বিএনপি সরকারের ব্যর্থতা (১৯৯১-১৯৯৬)- ২/২

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২১ আগস্ট, ২০১৭, ০৩:৫৯:০১ দুপুর



খালেদা জিয়া সরকারের সূচনালগ্নে এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ এবার হয়তো স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে। দেশে সামরিক শাসনামলের সমাপ্তি ঘটায় এবার সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে দেশে পুনরায় রাজনৈতিক অচলাবস্থাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ঐ সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্ভব খালেদা জিয়া সরকারের ব্যর্থতারই পরিচয় বহন করে।

৮. অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক আশাব্যঞ্জক কথা বলা হলেও বাস্তবে হাজার হাজার শিক্ষিত ও দক্ষ বেকারের পাশাপাশি নিরক্ষর ও অদক্ষ বেকারের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলছিল। তাছাড়া খালেদা জিয়া সরকারের শাসনামলে দেশ শিল্পায়নে মোটেও সফল হতে পারেনি। কোন নতুন কলকারখানা সৃষ্টি বা আশানুরূপ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেও খালেদা জিয়া সরকার ব্যর্থ হয়েছিল।

৯. তৎকালীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে কৃষির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সারের মূল্য স্মরণকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে কৃষিকাজে বিপর্যস্ত হয়ে কৃষক সমাজও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সার লুটের খবর পাওয়া যায়। জেলা ও থানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে সারের দাবিতে সভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সার কালোবাজারে বিক্রি সম্পর্কে প্রশাসনসহ দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অবশেষে, পুলিশ ক্ষুব্ধ, প্রতিবাদী কৃষকদের উপর নির্মমভাবে গুলি চালায়। ফলে ১৮ জন কৃষক পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে প্রাণ হারায়।

১০. খালেদা জিয়া সরকারের আমলে সার সংকটের পাশাপাশি সেচ সংকটও প্রকট আকার ধারণ করে। ফারাক্কা বাঁধের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে সারা দেশে সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। ফারাক্কা ছাড়া বরাক নদীতেও বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি সরকারের পক্ষে এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান করা মোটেও সম্ভব হয়নি বিধায় এটি তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়।

১১. সার ও সেচ সংকটের কারণে দেশে স্বভাবিক কারণেই কৃষিকাজ ব্যাহত হয় এবং সার্বিক উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে চালের মূল্যও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে যা খালেদা জিয়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। সার ও সেচ সংকটের ফলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ১৯৯৫ সালে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের ঘাটতি পড়ে বলে বিশেষজ্ঞ মহল অভিমত ব্যক্ত করেন।

১২. বিএনপি সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজের দলে কর্মী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব প্রদানে ব্যর্থ হন। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারের তিনজন শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উপস্থাপন করে।

১৩. অন্যদিকে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও পুত্রদের সম্পর্কে নানাধরনের দুর্নীতির অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপিত হয়। ফলে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের আমলে স্বজনপ্রীতি এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে নানাধরণের অভিযোগ স্বভাবতই সাধারণ জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

সার্বিক পর্যালোচনায়, তৎকালীন বিএনপি সরকারের (১৯৯১-১৯৯৬) ব্যর্থতার পাল্লা এতো ভারি হয়ে পড়ে যে, এক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলোসহ সাধারণ জনগণের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। বিরোধী দলগুলোর ১৪৭ জন সংসদ সদস্য একসাথে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট শুধু ঘনীভূতই হয়নি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। বিরোধী দলসমূহের ১৪৭ জন সংসদ সদস্যের একত্রে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করা সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে আজও রয়ে গেছে।



বিষয়: বিবিধ

৫৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File