মায়ের গল্প, গল্পের মা...

লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ১৪ মে, ২০১৫, ১০:৪৮:৩০ রাত

দুষ্টু ছেলেটি তখন ক্লাস এইটের ছাত্র।ইনফেকশন থেকে বা পায়ে পচন ধরেছে।দিন বাড়তে, পচা গন্ধও বাড়ে।অবস্থা এমন যে, এক বড় আপা তাকে দেখতে এসে বমি করে দেয়।অথচ 'মা' সকাল বিকেল নিয়ম করে ছেলেটির পা পরিষ্কার করেন।ছেলের পাশে বসে খান, ছেলেকে খাওয়া বেড়ে দেন।প্রতিদিন সকালে রিকশা চেপে ডাক্তার বাড়ি নিয়ে যান।এভাবে দীর্ঘদিন পর ছেলেটি সুস্থ হলো।মায়ের কোল ছেড়ে চলে গেল হোস্টেলে।

আত্মভোলা সেই ছেলেটিকে আবার একদিন মায়ের কোলে ফিরে আসতে হলো।তখন সে ইন্টার পরিক্ষার্থী।জন্ডিশ আক্রান্ত হয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। ছেলেটি ঠিক করে কথাও বলতে পারছে না।মা সারাদিন ছেলেটির পাশে বসে থাকেন।সারারাত তার মাথায় পানির পট্টি দেন।ছেলেটা খাটে ঘুমিয়ে পড়লে তার মাথার পাশে মাটির মেঝেতে শোয়ে থাকেন মা।তখন বোধহয় শীত।ছেলেটা কিছুটা সুস্থ হয়।মাকে বলে পাশের রুমে গিয়ে খাটে শুতে।মা শুনতে না চাইলে ছেলেটা রাগ করে।এক রাতে তিনটার দিকে ঘুম ভাঙে ছেলেটির।পাশ ফিরে দেখে মা পাশে নেই।ও খুব খুশি হয়।

ভালোভাবে এদিক সেদিক তাকাতে খেয়াল করে তার দৃষ্টি এড়াতে একটু দূরে মা নিজেকে আড়াল করে শোয়ে আছে।ছেলেটির চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পরতে শুরু করে।ততক্ষণে মা ছেলেটির শিয়রের পাশে এসে বসেছে।জানতে চাচ্ছে কেমন লাগছে তার, কিছু লাগবে কি না!

সেই ছেলেটি সুস্থ হয়।মাকে ছেড়ে আবার রাজধানীতে ফিরে যায়।একসময় রাজধানী ছেড়ে বিদেশে পাড় জমায়।মা আজও ছেলেকে বুকে ফিরে পাবার প্রতীক্ষায় থাকে।ছেলেটি দূর চলে গেলেও মা থেকে যান আগের মতোই কাছে। ভৌগলিক দূরত্ব মনের নৈকট্যের কাছে কতটা তুচ্ছ তা মে-ছেলে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না।

জানি, সব সন্তানের কাছেই মা মানুষটি জীবনের সেরা মানুষ।তবু এই ছেলেটির কাহিনী শোনার পর কে অস্বীকার করবে তার মা একটু বেশিই সেরা।

আসলে এই ছেলেটির জীবনটা কখনোই সহজ ছিল না।তার কঠিন জীবনটাতে পাশে ছিলেন এই একজনই।তিনি ছেলেটির 'আম্মা'।যাকে কোনোদিনও ছেলেটি বলেনি 'আপনাকে ভালোবাসি আম্মা'।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

320109
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
320114
১৪ মে ২০১৫ রাত ১১:৫২
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : আপনার চির চেনা কমেন্টটি দেখে আমি কিন্তু হতাশই হলাম।ধন্যবাদ।
320124
১৫ মে ২০১৫ রাত ০১:০৩
আফরা লিখেছেন : জানি, সব সন্তানের কাছেই মা মানুষটি জীবনের সেরা মানুষ ।১০০% ঠিক কথা ।

তবু এই ছেলেটির কাহিনী শোনার পর কে অস্বীকার করবে তার মা একটু বেশিই সেরা। এটা মনে হয় নি কারন আমি যে মায়ের আচলের ছায়ার বড় হয়েছি তার কাছে এ কাহীনি কিছুই না । সেটা যদি বলি আপনার কাছে আবার আপনারটাই সেরা মনে হবে ।

তাই আমাদের সবার মা সবার কাছে সেরা এটাই ঠিক ।

ধন্যবাদ ভাইয়া ।

১৫ মে ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
261275
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।সব মাই সেরা এ নিয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।তবু কিছু কথা ও স্মৃতি থেকে যায়।যা সেরা কে সেরা করে তুলে।
320172
১৫ মে ২০১৫ সকাল ০৫:৩৭
শেখের পোলা লিখেছেন : ই ভালবাসা হাজার কপ্চে বা বৎসরের একটা দিনে কিি বন্দী করা যায়? যায়না৷ধন্যবাদ৷
১৫ মে ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
261276
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : ঠিক।ভালোবাসা একদিনের জন্য না।আপনাকেও ধন্যবাদ।
320255
১৫ মে ২০১৫ রাত ১১:৩৩
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

মা তো মা! সবার কাছেই নিজের মাকেই সেরা মা মনে করা হয়! মাকে মুখ ফুটে কোনদিন বলতে পারলে আচরনে, কথায় ভাব প্রকাশে বুঝিয়ে দিবেন! নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত সুতরাং যতদিন মা নামক নিয়ামত বেঁচে আছেন এই নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার করতে ভুল করবেন না!

জাযাকাল্লাহু খাইর!
১৬ মে ২০১৫ দুপুর ০১:৪০
261426
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : সেটাই।আমার জগৎটা অবশ্য আম্মাকে নিয়ে সাজানো।জানিনা তাদের কাজে আমি কতটা লাগতে পারব।তীব্র একটা তেষ্টা আছে ভেতরে।আল্লাহ সহায় হোক।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।ওয়া আলাইকুম সালাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File