতীত মৃতু্যৃবরণ করলো, সে আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়।”


আর এই হাদিসের ব্যাখ্যা দিন দয়া করে। মানে আমি বুঝি নাই Yawn Yawn
০৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
276190
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ, গুরুত্বসহকারে পোস্টটি পাঠ করার জন্য..
হাদিসটি নেয়া হয়েছে..
(দেখুন-কিতাবুত তাওহীদ-শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব, পৃ.২২৮)
333971
০৫ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৫৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
জাযাকাল্লাহ খাইরান, অনেক কিছু শিখলাম।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
০৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭
276192
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম, জনাব আরেক অংশ আজ পোস্ট করব, যদি ভুল থাকে জানাবেন..Good Luck Good Luck Good Luck
333982
০৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:৫১
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : জং ধরা অন্তরে নাড়া দেবার জন্য এমনতর পোস্ট খুবই জরুরী। আল্লাহ আপনাকে আরো লিখার ক্ষমতা দান করুন।
০৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮
276193
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ, গুরুত্বসহকারে পোস্টটি পাঠ করার জন্য..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File