প্রবাস নামক মরীচিকার পেছনে ছুটার আগে একটু ভাবুন...

লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:৩২:০৮ দুপুর



ধরুন গত ৩ বছরে আপনার এলাকা থেকে ২০ জন যুবক ৬/৭ লক্ষ টাকা খরচ করে কথিত ফ্রি ভিসা নামক অবৈধ ভিসায় কুয়েত/কাতার/সৌদিআরবে পাড়ি দিয়েছে। অবৈধ এই জন্যই বললাম, ফ্রি ভিসা নামে কিছুই নাই, কিছু লোক লোকাল আরবিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মেনেজ করে হাউজ ড্রাইভার, বাবুর্চি, কিংবা ঘরের খাদেম এই ধরণের প্রফেশনের ভিসা বাহির করে। মূলত লোকালদের ভিল্লাতে/ঘরে এদের কোনো কাজ থাকেনা, বাহির থেকে নিজের কাজ নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়। কিন্তু ঘরের ভিসার লোক বাহিরে কাজ করা সংশ্লিষ্ট দেশের আইনানুযায়ী অবৈধ। শোরতা(পুলিশ)/সি.আই.ডি তাদেরকে বাহিরে কোথাও কাজরত অবস্থায় দেখলেই এরেস্ট করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। তখন ৬/৭ লক্ষ টাকার পুরোটাই লস।

তবে এই ক্ষেত্রে যারা পুরাতন লোক, মানে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে পূর্বে ছিলেন, ভাষা এবং কাজ জানেন, তারা মোটামুটি ইনকাম করতে পারেন যদিও কথিত ফ্রি ভিসার সবাইকে দুই বছর পর পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজ খরচে ভিসা, পতাকা(আইডি) নবায়ন করতে হয়। বাহিরে কাজ করতে পারলে ভালো থাকতে পারে আর কাজ না পেলে উপাসও থাকতে হয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে কাজ নেই বললেই চলে। পুরাতনরা কাজ পেতে হিমশিম খাচ্ছে নতুনদের অবস্থাতো করুণ। তবে হ্যাঁ, নতুনদের যদি সংশ্লিষ্ট দেশে আত্মীয়স্বজন থাকে, তাহলে অন্তত থাকা-খানা নিয়ে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না। তবে বেশিদিন টিকতে না পেরে অনেকেই লোনের বোজা কাঁধে নিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে যায়। দেশে গিয়ে ছোটখাটো কিছু একটা করার প্রতি মনোযোগী হয়।

এবার একটু ভাবুনতো, আপনার এলাকার ২০ জনের মধ্যে হয়তো ৪/৫ জন আল্লাহর অশেষ রহমত, নিজ যোগ্যতা কিংবা আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় মোটামুটি ইনকাম করতে পারলেও বাকি ১৫ জনকে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে প্রবাসে দিনাতিপাত করতে হয়। শেষ সম্বলটুকু বিক্রি/অনেক টাকা লোন করে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছে বলে এবং পরিবার পরিজনদের কাছে দায়বদ্ধ বলে এদের বেশিরভাগ খেয়ে না খেয়ে, টুকটাক কাজের মাধ্যমে প্রবাস নামক উন্মুক্ত কারাগারে টিকে থাকে। আবার অনেকেই স্ট্রক/সুইসাইডের পথও বেছে নেয়। কিন্তু যে ৪/৫ জন মোটামুটি ভালো থাকে দেশের যুবসমাজ তাদেরকে আইডল মনে করে মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়ায়, বাকি ১৫ জন থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা।

অথচ ৬/৭ লক্ষ টাকা খরচ করে তারা যদি দেশে একটা ছোটখাটো ব্যবসা করতো, একটা মাছ/ হাঁস/মুরগী/টার্কি কিংবা গবাদিপশুর খামার গড়ে তুলতো তাহলে প্রতিমাসে কমপক্ষে ২৫/৩০ হাজার টাকা ইনকাম থাকতো, নিজের স্বাধীনতা থাকতো, স্বজনদের সঙ্গ পেতো, তাদের জন্য কতই না উত্তম হতো! কিন্তু প্রবাস নামক ভয়ঙ্কর নেশা তাদেরকে তেমনিভাবে কাছে টানতেছে যেমনিভাবে আগুন কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে!!! প্রবাসে গুটিকয়েক যারা ভালো আছে, ভালো ইনকাম করতেছে তাদের এই ভালো থাকার পেছনে নির্মম-নিষ্ঠুর ইতিহাস রয়েছে, যা লিখতে গেলে এক একটা কাব্যগ্রন্থ হয়ে যাবে। যদি কাউকে বলতে যাই, তখন জবাবে বলে, "আপনি ইনকাম করতেছেন, কিন্তু আমি আপনার মত ইনকাম করি সেটা আপনি চাচ্ছেন না" এই আবেগী জবাবটা প্রতিটা প্রবাসীর বুকের মাঝে তীরের মতই বিঁধে!

পরিশেষে বাংলাদেশের বেকার যুবকদের বলবো অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে পাড়ি না জমিয়ে নিজ দেশে কিছু একটা করার মধ্য দিয়ে একটা নিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত হওয়া হাজারগুন উত্তম। প্রবাসজীবন কতটা নিষ্ঠুর সেটা কেবল প্রবাসীরাই বুঝবে, আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক।

বিষয়: বিবিধ

৯৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File