প্রাণের মানুষ, সেরা ব্যক্তিত্ব

লিখেছেন লিখেছেন ম রণতরী খান ০৪ জুন, ২০১৫, ১১:২১:৫১ রাত

…বাস্তবতার কাছে একসময় আমার স্বপ্নেরা খেই হারিয়ে ফেলে। পড়াশোনার মূলধারা থেকে একরকম ছিটকে পড়ে বিচ্ছিন্ন এক জীবন বেছে নেই। অন্ধকারের জীবনে কাউকে সাথী করি না আর। জীবনের সুখ ও দুঃখগুলো শুধু ‘জননী’ জানেন। ডাক্তার হবার যে স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান পড়েছিলাম, আজ তা পূরণ করতে পারিনি বলে নিজের মুখ নিজের কাছেই লুকাতে ইচ্ছে করে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাবলিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থান হয় আমার। ফুরিয়ে যেতে যেতেও থেকে যাওয়া বিশ্বাস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করি।

তবে কলম খুঁচিয়ে জীবিকা উপার্জনের এ জগৎ একেবারেই অচেনা আমার কাছে। এখানে মানুষ মানুষের পা কামড়ে ধরে। একজন আর একজনকে হেঁচকা টানে মাটিতে ফেলে দিতে পেরে উল্লাস করে। এসবে অভ্যস্ত হতে হতে আর এসব দেখতে দেখতে আমার সময় পার হয়ে যায়। এরই মধ্যে জীবন ধারণে পরিবর্তন এসেছে। চুকে যাওয়া বিশ্বাসে চূড়ান্ত ঘুণে ধরেছে। তবু কিছু একটা যেন রয়ে গেছে। যা ভালো কিছু করার শপথের কথা মনে করিয়ে দিয়ে যায়।

অনেক সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু কোথায় রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সেই প্রিয় গীতিকার, কবি, চিরবিপ্লবী মানুষটি। তার কথা অনেক মনে পড়ে আমার। এতদিন ভুলে থাকলেও আজ আর পারি না।

তার সাথে দেখা করতে যাওয়ার আগে ভাবি, লোকটা আমাকে মনে করতে পারবে কি না কে জানে, আমার নাম কি মনে আছে কবির। সে যাই হোক, মানুষটির সাথে আমার দেখা হওয়া দরকার। অনেক কথা জমে আছে। অনেক কিছু জানার আছে।

আমি নিয়ম করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি রেল লাইনে। রেল লাইনে আগের মতোই সন্ধ্যা নামে। সন্ধ্যার কোলাহল থেকে রাত গভীর হয়। শুধু কবি নেই। আমাকে এভাবে হাঁটতে দেখে প্রথম ওই লাইব্রেরিয়ানই জানান, কবি সত্যিই নেই। চলে গেছেন। আমি ভাবতে পারি না কিছু। উহ! বড্ড দেরি করে ফেললাম।

তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। জীবন চলে যায় জীবনের মতো করে। মানুষ বলেই হয়তো আমরা সব পারি। কতোকিছু ভুলে থাকে মানুষ। জীবন থেমে থাকে না। আমিও ভুলে গেছি অতীত জীবনের বহু কিছু।

ব্যস্ত এ জীবনে আমার মধ্যে থাকা বহু স্বপ্নই অকালে মুত্যুবরণ করেছে। বিত্তবৈভব না থাকলেও মোটের উপর ভালো থাকা জীবনে অন্য কিছু আসলে মাথায় আসে না। আমারও আসেনি গত ক’টা বছর ।কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো সেদিন, একজন ‘সাবেক নায়কে’র মৃত্যুর খবরে।তাকেও আমি চিনতাম খানিকটা।তার মৃত্যুটা কেন যেন আমাকে আর একটা মৃত্যুর কাছে টেনে নিয়ে যায়!সারাদিন অস্থির পায়চারি করে রাতে ঘুমোতে যাই।কিন্তু ঘুমোতে পারি না। চোখের দু’পাতা থেকে ঘুম উবে গেছে। একটা গুণ গুণ স্বর কানে ভেসে আসে। কী সব ভাবতে ভাবতে কখন যেন আমি ঘুমিয়ে পড়ি। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। কেউ একজন যেন আমাকে গান শোনাচ্ছে।

আমি ঘুম থেকে উঠি। ঘর অন্ধকার। কাউকে ধরার চেষ্টা করি। না কোথাও কেউ নেই। বহুদিন, বহুদিন পর অন্ধকারে নামাজে দাঁড়াই। আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে নিজেকে সঁপে দেই…।

ওইদিন ভোরেই কবিকে একটি চিঠি লেখি।

‘প্রিয় কবি, চির বিপ্লবী’

আপনার কি মনে আছে সেই ছেলেটির কথা! আজকের স্বার্থপর আর সুখ উন্মাদ এই আমি কিন্তু আপনার খানিক চেনা সেই ছেলেটিই। সত্যি বলছি, আপনাকে কখনো লিখব ভাবিনি। আমি জানি, যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি গান ও কবিতা নিয়েই আছেন। সাথে আছে আজন্ম লালিত বিপ্লব। দেশ, জ্বাতি ও স্বধর্ম নিয়ে আপনার মধ্যে উদ্বেগ আছে- সেটা আমি আঁচ করতে পারি। তবে এসব নিয়ে আমার মধ্যে আজ আর বিশেষ ভাবনা নেই, জেনে আপনি দুঃখিত হবেন না প্লিজ।

আপনাকে কেন লিখতে বসেছি জানেন। বলছি, আজ আমি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছি। স্বপ্নে তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। ভাবলাম, এত বড়ো আনন্দের খবরটা আপনাকে জানানো দরকার। আচ্ছা আপনি কি আন্দাজ করতে পারেন কে সেই ব্যক্তি! শুনেছি, পরপারের জীবনে নাকি মানুষ তার প্রিয় মানুষদের সাথে থাকার সুযোগ পায়। তাহলে আমি কি তার সাথে থাকার সুযোগ পাচ্ছি।

ভয় নেই আপনার। কথা দিচ্ছি, আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে খুব বেশি জ্বালাবো না। শুধু রাত নামানো সন্ধ্যায় মাঝে মধ্যে চোখ বন্ধ করে, দুর্বাঘাসে বসে তার গান শুনতে চাইবো। তিনি দরদ ভরা কণ্ঠে নিজের লেখা গান গেয়ে উঠবেন ‘এ আকাশ মেঘে ঢাকা রবে না/আলোয় আলোয় হেসে উঠবে। এ নদী গতিহীন হবে না/সাগরের পানে শুধু ছুটবে…’

গান শেষে আর একট গান শুনতে চাইলে তিনি এবার চোখ বন্ধ করে শুরু করবেন, ‘এত শহীদ রক্ত ঢালে/তবু কেন তোমার বিবেক কথা বলে না।/ এত চোখের অশ্রু ঝরে তবু কেন/ তোমার পাষাণ হৃদয় গলে না’/ হায়…

আলো আঁধারির খেলায় পৃথিবীর এর চেয়ে পবিত্র ও সুন্দর কোনো দৃশ্যের কথা কি আপনার জানা আছে কবি! গানের স্রষ্টা, মায়াবী গায়ক কাঁদছে, তরুণ শ্রোতাও কাঁদছে। শ্রোতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে গায়ক আবার গান ধরেন, ‘তুমিতো জানো গান শোনানো কত কষ্ট/গান শোনাতে গেলে কত সময় যে হয় নষ্ট।/সব ক্ষতি তবু আমি মেনে নিতে পারি/যদি তুমি কথা দিতে পারো।/দিন কায়েমের পথে অগ্রসর/অগ্রসর হবে তুমি আরো…

(প্রিয় ব্যক্তিত্ব- শেষ)

প্রিয় ফুল, অকৃত্রিম ঘ্রাণ

‘পথের সাথী, চির বিপ্লবী’

বিষয়: Contest_priyo

১৩৩৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324748
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩৫
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম! প্রতিটি লাইনে একটা চুম্বকীয় আকর্ষন বিরাজমান ছিলো ! পড়তে পড়তে ভেবেছি শেষতক হয়তো আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্বর নামটি আপনি লিখবেন! কিন্তু নাহ! আপানি উনাকে গভীর সমুদ্রে ঝিনুকে লুকায়িত মুক্তোর মতোই অবগুন্ঠিত রাখলেন!

খুবি ভালো লেগেছে! আপনার সফলতা কামনা করছি!
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
266741
ম রণতরী খান লিখেছেন : মনে হচ্ছে, আপনার মন্তব্য আমার লেখার চেয়েও ভাল।নিচের প্যারাটা আবার পড়ার অনুরোধ রইল।৩/৪ টা শব্দ যোগ করলাম! অনেক ধন্যবাদ।
324763
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:২১
শেখের পোলা লিখেছেন : আমার জন্য আপনার প্রীয় ব্যক্তিত্ব রহস্যেই রয়ে গেল৷ তবে বর্ণনার তারিফ করতেই হবে৷
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
266742
ম রণতরী খান লিখেছেন : ভাই, নিচের প্যারাটা আবার একটু পড়ে দেখবেন এবার বোঝা যায় কি না! আশা করি... জবাবের অপেক্ষায় রইলাম।
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
266819
শেখের পোলা লিখেছেন : এ গান শোনার সৌভাগ্য বা গায়ক লেখকদের সাথেও পরিচয় করার সময় পাইনি কিনা তাই ও গুলোও আমার কাছে ধোঁয়াশা৷ স্যরি৷
324769
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৪৬
ঝিঙেফুল লিখেছেন : উনার প্রতি এবং আপনার প্রতি অনেক দোয়া রইল Praying
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৪৭
266743
ম রণতরী খান লিখেছেন : আপনার জন্যও অনেক দোয়া।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
324817
০৫ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৩৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File